একজন বাইকার হিসেবে বাইকের যে ১০টি বিষয় জানা থাকা দরকার
মোটরসাইকেল রাইড অনেক আনন্দের একটি বিষয় এবং বিশেষ করে যারা ভালবাসা বা আবেগ থেকে মোটরসাইকেল রাইড করে তাদের জন্য এটা অনেক আনন্দের একটি বিষয়। আকারে ছোট এই বাহনটি শুধুমাত্র আমাদের যাতায়াত চাহিদা মেটায় না বরং এটা অনেক আরাম এবং উপভোগ্য রাইডিং নিশ্চিত করে থাকে। আমরা সকলেই অবগত আছি যে প্রত্যেকটি মেশিনের ভালো মন্দ কিছু দিক আছে যেগুলো কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং মাঝে মাঝে সেগুলোকে ঠিক করার প্রয়োজন পরে। এটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর যে তিনি নিজেই এটার সমাধান করবেন কিংবা সার্ভিস সেন্টারে দিয়ে সমাধান করবেন। তবে অবশ্যই কিছু সমস্যা আছে যেগুলো ভালো টেকনিশিয়ান ছাড়া সমাধান সম্ভব না কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেগুলো রাইডার বা ব্যবহারকারী নিজে নিজেই সমাধান করে নিতে পারবেন। আজকে আমরা কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো রাইডারকে অবশ্যই তাদের বাইকের সেসব বিষয় ঠিক করতে জানতে হবে এবং সেগুলো যদি ঠিক করতে সক্ষম হয় তবে তারা খুব সহজেই খারাপ পরিস্থিতি কিংবা ঘরে বসেই সেগুলো অনায়াসেই সমাধান করতে পারবেন।
শুরু করার আগে আমরা একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিতে চাই যে রাইডারকে অবশ্যই তার বাইকের টুলবক্স সঙ্গে বহন করতে হবে । কারণ চলাচলের ক্ষেত্রে বাইকের যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে।
১। স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার অথবা পরিবর্তন
অনেক সময় দেখা যায় যে আমরা আমাদের বাইক অনেক দিন পর রাইড করে থাকে সেক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় ইঞ্জিন চালু করা খুব মুশকিল হয়ে পরে । এছাড়াও ধুলা-বালি কিংবা বিভিন্ন কারণে স্পার্ক প্লাগ ময়লা হয়ে যায় এবং পরিষ্কার করার প্রয়োজন পরে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রাইডারকে অবশ্যই জানতে হবে যে কিভাবে স্পার্ক প্লাগ পরিষ্কার বা পরিবর্তন করতে হয়।
২। ব্রেকিং এডজাস্টমেন্ট
খারাপ রাস্তা কিংবা দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে ব্রেক শু ক্ষয় হয় এবং রাইডিং এ ব্যাঘাত ঘটায়। কোন কোন সময় দেখা যায় যে ব্রেক শু অতিরিক্ত ক্ষয় হওয়ার ফলে জরুরী মুহূর্তে ব্রেক কোন কাজে আসে না। এই ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার জন্য একজন রাইডারকে অবশ্যই তার সুবিধা মত ব্রেকিং এডজাস্ট করা জানতে হবে।
৩। চেইন পরিষ্কার করা এবং ঠিক করা
চেইন সেট হচ্ছে মোটরসাইকেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেটা পরিষ্কার কিংবা একটু ঠিক করা দরকার। চেইন সেট নষ্ট কিংবা রাইডিং অবস্থায় ছিড়ে যাওয়া রাইডারের জন্য জিবন-মরণের প্রশ্ন । সেইজন্য প্রতিনিয়ত চেইন ঠিক করা বা পরিস্কার রাখা প্রয়োজন। এই সমস্যার জন্য রাইডার সার্ভিস সেন্টারে না গিয়ে ঘরে বসেই চেইন পরিস্কার কিংবা ঠিক করে নিতে পারে।
৪। পিকআপ ও ক্লাচ তার এডজাস্ট
ক্লাচ এবং পিকআপ তার খুব সেনসিটিভ বিষয় কারণে এটা একটু উনিশ-বিশ হলে রাইডার তার বাইক ঠিক মত রাইড করতে পারবে না এবং এটা ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এই দুইটা বিষয় রাইডারকে সব সময় খেলায় রাখতে হবে এবং ক্লাচ ও পিকআপ তাদের সঠিক এডজাস্টমেন্ট করা জানতে হবে।
৫। ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তন
আমরা সকলেই জানি যে ইঞ্জিনের ভাল পারফরমেন্স পাবার জন্য ইঞ্জিনের সুরক্ষা কবজ হিসেবে ইঞ্জিন ওয়েল বা মবিল ব্যবহার করতে হয় এবং এটা একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন করতে হয়। এই কাজটা রাইডার খুব সহজেই করতে পারেন যদি তার কাছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকে।
৬। এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার এবং ঠিক করা
আরেকটি ছোট বিষয় যেটা ছোট হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে এয়ার ফিল্টার। এই এয়ার ফিল্টারটিতে অনেক দিন ব্যবহারের ফলে ময়লা জমে থাকে এবং এটা পরিষ্কার করার প্রয়োজন পরে। এয়ার ফিল্টারে ময়লা জমে থাকলে বাইকের মাইলেজ কমে যায় এবং ইঞ্জিন পারফরমেন্সে ব্যাঘাত ঘটায়। রাইডারকে অবশ্যই এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং সেটা কিভাবে পরিষ্কার যা ঠিক করতে হয় এবিষয়ে ধারণা লাভ করতে হবে।
৭। ব্যাটারী মেইন্টেনেস
যদিও বর্তমানে কোম্পানীগুলো তাদের বাইকের সাথে মেইন্টেনেস ফ্রি ব্যাটারি সরবরাহ করছে কিন্তু এখনও অনেক বাইক আছে যেগুলোর ব্যাটারি মেইন্টেনেন্স ফ্রি না । ব্যাটারি হচ্ছে বাইকের ইলেকট্রিক্যাল দিকের প্রধান যোগানদাতা এবং সেই কারণে ভাল যত্ন নেওয়া দরকার। হেডল্যাম্পের আলোকমে যাওয়া,ইলেকট্রিক সমস্যা হওয়া, সেলফ স্টার্ট না নেওয়া ইত্যাদি ব্যাটারির সমস্যা জন্য হতে পারে । তাই এটা ভালো মত মেইন্টেনেন্স করা জরুরী। একজন রাইডার এই সমস্যা খুব সহজেই সমাধান করতে পারেন । এতে সার্ভিস সেন্টারে যাবার তেমন প্রয়োজন হয় না এবং অবশ্যই এবিষয়ে সঠিক ধারণা রাখতে হবে।
৮। হর্ন টিউনিং
যদি রাইডার তার বাইকের সাথে টুল বক্স বহন করে তবে হর্ন টিউনিং করা রাইডারের জন্য তেমন কষ্টকর কাজ না । রাইডার যেভাবে চাই ঠিক সেভাবেই এটা টিউনিং করতে পারে।
৯। কারবুরেটর টিউনিং
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কারবুরেটর টিউনিং করার দরকার পরে তাই এটা যদি রাইডারের জেনে থেকে যে কিভাবে করলে সঠিক উপায়ে কারবুরেটর পরিষ্কার রাখা যায় তবে এটা রাইডারের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায়।
১০। টায়ার প্রেশার সম্পর্কে জানা
যদিও টায়ার প্রেশার বা মেইন্টেনেন্স বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং টায়ার সাইজটাও কোম্পানির উপর নির্ভর করে কিন্তু দিনশেষে সকলেই জানে যে তার বাইকের চাকা বা টায়ার কেমন। যদি কোন রাইডার টায়ার প্রেশার কিংবা মেইন্টেনেন্স সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখে তবে তার জন্য রাইডিংটা অনেক মজাদার হয় এবং ভালো পারফরমেন্স পেয়ে নিরাপদে গন্তব্যে যেতে সক্ষম হয়\।
এই সকল বিষয়গুলো একজন বাইক ব্যবহারকারির জন্য জানা অনেক উপকারি। কারণ যে কোন পরিস্থিতিতে এই বিষয়গুলো পরিবর্তন কিংবা ঠিক করতে হতে পারে এবং আপনি যেখানে বিপদে পড়েছেন সেখান থেকে সার্ভিস সেন্টার দূরে হলে আরও বিড়ম্বনা বাড়বে। তাই এসকল পরিস্থিতির জন্য একজন রাইডারের উচিত উপরিউক্ত সকল বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত। একজন রাইডারের যদি বড় ধরনের কোন সমস্যা হয় এবং সেটার জন্য যদি কোন ভালো টেকনিশিয়ানের প্রয়োজন পরে তবে প্রাথমিকভাবে সেটা সমাধান করে পরিবর্তিতে সেটা টেকনিশিয়ান নিয়ে দেখিয়ে নিলো আপনি দুইটা থেকেই রেহাই পাবেন।