টিভিএস স্ট্রাইকার মোটরসাইকেল রিভিউ – আব্দুল হান্নান

মোটরসাইকেল আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি বাহন। এই বাহনটির মাধ্যমে খুব দ্রুত যে কোন জায়গায় অল্প সময়ের মধ্যে যাওয়া যায়। এটি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক উপকারে আসে। বিপদে আপদে এটি সাহায্যকারী বাহন হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এর ব্যবহার দিন দিন অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোটরসাইকেল এর চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুন নতুন ব্যান্ডের মোটরসাইকেল এর হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন আমার পরিচয় দিচ্ছি। আমি মোঃ আব্দুল হান্নান। বর্তমানে পেশায় আমি একজন দোকান ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের কাজের জন্য আমার মোটরসাইকেল এর খুব প্রয়োজন ছিল। মাঝে মধ্যেই আমাকে দূরে যাতায়াত করতে হয়। তাই ভাবলাম একটি মোটরসাইকেল কিনেই ফেলি। আমি তখন পুঠিয়া বাজারের “খান মটরস” শোরুমে যাই। সেখানে গিয়ে আমি টি ভি এস স্ট্রাইকার ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটি পছন্দ করে কিনি। তবে আমার আগে থেকে কোন বাইক পছন্দের ছিল না। আমি নিজে শোরুমে গিয়ে পছন্দ করে এই মোটরসাইকেলটি কিনেছি। এটা আমার জীবনের প্রথম বাইক। এছাড়া আমার অনেক দিনের যে স্বপ্নটি ছিল তা পূরণও হয়েছে এই মোটরসাইকেলটি কিনার পরে। এই মোটরসাইকেলটি আমি ১ মাস যাবত ব্যবহার করছি কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই। আমি এই ১ মাসে মোটরসাইকেলটি প্রায় ৮৫০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই। এটি কিনার পরে আমি কোন যাতায়াত করলে এই মোটরসাইকেল টি নিয়েই করি। এক্ষেত্রে আমার পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও আমি ভাল অনুভূতি পাই। এছাড়া দ্রুত যাতায়াত করে এই মোটরসাইকেল থেকে আমি অনেক আরাম ফিল করি। এখন আমি যে কোন যাতায়াতের ক্ষেত্রে এই মোটরসাইকেলটিকেই আগে প্রাধান্য দেই। আজকে আমি সবার উদ্দেশ্যে আমার এই মোটরসাইকেল নিয়ে কিছু মতামত তুলে ধরার জন্য হাজির হয়েছি। আমার লিখার মাঝে ভূল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।



প্রথমেই আমি কথা বলতে চাই ইঞ্জিন প্রসঙ্গ নিয়ে। কেননা ইঞ্জিন হল একটি মোটরসাইকেল এর মূল অংশ। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিনটা খুবই শক্তিশালী। কোন বাধা একে থামিয়ে রাখতে পারে না। বেশিক্ষণ চললেও এই ইঞ্জিন খুব বেশি গরম হয় না। এছাড়া ইঞ্জিনের ভেতরে কোন ধরনের খারাপ শব্দ করে না। ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। আমি সব মিলিয়ে ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও ইঞ্জিন থেকে বেশ ভাল মাইলেজও পাই।

এবার মোটরসাইকেলটির ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা বলবো। আমি শোরুমে যাবার পরে বাইকের ডিজাইন পছন্দ করেছি। এই ডিজাইনটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। মোটরসাইকেলটির বিভিন্ন দিকের ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স সব কিছু ভালো লাগার মতই। এর বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে মজবুত মনে হয়েছে। ডিজাইনের পাশাপাশি আমি আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, এই মোটরসাইকেল এর বডির প্লাস্টিক গুলো অনেক মজবুত এবং এর পার্টসগুলো বেশ উন্নত মানের। যদিও আমি কখনো মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যাই নাই। এই বাইকটি যে কারো খুব সহজেই পছন্দ হবে বলে মনে করি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাইক আছে, আমার কাছে এই মোটরসাইকেলটি একটু ভিন্ন ধরনের মনে হয়েছে। কিছুটা এপাচি আর টি আর বাইকের মত মনে হয়েছে। তাই আমি অন্য কোন মোটরসাইকেল এর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে টি ভি এস স্ট্রাইকার ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটিই কিনেছি। আমি শোরুমে গিয়ে এই মোটরসাইকেলটি এক দেখাতেই পছন্দ হয়েছিল।

এবার মোটরসাইকেল এর কন্ট্রোল ও আরাম নিয়ে কিছু কথা বলবো। এই মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমার কাছে অনেক আরামদায়ক মনে হয়েছে। আমার কাছে মোটরসাইকেলটির সিটিং পজিশন বেশ ভাল মনে হয়েছে। এর সিট প্রথমের দিকে খুব শক্ত লাগতো, কিন্ত এখন সিটটা খুব একটা শক্ত মনে হয় না। সিটে বসে আমি খুব সহজেই আরামের সাথে মোটরসাইকেল চালাতে পারি। এছাড়া মোটরসাইকেলটির হ্যান্ডেলবার ধরে চালিয়েও খুব আরাম অনুভব করি। তবে আমি ৭৫ গতির বেশি কখনোই তুলি নাই। বেশি স্পীডে মোটরসাইকেল চালানো আমার পছন্দ করি না। কেননা সময় বাঁচাতে গিয়ে যে কোন সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অর্থাৎ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী। তবুও মাঝে মধ্যে হাই রোডে বেশি স্পিডে চালানো পড়ে। আমি এক দিনে প্রায় ৬০ কিমি পথ চালিয়েছি। বলতে গেলে অতি দীর্ঘ যাতায়াত আমি খুব কম করেছি। এই মোটরসাইকেলটির সাসপেনশন গুলো আমার কাছে অনেক উন্নত মানের মনে হয়েছে। মোটামুটি আরামদায়ক। কাচা বা খারাপ যে কোন রাস্তায় একা যাতায়াত করলেও তেমন ঝাঁকুনি লাগে না। মোটরসাইকেলটির লুকিং গ্লাস থেকে পিছনের দৃশ্য খুব ভাল ও স্পষ্ট দেখতে পাই। এই মোটরসাইকেল এর ব্রেকিং সিস্ট্রেমটা খুবই ভাল লেগেছে। আমি খুব সহজেই মোটরসাইকেলটি কন্ট্রোল করতে পারি। সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকায় ভাল কন্ট্রোল করা যায়। এর সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং এগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন রকমের কষ্ট হয় না। রাতে হেডলাইট থেকেও আমি প্রচুর আলো পাই। এগুলো আমার কাছে মোটামুটি সব গুলোই অনেক ভাল লাগে। এর ব্যাটারি কোয়ালিটি বেশ মজবুত। বাইকটির সেল্ফ এ খুব ভাল কাজ করে।

ভাল মাইলেজ পাবার আশা করেই এই মোটরসাইকেল কিনেছি। তবে এখন প্রথমের দিকে তেল খরচ লিটারে প্রায় ৫০ কিমি পাচ্ছি। তবে ৩০০০ কিমি চালানোর পরে আরো ভাল মাইলেজ পাবো আশা করি। এক কথায় এই মাইলেজ পেয়েও আমি সন্তুষ্ট আছি। এছাড়া এই মোটরসাইকেলটির দামটাও অনেক কম। ১২৫ সিসির মধ্যে অন্য ব্র্যান্ডের / কোম্পানির মোটরসাইকেল কিনলে অনেক বেশি টাকা লাগত। তাই দাম নিয়ে আমার অভিযোগ নেই।

আমি এযাবত মাত্র এক বার সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। তাও আবার শুধু মাত্র নাট বল্টু টাইট করা, সব কিছু চেক করার জন্য। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যবহার দেখে আমার ভাল লেগেছে এবং তাদের কাজের মান ভাল। সেখানকার পরিবেশ মুগ্ধকর। এজন্য নতুন ক্রেতাদের জন্য আমার পরামর্শ কেউ যদি এই মোটরসাইকেলটি কিনতে চান তাহলে এটটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারে। কারণ বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স ও মাইলেজ খুবই ভাল। পরিশেষে সকলের যাত্রা ভাল ও শুভ হোক এই কামনায় বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।

All TVS bike price in bd

TVS Stryker