বাইক চালানোর গল্পটা শুরু হয়েছিলো বাজাজ পালসার ১৫০ দিয়ে। অনেকের ইচ্ছে হয় বাইক চালাতে কিন্তু কারো কারো স্বপ্ন পূরণ হয় আবার কারও কারও স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আল্লহর রহমতে আমি এখন পর্যন্ত নিজস্ব ৪ টা বাইক ব্যবহার করেছি এবং এখন আমার বর্তমানে দুইটা বাইক আছে । একটা হলো ইয়ামাহা ফেজার এফ আই ( দ্যা বেস্ট টুরিস্ট বাইক ইন বাংলাদেশ) আরেকটি হল ভিক্টর আর ক্লাসিক। শহরের মধ্যে চলাচলের জন্য আমি ভিক্টর আর ক্লাসিক ব্যবহার করি বেশি অন্যদিকে ইয়ামাহা ফেজার এফআই আমি বড় বড় রাইডে অর্থাৎ দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে চাইলে ইয়ামাহা ফেজারের সাথে হারিয়ে যাই। আমি বাইকটা কিনেছিলাম এসিআই এর নিজস্ব ডিলার ইনিভারস মোটরস থেকে এবং কেনার পর থেকে অর্থাৎ ২ বছরে আমি প্রায় ২৩ হাজার কিমি পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছি। এই ২৩ হাজার কিমি পথ সম্পন্ন করার পেছনে কিছু বড় বড় লং ট্যুর ছিলো যার জন্য আমি আমার বাইককে খুব ভালো ভাবে চিনতে পেরেছি। আমি বাইকের প্রায় সব কিছু উপলব্দি করেছি । যেহেতু ২৩ হাজার কিমি তাই আশা করি এখনই একটা বাইকের আসল রূপ এর পারফরমেন্স নিয়ে। সে সকল বিষয় নিয়ে আমি আজকে ২৩ হাজার কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করবো।
ইয়ামাহা ফেজারের ডিজাইনের কথা বলতে গেলে অবশ্যই বলতে হয় যে এই বাজেটের মধ্যে এই রকম দানবীয় মাস্কুলার ডিজাইন অন্য কোন বাইকে খুব কম দেখা যায়। আর বাংলাদেশে ইয়ামাহা ফেজারের ডিজাইন এমন কোন ব্যাক্তি নেই যে যারা এর ডিজাইন অপছন্দ করেন। বাইকের ডিজাইনটা এমনভাবে করা হয়েছে যে যদি কেউ বেশি স্পিডে বাইক চালায় সেক্ষত্রে সামনের বাতাস কাটিয়ে এবং গায়ে বেশি বাতাস না লাগিয়ে স্মুথলি রাইড করতে পারবেন। আর যেহেতু এরোডাইনামিক ডিজাইন তাই যত বেশি স্পীডে তুলবেন ততবেশি স্পীড পাওয়া যাবে। আমি নিজেই পরীক্ষিত।
ডিজাইনে সাথে সাথে আরেকটি বিষয় নিয়ে আমি একটু আলোচনা করতে চাই সেটি হল এর বিল্ড কোয়ালিটি। যেহেতু বাইকে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি করা হয়েছে তাই সবারই মনে একটা প্রশ্ন জাগতে পারে যে এর বিল্ড কেমন হবে। বিল্ড কোয়ালিটি নিয়ে আমি আভিজ্ঞতা খারাপ না কারণ আমি এখনও বিল্ড কোয়ালিটির কোন ঘাটতি খুঁজে পাইনি। সমস্ত পার্টস ,কিটস যথাস্থানে যথাযথভাবে স্থাপন করা আছে যার ফলে রাইডিং করতেও অনেক আরামবোধ হয়। আর বাইকের বিভিন্ন পার্টস ২৩ হাজার কিমি তে মনে হয়নি যে সামান্য আঘাতে ভেঙ্গে যাবে বরং শুরুতে যেমন মজবুত মনে হয়েছিলো এখনও ঠিক সেরকম আঁচ করতে পারছি।
আমি শুরু তে একটা ডায়লগ দিয়েছি যে ইয়ামাহা ফেজার হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সেগমেন্টে বেস্ট ট্যুরিস্ট বাইক। তাই আরামের প্রশ্নটা সবার মনে জাগতে পারে। বাইকের সিটিং পজিশন খুব ভালো । বেশিক্ষন ধরে রাইড করেন কোন ক্লান্তি অনুভব বা ব্যাক পেইন হয় না। সিটের উচ্চতা যে কোন রাইডারের জন্য পারফেক্ট। আমি একদিনে সর্বচ্চো চালিয়েছিলো ৩৫০ কিমি এর মত এক্ষেত্রে খুব বেশি ক্লান্ত অনুভব করিনি এবং এটি আরামের দিক দিয়েও কোন কমতি রাখেনি।
কন্ট্রোল হাইওয়েতে বলেন কিংবা শহরে বলে সব রাস্তায় ইয়ামহা ফেজারের কন্ট্রোল বেস্ট। বিশেষ করে এর আপরাইট হ্যান্ডেলবারের ফলে চালিয়ে খুব মজা পাওয়া যায়।
এইবার আসি কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ে-
ইঞ্জিন- ইঞ্জিন পারফরমেন্স প্রথমের থেকে এখন বেশি স্মুথ মনে হচ্ছে। আমি লক্ষ্য করেছি যে ইঞ্জিনকে যত বেশি রানিং রাখা হয় ততবেশি সে স্মুথ পারফরমেন্স দেয়। ইঞ্জিন অতিরিক্ত গরম হয় না কিন্তু ৮০ কিমি স্পীডে উঠার পর একটু ভাইব্রেশন করে। ইঞ্জিন তার সঠিক গতি সঠিক আরপিএম দিয়ে তুলতে পারে। আমি সর্বচ্চো স্পীড পেয়েছি ১১১ কিমি প্রতি ঘন্টা। ইঞ্জিন নিয়ে মেজর কোন সমস্যার মধ্যে এখনও পড়িনি। যেহেতু এফআই ইঞ্জিন তাই ইঞ্জিনের শক্তি ও পারফরমেন্স অনেক উন্নত।
ব্রেকিং- ইয়ামাহা তাদের ব্রেকিং নিয়ে কোন আপোষ করে না । আমি ব্রেকিং এর দিক দিয়ে বেশ ভালোই পারফরমেন্স পেয়েছি কিন্তু আমার ব্যাক্তিগতভাবে মনে হয় যে এই বাইকে এবিএস ব্রেকিং দিলে বেস্ট হত।
সাসপেনশন- বাইকের সাসপেনশন সতিই প্রশংসনীয়। পেছনের মনোশক আর সামনের টেলিস্কোপিক সাসপেনশন দুইটা মিলিয়ে অন রোডে তো ভালো পারফরমেন্স দেয়ই পাশাপাশি অফরোডেও অনেক চমৎকার পারফরমেন্স দেয়।
টায়ার- টায়ারের সাইজ যথেস্ত মোটা এবং গ্রিপগুলো খুবই ভালো কাজ করে। স্কীডের কোন ভয় থাকে না তবে কড়া ব্রেক করলে যতই ভাল টায়ার হোক স্কীড করবেই । এটা যে কোন বাইকের ক্ষেত্রে।
ইলেকট্রিক্যাল- ইলেকট্রিক্যাল দিকের মধ্যে আমার কাছে হেডল্যাম্পের আলোটা একটু কম মনে হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো ঠিক মনে হয়েছে।
মাইলেজ- এফ আই ইঞ্জিন তাই ইয়ামাহা দাবি করে যে ভালো মাইলেজ পাওয়া যাবে। আমি ২৩ হাজার কিমি রাইডের পরেও মাইলেজ পাচ্ছি ৪০-৪৫ কিমি প্রতি লিটারে। আমার মনে হয় এই বাইকের জন্য এই মাইলেজ সন্তোষজনক। আমি মাইলেজ নিয়ে সন্তুষ্ট আছি।
দাম- আমি ২০১৬ সালে বাইকটা কিনি তখন দাম ছিলো প্রায় ৩ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। আমার কাছে দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে কারণ এই সেগমেন্টের মধ্যে অন্যান্য বাইকের দাম তুলনামূলক কম। এখন দামটা কমানো হয়েছে কিন্তু অন্যান্য কোম্পানীও সেই অনুপাতে দাম কমিয়েছে।
আমি সাধারণত সার্ভিস করাই এসিআই মোটরস এর ডিলার ইউনিভারস মোটরস থেকে। তাদের সার্ভিস আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে কিন্তু তাদের সার্ভিস চার্জ খুব বেশি। এমনিতেই তারা সমস্যাগুলো ভালোভাবে সমাধান করতে পারে কিন্তু চার্জ বেশি নিয়ে আমার একটু অভিযোগ রয়েছে।
বাইকের খারাপ দিক বলতে এখনও তেমনভাবে কিছু আঁচ করতে পারিনি। প্রথমে চেইনের সমস্যা ছিলো সেটা পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া খুব বড় কোন সমস্যায় আমি আজও পড়িনি। ছোট সমস্যাগুলো নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সেটা দ্রুত সমাধান করাই উত্তম।
আজ এই ছিলো আমার ২৩ হাজার কিমি রাইডিং অভিজ্ঞতা ইয়ামাহা ফেজার এফআই নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।