একটি মোটরসাইকেল কিনতে গেলে আপনার মাথায় প্রথম যে বিষয়টি আসে তা হলো ঝুঁকি। শুধু আপনার মাথায় আসে ব্যাপারটি এমন নয়। আপনার আশপাশের মানুষজন আপনার মাথায় ঝুঁকির বিষয়টি ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য যা যা করা প্রয়োজন ঠিক তা তাই করে। আর যদি আপনার রুচি বা পছন্দ একটু ব্যতিক্রম হয় তবেতো কথায় নেই। ঠিক যেমনটি ঘটেছে আমার সাথে।
বাংলাদেশে এমনিতেই মোটরসাইকেলের বৈচিত্র কম। তাই নির্দিষ্ট কিছু মোটরসাইকেলের মাঝেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় মোটরসাইকেল প্রেমিকদের। আমি বরাবরই ক্রুজার প্রেমিক। সেই লক্ষে খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও যাই একটি স্বপ্নের মোটরসাইকেল। তবে বিশেষজ্ঞদের নানা বিশ্লেষণ এবং তার ভিত্তিতে অভিজ্ঞ বন্ধুদের মতামত প্রায় সফল হয়ে গেছিলো আমার ভেতর থেকে ক্রুজিং মোটরসাইকেলের ভুত নামাতে। সকলেই আমাকে বার বার বলেছেন এই ধরণে মোটরসাইকেল বাংলাদেশে কম চলে, পার্টস এভেইলেবল না, সার্ভিস এভেইলেবল না আরও অনেক কিছু। তবে ইউনাইটেড মটর্স এর রেনেগেড কমান্ডোকে আমার মাথা থেকে বের করতে পারিনি কোনো মতেই।
আমার শখ এবং রুচি যেন এমনি একটা ক্রুজিং মোটরসাইকেল খুঁজছিল। তার বৈরিতা যতই থাকুক। সেইটাই আমার নেয়ার ছিলো। বাংলাদেশে ইউনাইটেড মটর্স এর ডিলার হচ্ছে দেশি কোম্পানি রানার। গতবছর রানারের তেজগাঁও শোরুমে গিয়ে মোটরসাইকেলটি সামনাসামনি দেখে এসেছিলাম। তখন থেকে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করতে, টাকা জোগাড় করতে করতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। সিদ্ধান্ত যখন চুড়ান্ত তখন কভিড মহামারির লকডাউন এর মাঝামাঝি একটি সময়। তাই বলেতো আর মোটরসাইকেল কেনা থেমে থাকতে পারেনা।
আমি লেখাপড়ার সুবাদে ঢাকায় থাকলেও মহামারি পরিস্থির কারণে নিজ জেলা রাজশাহীতে অবস্থান করছি। সিদ্ধান্ত হওয়া মাত্র ফোন করলাম রানার এর হেড অফিসে। অর্ডার কনফার্ম করেই বাবাকে নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে রানারের ফার্মগেট শাখার একাউন্টে টাকা জমা দিলাম। ২ দিনের মাঝে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছে গেলো স্বপ্নের মোটরসাইকেলটি। সকল কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য রানারের কর্মকর্তা মাহমুদ ভাই এবং হোসেইন ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয়। প্রথম রাইড এর অভিজ্ঞতা আমার আশাতীত ছিল। ঠিক কেমন তাইতো? আমি অনেকগুলো রিভিউতে দেখেছিলাম যে গাড়িটি বেশ বড় হওয়ায় ভিড়ের মাঝে চালাতে অসুবিধে হয়। টার্ন নিতে বেশ অসুবিধে হয়। হাতের সকল সুইচ কমফর্টেবল দুরুত্বে নেই, তাই ইন্ডিকেটর সুইচ অথবা ইঞ্জিন পাওয়ার অন অফ সুইচ অথবা হর্ন পর্যন্ত পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হয়। কিন্তু আমার কাছে এর কিছুই মনে হয়নি।
আসলে মোটরসাইকেলটি দেখে যতটা বড় মনে হয় ততটা বড় কিনা তা নিয়েও আমার সন্দেহ রয়েছে। সবচেয়ে আরামদায়ক যেই বিষয়টা তা হলো সিটিং পজিশন। মোটরসাইকেলটি চালাতে আমাকে বিশেষ কনো এফর্ট দেয়ার প্রয়োজন পরেনা শুধুমাত্র এর সিটিং পজিশন এর জন্য। আশা করছি রাজশাহী থেকে ঢাকা ফেরার সময় এবং সকল লং ট্যুরে আমি এর এডভান্টেজ পাবো। এবং পরবর্তি রিভিউতে অবশ্যই আপনাদের জানাবো। আমার কাছে যা ভালো লাগেনি তা হলো মোটরসাইকেলটির লুকিং গ্লাস। বেশ নিম্ন মানের লুকিং গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। তবে শিঘ্রই আমি তা পরিবর্তন করে ফেলতে পারি। এবং যেহেতু লুকিং গ্লাস, তাই খরচ নিয়ে হয়তো আমাকে বেশি চিন্তায় পড়তে হবেনা। আরেকটি বিষয় হচ্ছে টুল বক্স। টুল বক্স খুঁজে বের করবার জন্য আমাকে রানারের রাজশাহী সার্ভিস সেন্টার অব্দি যেতে হয়েছে। টুল বক্সটি ডান পাশে দুই চাকার মধ্যে একটি ছোট্ট করিডরে রাখা থাকে। প্রথমে চাবি দিয়ে একটি বক্স এর মুখ খুলতে হয়। সেইটা খোলার পরে উপরের দিকে একটা ছোট্ট করিডর বা চেম্বার আছে। টুলবক্সটা সেখানেই থাকে। যদিও সেখানে রাখাটা বেশ নিরাপদ। তবুও বের করতে কষ্ট হয়। পেছনের সিটের নিচে একটা চেম্বার ও দেওয়া আছে। তবে সেইটা ব্যবহার করাও বেশ কষ্ট সাধ্য। কারণ অন্যান্য মোটরসাইকেলের মত রেনেগেড কমান্ডোর সিট খুব সহজেই খুলে ফেলা যায়না। এই মোটরসাইকেলের দুটো সিটই স্ক্রু দিয়ে লাগানো থাকে। তাই পিছের সিটের নিচে থাকা চেম্বারটি কেও ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে, নিরাপদ স্থান থেকে টুল বক্স বের করতে হবে এরপর স্ক্রু খুলে চেম্বারটি ব্যবহার করা যাবে।
আরেকটি বিষয় সকলের জেনে রাখা ভাল। এইটা কারো কাছে নেগেটিভ আবার কারো কাছে পজেটিভ হতে পারে। আর তা হলো মোটরসাইকেলটি নিয়ে রাস্তায় বেরুলে অন্তত ১০ জনের কাছে এর বিস্তারিত আপনাকে বলতে হবে। আপনি যেই রাস্তা দিয়েই যাননা কেনো, আশে পাশের মানুষ তাঁদের জীবনের মূল্যবান সময়ের অন্তত ২০ সেকেন্ড নষ্ট করে আপনার বাইকের দিকে হ্যা করে তাকিয়ে থাকবে এবং আপনার চোখের কোনা দিয়ে আপনি প্রত্যেকের এক্সপ্রেশন দেখতে পাবেন। একইসাথে রাস্তায় যেতে যেতে অন্তত ১০ জন পরিচিত মানুষ আপনাকে দেখে বাইকের সামনে এসে দাঁড়াবে। তা আপনার বাইকের স্পিড যতই থাকুকনা কেনো।
বাইকটির ফার্স্ট ইম্প্রেশন জানাতে এর চেয়ে বেশি কিছু লেখা সম্ভব নয়। আশা রাখছি ব্রেক উন পিরিয়ড পার হলে একটা ফুল বাইক রিভিউ নিয়ে আসতে পারবো আপনাদের সামনে।