আমি মোঃ আমিরুল ইসলাম, আমার বাসা রাজশাহীতে। আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তাই বলতে পারেন ব্যবসার কাজের জন্যই বাইক আমার বেশি প্রয়োজন। শুধু যে ব্যবসার কাজে তা ঠিক না আমার বয়সটাও বেশ হয়েছে তাই একটু এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করার কাজেও এই বাইকটি আমার অতি প্রয়োজনীয় একটি বাহন। বলতে গেলে এটিই আমার জীবনের প্রথম বাইক টিভিএস এক্সএল১০০। তবে এই ধরনের বাইককে মোপেড বলা হয়। পূর্বে এই ধরনের বাইকের ব্যবহার ছিল তবে তখন এর সাথে বাইসাইকেলের মত প্যাডেল সংযুক্ত ছিল কিন্তু বর্তমানে টিভিএস এক্সএল১০০ বাইকটির কোন প্যাডেল নাই তাই এটিকে সম্পূর্ণ বাইক বলা চলে। এটি আমার কাছে বেশ পছন্দের এবং একে আমি মন থেকে অনেক ভালোবাসি। এই বাইকটি আমি ৪ মাস যাবৎ ব্যবহার করছি। যে কোন বাইকেরই ভাল মন্দ দুটো দিক থাকে ঠিক তেমনি আমার এই বাইকটিরও ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে। আমি এই সামান্য কিছু দিন বাইকটি ব্যবহার করে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশা করি আপনাদের জন্য বেশ উপকারী হবে।
বাইকটির ডিজাইন আমার কাছে অনেক সুন্দর লেগেছে। এর পাশাপাশি বাইকটির বীল্ড কোয়ালিটি তেমন না হলেও আমার কাছে মোটামুটি বেশ মজবুত বলেই মনে হয়। বাইকটির ডিজাইনের গ্রাফিক্সগুলো বেশ সুন্দর। তাই ডিজাইন নিয়ে আমি কোন সন্তুষ্ট। তবে বীল্ড কোয়ালিটি আর একটু ভালো হলে ভালো হতো। কন্ট্রোলিং এর দিক দিয়ে বলবো অনেক ভালো।
আমি তেমন স্পীডে বাইক চালাই না তবুও বেশি গতিতে থাকলেও বাইকটি কন্ট্রোল করা আমার কাছে সহজ বলে মনে হয়েছে এবং এই বাইকটি তেমন স্লীপ খায় না। তবে বেশি গতিতে উঠালে বাইকটি সামান্য ভাইব্রেশন করে। বাইকটির শকাপ গুলোও বেশ ভালো খেলে আর তাই আমি তেমন কোন ঝাঁকুনি অনুভব করিনা। তাই আমি বলব বাইকটির সাসপেনশন ও ব্রেকিং বেশ ভাল, আমি এতেই সন্তুষ্ট।
টিভিএস এক্সএল১০০ বাইকটির ইঞ্জিন বেশ ভাল। প্রথম থেকেই বাইকটি আমাকে ভালো সার্ভিস দিয়ে আসছে। আমি আমার ব্যবসার কাজের গতি বাড়ানোর জন্য এই বাইকটি ব্যবহার করি বলতে গেলে প্রতিটা দিনই। তবে এখন পর্যন্ত আমি ইঞ্জিনে কোন সমস্যা অনুভব করি নাই। যদি শুধু ইঞ্জিন নিয়ে বলতে হয় তবে আমি বলবো যে, যেকোন মানুষ এই বাইকের ইঞ্জিন পারফর্মেন্স নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট থাকবে। তবে ইঞ্জিনের শব্দটা অনেকই বাজে যা আমার কাছে একদমই অপছন্দ। বাইকটির কমফোর্ট আমার কাছে মোটামুটি বেশ ভালো লেগেছে। বাইকটি চালিয়েও আমি বেশ আরাম অনুভব করি। এর সিটিং পজিশন বেশ ভালো এবং সিটিং পজিশনের পাশাপাশি এর হ্যান্ডেলবারটিও বেশ সমানুপাত। তাই সারাদিন জার্নিতেও আমার কোন সমস্যা হয় না। হ্যান্ডেলবারের সকল সুইচ গুলোও বেশ ভালো কাজ করে এবং এর গিয়ার দিতেও কোন সমস্যা হয় না কারণ সব কিছু হাতের মাধ্যমেই করা যায়। তবে ১০০সিসির বাইক হিসেবে এই বাইকটির হেডল্যাম্পের আলোটা আমার কাছে যথেষ্ট বলে মনে হয়নি কারণ আমি রাতে বাইকটি রাইড করলে বেশ সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাই আমি বলব এর আলোটা আরো বাড়ানো দরকার। আর একটি সমস্যা হলো এর স্টার্ট দিতে বেশ কষ্টকর। যা আমার কাছে ভালো লাগেনি বরং আমার কাছে এটি বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে।
বাইকটির তেল খরচে আমি অতি বেশ সন্তুষ্ট। আমি বর্তমানে ৬৫ কিমি মাইলেজ পাচ্ছি প্রতি লিটারে এমনকি তার চেয়েও বেশি। এই বাইকটির জন্য এই রকম মাইলেজ সত্যিই সন্তষ জনক। আর তাই তেল খরচের দিকে তাকিয়ে আমার কাছে বাইকটি আরো বেশি পছন্দ হয়েছে কারণ আমি অনেক বেশি ঘোরাঘুরি করতে পারি। তাই আমি বলবো এই বাইকটি অনেক ভালো এবং মাইলেজ সমৃদ্ধ একটি বাইক। যা বাজারের অন্য বাইকগুলোতে পাওয়া বেশ সমস্যা।
আমি রাজশাহী সপুরাতে তাদের সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়েছি। সার্ভিস সেন্টারের মান আমার কাছে বেশ ভালো মনে হয়েছে। তাদের আচার ব্যবহার বেশ ভাল এবং তাদের ম্যান পাওয়ার বেশ উন্নত। বাইক ঠিক করার কলা-কৌশল বেশ ভাল লেগেছে আমার কাছে তাই এই বিষয় নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে চাই না। সব মিলিয়ে এক কথায় বেশ ভালো।
ভালো দিক-
- ডিজাইন, বীল্ড কোয়ালিটি মোটামুটি
- লং জার্নিতে তেমন সমস্যা হয় না
- মাইলেজ অতি বেশ ভালো দেয়
- ইঞ্জিন ও সকল সুইচ বেশ ভালো কাজ করে
- সার্ভিস সেন্টারের মান বেশ ভালো
মন্দ দিক-
- ইঞ্জিনের শব্দটা বেশ অপছন্দ
- স্টার্ট দিতে বেশ কষ্টকর
- হেডলাইটের আলো অতি কম
আমি এর দাম নিয়ে সন্তুষ্ট কারণ বাজারের অন্য ১০০সিসি বাইকের তুলনায় এর তেল খরচ অতি কম তাই এর দাম নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। আরো বলব যে দাম হিসেবে একদম ঠিক আছে। এটা দেখতে সুন্দর ডিজাইনের একটি বাইক। আর তার চেয়েও বড় কথা হলো এই বাইকটি একটু বয়স্ক অর্থাৎ আমার মত ব্যক্তিদের জন্য একদম পারফেক্ট। বাইকটি দেখতে যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি ভদ্র ও মার্জিত। তাই কেউ যদি এই বাইকটি কিনতে চান তবে আমি বলবো বাজারের অন্য সব বাইকের তুলনাই এই বাইকটি অনেক ভালো এবং চালিয়েও বেশ মজা পাবেন। আমি এই বাইকটি কিনে ঠকি নাই। আশা করি আপনারাও ঠকবেন না।