আমি মোঃ রাসেল আহমেদ রনি । বর্তমানে আমি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে অনার্স ২ বর্ষের একজন ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে আমি টিভিএস ফিনিক্স ১২৫ সিসির বাইকটি ব্যবহার করছি। আমার বাসা গ্রামে হওয়ার কারনে মোটরসাইকেলকেই একমাত্র যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। আমি দীর্ঘ ৩ বছর ধরে আমার এই বাইকটি ব্যবহার করছি।
মোটরসাইকেলের নেশা আমার ছোট বেলা থেকেই যার কারনে সুযোগ পেলেই মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে যাই। এর আগে আমার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ছিল বাজাজ ডিস্কোভার ১৫০ সিসি তারপর এই বাইকটা কিনে ফেলি। আমি আমার এই বাইকটা নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার কিমি চালিয়েছি আজ আমি এই ৫০ হাজার রাইডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।
ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি
আমার বাইকের ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি বলতে গেলে ১২৫ সিসি বাইক হিসেবে বেশ ভালোই লেগেছে। সবচেয়ে আমার কাছে যেটি ভাল লেগেছে সেটা হল ফুয়েল ট্যংকারের সাথে সুন্দর গ্রাফিক্স আর বাইকের কালারটা। এছাড়াও বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি বেশ মজবুত আমি ডিজাইনে এবং বিল্ড কোয়ালিটিতে কোন কমতি দেখিনি। সব কিছু আমার কাছে ভালই লেগেছে তবে এলয় রিমের রং গুলো একটু উঠে যাচ্ছে তবে এটা কোন আমলে নেওয়ার বিষয় না ।
কম্ফোরট
১২৫ সিসির বাইক হিসেবে যথেষ্ট ভাল আরাম অনুভব করি। প্রথমে আসি সিটিং পজিশনে আমার বাইকের সিটিং পজিশন বেশ আরামদায়ক ২ জন আমার কখনো ৩ জন নিয়েও রাইড করছি যেহেতু আমাদের দেশে ৩ জন নিয়ে বাইক রাইডিং অনুমতি নাই তবে একজন পিলিয়ন নিয়ে চালিয়ে বেশ আরাম অনুভব করি এবং সিটে বসেও বেশ আরাম। অন্যদিকে রাইডিং পজিশনটা একদম সুন্দর অনেকক্ষণ রাইড করার পরেও কোন ব্যাক পেইন অনুভব করিনি। সিটিং পজিশনের সাথে হ্যান্ডেলবারটা সুন্দরভাবে স্থাপন করা হয়েছে যার ফলে হ্যান্ডেলবার ধরে বেশ আরাম লাগে। আমার বাইকের ইলেট্রিক্যাল সুইচগুলো বেশ কাছাকাছি এবং পরিচিত সুইচবার রয়েছে। যার ফলে অন্ধকারে সুইচ খুজতে হয় না। সুইচবারের কোয়ালিটি বেশ মনে হয়েছে। আমি রাতেও অনেক বেশি সময় ধরে রাইড করেছি এক্ষেত্রে আমার বাইকের হেডল্যাম্পের আলোর কোন ঘাটতি মনে হয় নি যথেষ্ট ভালো আলো রয়েছে।
কন্ট্রোলিং
প্রথমেই বলে রাখি যে আমার বাইকের কন্ট্রোল আমার কাছে তেমন ভালো লাগেনি। কারন আমি যখন বেশী স্পীডে গাড়ি চালায় তখন আমার মনে হয় যে আমি আমার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছি এবং টপ স্পীডে অনেক ভাইব্রেশন হয় যার ফলে খুব সহজেই রাইড করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে টপ স্পীডে আমার বাইক ভেসে যায় মাটি কামড়িয়ে চলে না যেটা আমার কাছে বেশ ভাল একটা সমস্যা মনে হয়েছে। অন্যদিকে টায়ার এর সাইজটা বেশ ভালো আমি মনে করি যে ১২৫ সিসির বাইক হিসেবে যথেষ্ট ভাল টায়ার রয়েছে। এই টায়ার নিয়ে আমি গ্রামের কাদাযুক্ত রাস্তায় চালিয়েছি এবং টায়ারের গ্রিপটা অনেক ভালো মনে হয়েছে। সামনের এবং পেছনে দুইটা চাকারই যথেষ্ট ভালো গ্রিপ রয়েছে তবে বেশি কাদা হলে সব চাকা পিছিলিয়ে যায়। আমার বাইকের সামনের দিকে ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের দিকে ড্রাম ব্রেক রয়েছে দুটো ব্রেকই আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। ব্রেক নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন সমস্যায় পড়িনি এবং ব্রেক করলে খুব কম স্কীড পেয়েছি। অন্যদিকে সাসপেনশনের কথা বলতে গেলে অনেক ভাল মানের সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে বলে আমি মনে করি কারক আমি গ্রামের অনেক খারাপ রাস্তায় চালিয়েছি
আমার কাছে এর সাসপেনশনটা অনেক স্মুথ মনে হয়েছে।
ইঞ্জিন
আমি একদিনে প্রায় ২০০ কিমি এর বেশি চালিয়েছে এবং আমার মতানুসারে এই মাইলেজ প্রায় ৬৫-৭০ কিমি পাচ্ছি। মাইলেজ নিয়ে কোন চিন্তা নেই কবে তেল তুলেছি এইটাও মনে থাকে না। ১২৫ সিসি বাইক হিসেবে মাইলেজ অনেক ভাল। অন্যদিকে আমি ইঞ্জিন শক্তিতে একটু ঘাটতি পেয়েছি ইঞ্জিন শক্তিটা আমার কাছে কম মনে হয়েছে । এই কম ইঞ্জিন শক্তি নিয়েও আমি টপ স্পীড ৯০ কিমি তে তুলেছি আরও পিক আপ হাতে ছিল কিন্তু তোলার সুযোগ পায়নি।
সার্ভিসিং সেন্টারের কথা বলতে গেলে তাদের আচরন, ঠিক করার ধরন এবং তাদের সার্ভিসিং চার্জ সব কিছু মিলিয়ে বেশ ভালো । টিভিএস এর পার্টস বাংলাদেশে অসংখ্য তাই পার্টস নিয়ে ঝামেলাই পড়তে হয় না।
বাইকটির দাম বলতে গেলে আমার কাছে ঠিকই মনে হয়েছে কারন ১২৫ সিসির ইঞ্জিন, সুন্দর গ্রাফিক্স সব কিছু মিলিয়ে দামটা ঠিক মনে হয়েছে। সবাই সাবধানে বাইক চালাবেন। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।