টিভিএস এপাচি আরটিআর ১৬০ মোটরসাইকেল রিভিউ - সজিব আহমেদ

বাইক চালানো শিখেছিলাম অন্যের সিজি ১২৫ সিসি বাইক দিয়ে। আমার বাইক চালানোর নেশা শুরু হয় তখন থেকে যখন থেকে আমি সাইকেল চালানো শিখি। যেহেতু গ্রামে বসবাস করি তাই বিভিন্ন সময়ে সাইকেল নিয়েই আগে বেশি চলাচল করতাম। দুই চাকার সাইকেল নিয়ে আমি মাইলকে মাইল পথ পাড়ি দিয়েছি। যখন একটু বড় হলাম তখন মনটা মোটরসাইকেলের দিকে ডাইভারট হয়ে গেল। তখন আর নিজের সাইকেল ব্যবহার করতে মন চাইত না তখন মন চাইত বাইক চালানোর জন্য। নিজের কোন বাইক কেনা তখনও হয়নি তাই মানুষের বাইক দিয়ে চালানো শিখে মানুষের বাইক রাইড করা শুরু করলাম। এভাবে প্রায় ৬ বছর কেটে গেল। গত বছর মোটরসাইকেল কেনার জন্য বাসার একটু জোর দিলাম কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে আমাকে একটু থামতে হল। এবছর শুরুতে জেদ শুরু করলাম এবং অবশেষে আমার বাইক কেনার স্বপ্ন পুরন হল।




বাইক কেনার স্বপ্ন পূরণ হল কিন্ত স্বপ্ন পূরণের সাথে আরেকটি বিষয় জড়িত আছে সেটা হল পছন্দের মডেল। আমার শুরু থেকেই একটু মাস্কুলার বাইক পছন্দ ছিলো। পালসার পছন্দ ছিল প্রথমের দিকে কিন্তু এপ্যাচির ম্যাট নীল রঙ্গয়ের বাইকটা আমার খুব পছন্দ হয়ে যায়। সেই সাথে পালসারের থেকেও মাস্কুলার লুক ও রেডি পিক আপ আমার মন কেড়ে নেয়। তাই আর কোন বাইকের দিকে না তাকিয়ে নিজের বাজেটের মধ্যে আরটিআর কেই বেছে নিলাম। বাসা থেকে কেনার জন্য টিভিএস মেট্রোর কথা বলছিলো কিন্তু আমি সেই বাইকের পক্ষপাতি না। আমিও তো একজন ডিজিটাল ছেলে তাই ওসব বাইক আমার সাথে মানায় না। সব কিছু মিলিয়ে আমি গত ১৪ই জুন চাটমোহর নতুন বাজার এর স্বনামধন্য টিভিএস এর ডিলার সুমি অটোজ থেকে । বাইকটির আজকে আমি আপনদের প্রথম ব্যবহার অনুভূতি শেয়ার করবো এবং ইনশাল্লাহ এই প্রথম অনুভূতি শেয়ার করার পর আমি আবারো ১০ হাজার কিমি রাইড অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো।

ইঞ্জিন
ইঞ্জিন এক কথায় অনেক শক্তিশালী। পিলিনয় নিয়ে সিংগেল রাইড অনুভূতি পাওয়া যায়। আমি লক্ষ্য করেছি যে ইঞ্জিনের শক্তিটা অন্যান্য ১৬০ সিসি বাইকের থেকে অনেক ভালো। প্রথম অবস্থায় ইঞ্জিন একটু ওভার হিট হত কিন্তু ৫০০ কিমি রাইড করে সার্ভিস নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিনের ওভার হিট অনেক কমে আসে। আশা করছি ইঞ্জিনের ওভার হিট আরও কমে যাবে। বেশিক্ষন রাইড করলেও ইঞ্জিন শুরু থেকেই একই পারফরমেন্স দেয়। ইঞ্জিনের দিক থেকে আমি একদম চিন্তা মুক্ত।

সিটিং পজিশন
সিটিং পজিশনটা আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি। বাইকের সিটিং পজিশন একটু হেলানো যার ফলে বেশি ক্ষন রাইড করলে অনেক ব্যাক পেইন হয়। আমি গ্রামের কাদাযুক্ত রাস্তায় ৫ মিনিট রাইড করে পুরো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। বিশেষ করে এর হ্যান্ডেলবার ও সিটিং পজিশনের কম্বিনেশন খুব একটা ভালো না ফলে এই সমস্যা হয়। আর একটু বয়স্ক বা যাদের মাজায় সমস্যা তাদের জন্য তো সিটিং পজিশন একদমই না। এদিকে রাইডার ও পিলিয়নের জন্য সিট যথেষ্ট প্রশস্ত আছে এবং নরম আছে।

ডিজাইন
ডিজাইনের দিক দিয়ে আমি বলবো যে এই বাজেটের মধ্যে ইন্ডিয়ান অন্যান্য বাইকের চেয়ে সেরা ডিজাইন রয়েছে। মাস্কুলার বডি কিট ও ফুয়েল ট্যংকার বাইকটাকে দেখতে আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে। ম্যাট ব্লু রঙটা আমার পছন্দ এবং এই রঙ্গয়ের আরটিআর আমার দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। গ্রাফিক্স এর কথা যদি বলি তাহলে অবশ্যই বলতে হয় যে গ্রাফিক্স রঙ্গয়ের সাথে পুরোপুরি ম্যাচিং। তো সব মিলিয়ে ডিজাইন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।

বিল্ড
বাইকটার বিল্ড আমার কাছে একটু সাধারণ মনে হয়েছে কারন বিভিন্ন বডি পার্টসগুলো যেমন মজবুত হওয়ার কথা তেমন না। আর রঙটা একটু ঘষা লাগলেই উঠে যাচ্ছে। আমি কোম্পানিকে পরামর্শ দিবো যে বাইকটার বিল্ড কোয়ালিটি যেনো আরেকটু উন্নত হয় ।

স্পীড
এপ্যাচি আরটিআর মুলত গতির দানব হিসেবে আমাদের দেশে পরিচিত। আমি ব্রেক ইন পিরিয়ডে আছি তাই বেশি স্পীডে তুলতে ইচ্ছা বোধ করছি না। তবে একদিন পিলিয়ন নিয়ে ফাকা রাস্তায় ৯০ কিমি গতি তুলে ছেড়ে দিয়েছি। স্পীড আরও উঠানো সম্ভব ছিলো। এমনিতে বাইকটার থ্রটল রেসপন্স অনেক ভালো। হাইওয়েতে যে কোন গাড়িকে সহজেই ওভারটেক করা যায়।

সিটি রাইড
সিটি রাইডে আমি কন্ট্রোল ভালোই পেয়েছি। তেমন কোন সমস্যা আমি সিটি রাইডে এখনও অনুভব করিনি।

হাইওয়ে রাইড
হাইওয়ে রাইডে আমি প্রায় ৯০ কিমি একটানা চালিয়েছি। ব্যাক পেইন ছাড়া ইঞ্জিনের কোন সমস্যা বা অন্যান্য কোন সমস্যা অনুভব করিনি। আমি পাবনা থেকে একটানা কুষ্টিয়া গিয়েছি এবং এসেছি। ব্যাক পেইন যদি না হত তাহলে বাইকটা হাইওয়েতে চালিয়ে আমি বেশি মজা পাওয়া যেত।

কন্ট্রোল
অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন যে এপ্যাচি আরটিআর এর কন্ট্রোল ভালো না। আমিও তাদের সাথে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একমত। যেমন – বাইকটা যদি ৭০ কিমি এর বেশি স্পীডে চালানো যায় তবে নিজের মত করে কন্ট্রোল করা যায় না বিশেষ করে ওই রকম পরিস্থিতিতে বাইকের মাথাটা অনেক ভারী ভারী লাগে এবং চাকাটা মনে হচ্ছে যে মাটির সাথে লেগে থাকছে না।

ব্রেকিং
সামনের ব্রেকিং দুর্দান্ত কিন্তু পেছনের ড্রাম ব্রেক থেকে তেমন ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায় না। আমি বেশ কয়েকবার পেছনের ব্রেক টাইট দিয়েছি তাও অনেক শক্তি দিয়ে চাপতে হয় এবং বেশি চাপলে আবার স্কীড করার ভয় থাকে।

টায়ার
টায়ারের সাইজ সামনে পেছনের এর বডি অনুযায়ী ঠিক মনে হয়েছে এবং টায়ারের গ্রিপ খুব একটা খারাপ না।

ইলেক্ট্রিক্যাল
বাইকের ইলেকট্রিক্যাল দিক গুলো অনেক ভালো আছে। বিশেষ করে স্টক হর্নটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে এবং ব্যাটারিও অনেক ভালো আছে । রাতে হেডল্যাম্পের আলো অনেক পরিষ্কার এবং সামনের সব কিছু স্পষ্ট বোঝা যায়।

মাইলেজ
মাইলেজটা আমার কাছে বেশিভালো লাগেনি। আমি যেহেতু একজন ছাত্র তাই আমার আরও মাইলেজ প্রয়োজন। এখন আমি লিটারে পাচ্ছি ৩৫-৪০ কিমি ।

সার্ভিস সেন্টার
আমি তাদের অথরাইজড সার্ভিস সেন্টারে গিয়েছি এবং কাজের মান ,পরিবেশ , তাদের আচরণ সব কিছুই অনেক প্রশংসনীয়।

দাম
বাইকটার দাম এর কোয়ালিটি,ফিচারস অনুযায়ী ঠিক রাখা হয়েছে কিন্তু একটা ব্যাপার খারাপ লাগে যে বাজেটে প্রত্যেকবার মোটরসাইকেলের দাম কমছে । এইটা দেখে খুব আফসোস লাগে।

কোম্পানীর কাছে পরামর্শ থাকবে যে , যেহেতু তারা বাংলাদেশে বাইকগুলো ফিটিং করছে তাই সেগুলো যেনো একটু যত্ন সহকারে ফিটিং করা হয়। আমি প্রথম দিনেই সামনের চাকায় গ্রিজ ভালোভালে সেটআপ করা পাইনি।

আমি মোঃ সজিব আহমেদ ইনশাল্লাহ আবার আমার পছন্দের ঘোড়া আরটিআর নিয়ে ১০ হাজার কিমি রাইড অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাদের সামনে আসবো। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন। ধন্যবাদ ।

All TVS bike price in bd

TVS Apache RTR 160 SD