আমাদের দেশে বিভিন্ন ডিজাইনের বাইক রয়েছে। বাইক কেনার আগে সবাই ডিজাইন ও সিসি লিমিট দেখে কিনেন। বিভিন্ন দাম ভেদে সিসি লিমিটগুলো তৈরী করা হয়। খুব অল্প সময়ে দ্রুত যাতায়াতের জন্য বাইকের তুলনা হয় না। আমার বাইকের নাম টিভিএস এক্স এল- ১০০ সিসি। এই বাইকটি বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ খুব বেশি পছন্দ করে। গ্রামে ও শহরে উভয় স্থানেই এই বাইকের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। সকল মানুষের জীবনেই কিছু না কিছু আলাদা ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা থাকে। তেমনি আমারও ছোটবেলা থেকেই এমন একটি মোটরসাইকেল কিনার খুব ইচ্ছা ছিল। আমি যৌবন বয়স থেকে বাইক ব্যবহার করা শুরু করি। এই বাইকের আগে আমি একটি বাইক ব্যবহার করেছি। যেটির নাম ফ্রিডম রানার। এ বাইকটি থেকে আমি তেমন আরাম অনুভব করিনি। আমার পরিচয় হলো আমি মোঃ রবিউল ইসলাম। লেখাপড়া শেষ করে এখন একটা ব্যবসার কাজে নিয়োজিত আছি। এই কাজে আমাকে প্রতিনিয়ত এখানে-ওখানে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে আমার বাইককেই আমি বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত আমি ব্যক্তিগত কাজে ও ব্যবসার কাজে যাতায়াতের জন্যই এ বাইকটি কিনি। তবে আমি কোন প্রফেশনাল বাইকার নয়। ১ বছর যাবত এই বাইকটি আমি ব্যবহার করছি। ১ বছরে প্রায় ৯,০০০ কিমি পথ চালিয়েছি। আমার রিভিউ পড়ে পাঠক ভাইয়েরা অনেক উপকার হবে। কারণ এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। প্রতিটি বাইকেরই ভাল ও মন্দ দিক থাকে। আমার বাইকের এই দিকগুলো তুলে ধরার জন্যই আজ মূলত আমি হাজির হয়েছি। এছাড়া এটা আমার জীবনের প্রথম রিভিউ। আমার লিখার মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয় সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রথমে বাইকের মূল অংশ ইঞ্জিন দিয়েই শুরু করা যাক। ইঞ্জিন হল বাইকের প্রাণ কেন্দ্র। আমার এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল। এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনের ভেতরে কোন সমস্যা দেখা দেয় নি। ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার বাইকের ইঞ্জিনটা খুব গরম হয়। বলতে গেলে আমি দীর্ঘ যাতায়াত খুব কম করি। কারণ, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আশেপাশে বা পরিবার নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেলে এই বাইক থেকে আমি খুব ভাল অনুভূতি পাই। বাইকটি টপ স্পীডে সঠিক গতি তুলতে পারে। এ বাইকের ইঞ্জিনের ভেতরে বা চেনের ভেতরে কোন প্রকার খারাপ শব্দ আমি পাই না। যারা তেল খরচ খুব কম চান তাদের জন্য এ বাইকটি পারফেক্ট।
এখন ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বাইকটির ডিজাইন ভাল লাগার কারনেই মূলত আমি এই বাইকটি কিনি। অন্যান্য ১০০ সিসি বাইকের তুলনায় এই বাইকের ডিজাইন আমার কাছে ভাল লেগেছে। বাইকটি পড়ে গেলেও খুব একটা সমস্যা হয় না, কারণ বডির প্লাস্টিকগুলো অনেক মজবুত, যা সহজে ভেংগে যায় না বা ফেটে যায় না। বাইকটির তেলের ট্যাংক ডিজাইনকে অনেক সুন্দর করেছে রেখেছে। এজন্য আমি বলছি, সব দিক বিবেচনা করে বাইকটির ডিজাইন একটু ভিন্নরকম ও আসাধারন।
শোরুম থেকে বাইকটি কিনার সময় যে মাইলেজের কথা বলেছিল, আমি ঠিক তেমন মাইলেজই পাচ্ছি। তারা যাই বলুক না কেন, আমি ১ লিটার তেলে ৬০ প্লাস কিলোমিটারের বেশি পথ চলতে পারি। ১ বছর পরেও আমি ৬০+ মাইলেজ পাই। আমি মনে করি ১০০ সিসি বাইক হিসেবে মাইলেজটা সঠিক আছে। এজন্য মাইলেজ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে ভাল মাইলেজ পাবার আশায় আমি এই বাইকটি কিনি।
এই বাইকটির সিটিং পজিশন মোটামুটি ভাল। সিটও বেশ নরম আছে। আমার বাইকে এক সাথে দুই জন বসে খুব সহজেই রাইড করতে পারি। আমি সিটে বসে খুব সহজেই মাটিতে পা রাখতে পারি, এই বাইকটি অন্যান্য বাইকের মত খুব বেশি উঁচু না। এছাড়া বাইকটির হ্যান্ডেলবারের ডিজাইনও অনেক ভাল, যা আমাকে ভাল অনুভূতি এনে দেয়। আমি বাইকটি সর্বোচ্চ গতি ৭০ এ তুলেছি। বেশি গতিতে তুললে বাইকটি খুব কাপে। আমার হাত ঝিনঝিন করে। যদিও আমি তেমন বেশি গতিতে বাইক চালাই না। কারণ আমি অন্যদের মত জীবনের রিস্কি নিয়ে বাইক রাইড করি না। এছাড়া এক দিনে আমি প্রায় ১৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। তবে দীর্ঘ যাতায়াতে আমার পিঠে, কোমরে ব্যাথা করে। এই বাইকটির সুইচগুলো অনেক সুন্দর। কোন সময়েই এগুলো ব্যবহার করতে আমার সমস্যা হয় না। এছাড়া রাতে হেড লাইট থেকে আমি প্রচুর আলো পাই। যা আমাকে পরিষ্কার রাস্তা দেখতে সাহায্য করে। বাইকটির লুকিং গ্লাস থেকেও পিছনের দৃশ্য ভাল ভাবে দেখা যায়। বাইকের ব্যাটারিটাও অনেক শক্তিশালী। বাইকটির ব্রেক অনেক ভাল। বাইকের ক্লাস অন্যান্য বাইকের তুলনায় অনেক ভাল। বাইকের সাসপেনশন তেমন ভাল না। কারন, খারাপ রাস্তায় রাইড করলে খুব বেশি ঝাঁকুনি মনে হয়। তবে বাইকটির চাকা ও ট্যায়ার গুলো অনেক মজবুত। খুব সহজে চাকা পিছলায় না। আমি মনে করি এই বাইকটি দীর্ঘ ও দ্রুত যাতায়াতের জন্য নয়। এই বাইকটি গ্রামের মানুষ বেশি মাইলেজ পাবার আশায় বেশি কিনে। আমি শহর ও গ্রাম উভয় দিকে এ বাইকটি দেখতে পাই। এই বাইকগুলো অন্যান্য বাইকের চেয়ে দেখতে ভিন্নরকম। তবে বাইকটির ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল।
আমি সার্ভিসিং সেন্টারে একদিন গিয়েছিলাম, সেখানকার পরিবেশটা আমার খুব ভাল লেগেছে। তাদের আচার ব্যবহার, কাজের মান আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। এছাড়া সেখানে কাজের জন্য যথেষ্টসংখ্যক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এই বাইকের সকল পার্টস সেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে। তাদের কাছে আমি আমার বাইকের যে সমস্যাটি নিয়ে গিয়েছিলাম, সার্ভিসিং করার পরবর্তীতে সেই সমস্যাটি আর অনুভব করিনি। বলতে গেলে সেখানে তাদের সব কিছুই অনেক উন্নত মানের।
এই বাইকের পারফরমেন্স বিবেচনা করে দামটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। যদি দামটা আর একটু কমানো হয় তবে বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পাবে। নতুন বাইক ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে বলবো, বাইকটির দাম সামান্য একটু বেশি হলেও বাইকটির ডিজাইন, পারফরমেন্স ও মাইলেজ বিবেচনা করে নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। আমি মনে করি আপনারাই জিতবেন। কারন বাইকটি আপনাদের হতাশ করবে না। আমি আবারও বলছি, বাইকটি অতি দ্রুত যাতায়াতের জন্য নয়। তবে বাইকটি চালিয়ে কনফোরট আরাম আছে।
ভাল দিকঃ ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, সিটিং পজিশন ভাল, মাইলেজ ভাল, ডিজাইন ভাল, সুইচগুলো সুন্দর, কন্ট্রোল ভাল, ব্রেক ভাল, হ্যান্ডেলবার খুব সুন্দর।
মন্দ দিকঃ দাম বেশি, সাসপেনশন তেমন ভাল না, বেশি স্পিডে খুব কাপে, দীর্ঘ যাতায়াতে খুব কষ্ট হয়।
আমি পরিশেষে আর একটি কথা বলে শেষ করতে চাই, এই বাইকটি রাইড করলে সবাই একটু ভিন্ন রকম অনুভূতি পাবেন। বাইকটি ১ বছর পরেও দেখতে আকর্ষণীয় রয়েছে, কিছুটা নতুনের মতই। অল্প টাকার মধ্যে কেউ যদি ভাল মানের বাইক কিনতে চান, তবে সবাই এই বাইকটি কিনবেন। সবাইকে ধন্যবাদ। ★★★