বাইক রাইড আমার অনেক ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে। সেই ভালোলাগা ভালবাসায় কবে রূপান্তর হয়েছে ঠিক জানিনা। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন বাইক ব্যবহার করতে করতে বাইকের প্রতি অন্য লেভেলের ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন বাইক ব্যবহার করতে করতে এখন যে বাইকটি বর্তমানে ব্যবহার করছি সেটি হল ইয়ামাহা এমটি ১৫। এই বাইকটি আমি এক বছর যাবত ব্যবহার করছি এবং এক বছরে বাইক থেকে ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা পেয়েছি।
এই বাইকটি কেনার মূল কারণ হলো যে নেকেড স্পোর্টস বাইক সেইসাথে বাজেট। আমি এই সেগমেন্টে অন্যান্য বাইক যেমন হোন্ডা এক্স মোশন, জিএসএক্স ১৫০ এস ইত্যাদি বাইকের সাথে তুলনা করে দেখেছি যে ইয়ামাহা এমটি ১৫ বাজেট অনুযায়ী সেরা। তাই আমি ইয়ামাহা এমটি ১৫ নির্দ্বিধায় কিনে ফেলি এবং কেনার পর এখন পর্যন্ত ভালোভাবে ব্যবহার করে আসছি। আমি এই ইয়ামাহা এমটি ১৫ বাইকটি এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ১৬ হাজার কিলোমিটার। এই ১৬ হাজার কিলোমিটার রাইড করে আমার ভালো এবং খারাপ অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
প্রথমেই এই বাইকের কিছু ভালো দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করি
- বাইকের কন্ট্রোল দুর্দান্ত। আমি এই বাইকটি রাইড করে খুব ভালো কন্ট্রোল পেয়েছি। আমি হাইওয়ে, গ্রামের রাস্তা , পাহাড়ি রাস্তা , ইত্যাদি বিভিন্ন রাস্তায় ইয়ামাহা এমটি ১৫ থেকে খুব ভালো কন্ট্রোল পেয়েছি।
- ইঞ্জিন এর পারফর্মেন্স ও শক্তি খুবই ভালো। আমি এই বাইকের রেডি পিকআপ অনেক বেশি অনুভব করি। ০ থেকে ১০০ এরমধ্যে বাইকের রেডি পিকআপ অন্যান্য বাইকের তুলনায় আমার কাছে বেশি মনে হয়েছে। আমি নিমিষেই ০ থেকে ১০০ এর মধ্যে খুব দ্রুত স্পিড তুলতে পারি এবং এর ফলে হাইওয়েতে ওভারটেকিং এর সময় ঝামেলা পোহাতে হয় না । আমি নির্দ্বিধায় বাইকের ইঞ্জিন শক্তি ও টর্ক নিয়ে ভালোভাবেই যে কোনো যানবাহন ওভারটেক করতে পারি।
- ব্রেকিং সিস্টেম আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। বিশেষ করে এর এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম রেসপন্স খুবই ভালো। আমি এই বাইকের এবিএস রেসপন্স বৃষ্টি ভেজা রাস্তা কিংবা মাটি কাদা রাস্তায় খুব ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। আমি আগে থেকেই জানি যে ইয়ামাহা অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন বাইক তৈরি করে এবং এটি ব্যবহার করে আমি সেটাই অনুভব করছি।
- সিটিং পজিশন আমার কাছে খুবই আরামদায়ক মনে হয়েছে। আমি এই বাইকে যখন সিটিং পজিশনে বসি তখন মনে হয় যে আমি এ বাইকের সাথে এডজাস্ট হয়ে গেলাম এবং যতই রাইড করিনা কেন আমি ক্লান্ত হবো না। সিটিং পজিশন কমিউটার বাইকের মত যার ফলে লং রাইড এ আমি কোন ব্যাক পেইন বা ঝামেলা অনুভব করিনা। সিটিং পজিশন ও শক্তিশালী ইঞ্জিন আমাকে এই বাইকের খুব ভালো একটা অনুভূতি এনে দেয়।
- বাইকের হেডলাইট টা অনেক এগ্রেসিভ। বাইকের হেডলাইট সবাই পছন্দ করে এবং শহরের রাস্তায় এই হেড লাইটের আলো যথেষ্ট ভালো।
- স্লিপার ক্লাচ থাকায় আমি যখন ভুলবশত একটি গিয়ার বেশি কমায় ফেলি তখন কোন ঝাঁকুনি বা ব্যালেন্স হারানোর কোন ভয় থাকে না যেটা স্লিপার ক্লাচ বিহীন অন্যান্য বাইক গুলোতে অনুভব করা যায়।
এইবার বলি বাইকের কিছু মন্দ দিক
- বাইক রাইডিং সিটিং পজিশন যথেষ্ট আরামদায়ক হলেও পিলিয়নের সিটিং পজিশন খুব একটা আরামদায়ক না। আমি নিজেও এ বাইকের পিলিয়ন হয় ভালোভাবে আরামসে বসতে পারিনি এবং অন্যান্য যারা এই বাইকের পিলিয়ন হিসেবে যাত্রা করে তারাও খুব একটা আরামে বসে রাইড অনুভব করতে পারে না।
- এই ইয়ামাহা এমটি ১৫ বাইকের সাথে রয়েছে সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস । আমার মনে হয় এ বাইকের সাথে ডুয়েল চ্যানেল এবিএস দিলে অনেক ভালো হতো।
১৫০ সিসি প্রিমিয়াম ইঞ্জিন থেকে আমি মাইলেজ পাচ্ছি শহরের মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার প্রতি লিটার এবং হাইওয়েতে ৪২ কিলোমিটার প্রতি লিটার। অন্যদিকে পাহাড়ি রাস্তায় আমি এই বাইকের মাইলেজ ৪৪ কিলোমিটার প্রতি লিটার এর নিচে কখনোই পাইনি। মাইলেজের দিক থেকে ইয়ামাহা এমটি ১৫ খুব ভালো একটা বাইক বলে আমি মনে করি। আমি এই বাইকটা নিয়ে একদিনে রাইড করেছি ২৮০ কিলোমিটার এবং টপ স্পিড পেয়েছি ১৪৪ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা।
আমার কাছে মাইলেজ, ইঞ্জিন পারফরম্যান্স, কোয়ালিটি, ব্র্যান্ড ভ্যালু, বাজেট ইত্যাদি সব দিক থেকে ইয়ামাহা এম টি ১৫ বাইকটা খুব ভালো লেগেছে। তাই আপনারা যারা এই ইয়ামাহা এমটি ১৫ কিনবেন তাদের কাছে আমার পরামর্শ যে অবশ্যই নিতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন এবং সাবধানে রাইড করবেন ধন্যবাদ।