বাংলাদেশের বাজারে প্রিমিয়াম বাইকের চাহিদা যে কম এ ধারণা ভুল কারণ আমরা দেখতে পাই যে সব ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম যে বাইকগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলো প্রতিটা অঞ্চলে ব্যবহার করে এবং এই সব প্রিমিয়াম বাইকের প্রতি আকৃষ্ট বেশি তরুণ বয়সের ছেলেরা। যারা ভার্সিটি কিংবা সবে মাত্র কলেজে উঠেছে তাদের কাছে এই বাইকটি বেশি দেখা যায় অন্যদিকে চাকুরীজীবীরাও এই বাইকটি ব্যবহার করে থাকেন শখের বসে। ঠিক আমি যেমন এখজন ছাত্র হিসেবে শখের বসে এই বাইকটা পছন্দ করেছি এবং এখন ব্যবহার করছি। আমার কাছে এই বাইকটি ব্যবহার করে অনেক কিছু অনুভুতি এসেছে যা এই প্রিমিয়াম সেগমেন্টকে আরও লোভনীয় করে তুলেছে।
আমি গত ২৫ শে মার্চ, ২০২০ ক্রিসেন্ট এন্টারপ্রাইজ থেকে বাইকটা কিনি এবং কেনার পর এখন পর্যন্ত রাইড করেছি প্রায় ৫০০ কিমি । আসলে ৫০০ কিমি ব্যবহার করে একটি বাইকের আসল অনুভুতি বুঝা যায় না তবে প্রিমিয়াম বাইকের প্রথম ব্যবহারের যে অনুভুতি তা আমি আঁচ করতে পেরেছি।
আমি এর আগেও ইয়ামাহা বাইক ব্যবহার করতাম । আমার কাছে ব্র্যান্ড হিসেবে ইয়ামাহা সবার আগে পছন্দ কারণ এই ব্র্যান্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং কিছু ভিন্ন ভিন্ন ফিচারস রয়েছে যা অন্যান্য ব্র্যান্ডের থেকে একদমই আলাদা। প্রিমিয়াম সেগমেন্টের মধ্যে আমার কাছে আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ মনস্টার এনার্জি বাইকটা খুব পছন্দ হয়েছে।
নিম্নে এই বাইক নিয়ে আমার কিছু অনুভুতি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
- প্রথমত যে বিষয়টি নজর কাড়বে তা হল এর ডিজাইন। মটো জিপি রেসিং ট্র্যাকে ইয়ামাহা আরওয়ান মনস্টার যে বাইকটা রেস খেলে সেরকমই কিছুটা ডিজাইন রাখা হয়েছে এই বাইকটিতে যার ফলে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর লাগে।
- বাইকটির ইঞ্জিনের শক্তি অনেক বেশি। আর ইঞ্জিনের সাথে ভিভিএ প্রযুক্তি থাকার ফলে ৭ হাজার আরপিএম এর পর মনে হয় যে বাইকটা আরও দিগুন বেশি স্পীড তুলছে। আমি দেখেছি যে ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ বাইকের স্পীড অনেক বেশি এবং তাদের ইঞ্জিন নিয়ে কোন অভিযোগ আমার চোখে পড়েনি।
- ইয়ামাহার ব্রেকিং নিয়ে আমরা সবাই অবগত আছি নিশ্চয়। আমি এই বাইকের পূর্বে যে ইয়ামাহা বাইক ব্যবহার করতাম সে বাইকেরও ব্রেকিং পারফরমেন্স অনেক ভালো ছিলো এবং আমি এই বাইকের মধ্যে আরও ভালো ব্রেকিং অনুভব করতে পারি।
- সামনের এবং পেছনের সাসপেনশনগুলো খুবই ভালো ফিডব্যাক দেয়। পেছনের সাসপেনশন একদম রাইডিং সিটের নিচে অবস্থিত যার ফলে ফিডব্যাক অনেক ভালো পাওয়া যায়।
- বাইকটি থেকে শুরুতেই আমি দুর্দান্ত মাইলেজ পাচ্ছি। শহরের মধ্যে লিটারে পাচ্ছি ৪৮ কিমি এবং হাইওয়েতে পাচ্ছি লিটারে ৫০ কিমি। আমার কাছে এরকম দানবীয় ইঞ্জিন ও বডি প্রিমিয়াম বাইক থেকে এত সুন্দর মাইলেজ পাওয়া অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
- একদিনে আমি প্রায় ১৪০ কিমি রাইড করেছি এবং কোন ধরনের কোন ব্যাক পেইন আমি অনুভব করিনি। অনেকেই বলে যে আরওয়ানফাইভ ভার্সন ২ এর সিটিং একটু বেশি লীন। এই ব্যাপারটা আমি আপনাদের আমার জানার সীমাবদ্ধতা থেকে পরিস্কার করছি।
যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ এর বেশি তাদের কাছে এই লীন করা সিটিং পজিশন ঝামেলা হবে না এবং যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির কম তাদের কাছে এই বাইকটার সিটিং পজিশন কম আরামদায়ক মনে হবে। এটা আমি নিজেই খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি। আমি ১৪০ কিমি রাইড করে সত্যই কোন ব্যাক পেইন পাইনি এবং আমার উচ্চতা ৬ ফিট প্রায়। তাই এই বিষয়টা মাথায় রেখে সকলেই এই বাইকটা ব্যবহার করবেন।
৫০০ কিমি রাইড করে আমি মন্দ কোন দিক খুঁজে পাইনি। বাইকটির ডিজাইন, ইঞ্জিন ফিচারস, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ, আধুনিক ব্রেকিং ইত্যাদি বলতে গেলে সব কিছুই এই বাইকের মধ্যে বিদ্যমান। একটা প্রিমিয়াম বাইকের যে সব গুনাগুন থাকা দরকার তার সবটাই এই বাইকটার মধ্যে আছে বলে আমি মনে করি। আর দামটাও আমার কাছে সার্বিক দিক থেকে ঠিক মনে হয়েছে।
এইছিলো আমার অভিজ্ঞতা ইয়ামাহা আরওয়ানফাইভ ভার্সন ৩ মনস্টার এনার্জি নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন এবং নিরাপদে বাইক রাইড করবেন। ধন্যবাদ।