ইয়ামাহা এফজিএস এফআই মোটরসাইকেল রিভিউ - রাহী

মোটরসাইকেলের প্রতি আমার দুর্বার আকর্ষন অনেক আগে থেকেই। উম্মাদনা বলতে পারেন। সব সময় একটু পেশীবহুল এবং গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেলই আমার পছন্দ। তাই আমার নিজের বাইকের শুরুটাও হয়েছিল টিভিএস এপাচি আরটিআর দিয়ে। বাইকটি নিঃসন্দেহে পেশীবহুল কিন্তু ঠিক যেন মডেলদের মতো, আরনল্ড সোয়ার্জনেগারের মতো বডি বিল্ডিং এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন না। এমতিতেই আমাদের দেশে সিসি সমস্যার কারণে খুব বেশী মোটা তাজা বাইক পাওয়া যায় না, আমি প্রথম যখন FZS মডেলটি বাংলাদেশে আসে দেখে মনে মনে বলেছিলাম একদিন এই বাইকের পিঠে সওয়ারী হবো ইনশাআল্লাহ্। সওয়ারী আমি সেই সময়ই হয়েছিলাম, তবে নিজের না, বন্ধুদের অনেকেরই এই বাইক ছিল তাদের বাইক চালিয়েছি। তারপরে মাঝে কিছুদিন এফজেডএস এর আমদানি বন্ধ ছিল। যখন শুনলাম এফজেডএস এর নতুন ভার্সন আবার পাওয়া যাচ্ছে, তখন দেরি না করে নাটোরের মোটরসাইকেলরে শোরুমগুলোতে খোঁজ নেয়া শুরু করলাম । আমার পছন্দের মডেল এবং রং পাচ্ছি না। চলে আসলাম রাজশাহীতে । এখানেও একই অবস্থা । অগ্রিম বুকিং দিতে হবে । কিন্তু বাইকটি আমার এখনই চাই। উপায় না দেখে মোটরসাইকেল ভ্যালির আবু সাঈদ ভাইয়ের দ্বারস্থ হতে হলো। তার সহায়তায় শেষ পর্যন্ত কেআর বাইক সেন্টার থেকে আমার কাংক্ষিত মোটরসাইকেলটি পেয়ে গেলাম।

আমি এফজেডএস আগেও চালিয়েছি তাই এই রিভিউতে আগের মডেলের সাথে তুলনামুলক অভিজ্ঞতাও সংক্ষেপে তুলে ধরছি।




প্রায় অর্ধ যুগ পরে ইয়ামাহা তাদের এফজেডএস সিরিজের আপডেট করে নাম দেয় FZS Fi । নতুন ভার্সনে প্রথমেই আপনার ব্যাপক কসমেটিক পরিবর্তন চোখে পড়বে। কৌণিক ডিজাইনের হেডলাইট আগের থেকে অনেকটাই আলাদা। পেশীবহুল ফুয়েল ট্যাংক আর পেছনের টায়ার আগের মতোই আছে । তবে পরিবর্তন আনা হয়েছে রিয়ার টেইল লাইট আর এক্সহষ্ট সিস্টেমের। যদি মেকানিক্যাল পরিবর্তন দেখেন তবে কিছুটা মন খারাপ হবে। আগের মডেলের ইনজিন যেখানে ছিল ১৫৩ সিসির নতুন মডেলে করা হয়েছে ১৪৯ সিসির। ইনজিন পাওয়ার কমিয়ে করা হয়েছে 13bhp এবং 12.8Nm torque । কি মনে হচ্ছে ইয়ামাহা তাদের স্ট্রীট ফাইটারদেরকে গোবেচারা কমিউটার বাইকে পরিণত করেছে? আমি বলবো একেবারেই না। বাইকটি চালিয়ে অল্প কিছুদূর গেলেই আমার সাথে আপনিও একমত হবেন। প্রচলিত কার্বুরেটর সিস্টেমের বদলে এই বাইকে আধুনিক প্রযুক্তির ফুয়েল ইঞ্জেক্সান সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে , যা FZS Fi কে আরও পরিশোধিত মেকানিক্যাল দানবে পরিণত করেছে।




আসলে মিড রেঞ্জের এই বাইকটি শহরের ভিড়ে চালিয়ে আপনি অন্য এক ধরণের মজা পাবেন। হাইওয়েতে ৭০ থেকে ৮০ কিমি/ ঘন্টা গতি আপনি অনায়েসেই তুলে ফেলতে পারবেন । আর ফাকা হাইওয়েতে ১১০ কিমি/ ঘণ্টা গতি আমি নিজেই তুলেছি। গিয়ের ট্রান্সমিশন খুবই মসৃণ এবং আমি এখন পর্যন্ত ফলস গিয়ারের সমস্যায় পড়িনি। তবে যেটা আমার FZ-S এ একেবারেই পছন্দ হয় নাই তা হলো পেছনের ডিস্ক ব্রেক না থাকা সাথে গিয়ার পাঁচ এর বদলে ছয়টি থাকলে বাড়তি সুবিধা হতো।


আগের এফজেডএস এর মতো নতুন ভার্সনেও সাস্পেনশান কিছুটা কড়া মনে হতে পারে । তবে ঘাবড়াবেন না, এর ফলে দ্রুত গতিতে আপনি বাইকে ভালো স্ট্যাবিলিটি পাবেন সাথে উচ্চ গতিতে টার্ন নেয়ার সময় আলাদা কনফিডেন্স পাবেন। আমার মনে হয়েছে ইয়ামাহা এটা ইচ্ছা করেই করেছে। যদিও তুলনামূলক খারাপ রাস্তায় বাইকটি চালিয়ে কিছুটা কষ্ট পাবেন।

এই বাইকের যে দিকটি সব চেয়ে বেশী আমাকে বিমোহিত করেছে তা এর ফুয়েল ইফিশিয়েন্সি । বন্ধুদের থেকে শুনেছিলাম FZS এ নাকি অনেক বেশি জ্বালানি লাগে। ২৫-৩৫কিমি/লিটার তারা পেয়ে থাকে। কিন্তু নতুন ভার্সনে আমি ৪০-৪৫কিমি/লিটার পাচ্ছি। জানিনা এটি কতদিন থাকবে।




মোটরসাইকেলটি চালিয়ে যে দিকগুলো আমার ভালো লেগেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কম জ্বালানি খরচ, আগের চেয়ে আরো সুন্দর ডিজাইন বিশেষকরে গ্রাফিক্স, এক্সহস্ট, এবং সীট। এছাড়াও সহজ নিয়ন্ত্রন এবং সুন্দর ব্রেকিং এর জন্য FZS সব সময়েই সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে।




একটি মোটরসাইকেলের খারাপদিকগুলো চালকভেদে ভিন্ন হতেই পারে। আমার কাছেও তেমন কিছু বিষয় চোখে পড়েছে। যেমন লেগ গার্ড হ্যান্ডেল থেকেও সামান্য বেশি চওড়া থাকায় ভীড়ের রাস্তায় অনেককের সাথে ধাক্কা লেগে যায়। স্টক হর্নটি আমার ভালো লাগে নাই, পরিবর্তন করে জোরালো এবং গম্ভীর শব্দের হর্ন লাগিয়ে নিয়েছি। ইনজিনের নয়েজ একটু বেশি বলেই মনে হয়েছে। পেছনের দুইভাগে কাটা(Split)সীটের কারনে মহিলা সহযাত্রীর বসতে একটু কষ্ট হয়। সাইলেন্সারে পেছনের যাত্রীর পা ঠেকে যায়, তাই আলাদা গার্ড লাগাতে হয়েছে।





নতুন অবস্থায় সব জিনিসই ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে। একটি মোটরসাইকেলের প্রকৃত ভালোমন্দ দিকগুলো পেতে অন্তত ১৫থেকে২০ হাজার কিলোমিটার চালালে হয়তো আরো সঠিকভাবে পাওয়া যেতে পারে। তবুও এখন পর্যন্ত পাওয়া সার্ভিসে আমি খুবই সন্তুষ্ট। আশা করি সামনের দিনগুলোও ভালো যাবে।

All YAMAHA bike price in bd

Yamaha FZS Fi v2