আমি মনে করি বাইক স্বপ্নের ও খুব ভালোবাসার একটি বাহন। আমি অনেক দিন থেকেই বাইক রাইড করি এবং বাইক নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যেতে পছন্দ করি। পছন্দ , ভালোবাসা ও চাহিদা থেকেই দিন যত যায় বাইকের প্রতি ভালোবাসা ততবেশি বাড়তে থাকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ নিত্যনতুন জিনিস ব্যবহার করতে পছন্দ করে এবং আমিও তার ব্যতিক্রম নই। যেহেতু আমি অনেক দিন যাবতই বাইক ব্যবহার করছি তাই আমারও ইচ্ছা হয় নতুন কোন বাইকের স্বাদ নেওয়ার জন্য। সেজন্য আমি বেছে নিয়েছি Yamaha XSR 155 বাইকটিকে।
কেন Yamaha XSR 155?
Yamaha XSR 155 বাইকটি মুলত একটি Scrambler ক্যাটাগরির বাইক। এই ক্যাটাগরির মধ্যে বাংলাদেশের বাজারে অন্যান্য ব্র্যান্ডের যে বাইকগুলো রয়েছে সেগুলো হল Honda CB Exmotion এবং আরেকটি ব্র্যান্ড Zontes এর এই ক্যাটাগরির বাইক আমি লক্ষ্য করেছি। যেহেতু আমার কাছে ব্র্যান্ড পছন্দ তাই আমি ইয়ামাহা, হোন্ডা ও সুজুকি কে এগিয়ে রাখবো কিন্তু সুজুকির এই ক্যাটাগরির মধ্যে আমি কোন বাইক লক্ষ্য করিনি। Honda CB Exmotion না নিয়ে Yamaha XSR 155 বাইকটা নেওয়ার দুইটি প্রধান কারণ ছিলো সেগুলো হল, প্রথমত ইয়ামাহা অফিশিয়ালী বাংলাদেশের বাজারে এই বাইকটা নিয়ে আসছে তাই আমার পার্টসসহ যাবতীয় সমস্যা আমি এসিআই মটরস এর মাধ্যমে সমাধান করে নিতে পারব। দ্বিতীয়ত, আমার কাছে Yamaha XSR 155 বাইকের লুকস ও ডিজাইন বেশি ভালো লেগেছে। আমি যেখানেই এই বাইকটা নিয়ে যাইনা কেন সবাই আমার এই বাইকের দিকে অনেক আগ্রহ সহকারে তাকিয়ে থাকে । এই বাইক নিয়ে আমি ৩ মাসে মোট রাইড করেছি ৪০০০ কিমি।
আমি এর আগে অনেক বাইক চালিয়েছি , অনেক সিবিইউ কন্ডিশনের বাইক চালিয়েছি । এইবার আমি চাচ্ছিলাম যে আমি ইন্দো অথবা থাই ভার্শনের বাইক চালাবো। অবশ্যই আমি এই দুইটার মধ্যে থাই ভার্শনকে বেশি প্রাধান্য দিতাম। যেহেতু Yamaha XSR 155 এর থাই ভার্শন বাজারে এসেছে তাই আমার পছন্দ অনুসারে থাই ভার্শন ক্রয় করে নিলাম।
Yamaha XSR 155 বাইকের ভালো দিক
- এটার ভালো দিক বেশি আছে জন্যই আমি নিয়েছি, খারাপ দিক থাকলে হয়তো কেনার আগ্রহ থাকতো না। ভালো দিকের মধ্যে প্রথম যে বিষয়টি আমার নজর কেড়েছে তা হল এর ডিজাইন ও লুকস। Scrambler লুকটাই আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। এরপরে যে কারণটি তা হল আমি বাইক নিয়ে বেশি লং ট্যুর দিই এবং এই বাইক লং ট্যুরের ক্ষেত্রেও আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট দিয়ে থাকে। এই বাইকের ডুয়াল পারপাস টায়ারটা অনেক ভালো সাপোর্ট দেয় বিশেষ করে পেছনের টায়ারটা অনেক বেশি সাপোর্ট দেয়। আপনারা বাইকটির পেছনের চাকা ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন এটা কতটা ইফেক্টিভ। পেছনের টায়ারটা এই বাইকের পেছনের লুকসটাই একদম পরিবর্তন করে ফেলেছে। সামনের দিকে অন্যন্য বেশিরভাগ বাইকের ১০০ সেকশনের টায়ার দেওয়া থাকে কিন্তু এই বাইকের ১১০ সেকশনের টায়ার রয়েছে যা আমাকে বিভিন্ন পরিবেশে চালানোর জন্য অনেক সাপোর্ট দেয়।
- আরেকটি ভালো বিষয় হল এই বাইকের হেডল্যাম্পের আলোটা। সত্য কথা বলতে এই বাইকের হেডল্যাম্পের আলো অসাধারণ! অসাধারণ! অসাধারণ!। আমি এর পুর্বে যে বাইকগুলো চালিয়েছি এই রকম হেডল্যাম্পের আলো আমি কোন বাইকেই পাইনি। সামনের দিক থেকেও যদি কোনো বড় যানবাহন আপনার দিকে হাই বিম দিয়ে সেক্ষেত্রে এই বাইকের হেডল্যাম্পের আলো দ্বারা সামনের দিকে সব পরিষ্কার দেখা যায় ।
- তারপরে এই বাইকের কন্ট্রোলিংটাও অনেক ভালো। আমি এর আগে এবিএস ব্রেকিং সিস্টেমের বাইক চালিয়েছি কিন্তু এই বাইকের এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম নেই । এবিএস ব্রেকিং না থাকলেও এর উন্নতমানের ব্রেকিং সিস্টেম আমার এবিএস এর ঘাটতি পূরণ করেছে। আমি এই বাইক নিয়ে ২১০০ কিমি একটি লং ট্যুর দিয়েছি এবং বিভিন্ন রোড কন্ডিশনে রাইড করেছি । রাইডের ক্ষেত্রে আমার কাছে এর বাইকের ব্রেক করলে চাকা স্কীড করা না অন্যান্য কোন সমস্যা মনে হয়নি।
- পেছনের টেল ল্যাম্পটা অনেক সুন্দর। যখন এর টেল ল্যাম্পটা জ্বলে তখন রাতের বেলা হোক বা দিনের বেলা হোক দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। অন্যদিকে স্লিপার ক্লাচটা খুব কার্যকরি একটি ফিচারস। বাইকে কী পরিমাণ ক্লাচ ধরতে হবে বা ছাড়তে হবে , গিয়ার শিফটিং এগুলো এই স্লিপার ক্লাচের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রন করা যায় । স্লিপার ক্লাচ নিয়ে যে বাইকার ভাইয়ের জানেন তারা আরও ভাল বুঝবেন।
- যেহেতু থাই ভার্শনের বাইক তাই এর বিল্ড কোয়ালিটি অনেক প্রিমিয়াম। আমার বন্ধুর ইন্দো ভার্শনের Yamaha XSR 155 বাইক আছে তারটা আমি রাইড করেছি সেও আমার বাইকটা রাইড করেছে। আমরা দুইজনই থাই ও ইন্দো ভার্শনের মধ্যে পার্থক্য পেয়েছি। আমি ইন্দো কে খারাপ বলবো না যে সেটিং ভাল তবে থাই ভার্শনের মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি আছে। রেডি পিক আপ ও বিল্ড কোয়ালিটিতে পার্থক্য আছে।
Yamaha XSR 155 বাইকের মন্দ দিক
- একটি বাইকের যে শুধু ভাল দিক থাকবে তা না এর খারাপ দিকও থাকে। এই বাইকের হ্যান্ডেলবারটা আমার কাছে আরামদায়ক মনে হয়নি। সামনের দিকে একটু হেলানো যার ফলে একটু ঝুকে চালাতে হয় যেটা আমি আরাম অনুভব করি না । স্পোর্টস বাইকের মত তেমন ঝুকে চালাতে হয়না । আমি সেটা সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে আমার নিজের মত করে মডিফাই করেছি।
- সিটিং পজিশন একটু চিকণ। সিটিং পজিশন খুব বেশি শক্ত না তবে মূল যে বিষয়টি তা হল এর সিটিং পজিশন চিকণ। এর ফলে লং রাইডের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হয়। আমি গাইবান্ধা থেকে কক্সবাজার ট্যুর দিয়েছি এবং এখানে আমার কাছে সিটিং পজিশন খুব বেশি আরামদায়ক মনে হয়নি। আমার কাছে সিটিং পজিশন কম আরামদায়ক মনে হয়েছে আপনাদের কাছে নাও হতে পারে। এদিকে সিটিং পজিশন খুব বেশি বড় না যার ফলে পিলিয়নের বসতে একটু সমস্যা হয়।
- স্পিডিং কররা সময় প্রচুর বাতাস শরীরে এসে লাগে যেটা রাইডের ক্ষেত্রে একটু অস্বস্তিকর। যেহেতু এটার গঠনই এরকম তাই এটা মেনে নিয়েই আমাদের রাইড করতে হবে।
- রেডি পিক আপ এই বাইকের একটু কম লক্ষ্য করেছি। যেহেতু আমরা জানি যে এই বাইকের সাথে ইয়ামাহা এমটি ১৫ ও আরওয়ানফাইভের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে সেই তুলনায় বাইকের ইঞ্জিন থেকে টর্ক তেমন পাওয়া যায় না। রেডি পিক আপ শুরুতে তেমন বেশি পাওয়া যায় না। ১ম গিয়রে একটু কম , ২য় গিয়ারে একটু বেশি আবার ৩য় গিয়ারে তার থেকে একটু বেশি টর্ক পাওয়া যায়।
XSR এর আরও ভালো দিক
মাইলেজ নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট কারণ এই Yamaha XSR 155 বাইকের মাইলেজ অনেক ভাল। এখন পর্যন্ত আমি দুইবার বাইকের মাইলেজ টেস্ট করেছি এই ২ বারে আমি বাইকের মাইলেজ পেয়েছিলাম লং ট্যুরে ৪৬-৪৮ কিমি প্রতি লিটার এবং শহরের মধ্যে ৪০-৪৫ কিমি প্রতি লিটার। আমার কাছে মাইলেজ ৪৫ কিমি প্রতি লিটারের নিচে নামেনি।
আমি স্পীড পছন্দ করিনা তাই টপ স্পীডিং করিনা। আমি ট্যুরে একবার সবার পিছে পড়ে গিয়েছিলাম এবং তাদের সাথ মিলাতে আমি একটু স্পিডিং করি তখন মিটারের দিকে খেয়াল করে দেখলাম যে বাইকের স্পীড ১২০ কিমি প্রতি ঘন্টা । আমার মনে হয় বাইকের টপ স্পীড ১৩০ এর বেশি পাওয়া যাবে।
আমি মনে করি যে লং ট্যুরের জন্য সুন্দর একটি বাইক যদি সিটিং পজিশনের সমস্যাটা কারো না হয় তাহলে তো অনেক মজা পাবেন লং ট্যুর দিয়ে। আমি একটানা এই বাইক নিয়ে রাইড করেছি ৬০০ কিমি।
এই পর্যন্ত আমি যা যা পরিবর্তন করেছি
- Yamaha XSR 155 বাইকের সামনের দিকের ব্রেক প্যাড একবার পরিবর্তন করেছি।
- সামনের টায়ার থেকে প্রচুর ময়লা ইঞ্জিন এর বডি ও আমার পায়ে এসে পরে সেজন্য আমি টায়ার গার্ড লাগিয়ে নিয়েছি।
- ডাবল স্ট্যান্ড বাইকের সাথে ছিলো না সেটা আমি পরে বাইকের সাথে লাগিয়ে নিয়েছি।
- রেডিয়েটর গার্ড ও সাইলেন্সর গার্ড লাগিয়েছি।
সব মিলিয়ে আমার কাছে এই Yamaha XSR 155 অনেক ভাল লাগার একটি বাইক। ধন্যবাদ সবাইকে আমার রিভিউটা এতক্ষন ধরে পড়ার জন্য।