কম দামে ভাল ফীচার সমৃদ্ধ বাইক – লিফান কেপিআর ১৫০সিসি ব্যবহারকারী নাফিউ মল্লিক

সেই ছোট বেলা থেকেই বাইকের প্রতি আমার নেশা। তখন থেকেই যখনই কোন বাইক পেতাম রাইড দিয়ে ফেলতাম। আমি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাইক চালায়। আমি এই পর্যন্ত ব্যবহার করেছি প্রায় ১০টারও বেশি বাইক তার মধ্যে আমার যে বাইকগুলো বেশি ভালো লেগেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়ামাহা ফেজার, আর ওয়ান ফাইভ ভার্সন ২, পালসার, রিগাল রেপ্টর। বর্তমানে আমি ব্যবহার করছি কম দামের মধ্যে সেরা চাইনিজ বাইক লিফান কেপিআর ১৫০। অনেকেই মনে করতে পারেন যে ব্রান্ডের বাইক ব্যবহারের পরেও কেন এই বাইক কিনেছি । আমি এই বাইক কিনেছি মূলত এর ইঞ্জিনের ফিচারস ও আউটলুক দেখে। কারণ এত কমদামের মধ্যে ভালো ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক আমি খুব কমই দেখেছি। লিফান কেপিআর নিয়ে আমার পথ চলা প্রায় সাড়ে ৩ বছরের মত এবং এই সময়ের মধ্যে আমি ৩৮০০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি। ভালো মন্দ সব মিলিয়ে বাইকটি এখনও আমাকে অনেক ভালোই পারফরমেন্স দিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমি মোঃ নাফিউ মল্লিক তুলে ধরবো লিফান কেপিআর ১৫০ এর ভালো মন্দ দিক। আশা করছি এইটা পড়ে পাঠকদের অনেক উপকার হবে।

ইঞ্জিন নিয়ে আমি খুব সন্তুষ্ট কারণ এত কম দামের মধ্যে ভালো ফিচারস সমৃদ্ধ ইঞ্জিনের আমি অন্য কোন বাইকে খুঁজে পাইনি। ইঞ্জিনের প্রযুক্তিটা বিশেষ করে আমার খুব ভালো লেগেছে। ইঞ্জিনের সাথে ৬ স্পীড গিয়ার বক্স থাকার ফলে ভালো স্পীড পাই কিন্তু ইঞ্জিনের খারাপ বিষয় বলতে আমার কাছে ইঞ্জিনের ঘর্ষণটা একটু বেশি মনে হয়েছে এবং এর ফলে ইঞ্জিনটা খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায়। লিকুয়িড কুল্ড থাকার কারণে ইঞ্জিনের গরমটা স্টার্ট বন্ধ করে রাখলে দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। ইঞ্জিনের ব্যাপারে এর বেশি আমার কিছুই বলার নাই।


এইবার আসা যাক ডিজাইনের দিকে। ডিজাইন নিয়ে প্রথমেই আমি বলবো যে ডিজাইনটা লম্বা রাইডারদের জন্য না । আমি মনে করি যে বাইকটা ডিজাইন করা হয়েছে একটু মাঝারি কিংবা একটু খাটো রাইডারদের জন্য।এই রকম ডিজাইনের ফলে আমি চালিয়ে তেমন স্বস্তি পাই না। তবে এমনি বাইকটা দেখতে খুবই সুন্দর। বাইকের বিভিন্ন বডি পার্টসগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং সেগুলো বেশ মজবুত। সব মিলিয়ে আমি বলবো যে কম দামের মধ্যে সুন্দর ডিজাইনের বাইক হচ্ছে কেপিআর । আর যারা একটু মাঝারি আকারের রাইডার তাদের জন্য আমি মনে করি যে এটা সেরা একটা বাইক।

রাইডিং সিট আমার কাছে আরামদায়ক মনে হয় কিন্তু ডিজাইনগত কারণে সিট ও পাদানিটা আমার জন্য আরামদায়ক না সিটে বসে পাদানীতে যদি দীর্ঘক্ষন পা দিয়ে রাখি সেক্ষেত্রে আমার অনেক কম আরাম অনুভব হয়। সিটের হাইট কম যার কারণে মাটিতে পা পেতে সমস্যা হয় না তবে আমি লক্ষ্য করেছি যে হ্যান্ডেলবারে হাত রেখে বেশি স্পীড বাইক রাইড করলে হাত ঝিনঝিন করে বেশিক্ষন রাইড করলে একটু কষ্ট হয় মানে ব্যাক পেইন হয়। এদিকে একটা ভালো বিষয় হচ্ছে হ্যান্ডেলবারের সুইচগুলো অনেক সুন্দর কিন্তু হেডল্যাম্পের আলোটা হাইওয়ের জন্য পারফেক্ট না। আমি একদিনে প্রায় ৫০০ কিমি রাইড করেছি সেক্ষেত্রে আমার হাত,কাধ ব্যথা অনুভূত হয়েছিলো । আমি চাই যে লিফান এই ববিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত সমাধান করবে।

ব্রেকিং সিস্টেম খুবই দুর্বল। আমি বিভিন্নভাবে চালিয়ে ব্রেকিং সিস্টেমে অনেক সমস্যা পেয়েছি তার মধ্যে একটা হচ্ছে মাস্টার সিলিন্ডার। আমি যখনই ব্রেক করি না কেন চাকা খুব স্কীড করে কিন্তু বাইকের ওজন বেশি থাকার কারণে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সাসপেনশন সামনেরটা ভালো কিন্তু পেছনেরটা একদমই ভালো না । খারাপ কিংবা যে কোন রাস্তায় মনোশক হিসেবে যেমন পারফরমেন্স পাবার কথা সেকরম পাই না।

ডিজাইন, ব্রেকিং, সাসপেনশন নিয়ে আমার অভিযোগ থাকলেও সেটা পূরণ করে দিয়েছে বাইকটার মাইলেজ। আমি যেভাবে বাইকটা রাইড করি ঠিক সেরকমই পারফরমেন্স পাই এবং ভালো পারফরমেন্সসহ আমি এখন মাইলেজ পাচ্ছি গড়ে ৪২ কিমি/লিটার। আমি বলবো যে মাইলেজটা খুবই ভালো কারণ এত ওজন,ইঞ্জিন শক্তিসহ বাইকটা খুব সুন্দর মাইলেজ সরবরাহ করছে।

সার্ভিস নিয়ে আমি খুব হতাশ কারণ বাইক কেনার পর আমি রাজশাহীর কোথাও তাদের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার খুঁজে পাইনি। আমি শুনছি যে তাদের সার্ভিস সেন্টার নাকি নাটোরে দিবে কিন্তু কেন একটা বিভাগীয় শহর ছেড়ে নাটোরে সার্ভিস সেন্টার দিবে এটা খুব ভাবার বিষয়। এদিকে বাইকের বিভিন্ন বডি পার্টসের জন্য আমাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। লিফান যদি তাদের সার্ভিস সেন্টার না দেয় তবে অনেকেই তাদের বাইকের কেনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে রাজশাহীরে তাদের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টারে করার জন্য।

দাম নিয়ে কোন কথা হবে না কারণ বাইকটার দাম ফিচারস অনুযায়ী খুবই কম।

বাইকের খারাপ দিক
-চেইন সেট
-পেছনের সাসপেনশন
-মাস্টার সিলিন্ডার
-হেডল্যাম্পের আলো বিশেষ করে হাইওয়েতে
-লুকিং গ্লাস নিম্ন মানের
-টারনিং রেডিয়াস কম
-স্টার্ট বেশিক্ষন থাকে না
-ব্রেক প্যাড খুবই খারাপ

All LIFAN bike price in bd

Lifan KPR 150