সবাইকে স্বাগতম জানাই আমি মিজানুর রহমান, আমার বাড়ি নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় এবং পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার মতে বাইক হল সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন একটি যান যা ব্যক্তিগত যানবহন হিসেবে সত্যিই অতুলনীয়। আমি আমার প্রতিদিনের কর্ম সম্পাদন করার ক্ষেত্রে বাইক ব্যবহার করে থাকি যা আমার সময় এবং টাকা দুটোই বাচায় আমি যেহেতু গ্রামে বাস করি সে জন্য বাইক আমার কাছে আমার প্রয়োজেনের চেয়েও বেশি কিছু। যদি বাইক কেনার মুল কারণ নিয়ে কথা বলি তবে আমাকে স্বীকার করতে হবে যে, আমার ব্যবসায়িক কাজ এবং প্রতিদিনের যাতায়াত সহজ করাই ছিল মুল তাগিদ। এবার মুল কথায় আসা যাক, আজ আমি এখানে মুলত আমার বাইক এবং এতে রাইডিং এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য উপস্থিত হয়েছি। আমি গত দুই বছর যাবত “ভিক্টর আর ১১০সিসি” ব্যবহার করে আসছি। আমি ধন্যবাদ জানাতে চায় মোটরসাইকেলভ্যালীকে আমাকে এমন একটা সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে। গত দুই বছরে আমি এই বাইকটাকে সবরকম ভাবে ব্যবহার করেছি এবং প্রায় সব ধরনের অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি এই বাইক নিয়ে। আজ আমি আপনাদের সাথে ভাল এবং খারাপ, সব রকম অভিজ্ঞতা শেয়ার করব এবং বলে রাখা ভাল যে আমি কোন পেশাদার বাইকার না বরং একজন সাধারন ব্যক্তি। আবার এটাই আমার দেওয়া প্রথম রিভিউ কাজেই ভুল হতে পারে এবং আপনার মতের সাথে নাও মিলতে পারে। আশা করি সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করবেন।
আমি শুরু করতে চাই সেই অংশ দিয়ে যাকে একটি বাইকের হার্ট বলা হয় এবং তা এটির ইঞ্জিন। এককথায় বলতে গেলে এই বাইকের ইঞ্জিন পারফরমান্স অসাধারন এবং সত্যিই সন্তোষজনক। এখন পর্যন্ত আমি এতে কোন সমস্যা ফিল করিনি। কোন ধরনের বাজে শব্দ বা অতিরিক্ত গরম হউয়া এখনও কিছু নাই বরং এর পারফরমেন্স আমার কাছে যথেষ্ট ভাল লাগে। আমি নিজে এর সর্বোচ্চ গতি উঠিয়েছি ৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এবং আমি এক্সেলেরেশন নিয়ে সন্তুষ্ট। মাইলেজ নিয়ে বলতে গেলে মাইলেজ ভাল তবে যেমন আশা করেছিলাম তেমন না। বর্তমানে আমি মাইলেজ পাচ্ছি ৫০ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং আমার মতে এটা ৬০ কিলোমিটার প্রতি লিটার হলে পারফেক্ট হত ১০০সিসি ইঞ্জিন হিসেবে। আমি মাইলেজ নিয়ে খুশি হতে পারিনি।
এবার আসি এর আউটলুক নিয়ে কথা বলতে। এর স্মার্ট এবং হ্যান্ডসাম লুক শুধু আমাকেই না বরং যে কাউকে ইম্প্রেস করতে পারে বলে আমি মনে করি। আমি এর ডিজাইনটা বেশ পছন্দ করি কিন্তু এর বিল্ড কোয়ালিটিতে কিছু সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয়। আসলে এই বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি বলার মত ভাল আর কই। তেমন স্পেসিয়াল কিছু আমি দেখি না কারণ এর বডিতে দুর্বল কোয়ালিটির প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। সে জন্য আমার মনে হয় যে ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটির কম্বিনেশন ভাল তবে খুব ভাল বা বেশ ভাল বলতে পারছি না। আর এই কারনে এই বাইকের স্থায়িত্ব নিয়েও আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু বাইরের লুক এবং কালার কম্বিনেশনটা বেশ ভাল।
আমার বাইকের অন্যতম একটি ভাল দিক হল এর কম্ফোর্ট। গত দুইবছরে আমি ছোট রাইডগুলা খুন এনজয় করেছি বিশেষত শহরে এবং গ্রামে। সিটিং পজিশন এবং হ্যান্ডেলবার বেশ সুন্দরভাবে কম্বাইন করা যা বেশ ভাল আরাম নিশ্চিত করে আবার সাসপেনশানও এর সাথে বেশ ভাল সাপোর্ট দেয় যা সর্বোচ্চ আরাম নিশ্চিত করে। সুইচগুলাও বেশ ভাল যা ব্যবহার করতে বেশ লাগে। কিন্তু হেডল্যাম্পের আলো আমার কাছে যথেষ্ট বলে মনে হয় নি এবং এই কারনে রাতে রাইড করতে আমি সমস্যা অনুভব করি। একই সাথে আমার মনে হয় এই বাইকটা লম্বা রাস্তা চলাচলের জন্য না। আমি একদিনে ২০০ কিলোমিটার চালিয়েছি, সেদিন পিঠে এবং হাতে ব্যাথা ফিল করেছি।
বাইকের কন্ট্রোলিং অন্যতম গুরুত্বপুর্ন একটি ইস্যু এবং আমি মনে করি আমার বাইকটাতে বেশ ভাল কন্ট্রোলিং আছে। যদিও আমার বাইকটা টপ স্পিডে ভাইব্রেট করে কিন্তু সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয় নি। ব্রেকিং সিস্টেম বেশ কার্যকরি যা আমাকে যেকোন অবস্থায় গতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সহযোগীতা করে। টায়ারের গ্রিপও বেশ ভাল যার কারনে আমি তেমন কোন স্কিডিং ফিল করি না। সব মিলিয়ে আমি বলতে পারি যে এর কন্ট্রোল ভাল, আমি এর কন্ট্রোল নিয়ে সন্তুষ্ট।
আমার এইয়াতে যে সার্ভিস সেন্টার আছে তা যথেষ্ট ভাল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। তাদের ব্যবহার কাজের কৌশল এবং অন্যান্য সবকিছু বেশ ভাল। আমি যে কয়েকবার সেখানে গিয়েছি। প্রতিবারই ভাল অভজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি।
ভাল দিকসমুহঃ
-ভাল ডিজাইন এবং সুন্দর কালার কম্বিনেশন
-ভাল গতি
-টায়ারের গ্রিপ উল্লেখ করার মত
-আরামদায়ক এবং সহজেই নিইয়ন্ত্রনযোগ্য।
খারাপ দিকসমুহঃ
-চেইনসেট একেবারেই বাজে
-মাইলেজ ভাল না
-বিল্ড কোয়ালিটিও ভাল না
আমার দেখা আমার বাইকটা এমনই যেমনটা উপরের বিবরন পড়ে আপনি বুঝতে পারছেন। যদি সবকিছু বিবেচনা করে এর দাম নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হয় তবে আমি বলব যে এর দাম আমার মনে হয় কিছুটা বেশি। দাম কিছুটা কমিয়ে দুর্বল দিকগুলা উন্নত করলে কোম্পানি বেশ ভাল ফিড ব্যাক পাবে।কিছু সমস্যা থাকার পরেও আমাকে এই কথা স্বীকার করতে হবে যে এর পারফরমেন্স সব মিলিয়ে ভাল বলার মত। আপনি যদি একই সেগমেন্টের কোন বাইক কেনার কথা চিন্তা করেন তবে এই বাইকটার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
আমি যদি পরবর্তিতে বাইক চেঞ্জ করি তবে “বাজাজ সিটি ১০০” কিনব।
ধন্যবাদ সবাইকে।