আমার নাম কাজী ফাহিম, বয়স ২৩, রাজধানী ঢাকা এর বেইলী রোড এলাকায় বসবাস করি। আজ আমি আমার প্রায় ৫০,০০০ কিমি রাইড করা Yamaha R15 v3(indonesian) নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
আমার জীবনের প্রথম বাইক কিনেছিলাম ৪ বছর আগে, যেটি ছিল Yamaha Fz-s Fi(2017). ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই বাইকটি আমি ২৮,০০০কিমি চালিয়েছিলাম। তারপর ভাবলাম একটা স্পোর্টস বাইক কিনলে মন্দ হয় না । যেই ভাবা, সেই কাজ। ৭ দিনের মাথায় কিনে ফেললাম Yamaha R15 v3 2018 edition (Indonesian). আজকে মূলত কথা বলবো R15 টি নিয়েই।
বাজারে CBR 150R এবং GSX-R 150 থাকতেও আমার R15 পছন্দ করার কারন এর লুক এবং পাওয়ার। যদিও প্রথম ১৫/২০ দিন চালানোর পর আমার হাতে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে বাইকটার মজা পেতে শুরু করলাম এবং R15 কেনার ৩ মাসের মাথায় Fz-s Fi বিক্রি করে দিলাম।
আমার উচ্চতা ৫ফুট ৮ ইঞ্চি, এবং আমি মনে করি বাইকটি আমার জন্য পুরোপুরি পারফেক্ট। এই দুই বছরে একবারের জন্যও মনে হয় নি বাইকটি বিক্রি করে দেই। কারন বাইকটার কিছু কিছু বিষয় খুবই ভাল। যেমন মাইলেজের কথাটাই বলা যাক। একটা মিথ ছিল যে স্পোর্টস বাইকের মাইলেজ অনেক কম কিন্তু R15 এর ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি ভিন্ন। আমার বাইকে আমি সিটিতে ৪৮কিমি/লিটার এবং হাইওয়ে তে ৫৫+ কিমি/লিটার মাইলেজ পাচ্ছি এখনো। এখনো আমার বাইকের টপ স্পিড ১৫৩কিমি/ঘন্টা।
বাইকটি নিয়ে প্রচুর ট্যুর করার সৌভাগ্য হয়েছে। পার্ফরমেন্সের দিকে থেকে বাইকটি কখনোই আমাকে হতাশ করে নি। বাইকটির কিছু ভাল দিক সম্পর্কে বলিঃ
এই বাইকের এরোডায়নামিক্স এর কথা বলা যেতে পারে। এটার এরোডায়নামিক্স এতোই ভাল যে হাই স্পিডে বাইকটা খুবই স্টেবল থাকে, একদম ই কাপাকাপি করে না। এছাড়া এটার হুইলবেস একটু বড় হওয়ার কারনে কর্নারিং করে অনেক মজা এবং স্টেবিলিটি পাওয়া যায়। সামনে পিছনে ওয়াইড টায়ারের জন্য ব্যালেন্স এবং ব্রেকিং অনেক সুন্দর। আর মাইলেজের কথা তো আগেই বলেছি। এই মাইলেজ পেলে যেকোন বাইকার হ্যাপি থাকতে বাধ্য।
কিছু খারাপ দিক নিয়েও কথা বলা উচিৎ। এই বাইকের সাইজ টা একটু বড়, তাই শহরে ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে মুভ করা একটু সময়সাপেক্ষ। এই বাইকের স্পেয়ার পার্টসের দাম টা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। অনেকে বলে থাকেন এটার সিটিং পজিশন একটু বেশী স্পোর্টি হওয়ায় অল্প সময় রাইড করলেই হাতে,ঘারে এবং কোমরে ব্যাথা হয়। হ্যা, প্রথম দিকে একটু ব্যাথা করবে কিন্তু একটা সময় পর এই ব্যাথা আর থাকবে না। আমি এখন এই সিটিং পজিশন এর সাথে একদম সেট হয়ে গেছি। এই বাইকটি দীর্ঘসময় রাইড করলেও আমার শরীরের কোন জায়গায় কোনরকম ব্যাথা করে না। তাই সিটিং পজিশন কে আমি কখনোই খারাপ দিক হিসেবে বলবো না। এগুলো সবই আমার ব্যাক্তিগত মতামত।
মেইনটেইনেন্সঃ
এই বাইকে প্রথম ৪০০০কিমি পর্যন্ত মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি। তারপর Motul 300v ব্যবহার করা শুরু করেছি। এখনো পর্যন্ত Motul 300v ই ব্যবহার করছি। প্রতি ২৫০০কিমি পর পর আমি ইঞ্জিন অয়েল(300v) এবং অয়েল ফিল্টার, ৫০০০কিমি পর পর ব্রেক প্যাড, ১০,০০০কিমি পর পর এয়ার ফিল্টার, রেডিয়েটর কুলেন্ট ইত্যাদি পরিবর্তন করে থাকি। প্রতি ৫০০০কিমি পর পর আমি বাইকের মাস্টার সার্ভিস করাচ্ছি এবং কোন ট্যুরে যাওয়ার আগে জেনারেল সার্ভিস করিয়ে নেই। প্রথম ১৮,০০০ কিমি তে আমি টায়ার এবং চেইন সেট পরিবর্তন করি। টায়ার পরিবর্তন করে লাগিয়েছিলাম Michelin Pilot Sporty. ৩৮,০০০কিমি তে আবার টায়ার পরিবর্তন করে লাগিয়েছি MRF Masseter.
মডিফিকেশনঃ
শখের বাইক একটু মডিফাই না করলেই নয়। ছোটবেলা থেকেই আমার সবচেয়ে পছন্দের বাইক Yamaha YZF R1M. দেশে সিসি লিমিটেশনের জন্য এই বাইক চালানোর স্বপ্ন টা স্বপ্নই থেকে গেছে। তবে চেষ্টা করেছি আমার R15 টা কে একটু R1M এর মতো লুক দেওয়ার। আমাদের দেশের এক কারিগরের কাছ থেকে R1M এর মতো হেড বানিয়ে নিয়েছিলাম গ্লাস ফাইবার দিয়ে। তারপর সেটিকে বাইকে বসিয়ে পুরো বাইকে নতুন পেইন্ট করা হলো। নতুন গ্রাফিক্স করা হলো। গ্রাফিক্সের কনসেপ্ট ছিল BumbleBee. এখন বাইকটাকে দেখতে কিছুটা হলেও R1M এর মতো দেখায়। এছাড়াও কিছু আফটারমার্কেট এক্সেসরিজ লাগানো হয়েছে।
এই বাইকটার ভাল দিক গুলো এনজয় করছি এবং খারাপ দিক গুলোর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কারন কোন বাইক ই স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়। কিছু না কিছু খারাপ দিক প্রত্যেকটা বাইকেরই থাকে।ওভারঅল এই বাইকটাকে আমি রেটিং দিব ৮.৫/১০।
যারা R15 v3 কিনবেন বলে ভাবছেন, তাদের প্রতি আমার পরামর্শঃ
অনেকেই অনেক কথা বলবে যে R15 এ হাত অনেক ব্যাথা করে,, মাইলেজ অনেক কম,, পার্টসের দাম অনেক বেশী, ইত্যাদি। আপনার পছন্দের বাইক যদি হয় R15 v3 তাহলে এসব দিকে কান না দিয়ে নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন বাইকটি। প্রপার মেইনটেইনেন্স করলে বাইকটি আপনাকে অবিশ্বাস্য পার্ফরমেন্স দিবে। যখনই মেইনটেইনেন্সে ঘাটতি পড়বে তখনই বাইকটা আপনাকে অনেক ধরনের ভোগান্তি দিবে।