স্পোর্টস, এবং কমিউটার বাইকের পাশাপাশি বাংলাদেশে স্কুটারও ধীরে ধীরে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মানুষের চলার পথকে আরামদায়ক এবং ছোট-খাটো দুরুত্বে স্কূটার নিয়ে এনেছে অনাবিল আনন্দ। আমাদের পার্শ্ববতী দেশ ভারতে স্কুটারের ব্যাপাক চাহিদা এবং ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে যে, স্কুটার শুধুমাত্র মেয়েরা ব্যবহার করবে কিন্তু এই ধারণা একদমই ভুল মনে হবে যখন দেখতে পাবেন ভারতে মেয়ে-ছেলে সবাই স্কুটার ব্যবহার করছে। শহরের মধ্যে চলাচলের জন্য মানুষ সহজ ও নিরাপদ বাহন হিসেবে স্কূটারকে বেছে নিয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্কুটারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং আশা করা যায় এক পর্যায়ে স্কুটারের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশে বিদ্যমান ইন্ডিয়ান, জাপানিজ ও চাইনিজ বিভিন্ন ব্রান্ডের স্কূটার রয়েছে। ইন্ডিয়ান ব্রান্ডের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ড টিভিএস এবং এই টিভিএস এর একটি স্কুটার রয়েছে যার নাম টিভিএস জুপিটার। দেখতে মাস্কুলার, চওড়া সিটিং পজিশন, দুর্দান্ত মাইলেজ এই সব কিছু মিলিয়ে জুপিটারকে গ্রাহকের আরো সন্নিকটে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে টিভিএস। যেহেতু টিভিএস একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড সেহেতু তাদের এই স্কুটারটিতে কি কি ফিচারস দিতে সক্ষম হয়েছে সে সমস্ত ফিচারস আজকে আমরা আলোচনা করবো।
ইঞ্জিন
টিভিএস এখানে ব্যবহার করেছে ১০৯.৭ সিসির সিংগেল সিলিন্ডার, ৪ স্ট্রোক, ওএইচসি ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনে রয়েছে ৮ বিএইচপি@ ৭৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ৮.৪ এনএম ম্যাক্স টর্ক। টিভিএস দাবি করে যে তাদের এই ইঞ্জিন টপ স্পীড সরবরাহ করতে পারবে ঘন্টায় ৮০ কিমি এবং মাইলেজ সরবরাহ করতে পারবে লিটারে ৬২ কিমি। এয়ার কুল্ড ইঞ্জিনকে চালু করার জন্য এখানে ইলেকট্রিক এবং কিক দুইটা অপশনই দেওয়া আছে।ইঞ্জিনের গিয়ার সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়। আশা করা যায় শহরের ব্যস্ততম রাস্তা কিংবা ট্র্যাফিক জ্যামের মধ্যে ইঞ্জিনটি অনেক সহায়ক হবে।
ডিজাইন
টিভিএস জুপিটারের ডিজাইন নিয়ে বলতে গেলে আধুনিক ডিজাইনের স্কূটারের ছোঁয়া এর মধ্যে রয়েছে। স্কুটারটির মাস্কুলার লুক, উপরের অংশের হেডল্যাম্প, ছোট ছোট দুইটা সাইড ইনডিকেটর, রুচিশীল ডিজাইনের গ্রাবরেল, আকর্ষণীয় এলয় রিম এই সব কিছু মিলিয়ে বাইকের ডিজাইনে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। যেহেতু শহরের মধ্যে রাইডের জন্য স্কূটার বেশি ব্যবহৃত হয় তাই এর ফুটরেস্টের জায়গায় জিনিসপত্র রাখার জন্য প্রশস্ত জায়গা রয়েছে এবং সিটের নিচের বেশ খানিকটা জায়গা রয়েছে। রাইডার তার ইচ্ছে মত সেখানে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখতে পারবেন।
বডি ফ্রেম
১১০ সিসি এই স্কুটারটিতে ব্যবহার করা হয়েছে হাই রিগিডিটি আন্ডার বন টাইপ বডি ফ্রেমে। এই বডি ফ্রেমের ফলে বাইকটি রাস্তায় রাইড করে অনেক স্টাবিলিটি পাওয়া যাবে এবং শক্ত গঠন অনুভব করা যাবে।
ডাইমেনশন
টিভিএস জুপিটার স্কূটারের বডি ডাইমেনশন রয়েছে লম্বায় ১৮৩৪ মিমি ,চওড়ায় ৬৫০ মিমি এবং উচ্চতায় ১১১৫ মিমি। এছাড়াও হুইলবেজ রয়েছে ১২৭৫ মিমি এবং গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ১৫০ মিমি । স্কূটারের ফুয়েল ট্যংকটি অন্যান্য বাইকের মত খুব বেশি বড় হয় না এবং এটা বেশিরভাগ সিটের নিচের থাকে বলে সেভাবে দেখা যায় না। টিভিএস জুপিটারের ফুয়েল ট্যাংক ক্যাপাসিটি হচ্ছে ৫ লিটার এবং ফুয়েল ট্যংকারের মুখ টেল ল্যাম্পের উপরে অবস্থিত। ফলে জ্বালানী ভরার কাজটি সহজেই করা যায়।
ব্রেকিং ও সাসপেনশন
সামনে এবং পেছনে উভয় দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে । তবে এই স্কুটারটির আরেকটি ভার্সন রয়েছে যার সাথে ডিস্ক ব্রেক সংযুক্ত আছে।
সাসপেনশনের দিক দিয়ে সামনে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক সাসপেনশন এবং পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যাস চারজড মনোশক সাসপেনশন। উভয় সাসপেনশন যথেষ্ট ভালো পারফরমেন্স দিয়ে সহায়ক ।
ইলেকট্রিক্যাল ও মিটার কনসোল
ইলেকট্রিক্যাল দিকের মধ্যে এই স্কুটারটির রয়েছে ১২ ভোল্ট ৫ এম্পায়ার ব্যাটারি। ৩৫/৩৫ ওয়াটের হ্যালোজ্বিন বাল্ব , টেল ল্যাপ, সুদৃশ্য টেল ল্যাম্পের সাথে সাইড ইনডিকেটর । মিটার কনসোলটি সম্পূর্ণ এনালগ এবং এখানে রাইডারের প্রয়োজোনীয় সকল ফিচারস রয়েছে।
সেফটি ফিচারস
এই স্কুটারটির একটি সেফটি ফিচারস রয়েছে সেটি হল Sync Braking System (SBS) । এই ব্রেকিংটা অনেকটা হোন্ডার কম্বি ব্রেকিং এর কাছাকাছি। এই ব্রেকিং সিস্টেমটি ফলে পেছনের ব্রেক চাপা মাত্রই সামনের ব্রেক এর সাথে কাজ করবে। Sync Braking System (SBS) এই ব্রেকিং সিস্টেমটি এমনি সাধারণ ব্রেকিং এর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপত্তা দিবে বলে আশা করা যায়।
টায়ার
সামনের দিকে রয়েছে ৯০/৯০-১২ সাইজের টায়ার এবং পেছনের দিকেও ঠিক একই টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে এবং দুইটা চাকায় টিউবলেস।
পরিশেষে স্কুটারটির ফিচারস আলোচনা করে দেখা যায় যে বাংলাদেশের রাস্তায় জন্য স্কুটারটি পারফেক্ট এবং আশা করা যায় ভবিষ্যতে এটি গ্রাহকদেরকে আরও বেশি আকর্ষিত করতে পারবে।