বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১৫০ সিসির বাইক বাজাজ পালসার দিয়ে আমার বাইক চালানো শেখা হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে। তারপর সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আমি সেই বাইকটা বিক্রি করে দিয়ে কিনলাম জনপ্রিয় আরেকটি রেসিং ক্যাটাগরির বাইক ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ২ । রেসিং ক্যাটাগরির জনপ্রিয় একটি বাইক হচ্ছে আরওয়ানফাইভ যা রাইড করলে বারবার রাইড করতে ইচ্ছে হয়। আমি বলতে গেলে খুবই সৌখিন প্রকৃতির মানুষ তাই বাইক পরিবর্তন করা থেকে থাকেনি। ইয়ামাহা আরওয়ান ফাইভ বাইকটি কেনার পর আমি আমি ক্লাসিক্যাল একটি বাইক কিনলাম যা ভিক্টর আর ক্লাসিক নামে পরিচিত। আমি সর্বপ্রথম বাইকটার লুক দেখে পছন্দ করি তারপর আমি সেটা কিনার জন্য সিদ্ধান্ত নিই। প্রায় ১ মাসের কিছু বেশি দিন ধরে আমি এই ক্লাসিক্যাল বাইকটি ব্যবহার করছি। আমি লক্ষ্য করেছি যে এই বাইকটার রিভিউ বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইটে তেমন দেওয়া নাই তাই আজকে আমি মোটরসাইকেল্ভ্যালীর আমন্ত্রণে ভিক্টর আর এর রিভিউ তুলে ধরছি।
প্রথমেই বলবো ডিজাইনের ব্যাপারে, ডিজাইনটা একদম ক্লাসিক যা আমার খুব ভালো লেগেছ আর বাইকটির ক্লাসিক্যাল ডিজাইনের সাথে ক্লাসিক্যাল কালার কম্বিনেশন ব্যবহার করে এর লুকিং আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যারা একটু ক্লাসিক্যাল ডিজাইনের বাইক কিনতে চান তাদের আমি এই বাইকটি প্রথমে সাজেস্ট করবো কিন্তু আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বলব যে বাইকটির হ্যান্ডেলবারটা যদি সোজা করতো তাহলে আরেকটু সুন্দর লাগতো।
এরপর আসি বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে। বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয় নি কারণ এর পেছনের বডি প্লাস্টিকগুলো অল্প আঘাত পেলেই বেঁকে যায় এবং অন্যান্য বাইকের থেকে এর বডি প্লাস্টিকগুলো কিছুটা অনুন্নত মনে হয়েছে।আশা করি কোম্পানী এই ব্যাপারে একটু নজর দিবেন।
তারপর সিটিং পজিশনটা হচ্ছে লং রাইডের জন্য না। আমি একটানা ৩০০ কিমি রাইড করেছি তাই লক্ষ্য করেছি যে বাইকটার সিটিং পজিশন খুব একটা আরামদায়ক না। যদি সিট ও হ্যান্ডেলবারটা আরেকটু উন্নত করা যেত তাহলে আমার মনে হয় বাইকটা লং রাইডেও অনেক আরামদায়ক হত। আর বাইকটার ভাইব্রেশন একটু বেশি যা একটু বেশি পিক আপ দিলে হ্যান্ডেলবার ভাইব্রেশন অনুভুত হয়।
ইঞ্জিনটা ১০০ সিসির বাইক হিসেবে এর পারফরমেন্স ঠিক আছে। আমি খুব কম সময়ের মধ্যেই ৮০ কিমি গতিতে তুলতে পারি । সাইলেন্সর পাইপটা একটু বেশি গরম হয় আর ১ গিয়ারে দিয়ে ক্লাচ ছেড়ে রানিং করার সময় একটি ঝাঁকুনি দেয় তারপর আর গিয়ার শিফটিং এর সময় ঝামেলা হয় না।
ইলেকট্রিক্যাল দিকের মধ্যে আমার কাছে ভালো লেগেছে বাইকের হেডল্যাম্প , সুইচএবং খারাপ লেগেছে বাইকের ইন্ডিকেটর এবং টেল ল্যাম্প । আমি মনে করি যে বাইকের টেল ল্যাম্প এবং ইন্ডিকেটর আরও উন্নত করা উচিত। আর মজার বিষয় হচ্ছে বাইকের মিটার কনসোল একদম ক্লাসিক্যাল লুক যা আপনাকে ক্লাসিক্যাল বাইকের মিটারের অনুভুতি দিবে।
বাইকের সামনের এবং পেছনে উভয় দিকের ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করেছে আমার মনে হয় বাইকের ক্লাসিক্যাল লুক আনার জন্য স্পট রিমের সাথে ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে এই ব্যাপারে আমার খারাপ কোন মন্তব্য নেই কিন্তু একটা বিষয় আমার কাছে খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে বাইকের সামনের ব্রেকিং একদমই দুর্বল। আমার মনে হয় সামনের ব্রেকটা না থাকলেই বেশি ভালো হত। পেছনের ব্রেকিং সিস্টেম ভালো এবং আমি সেটাই ব্যবহার করি কারণ সামনের ব্রেকিং এ আমার আত্মবিশ্বাস নাই।
টায়ারের সাইজ এর ডিজাইন ও গঠন অনুযায়ী ঠিক মনে হয়েছে এবং টায়ারের গ্রিপগুলো খুবই ভালো । আমি পেছনের কড়া ব্রেক করেও টায়ার খুব স্কীড করে।
সাসপেনশনগুলো সামনেরটা ভালো আছে কিন্তু পেছনেরটা তেমন ভালো না। পেছনের সাসপেনশনে আমার মনে হয় বুশের সমস্যা আছে। তাছাড়া খারাপ রাস্তায় ঝাঁকুনি তেমন বুঝতে পারি না এবং অন্যান্য সাধারন বাইকের মতই পারফরমেন্স দেয় কিন্তু বুশটা মাঝে মাঝে ঝামেলা করে।
কেনার সময় শোরুম থেকে আমাকে বলা হয়েছিলো যে ৬০-৭০ কিমি মাইলেজ পাবো কিন্তু আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি ৫০ কিমি প্রতি লিটার। মাইলেজ নিয়ে আমি একদমই সন্তুষ্ট না কারণ এত হালকা ও কম সিসির বাইকের থেকে ৫০ কিমি মাইলেজ আশা করা যায় না।
বাইকের দামটা একটু বেশি মনে হয়েছে । আমার মতে এই বাইকের দাম ৭০ হাজারের মধ্যে করলে ঠিক হয়।
আমি তাদের সার্ভিস সেন্টারে খুব কম সময় গিয়েছি এবং তাদের আচরন ব্যবহার ইত্যাদি আমার খুব ভাল লেগেছে। তারা অনেক আন্তরিক এবং গ্রাহকদের সাথে অনেক ভালো আচ্রন করে এবং গ্রাহকদের সমস্যাগুলো ভালোভাবে সমাধানের চেষ্টা করে।
বাইকের কিছু খারাপ দিক
-সিটের কোয়ালিটি আরও উন্নত করা দরকার
-সামনের ব্রেক ঠিক মত কাজ করে না
-টেলল্যাম্পে সমস্যা আছে
-মাইলেজ কম
-সাসপেনশন থেকে শব্দ হয়
-বিল্ড কোয়ালিটি দুর্বল।
পরিশেষে আমি একটা কথাই বলবো যে আপনি আপনার পছন্দের বাইকটি কিনুন কারণ আপনার পছন্দ আপনার কাছে কারও কথায় প্রভাবিত হয় নিজের শখ নষ্ট না করাই উত্তম বলে আমি মনে করি।