ইয়ামাহা এফজেডএস এফআই মোটরসাইকেল রিভিউ - চাকমা শ্রাবন

সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমি চাকমা শ্রাবণ। বেশ কিছু দিন ধরে ভাবছি যে আমার বাইকের একটি রিভিউ লিখবো কিন্তু বিভিন্ন কারণে লেখার সময় পাচ্ছি না। তাই আর দেরি না করে সেই কাজটা আজই সেরে ফেলতে চাই। তাই আমার সকল ভুল ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। তারিখটা ছিল ৯-৪-২০১৭ যখন আমি এফ যেড এস (শার্কহোয়াইট)রঙের বাইকটি কিনি। এই পর্যন্ত আমি আমার বাইক নিয়ে প্রায় ৭১০০ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছি এর মধ্যে আমি ভ্রমন করেছি বান্দরবন ডিম পাহাড়, নীল গিরি, কাপ্তাই, ফেনী, রাঙ্গামাটির পাহাড় সহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। এসকল জায়গায় যাওয়ায় জন্য আমাকে বিভিন্ন ধরনের রাস্তার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং আমি বলবো যে আমার বাইকটি সব ধরনের রোড কন্ডিশনে চমৎকার পারফরমেন্স দিয়েছে। আরামদায়ক সিটিং পজিশনের জন্য এবং হ্যান্ডেলবারের জন্য রাইডিং করার সময় বেশ আরাম অনুভব করছি এবং বাইকটির টায়ার মোটা থাকার ফলে পাহাড়ী রাস্তায় কোন প্রকার ঝামেলায় পড়তে হয়নি এবং কর্নারিং খুব ভাল পেয়েছি। আমি এফ যেড এস এর ব্রেকিং এবং কন্ট্রোলিং কে অন্ধের মতো বিশ্বাস করি এবং এই দুইটা দিক আমাকে কখনই হতাশ করেনি।

এখন পর্যন্ত আমি আমার বাইকটি সার্ভিসিং করতে নিয়ে যায়নি এর পেছনে মূল কারণ হল অনেক বাইকাররা তাদের মতামত ব্যাক্ত করেন যে বাইক সার্ভিসিং করার পর বাইকের পারফরমেন্স কমে যায় সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি সার্ভিসিং করিনি। ২৭০০ কিমি চালানোর পর এফআই পরিষ্কার করা ছাড়া বড় কোন সার্ভিসিং করিনি এর মধ্যে এয়ার ফিল্টার, ইঞ্জিন ওয়েল ফিল্টার ইত্যাদি চেঞ্জ করতে হয়নি। আমি বেশ সন্তোষজনক পারফরমেন্স পাচ্ছি এবং আমি মনে করি এখন আমার ছোট খাটো সার্ভিসিং ছাড়া বড় কোন সার্ভিসিং করার প্রয়োজন পড়বে না।শহরের রাস্তায় আমি মাইলেজ পেয়েছি ৪৫ কিমি এর বেশী এবং আমি ব্যাক্তিগত ভাবে হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৫২ কিমি প্রতি লিটার। মাইলেজ এর পাশাপাশি আমি আমার বাইকের টপ স্পীড পেয়েছি ১১৪ কিমি প্রতি ঘন্টায় । আমি আমার বাইকের মাইলেজ এবং টপ স্পীড নিয়ে সন্তুষ্ট।




সব কিছু ভালই ছিল কিন্তু বিপদ কখনো বলে আসে না। বিপদ যে কোন সময় আসতে পারে, একবার আমি রাঙ্গামাটি থেকে চিটাগাং যাচ্ছিলাম এটা প্রায় ১৬০ কিমি হবে এবং আমি বাসায় পৌছানোর পর দেখি আমার বাইকের চেইনটা ঢিল হয়ে গিয়ে সাইড স্টান্ডের সাথে লেগে থাকছে। এটা দেখার পর আমি এ সি আই মোটরস এর অফিসিয়াল পেইজে অভিযোগ করি এবং তারা কথা দেয় যে চেইনটা পরিবর্তন করে দিবে। এর পরে আমি ২৯-০৬-২০১৭ তারিখে মোটরসাইকেল গ্যালারী তে যায় যেটা চিটাগাং এর আগারবাদে অবস্থিত এবং সেখানে মিনহাজ ভাইয়ের অসাধারণ কাজের দক্ষতার ফলে ২৭৩৪ কিমি চলা অবস্থায় আমার বাইকের চেইন রিপ্লেস করে ফেলি। এটা করার পর থেকে বাইকের পারফরমেন্স অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিরাৎ সমস্যা সমাধানের পর আমি এ সি আই মোটরস এবং মোটরসাইকেল গ্যালারীর উপর অনেক ধন্য।

ভাল পারফরমেন্স এবং শো-রুমের গাইডলাইন অনুসারে আমি আমার বাইকের ইঞ্জিন ওয়েল চেঞ্জ করেছি ৪০০ কিলোমিটারে এবং এটা ইয়ামাহা লুব ১০ডব্লিউ৪০। এরপরে আমি ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন করি ১২০০ কিমি পার করার পর এবং এরপরে ২০০০ কিমি তে আবার পরিবর্তন করি। কিন্তু আমি ইয়ামাহা লুব নিয়ে সন্তুষ্ট না কারণ ইঞ্জিনটা বেশী গরম হয়ে যাচ্ছে ২০ কিমি চালানোর পর ইঞ্জিনের গরমটা অনুভব করি এবং ইয়ামাহা লুবের ফলে ইঞ্জিনের স্মুথনেসটা পাওয়া যায় না। তারপর আমার শ্রদ্ধেয় সবুজ ভাই আমাকে সিন্থেটিক ওয়েল ব্যবহার করার জন্য সাজেস্ট করল যার নাম ছিল মোটুল ৭১০০(10w-40) ।এইটা ব্যবহার করার পর ইঞ্জিন পারফরমেন্সটা এক নিমিষই পরিবর্তন হয়ে গেল এবং আমি এফআই প্রযুক্তির সঠিক প্রভাব পাচ্ছি এবং ইঞ্জিন বেশী গরম হওয়ার বিষয়টা প্রায় চলেই গেছে। মোটুল ৭১০০(10w-40) ব্যবহার করার পর থেকে গিয়ার সিফটিং এবং ইঞ্জিন সাউন্ডটা অনেক স্মুথ হয়ে গেছে যেটা আমার কাছে অনেক ভাল লেগেছে।

কিছু মানুষ তাদের আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে এফ যেড এস এফ আই এর ইঞ্জিন শব্দটা তেমন একটা সন্তোষজনক না এবং আরও অনেক সমস্যা তুলে ধরেছে কিন্তু আমার কথা হল যে আপনি যদি আপনার বাইকের ঠিক মত করে মেইন্টেনেন্স করেন তবে আপনি আপনার বাইকের পারফরমেন্স নিয়ে হতাশ হবেন না। তবে হ্যাঁ এই বাইকটি চেইনের সমস্যা আছে পাশাপাশি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সটা কম যার ফলে স্পীড ব্রেকারের সাথে অনেক বার ঘর্ষণ খেয়েছে অন্যদিকে যদি ভারী কোন পিলিয়ন নিয়ে চালানো সময় অন্যান্য ১৫০ সিসি বাইকের তুলনায় ইঞ্জিন পাওয়ারটার ঘাটতি মনে হয়। কিন্তু ভালমতো যত্ন নিলে ভাল পারফরমেন্স পাওয়া যায় তবে ছোট খাট সমস্যা নিয়ে মাথা না ঘমানোই ভালো এবং এসিআই মোটরস সব সমই আমাদের পাশেই আছে। তাই কোন প্রকারের অনভিজ্ঞ লোকের এফআই সম্নদ্ধে কোন অভিজ্ঞতা শুনবেন না। প্রথমে এই বাইকটা নিয়ে রাইড করবেন তারপর সমস্যার কথা গুলো তুলে ধরবেন।
সবশেষে আমি বলতে চাই যে আমি আমার এই বাইকটা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট ব্রেকিং, কন্ট্রোলিং,মাইলেজ,ইঞ্জিনের শব্দ,আউটলুক ইত্যাদি সব কিছুই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। আমি এয়ার ফিল্টার,ওয়েল ফিল্টার এবং প্লাগ পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি আশা করি এটা পরিবর্তন করার পর আমার বাইকের পারফরমেন্স আরও ভালো হবে।

All YAMAHA bike price in bd

Yamaha FZS Fi v2