টিভিএস স্ট্রাইকার মোটরসাইকেল রিভিউ - ফারুক হোসেন

মোটরসাইকেল বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় বাহন হিসেবে পরিচিত। এর মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব। জীবনে চলার পথে মোটরসাইকেল অনেক কাজে লাগে। আমার পরিচয় আমি মোঃ ফারুক হোসেন। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে ব্যবসার কাজের জন্য আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনি। অনেক আগে থেকেই আমি মোটরসাইকেল চালাই। আমি দীর্ঘ ৫ বছর বিদেশে ছিলাম। তবে আমার আগে থেকেই আশা ছিল গ্রামে গিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিনবো। এই মোটরসাইকেলটি আমি শুধু ব্যবসার কাজেই ব্যবহার করি না। আমার সকল ব্যক্তিগত কাজেও এটি ব্যবহার করি। আমার এই টি ভি এস স্ট্রাইকার ১২৫ সিসির মোটরসাইকেলটি “খাঁন মোটরস” পুঠিয়া, রাজশাহী – এই শোরুম থেকে কিনেছি। মোটরসাইকেলটি কিনার আগে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে পরামর্শ করি। কারণ সেই বন্ধু ১০ মাস যাবত এই একই মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। সে ও খাঁন মোটরস শোরুম থেকে তার মোটরসাইকেলটি কিনেছে। সে বন্ধুটি আমাকে জানায় এই মোটরসাইকেলটি অনেক ভাল এবং তেল খরচ কম। তার এক কথাতে আমি এই মোটরসাইকেলটি কিনার সিদ্ধান্ত নিই। এটি আমার জীবনের প্রথম বাইক। আমি এই মোটরসাইকেলটি ২০ দিন আগে কিনেছি। এই ২০ দিনে প্রায় ৫৫০ কিমি পথ চালিয়েছি কোন প্রকার দূর্ঘটনা ছাড়াই।



এই মোটরসাইকেলটির ডিজাইন বেশ দূর্দান্ত, যা আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। এর গ্রাফিক্স ডিজাইন গুলো অনেক সুন্দর। এর বডির প্লাস্টিকগুলো আমার কাছে অনেক মজবুত মনে হয়েছে। এই মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। এর ইঞ্জিনটি খুব শক্তিশালী। এটি খুব বেশি পরিমাণে চললেও ইঞ্জিন ওভার হীট হয় না। যে কোন রাস্তায় আমি এটি খুব আরামের সাথে চালাতে পারি। এর ইঞ্জিনের শব্দটা বেশ ভাল। তবে দ্রুত গতিতে অর্থাৎ ৮০ গতির বেশি তুললে এর মাথা কাপে। এই মোটরসাইকেলটি কিনার একটি কারণ হলো এর গ্রাফিক্সগুলো আমার কাছে লেটেস্ট বা নতুনত্ব মনে হয়েছে। এছাড়া এর পার্টস গুলো অনেক মজবুত এবং এর ট্যাংকারটা বেশ আকর্ষণীয়। এটি দেখতে কিছুটা এপাচি আর টি আর মোটরসাইকেল এর মত।

এই মোটরসাইকেল এর সিটিং পজিশন আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। আমি আমার পরিবার নিয়ে খুব আরামের সাথেই ঘুরতে পারি। এই মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি অনেক আরাম অনুভব করি। যেমন, বাইকটির সিট অনেক নরম, বসতে কষ্ট হয় না, সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না। বরং আমার কাছে এই মোটরসাইকেলটি ছোট মনে হয়। এছাড়া দীর্ঘক্ষণ বাইকটি চালালেও আমার তেমন সমস্যা হয় না। আমি এক দিনে প্রায় ৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। আমি অতিরিক্ত দীর্ঘ যাতায়াত এখনো করি নাই। তবে আমি সর্বোচ্চ গতি ৯০ তুলেছি। তবে ৮০ এর বেশি গতি তুললে এর মাথা ভাইব্রেট করে। মোটরসাইকেলটির হ্যান্ডেলবারের সুইচ গুলো দেখতে অনেক সুন্দর। এগুলো ব্যবহারে আমাকে কোন প্রকার সমস্যায় পড়তে হয় না। রাতে মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি এর হেড লাইটে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো হয়। এর সাসপেনশন গুলো অনেক ভাল। শুধু মাত্র ভাল রাস্তাতেই নয়, খারাপ রাস্তাতেও চালালে আমি তেমন ঝাঁকুনি অনুভব করি না। এছাড়াও এর ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভাল। আমি যে কোন গতিতেই মোটরসাইকেলটি খুব সহজেই কন্ট্রোল করতে পারি। ডিস্ক ব্রেক থাকায় বাইক কন্ট্রোল করতে আমি আরো বেশি সুবিধা হয়। এই মোটরসাইকেলটির টায়ারের গ্রিপ অনেক ভাল। সে জন্য ভেজা রাস্তাতেও স্লিপ করে না। এর লুকিং গ্লাস দুটো থেকে পিছনের দৃশ্য খুব পরিষ্কার দেখা যায়। মোটরসাইকেলটির সেল্ফটি অনেক ভাল কাজ করে। এর ব্যাটারি কোয়ালিটি বেশ ভাল।

এখন আমি মাইলেজ নিয়ে একটু কথা বলতে চাই। মোটরসাইকেলটি কিনার সময় শোরুম থেকে বলেছিল এক লিটার তেলে ৬০ কিমি পথ চলতে পারবো। কিন্ত আমার কাচা রাস্তাতে বাইকটি বেশি চালানো পড়েছে। কাচা রাস্তাতে আমি ৫০ কিমির মত মাইলেজ পাচ্ছি। তবে আশা করি পাকা রাস্তাতে আর একটু বেশি মাইলেজ পাবো। এছাড়া পুঠিয়ার এই সার্ভিসিং সেন্টারটা আমার খুব ভাল লেগেছে। তাদের ব্যবহারেও অনেক খুশি। তাদের অতিথি আপ্যায়ন দেখে আমি মূগ্ধ। তবে আমি এখনো এক দিনও মোটসাইকেল সার্ভিসিং করাতে সেখানে যাই নাই।

বর্তমান বাজারে টি ভি এস স্ট্রাইকার ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটির দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। অল্প দাম দেখে আমি এই বাইকটি দ্রুত কিনেছি। অন্য কোম্পানির ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল এর তুলনার এই বাইকটির দাম অনেকাংশেই কম। আমি মনে করি এই মোটরসাইকেলটির পারফরমেন্স অনুযায়ী দাম সঠিক রয়েছে।

ভাল দিকঃ ১/ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল। ২/ সিটিং পজিশন ভাল। ৩/ তেল খরচ মোটামুটি কম। ৪/ ডিজাইন ভাল। ৫/ সুইচগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। ৬/ রাতে হেড লাইটে প্রচুর আলো হয়। ৭/ সাসপেনশন গুলো ভাল। ৮/ ব্রেক ভাল। ৯/ ব্যাটারি কোয়ালিটি ভাল।
মন্দ দিকঃ ১/ হাই স্পীডে ভাইব্রেট করে।

পরিশেষে আমি সবার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলতে চাই, কেউ যদি ১২৫ সিসির মধ্যে মোটরসাইকেল কিনতে চান, তাহলে টি ভি এস স্ট্রাইকার ১২৫ সিসির এটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। সব সময় ভাল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে মোটরসাইকেল এর ইঞ্জিন আরো বেশি ভাল থাকবে। এজন্য বুঝে শুনে ভাল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে হবে। এখানেই আমার মতামত শেষ করছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

All TVS bike price in bd

TVS Stryker