জংশেন ১০০ সিসি বাইক দিয়ে আমার বাইক চালানোর হাতে খড়ি। সেই বাইকটা আমি অনেক দিন ব্যবহার করেছিলাম। এরপরে ভাবলাম যে বাইকটা বিক্রি করে দিবো।আমার কর্মস্থলে বেশি সময় দিতে হয় বলে বাইক ঠিক মত চালানো হয় নাই এই সিদ্ধান্ত নিলাম যে বিক্রয় করে দিবো। বাইক বিক্রি করে দিয়ে আসলেই বুঝতে পারলাম যে শহরের মানুষের জন্য বাইক কতটা দরকারি জিনিস। আমি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত সময় মত করতে পারি না যার কারণে বাইক নিয়ে যাওয়াটা উত্তম উপায় হিসেবে মনে করি। বেশি দামী বাইক হলে একটা বিষয় লক্ষ্য করি যে বন্ধুবান্ধবেরা খুব বেশি আপন হয় যায় তাই ঠিক করলাম কমদামী একটু বাইক কিনবো যা আমাকে শহরের মধ্যে সুন্দরভাবে চলাচলে সাহায্য করবে। অনেক খুঁজে আমি পেলাম টিভিএস এক্সেল বাইকটিকে। বাইকটা দেখতে খুব সুন্দর না কিন্তু শহরের মধ্যে কমিউনিকেট করার জন্য একদম পারফেক্ট। টিভিএস এক্সেল ২ মাসের ব্যবহার অভিজ্ঞতা আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
প্রথমেই বলে রাখি যে বাইকটা দেখতে তেমন ভালো না কিন্তু কমদামী হিসেবে এর ডিজাইন অন্তত সাইকেলের থেকে বেটার। ক্ল্যাসিক্যাল লুকের হেডল্যাম্প, স্পক হুইল, সামনের পা রাখার স্থান সব কিছুতেই আদিম যুগের একটা বাইকের ছোঁয়া রয়েছে। এই ডিজাইনটা অবশ্য হোন্ডা ৫০ সিসি বাইকের সাথে কিছুটা তুলনা করা যেতে পারে। তো ডিজাইনের দিক থেকে এরকম বাজেটের মধ্যে সুন্দর একটা বাইক পেয়ে আমি খুবই খুশি।
বিল্ড কোয়ালিটি বলতে গেলে বাইকটিতে প্লাস্টিকের তেমন ব্যবহার নেই তাই রাস্তায় পড়ে গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর এমনিতে অন্যান্য বডি প্লাস্টিকগুলো মজবুত আছে।
ইঞ্জিনের দিক থেকে বাইকটিতে ১০০ সিসির ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে যা অত্যান্ত শক্তিশালী । ইঞ্জিন আমার ভালো গতি এনে দেয়। পিলিয়ন নিয়ে শহরের ব্যাস্ততম রাস্তাতেও রাইড করতে কোন সমস্যা হয় না। শহরের মধ্যে ভালো যাতায়তের জন্য এরকম ইঞ্জিন পারফরমেন্সের বিকল্প নেই। ইঞ্জিন প্রথমের দিকে সামান্য ওভার হিট হত কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা কমে গেছে । আর সঠিক থ্রটলের সাথে সঠিক শক্তি ইঞ্জিন উৎপন্ন করতে পারে।
আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাইকটা শহরের মধ্যে রাইড করে। কারণ এটা শহরের মধ্যে খুবই আরামদায়ক একটি বাইক। গিয়ার শিফটিং ঝামেলা নাই, সিটিং পজিশন অনেক ভালো এবং পা মেলে বসা যায়, সিটিং পজিশনের সাথে হ্যান্ডেলবারটাও অনেক ভালো অর্থাৎ সব মিলিয়ে আমি ভালোই আরাম পাই বাইকটা চালিয়ে।
শহরের মধ্যে আলোর তেমন দরকার হয়না তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দরকার হয় আর আমার বাইকের হেডল্যাম্পের আলো অনেক বেশি। অন্যান্য ইলেকট্রিক্যাল সুইচগুলো খুব ভালো কাজ করে ।
ব্রেকিং সব হাতে অর্থাৎ দুই হ্যান্ডেলবারে ব্রেকিং আর সামনে এবং পেছনে ঊভয়দিকেই ড্রাম ব্রেক । ব্রেকিং নিয়ে আমার কোন সমস্যা হয় না কারণ বাইক আমি বেশি স্পীডে রাইড করি না এবং তেমন হুটহাট করে ব্রেকিং করারও প্রয়োজন পড়ে না।
সাসপেনশন খুবই ভালো। রাইডার ও পিলিয়ন আরামের সাথে শহরের মধ্যে এই সাসপেনশন নিয়ে রাইড করতে পারবে। আমার মনে হয় না যে সাসপেশনের পারফরমেন্স আরও উন্নত করা হোক কারণ শহরে চলাচলের জন্য এই সাসপেনশন যথেষ্ট।
শোরুম থেকে আমাকে বলা হয়েছিলো মাইলেজ ৬০ এর মতো পাওয়া যাবে । আমি শহরের মধ্যে রাইড করে প্রায় ৫০-৫২ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি। শহরের মধ্যে চলাচলের জন্য এই মাইলেজ ঠিক আছে অন্তত আমি বলবো যে অটো ভাড়ার বিকল্প পথ হচ্ছে বাইকের মাইলেজ।
সার্ভিস সেন্টারে গিয়েছিলাম। তাদের সার্ভিস সেন্টারের মান ভালো আছে কিন্তু একটু বেশি গ্রাহকের জন্য সবাইকে ঠিক
মত সার্ভিস দিতে পারে না কারও কারও সার্ভিস ল্যাক ও হয় কিন্তু আমার তেমন কোন সমস্যা এখনও হয়।
দাম হিসেবে এবং সার্বিক দিক বিবেচনায় বাইকটি আমার কাছে একদম পারফেক্ট মনে হয়েছে। আমি মন চাইলেই এখন শহরের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারি এবং রিক্সা বা অন্য কোন বাহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ছোট এই বাইকটি নিয়ে আমি খুব আরামসে রাইড করতে পারি।
আমার ছোট্ট এই বাইকের কিছু ভালো দিক
-মাইলেজ ভালো
-চালিয়ে অনেক মজা
-ইঞ্জিন শক্তি ভালো
-দেখতে ক্ল্যাসিক্যাল
-পিলিয়নের সিটও অনেক প্রশস্ত
খারাপ দিক
-স্টার্ট দিতে একটু সমস্যা হয় কারণ এই বাইকে ব্রেক ধরে স্টার্ট দিতে হয় আর সেজন্য আমি ব্রেক ধরতে মাঝে মাঝে ভুলে যায় বলে একটু সমস্যা হয়।
এই ছিলো আমার টিভিএস এক্সেল ব্যবহারের অভিজ্ঞতা । আমি আমার স্বল্প জ্ঞ্যান দিয়ে আপনাদের সামনে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। তাই সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ।