বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলগুলোর অনেক ফ্যান এবং ব্যবহারকারী দেখা যায়। বর্তমান সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের বাইক আমাদের বাজারে নিয়ে আসছে এবং সে সকল বাইকের মধ্যে সর্বশেষতম হচ্ছে ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫।এই বাইকটি ইয়ামাহার একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মডেল এবং এটি আর ওয়ান ফাইভ/ এমটি-১৫এর বেশ অনেকটা বৈশিষ্ট সম্পন্ন রেট্রো-স্টাইলের মোটরসাইকেল। প্রকৃতপক্ষে, এই মোটরসাইকেলের ভিত্তি প্রায় আর ওয়ান ফাইভ/ এমটি-১৫ এর মতই, পারফরম্যান্স এবং কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বাদে। ইয়ামাহা গ্রাহকদের আরও বেশি বিকল্প তুলে দেওয়ার জন্য, আর-১৫ এর রেসিং টাইপ মডেল এবং এমটি-১৫ এর নেকেডস্পোর্টস স্টাইলিং এর বাইরে এসে এই রেট্রো-স্টাইলের মোটরসাইকেল এক্সএসআর ১৫৫নিয়ে আসা। রেট্রো মোটরসাইকেল আসলে এক ধরণের ক্যাফে রেসারও বটে।
হাইলাইটেড ফিচারসঃ
-১৫৫.১ সিসি লিকুয়িড কুল্ড ৪ভি এসওএইচসি এফএই ইঞ্জিন।
-ভ্যারিএবল ভাল্ভ একচুয়েশন (ভিভিএ)
-এসিস্ট এন্ড স্লিপার ক্লাচ
-৬ স্পীড ট্রান্সমিশন
-ডুয়াল চ্যানেল এবিএস
-রাউন্ড শেপ এলিডি হেডলাইট এবং টেইলল্যাম্প
-নেগেটিভ এলসিডি ডিসপ্লে সাথে গিয়ার শিফটিং ইন্ডিকেটর
-এলিডি টেইল ল্যাম্প
-ডেলটা বক্স ফ্রেম
প্রযুক্তিগতভাবে রেট্রো-স্টাইলের এই ডাইনামিক ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ আরও উন্নত এবং এর রয়েছে একটিভ হ্যান্ডেলিং, চওড়া হ্যান্ডেল পজিশন এবং আলট্রা লাইট ওজন (১৩৪ কেজি) যা রাইডাকে অভাবনীয় কমফোর্টেবল রাইডিং অভিজ্ঞতা দিতে পারবে। ইয়ামাহা বলে যে তাদের এই অত্যাধুনিক ফিচারস সমৃদ্ধ বাইক বর্তমান বাজারের যে প্রবাহ চলছে তা ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং তরুণ রাইডারদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করবে। চলুন ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ এর আরও কিছু ফিচারসের সঙ্গে পরিচিত হই যা ইয়ামাহা তাদের বাইকের সাথে সংযুক্ত করেছে।
ডিজাইন এবং স্টাইলঃ
যখন ডিজাইন এবং স্টাইলের কথা আসে তখন এই রেট্রো ডিজাইন ইয়ামাহা এক্সএসআর ১৫৫ এর কিছু সুনাম করতেই হবে। বাইকের এই ডিজাইন বাইকটির তথাকথিত বড় ভাই ইয়ামাহা এক্সএসআর ৯০০ এর সাথে বেশ মিলে যায়। তবে কিছু জিনিস বাদে বেশিরভাগই নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসা হয়েছে। বাইকটির সাইড প্যানেলগুলি এই বাইকের ডিজাইনে বেশ ভাল ইম্প্যাক্ট ফেলেছে এবং আকর্ষন বৃদ্ধি করেছে। সেই সাথে গোলাকার এলইডি হেডল্যাম্প, টেইল ল্যাম্প এবং ড্যাশবোর্ড বাইকটিকে ক্যাফে রেসার বাইকের যথাযথ স্পর্শ দিতে পেরেছে। মূল ডিজাইনের ধারণাটি আধুনিক ক্লাসিক ক্যাফে রেসারের মতো দেখাচ্ছে। হেডল্যাম্প, সাইড প্যানেল, ফুটরেস্ট এবং সামনের ফেন্ডারের কিছু অংশে ক্রোমিং এর ব্যবহার আপনি খুঁজে পাবেন। মাসকুলার কার্বন ফাইবার দ্বারা তৈরি এক্সহস্ট এই বাইকটিকে একটি প্রিয়াম স্পোর্টস ফিল দেয়। সামগ্রিকভাবে,
এই বাইকের সব কিছুই বসানো হয়েছে ডেল্টাবক্স ফ্রেমে।
ইঞ্জিন প্রযুক্তি এবং ট্রান্সমিশনঃ
ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫, এই বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫৫.১ সিসি লিকুয়িড কুল্ড এসওএইচসি ৪ভি এফএই ইঞ্জিন যার ম্যাক্স পাওয়ার ১৯.৩ পিএস@১০০০০ আরপিএম এবং ১৪.৭ এনএম@ ৮৫০০ আরপিএম ম্যাক্স টর্ক। এর সাথে আরও রয়েছে ভিভিএ (ভ্যারিএবল ভালভ একচুয়েশন) প্রযুক্তি যা ইঞ্জিনের পারফরমেন্স আরও উন্নত করে। শুধু তাই নয় এসিস্ট এন্ড স্প্লিপার ক্লাচের ফলে গিয়ার শিফটিং আরও স্মুথ হবে এবং ৬ গিয়ার থেকে হঠাত ১ গিয়ারে শিফট করলেযে ধাক্কা অনুভব হয় তা রোধ করবে। অন্যদিকে ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ তে রয়েছে ৬ স্পীড ট্রান্সমিশন এবং ইঞ্জিনের কম্প্রেশান রেশিং রয়েছে ১১:৬:১ এবং আরও রয়েছে ইঞ্জিন চালু করার জন্য ইলেকট্রিক স্টার্ট অপশন। এফআই টেকনলোজি থাকায় মাইলেজ এবং স্পীড এর সমন্বয় হবে বেশ নিখুত।
ফ্রেম এবং ডাইমেনশনঃ
যদি এই রেট্রো ক্যাফে রেসারের দিকে লক্ষ্য করা হয় তাহলে দেখা যাবে বাইকের ডাইমেনশন বেশ ভিন্ন। অন্যান্য স্পোর্টস বা নেকেড বাইকের মতন নয়। চমৎকার স্টাবিলিটি পাবার জন্য ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ডেলটাবক্স ফ্রেম। বাইকটির সার্বিক দিক থেকে লম্বায় ২০০০ মিমি চওড়ায় ৮০৫ মিমি এবং উচ্চতায় ১০৮০ মিমি। সিটের উচ্চতা রয়েছে ৮১০ মিমি এবং হুইলবেজ রয়েছে ১৩৩৫ মিমি। বাইকটির আরও রয়েছে ১৭০ মিমি গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স। ফুয়েল ট্যংকার ভর্তি তেল ও ফুয়েল ট্যংকারসহ বাইকের ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৪ কেজি আর ফুয়েল ট্যংক ক্যাপাসিটি ১০ লিটার। অন্যান্য হেভি ডিউটি ইয়ামহা বাইকের সাথে তুলনা করলে, সব মিলিয়ে এই ক্যাফে রেসার বাইকটি বেশ লাইট ওয়েট।
সাসপেনশন এবং ব্রেকিংঃ
সাসপেনশনের ক্ষত্রে ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ এর সামনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে টেলিস্কোপিক ফর্ক এবং পেছনের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে ক্লাসি মন-সাসপেনশন।
ব্রেকিং এর দিকে রয়েছে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস( এন্টি লক ব্রেকিং সিস্টেম) যা ব্রেকিং এর পারফরমেন্স আরও বৃদ্ধি করবে পাশাপাশি বাইকের চাকা লক হওয়া রোধ করে স্টাবিলিটি বৃদ্ধি করবে। সামনে ও পেছনের ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। সামনের ডিস্কের সাইজ ২৮২ মিমি এবং পেছনের ডিস্কের সাইজ ২২০ মিমি।
হুইলস এবং টায়ারসঃ
যেকোন রাস্তায় চলতে এবং ডিউরেবল পারফর্মেন্সের জন্যইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ বাইকে উভয়দিকেই এলয় হুইল ও টিউবলেস টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। টায়ারের সাইজ সামনের দিকে ১১০/৭০-১৭মি এবং পেছনের দিকে ১৪০/৭০-১৭মি রেডিয়াল টায়ার।
মিটার ক্লাস্টারঃ
ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ এর ড্যাশবোর্ডটি ক্লাসিক এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল। ইতিমধ্যে উল্লিখিত রেট্রো ক্যাফে রেসারটিতে গোলাকার ক্লাস্টার রয়েছে যা উজ্জ্বল এবং তথ্যবহুল।এটি দেখতে ছোট দেখায় তবে আপনি ওডোমিটার, ট্রিপ মিটার, টাকোমিটার, ফুয়েল গেজ, ক্লক ইত্যাদির মতো সমস্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য পাবেন এখানে।
ইলেকট্রিক্যালঃ
সকল ইলেকট্রিক্যাল ফিচারস পরিচালনা করার জন্য ইয়ামাহা এক্সএসআর১৫৫ বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ ভোল্ট৪.০এম্পায়ার (১০এইচআর) ব্যাটারী।রাতের রাইড আরও উপভোগ্য এবং সহজ করার জন্য এলিডি হেডল্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। হাই ও লো বিম একটি সিঙ্গেল কমপ্যাক্ট ইউনিটের মধ্যে রয়েছে যা প্রযুক্তিগত দিক থেকেও উন্নত। রাউন্ড শেপ টেইল ল্যাম্প বাইকটির পেছনের লুক ও অন্যান্যদের আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি করবে এবং এটিও এলিডি। সামনে এবং পেছনে দু পাশে সংযুক্ত আছে সুন্দর দর্শনীয় এলিডি টার্ন ল্যাম্প।
শেষকথাঃ
ইয়ামাহা এক্সএসআর ১৫৫ বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্যাশিত ক্যাফে রেসার ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল। সাম্প্রতি ইয়ামাহা এই বাইকটি বাংলাদেশে চারটি কালার স্কিমেসরবরাহ করছে এবং সেগুলি হল, প্রিমিয়াম গ্রে, হোয়াইট-রেড, গ্রিন এবং ব্ল্যাক। বাইকটিরবেশিরভাগ বৈশিষ্ট্য আর -১৫ এবং এমটি -১৫এর মতই, তাই আশা করা যায় যে এই বাইকটি ব্যবহারকারীদের হতাশ করবে না এবং খুব শীঘ্রই, এটি ক্যাফে রেসার প্রেমীদেরও খুশি করতে সক্ষম হবে।