আমি মনে করি প্রতিটি পরিবারে একটি করে মোটরসাইকেল থাকা প্রয়োজন। কেননা, যে কোন বিপদে-আপদে দ্রুত যাতায়াত করার জন্য মোটরসাইকেল এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমান যুগে অনেকে আবার বাইক ফ্যাশান হিসেবেও ব্যবহার করছে। বাইকের ভাল দিক আছে, শুধু তাই নয়। ভাল দিকের পাশাপাশি অনেক মন্দ দিকও রয়েছে। আমি এখন আমার বাইকের ভাল ও মন্দ দিক নিয়ে আপনাদের জানাতে চাই। আমার বাইকের এই মতামতটি পড়লে আপনারা নিজেই বুঝতে পারবেন যে এই বাইকটি কেমন। এখন আমি আমার পরিচয় জানাচ্ছি, আমি মোঃ হাবিব আলী। পেশায় মূলত আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার ব্যক্তিগত কাজে ও ব্যবসার কাজের জন্য এই বাইকটি কিনি। আমি বাইকটি মোটামুটি দুই বছর যাবত ব্যবহার করছি। দুই বছরে কোন দূর্ঘটনা ছাড়াই প্রায় ২৮,০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। বাইকটির পারফরমেন্স আমার খুব ভাল লেগেছে। এই বাইকটি কিনার আগে আমি ডায়াং ১০০ সিসি বাইক কিনেছিলাম। ১ বছর পরে সেটি বিক্রি করে দেই। কারন সেটির পারফরমেন্স ভাল ছিল না। তার পরে অনেক ভেবে চিন্তায় ভাল মাইলেজ পাবার আশায় আমি ভিক্টর আর – ১০০ সিসি বাইকটি কিনি। আমার এই বাইকটি কিনার পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল অল্প খরচে বেশি পথ পাড়ি দেওয়া। সেদিক থেকে বলতে গেলে আমি সার্থক হয়েছি। কারণ এই বাইকের মাইলেজ নিয়ে আমি সব চেয়ে বেশি খুশি।
আমি বাইকের ডিজাইন নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। একটি বাইক দেখতে যদি ভাল না লাগে,তাহলে সেটি মানুষের মধ্যে রাইড করতেও ভাল লাগে না। এজন্য আমি বাইক কিনার আগে ডিজাইনটা প্রথমে পছন্দ করি। ডিজাইনের পাশাপাশি বডির পার্টস ও প্লাস্টিক গুলো আমার ভাল লেগেছে। বাইক পড়ে গেলেও এগুলো খুব সহজে ভেংগে বা ফেটে যায় না। এছাড়া তেলের ট্যাংকার দেখতে আমার খুব ভাল লেগেছে। এ বাইকটি যে কোন বয়সের মানুষের সাথে মানানসই।
একটি বাইকের মূল অংশ হল তার ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের যদি ভাল পারফরমেন্স না হয়, সে বাইক রাইড করেও আরাম অনুভব করা যাবে না। তবে আমার বাইকের ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুব ভাল। যদিও বাইকটি কিনার ১৫ দিন পরে ইঞ্জিনের ভেতরে খারাপ শব্দ অনুভব করেছিলাম। মাত্র একবার সার্ভিসিং করিয়ে নিয়েছি, এখন পর্যন্ত আমার এই বাইকের ইঞ্জিনে আর কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয় নি। দীর্ঘক্ষণ বাইকটি চললেও এর ইঞ্জিন তেমন বেশি গরম হয় না। এছাড়া বাইকটি নিমিষেই সঠিক গতিতে তুলতে পারে। তবে এই বাইকটি বেশি স্পীডে খুব দ্রুত যাতায়াতের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারন এটি ১০০ সিসির বাইক।
বাইকটির সিটিং পজিশন খুব ভাল। সিট মোটামুটি নরম আছে। এক সাথে তিন জন সিটে বসে রাইড করতে পারি। এছাড়া আমি খুব সহজেই সিটে বসে মাটিতে পা রাখতে পারি। বাইকটির হ্যান্ডেলবার দেখতে বেশ ভাল। এটি ধরে আমি রাইড করে ভাল অনুভূতি পাই। আমি সর্বোচ্চ ৯০ গতি তুলেছি। কারন আমি খুব দ্রুত গতিতে রাইড করি না। তবে দ্রুত গতিতে আমার হাত ঝিনঝিন করে এবং বাইকের মাথা ভাইব্রেট করে। এক দিনে আমি প্রায় ২৫০ কিমি পথ চালিয়েছি। দীর্ঘক্ষন রাইড করলে আমার হাতে, পিঠে, কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। বাইকটির সুইচগুলো ব্যবহার করতে আমার কোন প্রকার সমস্যা হয় না। রাতে হেড লাইট থেকে আমি অনেক আলো পাই, এতে করে আমি পরিষ্কার রাস্তা দেখতে পাই। এ বাইকটির সাসপেনশন খুব একটা ভাল না। কারন, খারাপ রাস্তায় রাইড করতে খুব ঝাঁকুনি ও বিরক্তি লাগে। লুকিং গ্লাস থেকে আমি পিছনের রাস্তা পরিষ্কার দেখতে পাই। তবে বাইকটির ট্যায়ার গুলো চিকন হলেও অনেক মজবুত ও টিকসই। এই বাইকের ব্রেক মোটামুটি ভাল। দ্রুত গতিতে ব্রেক করলে পিছনের চাকা হাল্কা স্কিড করে। বাইকটির ব্যাটারি অতি শক্তিশালী, এখনো আমি এই ব্যাটারি পরিবর্তন করি নি। এটি অনেক ভাল। বাইকটিতে যদি ডিস্ক ব্রেক থাক্ত তাহলে অনেক ভাল হত।
মাইলেজ হচ্ছে বাইকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শোরুম থেকে বাইকটি কিনার সময় যেমন মাইলেজের কথা বলেছিল, আমি ঠিক তেমন মাইলেজ পাচ্ছি। তাদের কথার সাথে কাজের মিল আছে। অর্থাৎ আমি ১ লিটার তেলে ৬০-৬৫ কিমি পথ চলতে পারি। তবে কাচা রাস্তায় ৫৫ প্লাস কিমি মাইলেজ পাই। তবে ১০০ সিসি বাইক হিসেবে মাইলেজ ঠিক আছে। এজন্য মাইলেজ নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। কোম্পানির কাছে আমার একটাই দাবি দামটা আরেকটু কমাতে হবে।
কোয়ালিটি বিবেচনা করে বাইকটির দাম আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। দামটা আর একটু কম হলে ভাল হত সকল ক্রেতাদের জন্য। এছাড়া দাম কমানোর সাথে সাথে এই বাইক বিক্রয়ের হার অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এই বাইকটি গ্রামের মানুষ বেশি পছন্দ করবে, কারন তারা অল্প দামে বেশি মাইলেজ আশা করেন।
সার্ভিসিং সেন্টারের কাজের মান আমার কাছে খুব ভাল লেগেছে। কারন আমার বাইকের ইঞ্জিনে একবার সমস্যা দেখা দিয়েছিল। মাত্র এক বার সার্ভিসিং সেন্টার থেকে ঠিক করে নিয়েছি, কিন্ত এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে কোন প্রকারের সমস্যা দেখা দেয় নি। সেখানকার পরিবেশটা খুব সুন্দর এবং তাদের ব্যবহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। এছাড়া সেখানে যথেষ্টসংখ্যক কাজের যন্ত্রপাতি রয়েছে। সেখানকার মেক্যানিক গুলো অনেক দক্ষ।
ভাল দিকঃ মাইলেজ ভাল, ডিজাইন অনেক সুন্দর, সিটিং পজিশন ভাল, ইঞ্জিন পারফরমেন্স ভাল, সার্ভিসিং সেন্টারের মান ভাল, সুইচগুলো দেখতে সুন্দর, বেক ও কন্ট্রোল ভাল, সঠিক গতিতে তুলতে পারে।
মন্দ দিকঃ দাম একটু বেশি, সাসপেনশন তেমন ভাল না, বেশি স্পীডে রাইড করলে হাত ঝিনঝিন করে, দীর্ঘ যাতায়াতে কষ্ট হয়।
পরিশেষে বলতে চাই, কেউ যদি ভাল মাইলেজ পেতে চান, তাহলে ভিক্টর আর – ১০০ সিসি বাইকটি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। খুব অল্প তেলে অধিক রাস্তা অতিক্রম করতে পারবেন। এছাড়া বাইকটির অন্যান্য বিষয়াদি এবং ইঞ্জিন পারফরমেন্স অনেক ভাল। বাইকটি আপনাদের নিরাষ করবে না। সবাইকে ধন্যবাদ।