আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল দ্রুত যাতায়াত করা যায় এমন একটি বাইক কিনার। এজন্য দ্রত যাতায়াত করার জন্য ১৫০ সিসি বাইকগুলোর মধ্যে Yamaha FZS বাইকটি আমার খুব পছন্দের। তাই আমি পছন্দ করে Yamaha FZS বাইকটি কিনেছি। এই বাইকটি আমি দুই বছর যাবত ব্যবহার করছি। আমি আব্দুর রহমান। পেশায় আমি একজন ব্যবসায়ী। ২ বছরে প্রায় ২৪ হাজার কিমি পথ চালিয়েছি। এটা আমার জীবনের তৃতীয় বাইক। এর আগে আমি টি ভি এস মেট্রো ১০০ সিসি ও ডিস্কোভার ১৩৫ সিসি বাইক দুটি চালিয়েছি। এই বাইকগুলো দ্রুত যাতায়াতের জন্য ভাল ছিল না। ব্যবসার কাজে আমাকে প্রায় প্রতিদিন অনেক যাতায়াত করা লাগে। আমার ব্যক্তিগত ও ব্যবসার কাজের জন্য এ বাইকটি কিনেছি। আজ মোটরসাইকেল ভ্যালী টিমের মাধ্যমে আমি আমার বাইকের রিভিউ প্রকাশ করতে চলেছি, এমন একটি সুযোগ আমাকে দেবার জন্য আমি মোটরসাইকেল ভ্যালী টিমকে স্বাগত জানাই। এই রিভিউ এর মাধ্যমে কোম্পানিও বুঝতে পারবে কোন বাইকে কি কি সমস্যা আছি এবং পরবর্তিতে এমন সমস্যাযুক্ত বাইক তারা আর বাজারে ছাড়বে না। আমি এর আগে কখনো আমার নিজের রিভিউ প্রকাশ করার সু্যোগ পাই নাই। আমার এই রিভিউ লিখার মাঝে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়েও থাকে সকলেই তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
একটি বাইক কিনার সবার আগে দেখতে হয় তার ডিজাইনটা কেমন। কারন সবার পছন্দ এক নয়। আমি ডিজাইন বিবেচনা করে এটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে। এর ব্লিডিং কোয়ালিটিও অনেক সুন্দর। বাইকটির ডিজাইন ও গ্রাফিক্সগুলো ভাল লাগার মতই। বাইকটির বডির প্লাস্টিক অনেক টেকসই ও মজবুত, যা খুব সহজে ফেটে যায় না বা ভেংগে যায় না। এছাড়া বাইকটির পার্টসগুলোও অনেক মজবুত। এর লুক অসাধারণ।
এবার আসা যাক ইঞ্জিন নিয়ে কিছু কথা বলতে। ইঞ্জিন হল বাইকের প্রাণ। আমার বাইকের ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী। এর পারফরমেন্স অনেক ভাল। খুব সহজেই বাইকটি সঠিক গতি তুলতে পারে। এদিক থেকে আমি খুব খুশি। ইঞ্জিনে ওভার হিট বা কোন প্রকারের খারাপ শব্দ হয় না। ইঞ্জিনের শব্দটা অনেক সুন্দর,যা আমার কাছে একটু বেশিই ভাল লেগেছে। আমার বাইকে এখন পর্যন্ত ইঞ্জিনে কোন বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয় নাই। খুব দ্রুত যাতায়াত করার জন্য ইয়া মাহা এফ জেড ১৫০ সিসি বাইকের তুলনা হয় না। তবে বাইকটিতে তেল খরচ অনেক বেশি। ইঞ্জিনের পারফরমেন্স বিবেচনা তেল খরচ একটু বেশিই।
বাইকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মাইলেজ। আমার বাইকটি শোরুম থেকে কিনার সময় বলেছিল এক লিটারে ৫০ প্লাস কিমি মাইলেজ পাবো। কিন্তু আমি ৪০ কিমির এর নিচে মাইলেজ পাই। কাচা রাস্তায় রাইড করলে আরো অনেক কম মাইলেজ পাওয়া যাবে। এ জন্য আমি খুব অসন্তুষ্ট। ১৫০ সিসি বাইক হিসেবে মাইলেজ আর একটু বেশি কিমি হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তবে বাইকটি রাইড করে অনেক মজা আছে।
এবার আরামের বিষয়ে আসা যাক। বাইকটির সিটিং পজিশন খুব ভালো না। কারন দুই জনের অধিক ব্যক্তি নিয়ে রাইড করা যায় না।তবে সিটটা বেশ নরম আছে। সিটে বসে রাইড করেও বেশ আরাম আমি খুব সহজেই সিটে বসেমাটিতে পা রাখতে পারি। রাতে হেড লাইট থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো পাই। বেশি আলো পাওয়াতে আমি পরিষ্কার পথ দেখতে পাই। আমি সর্বোচ্চ ১১০ গতি তুলেছি। বেশি গতিতেও অন্য বাইকের মত এই বাইকটি তেমন ভাইব্রেট করে না। তবে আমি খুবই হাই স্পিডে রাইডিং খুব কম করি। একদিনে আমি প্রায় ১৫০ কিমি পথ অতিক্রম করেছি। এই বাইক চালিয়ে আমার দীর্ঘ যাতায়াত করতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না। বাইকটির সাসপেনশন গুলো অনেক ভাল। কারন কাচা রাস্তা বা খারাপ রাস্তায় বাইকটি চালিয়ে তেমন ঝাঁকুনি অনুভব করি নাই। এই বাইকের চাকা গুলো অনেক মোটা এবং ডিস্ক ব্রেক থাকায় কন্ট্রোল করতে আমার খুব সুবিধা হয়। ব্রেক করলেও চাকা স্লিপ করে না। কার টায়ারের গ্রিপগুলো ভাল। আমি লুকিং গ্লাস থেকে ভাল সাপোর্ট পাই। খুব সহজেই পিছনের রাস্তা পরিষ্কার দেখতে পাই।
এই বাইকটি কিনার ২ মাস পরে চেনের ভেতরে সর্বদা একটা খারাপ শব্দ হত। আমি সার্ভিসিং সেন্টারে গিয়ে সার্ভিস করিয়ে নেয়ার পরে আর আমি সেই সমস্যা অনুভব করিনি। এছাড়া আমি এখনো আমার বাইকে বড় ধরনের সমস্যা অনুভব করিনি। তবে মাঝেমাঝে প্লাগ এ ময়লা জমলে আমার পাশের একটি দোকান থেকে সার্ভিস করিয়ে নিই। এখন আমি আমার কাছাকাছি এক মেক্যানিক দিয়ে সার্ভিসিং করাই। তবে সার্ভিসিং সেন্টারের পরিবেশ আমার খুব ভাল লেগেছে এবং তাদের অতিথি আপ্যায়ন দেখে আমি মুগ্ধ হই। তাদের আচার ব্যবহার ভাল এবং সেখানে যথেষ্ট সংখ্যক যন্ত্রপাতি রয়েছে এবং তাদের কাজের মান অনেক ভাল।
বাইকটির পারফরমেন্স ও কোয়ালিটি অনুযায়ী দামটা অনেক বেশি বলে মনে করি। তবে দাম একটু কম হলে ক্রেতাদের জন্য সুবিধা হত। কোম্পানির উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, দাম যদি আর একটু কমানো যায় তবে বাইকটির বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি পাবে। কারণ বাইকটি অন্যান্য বাইকের তুলনায় এর কোয়ালিটি এবং মান অনেক ভাল।
ভাল দিকঃ ইঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল, ডিজাইন বেশ ভাল, ব্রেক ভাল,কন্ট্রোল ভাল, সাসপেনশন ভাল, দ্রুত যাতায়াত করা যায়, সার্ভিসিং সেন্টারে কাজের মান ভাল, হেড লাইটে প্রচুর আলো পাই, বাইকটির পার্টস গুলো খুব টেকসই ,এটি খুব আরামদায়ক বাইক।
মন্দ দিকঃ সিটিং পজিশন ভাল না, তেল খরচ অনেক বেশি, পারফরমেন্স তুলনায় দাম অনেক বেশি।
আপনারা এই বাইকটির ভাল দিকগুলো বিবেচনা করে বাইকটি কিনতে পারেন। দ্রুত যাতায়াতের জন্য ইয়ামাহা এফ জেড বাইকটি একদম পারফেক্ট। যার কন্ট্রোল ও ই ঞ্জিন পারফরমেন্স খুবই ভাল। দ্রুত যাতায়াতে জন্য এ বাইকটি কিনতে পারেন। সবাইকে ধন্যবাদ।