২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে বাইকারদের মাঝে একটি নাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর সেই নামটি হল আরওয়ানফাইভ। ইয়ামাহার প্রিমিয়াম বাইকগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইভ। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এই বাইকটি নিয়ে বেশি উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায় আর এর বডি ও ইঞ্জিন পারফরমেন্স দেখে যে কেউ নিমিষেই মুগ্ধ হয়ে যায়। অনেক বাইক লাভারের কাছে এই বাইকটি স্বপ্নের বাইক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। এটা যখন প্রথম লোকাল মার্কেটে আসে তখন এর নাম ছিলো ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ১ এবং তারপরের মডেল ছিলো ভার্সন ২ । লো সিসির মধ্যে স্পোর্টস ক্যাটাগরির বডি টাইপ এবং ইঞ্জিন পারফরমেন্স বাইকের সাথে আছে এবং যার কারণে জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই। প্রায় ১০ বছর এই দুইটা মডেল বাজারে সফলতার সাথে পরিচালনা করেছে এবং সম্প্রতি তারা বাজারে নিয়ে এসেছে ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ । নতুন মডেলের এই বাইকটির পূর্বেরগুলোর থেকে আরও বেশি মাস্কুলার দেখতে এবং ফিচারসগত দিক থেকেও অনেক উন্নত। শুধু বাংলাদেশেই নয় একটু লক্ষ্য করলে আমরা এই বাইকটি আশেপাশের লোকাল মার্কেটেও পছন্দের শীর্ষে দেখতে পাই। তাই আর সময় নষ্ট না করে চলুন দেখে নেওয়া যাক ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ তে কি কি ফিচারস রয়েছে।
প্রথমেই জেনে নিই যে আরওয়ানফাইভ ভি৩ তে কি কি নতুন ফিচারস সংযুক্ত করা হয়েছে।
VVA প্রযুক্তি
VVA মানে হচ্ছে Variable Valve Actuation এই প্রযুক্তি সাধারণত বাংলাদেশে অন্য কোন বাইকে এই প্রযুক্তি দেখা যায় না এবং ইয়ামাহা তাদের আরওয়ানফাইভ বাইকটিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য বাইকের থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়েছে। VVA হচ্ছে একটি একক ওভারহেড ক্যাম্প যা থ্রটল রেসপন্সকে আরও সংবেদনশীল করবে এবং আরপিএম সাথে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক পাওয়ার সরবরাহ করতে পারবে। আর ইয়ামাহা দাবি করে যে VVA প্রযুক্তির ফলে ১৪ শতাংশ স্পীড এবং ৪.৭ শতাংশ মাইলেজ বৃদ্ধি করবে।
Assist and slipper clutch প্রযুক্তি
Assisted প্রযুক্তি বাইকের ক্লাচকে আরও স্মুথ করে দিবে এবং Slipper clutch বাইকের স্মুথ গিয়ার শিফটিং এবং ফাস্ট এক্সেলেরেশন অনুভূতি এনে দিবে।
Up side Down suspension
ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ এ আপ সাইড ডাউন সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে হ্যান্ডেলিংটা দারুন হবে পাশাপাশি খারাপ রাস্তায় ভালো স্ট্যাবিলিটি পাওয়া যাবে এবং রাইডিং করার সময় দেখতে অনেক আকর্ষণীয় লাগবে।
Deltabox Body
বাইকটিতে ডেলটা বক্স বডি ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে যা রাইডিং করার ক্ষেত্রে ভালো স্ট্যাবিলিটি দিবে এবং বাইকটির গঠন ও বডি কে আরও মজবুত করে তুলবে।
Hazard lamp
বৃষ্টি কিংবা কুয়াশাছন্ন আবহাওয়া কিংবা সামনে কোন দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার জন্য জরুরী সতর্কতামুলক একটি ফিচারস হচ্ছে এই হ্যাজারড লাইট।
ডিজাইন
আগের দুইটা মডেলের ডিজাইনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এর ডিজাইনগত দিক থেকে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে । ইয়ামাহার আর সিরিজের ডিএনএ এর সাথে শার্প ডাবল হেডল্যাম্প এই বাইকটিতে লক্ষ্য করা যায় এবং এটা দেখতে অনেক চমৎকার। এই কারণে বাইকের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এরো ডাইনামিক ডিজাইন বাইকটাকে রেসিং লুক এনে দিয়েছে। পূর্বের দুটি মডেলে ডুয়াল হ্যালোজিন বাল্ব ব্যবহার করা হয়েছিলো কিন্তু বর্তমান মডেলের বাইকটিতে এলিডি ডুয়াল হেডল্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে যা এর ডিজাইন কে আরও ফুটিয়ে তুলেছে। এছাড়াও পেছনের এলিডি টেল ল্যাম্পটা স্টাইলিশ কভার দ্বারা আবৃত এবং এর ফলে পেছনের ডিজাইনটাও দেখতে অনেক আকর্ষণীয়। এলয় রিমস, অ্যালুমিনিয়াম সুইং আরম, স্টাইলিশ ডিস্ক প্লেট এবং চওড়া টায়ার বাইকটিকে আরও বেশি চোখ ধাঁধানো করে তুলেছে।
গ্রাফিক্স
নতুন এই বাইকটির গ্রাফিক্স সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাইকের গ্রাফিক্সগুলো দেখলে মনে হবে যে ইয়ামাহা তাদের গ্রাফিক্যাল ডিজাইনে নিপুণতার পরিচয় দিয়েছে। ডিজাইনের সাথে মিল রেখে এর গ্রাফিক্স আরও উন্নত করা হয়েছে।
বডি ডাইমেনশন
যেহেতু বাইকটি স্পোর্টস ক্যাটাগরির তাই ইয়ামাহা ডাইমেনশনের দিক দিয়ে কোন আপোষ করেনি। বাইকের ডাইমেনশন রয়েছে লম্বায় ১৯৯০মিমি,চওড়ায় ৭২৫মিমি এবং উচ্চতায় ১১৩৫ মিমি। এর পাশাপাশি আরও রয়েছে ৮১৫মিমি সিট হাইট, ১৩২৫মিমি হুইলবেজ এবং ১৫৫ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স। বাইকটির ফুয়েল ট্যাংকার দেখতে একটু মাস্কুলার মনে হলেও মাত্র ১১ লিটার ফুয়েল ধারণ করতে পারে আর এসব মিলিয়ে বাইকটির ওজন রয়েছে ১৩৭ কেজি।
ইঞ্জিন
১৫৫ সিসির লিকুইড কুল্ড, সিংগেল সিলিন্ডার, ৪ ভালভ ইঞ্জিন এখানে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর সাথে আছে VVA এবং A&S clutch. ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভি৩ এর ইঞ্জিন ১৪.২ কিলোওয়াট @ ১০০০ আরপিএম ম্যাক্স পাওয়ার ও ১৪.৭ এনএম@ ৮৫০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন হওয়ার ফলে তেল খরচ অনেক কমে যাবে। ইয়ামাহা দাবি করে যে তাদের এই বাইকটি মাইলেজ দিবে গড়ে ৪০ কিমি/লিটার এবং টপ স্পীড দিবে ১৩১ কিমি প্রতি ঘণ্টায় । ইঞ্জিনের ইগনিশন টাইপ হচ্ছে TCI এবং কম্প্রেশান রেশিং 11.6 ± 0.4 : 1 । ইঞ্জিন চালু করার জন্য শুরুমাত্র ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন রয়েছে এবং সাথে ৬ স্পীড ম্যানুয়াল গিয়ার বক্স আছে।
ব্রেকিং
ইয়ামাহা তাদের এই বাইকটিতে যেমন গতি দিয়েছে ঠিক তেমনিভাবে গতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে ডাবল ডিস্ক ব্রেক। এর সামনের দিকে ২৮২ মিমি ডিস্ক এবং পেছনের দিকে ২২০ মিমি ডিক্স ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে ইয়ামাহা তাদের এই বাইকের কোন আপোষ করেনি আর রাইডারকে আরও ভালো রাইডিং অভিজ্ঞতা এনে দেবার জন্য উন্নত্মানের ডিস্ক প্লেট ব্যবহার করা হয়েছে।
সাসপেনশন
চলার পথকে আরও আনন্দময় ও আরামদায়ক করতে ইয়ামাহা তাদের এই বাইকে সামনের দিকে আপসাইড ডাউন সাসপেনশন এবং পেছনের দিকে সুইংআরম মনোশক সাসপেনশন ব্যবহার করেছে।
টায়ার ও হুইল
হুইলের পরিমাপ ১৭ ইঞ্চি। সামনের টায়ারের পরিমাপ রয়েছে 100/80-17 এবং পেছনের টায়ারের পরিমাপ রয়েছে 140/70-17M । আর অবশ্যই এখনে টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে । এর ফলে রাইডার তার কন্ট্রোল এবং ব্যালেন্সিং খুব ভালোভাবে করতে পারবে এবং ভালো স্ট্যাবিলিটি পাবে।
ইলেকট্রিক্যাল
ইলেকট্রিক্যাল দিক দিয়েও বাইকটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে। এলিডি হেডল্যাম্প, এলিডি সাইড ইন্ডিকেটর, এগ্রেসিভ টেল ল্যাম্প, ফুল ডিজিটাল মিটার আর এসবকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে 12 V, 4.0 Ah(10 HR) ব্যাটারী। AHO প্রযুক্তি এখন ইয়ামাহার সকল বাইকের সাথে থাকছে তাই এই বাইকেও তারা AHO প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে।
মিটার কনসোল
মিটার কনসোল ফুল ডিজিটাল এবং সাথে রয়েছে স্পিডোমিটার, গিয়ার ইন্ডিকেটর, ফুয়েল গেজ, ঘড়ি সহ আরও অনেক কিছু।
কালার
বাইকটির ৩টি ভিন্ন রং যেমন-কালো,নীল ও হলুদ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
আমাদের দেশে তরুণদের মাঝে ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ বাইক নিয়ে এক ধরণের উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়। আর সেই উন্মাদনা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইয়ামাহা নিয়ে এসেছে আরওয়ানফাইভ ভি৩। বাইকটির ফিচারস এবং প্রযুক্তি সব কিছু বিবেচনায় আশা করা যায় তার পারফরমেন্স আমাদের দেশে তরুণদের মন জয় করবে।