স্বদেশি মোটরসাইকেল প্রস্তুতকারক হিসেবে রানার অটোমোবাইলের বেশ কদর রয়েছে। । বাংলাদেশে বিদ্যমান মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইন্ডিয়ান এবং চাইনিজ মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলোর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। স্বদেশি যে ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একধাপ এগিয়ে রানার অটোমোবাইল। অন্যদিকে ইউএম একটি আমেরিকান ব্র্যান্ড। বিখ্যাত এই মোটরসাইকেল কোম্পানিটি গ্রাহকদের যোগাযোগ সুবিধার কথা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন যোগাযোগের বাহন ও যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী উৎপাদন করে।
সম্প্রতি ইউএম রানার বাজারে নিয়ে এসেছে তাদের নতুন কিছু বাইক এবং সে সকল বাইকের মধ্যে একটি ইউএম রানার রেনেগেড কমান্ড। কমান্ড নামকরণ করা হয়েছে কারণ এই বাইকটা দেখতে অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত ক্রুজার বাইকগুলোর মতো এবং তারই আদলে এখানে
প্রয়োজনীয় ফিচারস দেওয়ার চেষ্টা করেছে ইউএম রানার। তাই চলুন এই বাইকটার ফিচারস সম্বদ্ধে আজ পরিচিত হই।
ডিজাইন
সর্বপ্রথম বাইকের যে বিষয়টা গ্রাহকদের নজরকাড়বে সেটি হল এর অভিনব ডিজাইন। বাইকটা যেহেতু ক্রুজার তাই ক্রুজারের যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার সবটাই এখানে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। বাইকের ডিজাইনের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে কমান্ড লুক।আ আমরা বিভিন্ন সিনেমাতে যে সকল কমান্ডো ধরনের বাইক দেখতে পাই তার ডিজাইনের সবটাই এখানে দেবার চেষ্টা করেছে ইউএম রানার। এছাড়াও মোটা চাকা,স্টাইলিশ গ্রাফিক্স,গোলাকার হেডল্যাম্প, আকারে চওড়া ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে ডিজাইনের দিক দিয়ে বাইকটাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
ক্রুজার এই বাইকটির আরেকটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে স্পোক রিম। বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সকল বাইকের সাথে এলয় রিম ব্যবহার করা হয়েছে যেহেতু এটা একটা ক্রুজার বাইক তাই এখানে রাইডারকে ভিন্নধর্মী এক অনুভূতি দেওয়ার জন্য স্পকেট রিম ব্যবহার করা হয়েছে।
ডাইমেনশন
ডাইমেনশনের দিক দিয়ে ক্রুজার এই বাইকটির রয়েছে লম্বায় ২২৯০ মিমি , চওড়ায় ৯০০ মিমি এবং উচ্চতায় ১৩৯০ মিমি। সাধারণত ক্রুজার বাইকের সিটের উচ্চতা একটু কম হয়ে থাকে ঠিক এই বাইকের ক্ষেত্রে বিকল্প কিছু হয় নি । বাইকের সিটের উচ্চতা ৭৭০ মিমি , সিটের উচ্চতা ছাড়াও বাইকের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে ১৫০ মিমি , হুইলবেজ রয়েছে ১৫৫০ মিমি। সবচেয়ে মজার একটি বিষয় হল বাইকের ফুয়েল ট্যংকারটা অন্যান্য স্বাভাবিক বাইকের থেকে অনেক বড় এবং এখানে প্রায় ১৮ লিটার ফুয়েল ধরবে। আর বলা যেতে পারে এটা বাংলাদেশের মধ্যে এই সেগমেন্টের বাইকগুলোর মধ্যে এর ফুয়েল ট্যংকটা অনেক বড়। আর সব মিলিয়ে বাইকের ওজন প্রায় ১৬৩ কেজি। বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ডাইমন্ড বডি ফ্রেম।
ইঞ্জিন
ইউএম রানার চেষ্টা করেছে বাইকটার সাথে শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করার। যেহেতু বাইকটা দেখতে দানবীয় তাই এর সাথে অবশ্যই শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করতে হবে যাতে চলার পথ আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক হয়। তাই সকল দিক বিবেচনা করে ইউএম রানার এই বাইকের সাথে ব্যবহার করেছে ১৪৯ সিসির সিংগেল সিলিন্ডার ৪ স্ট্রোক ইঞ্জিন যা ১৪.৫ বিএইচপি @৯৫০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার এবং ১২ এনএম@ ৮০০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ইঞ্জিনকে ঠান্ডা করার জন্য এখানে ব্যবহার করা হয়েছে লিকুয়িড কুলিং সিস্টেম যা লং রাইডে অনেক ভালো সাপোর্ট দিবে। ইঞ্জিনের কম্প্রেশান রেশিং ১১:১ আর ইঞ্জিন চালু করার জন্য থাকছে ইলেকট্রিক ও কিক স্টার্ট অপশন। ১৫০ সিসি হিসেবে অন্যান্য বাইকের ইঞ্জিনের মতই এখানে ৫টি ম্যানুয়াল গিয়ার বক্স রয়েছে। ইঞ্জিনের বিষয় নিয়ে বলতে গেলে ইউএম রানার তাদের এই বাইকে অনেক ভালো এবং অত্যাধুনিক ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে।
ব্রেকিং ও সাসপেনশন
একটি বাইকের ভালো ইঞ্জিন পাওয়ার দিলে সব কিছু সম্পন্ন হয় না তার জন্য দরকার স্পীড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভালো ব্রেকিং সিস্টেম এবং ভালো ব্যালেন্সিং এর জন্য সাসপেনশন।
তারা তাদের এই বাইকে ব্যবহার করেছে সামনের দিকে ২৮০ মিমি ডিস্ক ব্রেক এবং পেছনের দিকে ড্রাম ব্রেক। সামনের ডিস্কের আকৃতিটা বেশ বড় যা ব্রেকিংকে করবে আরও শক্তিশালী। অপরদিকে সামনে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক ফরক এবং পেছনে ডাবল ডাম্পার সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণত ক্রুজার বাইকগুলো একটু আরামদায়ক হয়। আশা করা যায় এই সাসপেনশন রাইডারকে আরামদায়ক রাইডিং অনুভূতি দিবে।
সিটিং পজিশন
রাইডার ও পিলিয়নের আরামের কথা বিবেচনা করে ক্রুজার এই বাইকটিতে স্প্লিট সিট ব্যবহার করেছে যেখানে রাইডার ও পিলিয়ন আরামের সাথে বসতে পারবে। আর সিটিং পজিশনগুলো বেশ প্রশস্ত।
টায়ার
দানবীয় আকৃতির বাইকটির লুক আরও দানবীয় করতে সামনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ১১০/৯০-১৬ এবং পেছনের দিকে ১৪০/৯০-১৬ সাইজের মোটা চাকা। এই মোটা চাকার ফলে রাইডার ভালো ব্যালেন্সিং পাবে
ইলেকট্রিক্যাল ও মিটার কনসোল
ইলেকট্রিক্যাল ফিচারসগুলোর মধ্যে এখানে পাওয়া যাবে ১২ ভোল্টের ব্যাটারি ৫৫/৫৫ ওয়াট এর হ্যালোজিন হেডল্যাম্প। বাইকটির সবচেয়ে অভিনব একটি ইলেকট্রিক্যাল ফিচারস হচ্ছে ইউএসবি চারজার অপশন। এতে করে লং ট্যুরে গেলে মোবাইলের নেভিগেশন চালু করে চার্জের চিন্তা করা লাগবে না। মিটার কনসোলে রয়েছে এনালগ ও ডিজিটাল এর সমন্বয়।
পরিশেষে বলা যায় যে , যেহেতু রানার একটি স্বদেশি ব্র্যান্ড তাই তারা দেশের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপন করে সহনীয় দামের মধ্যে ভালো কিছু বাইক গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।তারই একটি অংশ হিসেবে ইউএম রানার নিয়ে এসেছে রেনেগেড কমান্ডো এই ক্রুজার বাইকটি। এই বাইকটি বাংলাদেশের সকল রানার ডিলার পয়েন্ট ও শোরুমে পাওয়া যাবে এবং আশা করা যায় বাংলাদেশের মোটরসাইকেল জগতে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। বাইকটির আকার, ডিজাইন ও অন্যান্য সব কিছু মিলিয়ে ইঞ্জিনের দিক থেকে একটু দুর্বল মনে হয়েছে । পেছনে ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করলে এবং ইঞ্জিন শক্তি আরেকটু বৃদ্ধি করলে রাইডার আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে রাইডিং করতে পারতো।