আমি যে বাইকটি কিনবো সেই বাইকটি ইউনিক হবে এটা আমরা সবাই চাই। কারণ কোন কিছু অদ্বিতীয় হলে সেটার প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেক বেশি থাকে। ঠিক যেমনটা হয়েছে আমার বাইক চয়ন করার ক্ষেত্রে। আমি বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইক দেখেছি কিন্তু কমবেশি সব বাইকই আমাদের দেশের রাস্তায় চলতে দেখা যায়। আমি মনে মনে ভাবলাম যে এমন একটি বাইক আমার নির্বাচন করা উচিত যেটি আমার এলাকায় প্রথম হবে এবং খুব কম মানুষের থাকবে। ছোটবেলা থেকেই ভেসপা বাইকের প্রতি আমার আকর্ষণ অনেক বেশি কারণ আমি ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছি যে আমাদের বাসায় ইতালিয়ান ভেসপা বাইক ছিলো। সেই থেকেই ভেসপা বাইক দেখলে আমার আকর্ষণ এবং ভালোবাসা দুটোই বেড়ে যায় । তাই বাইক কেনার ক্ষেত্রে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাজারে ইউনিক ডিজাইনের একটি স্কুটার বা ভেসপা বাইক কিনবো।
অনেক গবেষনা করার পর,বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখার পর,শোরুমে ভিজিট করার পর আমি পছন্দ করলাম
Vespa VXL 150 বাইক। এই ভেসপা বাইক গুলোর একমাত্র পরিবেশক আমাদের স্বদেশীয় কোম্পানি রানার অটোমোবাইল। আমি এই
Vespa VXL 150 বাইক দেখার জন্য রানার এর শোরুম এ গিয়েছিলাম যেটি আমাদের রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র রানী বাজারে অবস্থিত । সেখানে গিয়ে আমি লক্ষ্য করি যে এই বাইকের ডিজাইন অদ্বিতীয় এবং বাজারে এই ধরনের বাইক খুব কমই রয়েছে। ভেসপার প্রতি ভালোবাসা এবং বাইকের প্রতি আবেগ থেকে আমি এই
Vespa VXL 150 বাইকটি ক্রয় করেছি।
এখন পর্যন্ত আমি এই বাইকটি রাইড করেছি এক মাসে ৪০০কিলোমিটার। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে এই বাইকটি ৪০০ কিলোমিটার রাইড করে তেমন খারাপ অনুভব হয়নি। আমি যে সকল বিষয় খারাপ পাচ্ছি এবং যে সকল বিষয় খুব ভালো অনুভব করেছি সেগুলো আজকে আপনাদের সাথে মোটরসাইকেল ভ্যালী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শেয়ার করব। আশা করি আপনারা এই
Vespa VXL 150 বাইক সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
প্রথমেই আমি শুরু করতে চাই এই বাইকের কিছু ভালো দিক দিয়ে -
আমার কাছে
Vespa VXL 150 বাইকের ডিজাইন অনেক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে এই বাইকের মধ্যে ক্লাসিক্যাল একটি ভাব রয়েছে যা আগের ভেসপা বাইক কে মনে করিয়ে দেয়। Vespa VXL 150 দেখলেই আমার অতীতের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় এবং বাইকের প্রতি আমার আবেগ আরো বেড়ে যায়। আমি সত্যি বলতে এই বাইকের ডিজাইন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট এবং ধন্যবাদ জানাই যারা এই বাইকটি বাংলাদেশ পরিবেশন করেছেন।
ডিজাইন এর পাশাপাশি আমার কাছে এই বাইকের কালার কম্বিনেশন টাও অনেক ভালো লেগেছে।
Vespa VXL 150 বাইকে খুবই মার্জিত কালার ব্যবহার করা হয়েছে যেটা ক্লাসিক্যাল একটি ভাব ফুটিয়ে তোলে ।
যেহেতু ১৫০ সিসির একটি বাইক তাই এর ইঞ্জিন পারফরম্যান্স নিয়ে কিছু বলা যাক। ইঞ্জিন পারফরমেন্সের দিক থেকে আমি এই
Vespa VXL 150 বাইক থেকে খুবই ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছি। ৪০০ কিলোমিটার রাইড করে আমি তেমন খারাপ কোন কিছু অনুভব করিনি ইঞ্জিন পারফরম্যান্স থেকে। ইঞ্জিনের শক্তি, টর্ক এবং অন্যান্য বিষয়গুলোও আমার মনে হয় যে তারা খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছে।
এটি একটি স্কুটার ক্যাটাগরির বাইক তাই লং রাইডের এই বাইক নিয়ে তেমন ভালো অনুভূতি পাওয়া যাবে না বলে আমি মনে করি। শহরের রাস্তার মধ্যে কিংবা ছোটখাটো ট্যুরের জন্য এই বাইকটি সেরা আরামের দিক থেকে বিবেচনা করলে। সিটিং পজিশন থেকে আমি খুব ভালো আরাম অনুভব করি এবং কোন ধরনের ব্যাক পেইন বা অস্বস্তি অনুভব হয় না। শহরের মধ্যেই আমি একদিনে প্রায় ৫০ কিলোমিটার একটানা রাইড করেছি এবং এই রাইডে অস্বস্তি কোন কিছু অনুভব করিনি।
ব্রেকিং ফিডব্যাক অনেক ভালো পেয়েছি। সামনে এবং পেছনের উভয় দিকের ব্রেকিং সিস্টেম খুবই ভালো। সামনের চাকায় ব্যবহার করা হয়েছে ডিস্ক ব্রেক যেটা আমার কাছে খুবই পছন্দ হয়েছে এবং পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে ড্রাম ব্রেক। মোট কোথায় ব্রেকিং এর দিক থেকেও এ বাইকে কোন ঘাটতি আমি অনুভব করিনি।
মাইলেজের দিক থেকে শহরের মধ্যে আমি ৪০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৪৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ পাচ্ছি। একটি স্কুটার হিসেবে আমি বলব যে খুবই ভালো মাইলেজ কারণ আমরা জানি যে স্কুটার বেশি মাইলেজ এর জন্য বা লং রাইডে ভালো মাইলেজ পাওয়ার জন্য কেনা হয় না। স্কুটার বা ভেসপা হল রিলাক্সে রাইড করার মত একটি বাহন যা বাজারে অন্যান্য বাইকের থেকে একদমই ভিন্ন।
সর্বোপরি ভালো দিক হিসেবে একটা কথা বললে আপনাদের সামনে সব পরিস্কার হয়ে যাবে যে, স্কুটার হিসেবে যা যা থাকা দরকার তার সব কিছুই এই বাইকের মধ্যে আমি পেয়েছি। আশা করি এই বাইকটি আপনাদের অনেক পছন্দ হবে এবং হতাশ করবে না।
মন্দ দিক এর মধ্যে আমি যে সকল বিষয় অনুভব করেছি-
বাইকের চাকা গুলো একটু মোটা হলে আমার মনে হয় খুবই ভালো হতো। চাকা গুলোর সাইজ একদমই যে চিকন সেটা না তবে উভয় দিকে যদি মোটা চাকা ব্যবহার করা যেত তাহলে ব্যালেন্স ব্রেকিং বর্তমানে থেকে অধিক বেটার হতো।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বাইকের দাম আমার কাছে কিছুটা বেশি মনে হয়েছে। আমার মনে হয় এই বাইকের দাম আর একটু কমালে এর ক্লাসিক্যাল ভাবের জন্য অনেকেই প্যাশন হিসেবে কিনতে পারেন।
ভালো মন্দ সব জিনিসের রয়েছে ঠিক বাইকের ক্ষেত্রে একই।আমি ৪০০ কিলোমিটার রাইড করে যে সকল ভালো দিক পেয়েছি বা খারাপ দিক পেয়েছি সেগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। এর ফলে আপনারা এ বাইক সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন এবং বাইকটি কিছু বিষয় সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত হতে পারবেন। হয়তো আমার এই রিভিউ এর মাধ্যমে আপনাদের শো রুমে গিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন করতে হবে না। আমি আমার রাইডের অনুভূতি যা যা পেয়েছি তা সবকিছুই আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।সবাই ভাল থাকবেন এবং যদি এই বাইকটি কিনতে চান তাহলে অবশ্যই নিতে পারেন আমার পরামর্শ থাকলো।
ধন্যবাদ সবাইকে।