আপনার মোটরসাইকেলের রাইডিং দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ১১ টিপস
মোটরসাইকেল আমাদের দেশে দিনদিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।বাংলাদেশের মত ঘন বসতিপুর্ন দেশের জন্য মোটর সাইকেল খুবই গুরত্ব বহন করে কারণ গন পরিবহনের আসন কম থাকা, গাদাগাদি করে বসা ইত্যাদি অনেকেই পছন্দ করেনা।বিশেষ করে ঢাকা শহরে বেশির ভাগ মানুষ মোটরসাইকেল বেছে নেয় তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য।অন্যদিকে আমাদের দেশে কিছু উচ্চ মাত্রার বাইক প্রেমী আছেন তারা শুধু বাইক নিয়ে দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত দাপিয়ে বেড়ান।এ সকল রাইডারের জন্য ও মোটরসাইকেল অতিব গুরুত্বপুর্ন একটি বাহন।
শুধু মোটরসাইকেল রাইড করলেই হবেনা।একটি মোটরসাইকেল দক্ষতার সাথে এবং নিজে কে নিরাপদে রেখে রাইড করা উচিত।আমাদের দেশের শহরের রাস্তা এবং হাইওয়েতে দেখা যায় যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি কবলিত হয়েছে।এর প্রধান কারণ হল মহাসড়কে বড়বড় যানবাহনের চাপ বেড়েছে যার ফলে ছোট বাহন গুলো সে সব বড় যানবাহনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা।এমতবস্থায় সকলের দরকার দক্ষতার সাথে বিভিন্ন রাস্তায় রাইড করা।আজকে আমরা টিম মোটরসাইকেলভ্যালী আলোচনা করবো কীভাবে আপনি আপনার রাইডিং দক্ষতা বৃদ্ধি করবেন সে বিষয়ে।নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হল।
রোডসিগন্যাল/ রোডসাইন
রোডসিগন্যাল আমাদের সকলের মেনে চলা উচিত কারণ এই রোড সাইন বা সিংন্যালের মাধ্যমে রাস্তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।আপনারা লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে আমাদের দেশের সড়ক মহাসড়কে বিভিন্ন সিগন্যাল দেওয়া থাকে যেমন – সামনে বাজারে, সামনে মসজিদ, সামনে স্কুল, দুর্ঘটনা প্রবন এলাকা ওভার টেকিং করা নিষেধ ইত্যাদি রোড সাইন থাকে।এই রোড সাইন গুলো দেখে আমাদের সতর্ক হয়ে যেতে হবে এবং সেটা মাথায় রেখে রাইড করতে হবে।যদি আপনি সাইন খেয়াল না করেন তা হলে অপরিচিত রাস্তায় বাইক ধীরে ধীরে নিজের আয়ত্তে এনে রাইড করুন।এতে আপনি অনেকটাই নিরাপদে থাকবেন।অন্য দিকে শহরের রাস্তায় সিগন্যাল মেনে রাইড করলে দুর্ঘটনা কমে এবং নিরাপদ থাকা যায়।তাই সকলের উচিত রোড সিংন্যাল ও সাইন মেনে রাস্তায় মোটর বাইক রাইড করা।
যথাযথ ভাবে ব্রেকিং করা
আপনার বাইক রাইড করা অবস্থায় বাইকের ব্রেকিং যথাযথ ভাবে সম্পন্ন করলে আপনার ক্ষতি কমিয়ে দিতে পারে ।বাইক রাইড করা অবস্থায় চেষ্টা করবেন যেন ডান হাতের একটি আঙ্গুল সর্বদা আপনার ব্রেক লিভারের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং সেটা দ্বারা ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।অনেক সময় দেখা যায় যে আপনি শুধু মাত্র এক্সেলেরেশন ধরে আছেন এবং সামনে অপ্রত্যাশিত কোন কিছু চলে আসলো তখন যদি আপনি সামনের ব্রেক লিভার চেপে ধরেন তাহলে আপনি সেটার মাপ বুঝতে পারবেন না এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।আপনাকে আপনার বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমের সাথে অভ্যাস্ত হতে হবে।এমন ভাবে ব্রেকিং করবেন যেন চাকা স্কীড না করে এবং আপনিও সুরক্ষিত থাকেন।তাই যারা ব্রেক লিভার ধরে রাইড করতে অভ্যস্তনা তারা আজ থেকে চেষ্টা করুন ব্রেক লিভার ধরে বাইক রাইড করা এবং সেই ব্রেক লিভারের সাথে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলুন।
দক্ষতার সাথে ওভার টেকিং
মহাসড়কে বেশির ভাগ এক্সিডেন্ট হয় অদক্ষতার সাথে ওভার টেকিং করার কারনে।মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে মহাসড়কে বড় যানবাহন গুলোকে ওভার টেকিং করা অনেক ঝুঁকি।দুই লেনের রাস্তা মোটরসাইকেল আরোহীর জন্য অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ণ।বড় যানবাহন এই দুই লেনের রাস্তা গুলোতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়।এ জন্য একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে রাস্তায় চলার সময় সর্বদা যে কোন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।আপনি যখন সামনে কোন বড় বা ছোট বাহন ওভারটেকিং করবেন তখন তার সামনে কোন যানবাহন বিপরীত দিক থেকে আসছে কী না , আপনার পেছনে কোন বড় যানবাহন আছে কী না সেগুল দেখে যে বাহনকে ওভার টেকিং করবেন তার লুকিং গ্লাস বরাবর এসে একটা ফ্ল্যাশ দিবেন এবং হর্ন বাজাবেন।তারপর নিরাপদ দুরুত্ব বজায় রেখে আপনি আপনার মত করে ওভার টেকিং সম্পন্ন করবেন।ওভার টেকিং করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন বাইকের গিয়ারের শক্তি থাকে, বেশি গিয়ার দিয়ে স্ব জোরে এক্সেলেরেশন দিলে আপনার বাইক ইঞ্জিনে শক্তি পাবেনা অনেক সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করা
শহরের রাস্তায় কিংবা হাইওয়েতে মোটরসাইকেল রাইড করা খুব কষ্টদায়ক একটি ব্যাপার।এ সকল রাস্তায় চলতে হলে আপনার সামনে ,পেছনে, ডানে , বামে কে কেমন ভাবে চলাচল করতে হয় সেটি সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।বিশেষ করে সামনের দিকে এবং পেছনের দিক একটু বেশি খেয়াল রাখতে হবে এবং সামনে ও পেছনের বাহন থেকে নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করতে হবে কারণ আমি যদি একটু বে খেয়াল হন এবং সামনে বাহন যদি হটাত ব্রেক করে তাহলে এক্সিডেন্টের হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।সে জন্য রাস্তায় রাইড করার সময় চেষ্টা করবেন অন্যান্য যানবাহনের থেকে নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করতে।
কর্নারিং এর সময় নিজের আয়ত্তে বাইকের স্পীড রাখা
আমরা মোটরসাইকেল রেস ট্র্যাককিং বা আমাদের আশেপাশে এই ঘটনা ঘটতে দেখি।একটি বাইক কর্নারিং করার সময় সর্বদা সতর্ক হতে হয় কারণ কর্নারিং করার সময় বাইকের ব্যাল্যান্স এক দিকে হয়ে যায় যার ফলে বেশি স্পীডে কর্নারিং করলে আপনি আপনার বাইকের সাথে রাস্তার ও ব্যাল্যান্সের সামঞ্জস্য রাখতে হিমিশিম খেয়ে যাবেন।তাই কর্নারিং করার সময় আপনি আপনার ব্যাল্যান্স বুঝে, বাইকের স্পীড বুঝে এবং রাস্তার অবস্থা বুঝে কর্নারিং করবেন।কখনই বেশি স্পীডে কর্নারিং করতে যাবেন না।
বাইক আপনার সাথে ফিট থাকা
আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে বাইকের সাথে ফিট না হলে বা বাইকের সাথে নিজের দেহ এডজাস্ট না হলে বাইক রাইড করে শান্তি পাওয়া যায়না।ঠিক তেমনি ভাবে আপনাকে বাইক কেনার আগে বা যে বাইক রাইড করবেন সেটার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে বা এডজাস্ট করে নিতে হবে।অন্তুত ২ থেকে ৩দিন বাইকটা আপনি নিজে রাইড করবেন তারপর সেই বাইকের স্পীড , কর্নারিং ইত্যাদি আপনি আপনার নাগালের মধ্যে থেকেই করবেন।কখনই ওভার কনফিডেন্স হয়ে কিছু করতে যাবেন না কারণ একটা কথা মাথায় রাখবেন যে আপনি সর্তক হলেও আপনার আশেপাশে লোকজন কিন্তু সতর্ক না।
ক্লাচলেস গিয়ার শিফটিং
আমরা সকলেই জানি যে মোটরসাইকেলের গিয়ার কমানো বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ক্লাচ ব্যবহার করা হয় কিন্তু যখন আপনি হাইস্পীডে বাইক রাইড করছেন এবং আপনি আপনার বাইকের সর্বচ্চো গতি পরিক্ষা করছেন তখন ক্লাচ ধরে গিয়ার শিফটিং করলে আপনার বাইকের স্পীড কমে যেতে পারে।তাই প্রফেশনাল বাইক রাইডাররা চেষ্টা করে হাইস্পীডে ক্লাচ ছাড়া গিয়ার শিফটিং করতে এবং এতে করে গিয়ার বক্সে খারাপ কোন প্রভাব ফেলবেনা ।ক্লাচ ছাড়া গিয়ার শিফটিং হল আপনি ক্লাচ ছাড়া স্মুথ রাস্তার গিয়ার শিফটিং করবেন এবং এতে করে বারবার ক্লাচ ধরা বা ছাড়া ভোগান্তি পোহাতে হবে না।স্মুথ রাস্তার জন্য মূলত এই টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন।তবে অবশ্যই মাথায় রাখবেন গিয়ার বাড়ানোর জন্য ক্লাচ ছাড়া গিয়ার শিফটিং করবেন ,কমানোর জন্য নয়।
নিজের আয়ত্ত্বে রেখে এক্সেরেট করুণ
আপনি যখন আপনার বাইক রাইড করবেন তখন অবশ্যই আপনি আপনার নিজের আয়ত্তে রেখে বাইকের এক্সেরেশন করবেন এতে করে আপনি অনেকটাই নিরাপদে থাকবেন।আমাদের দেশের বিভিন্ন ভিডিও এর মাধ্যমে আমরা দেখি যে বাইক নতুন চালানো শিখেছে এবং নিজের আয়ত্তের বাইরে এক্সেলেরশন করছে এমতবস্থায় দেখা যায় যে সে বাইক নিয়ে ব্যাল্যান্স হারিয়ে পড়ে গেছে।তাই বাইক চালানোর সময় আপনি আপনার বাইকের এক্সেলেরেশন বুঝে রাইড করবেন।যেখানে এক্সেলেরেশন বাড়ানো উচিত সেখানে বাড়াবেন যেখানে কমানো উচিত সেখানে কমাবেন।
সেফটি গিয়ার পড়ে রাইড
একটি বাইক চালানোর পুর্বে অবশ্যই আপনাকে ভালোমানের সেফটি গিয়ার পরিধান করে বাইক রাইড করতে হবে।এই সেফটি গিয়ার পরিধানের ফলে আপনি বাইক রাইডে আত্মবিশ্বাস পাবেন এবং আপনার দুর্ঘটনা হলে অনেকেটাই ক্ষয় ক্ষতি কম হবে বলে আশা করা যায়।আমরা সর্বদা বলে থাকি যে , বাইক রাইড করার সময় অন্তত সার্টি ফাইড হেলমেড পরিধান করুন।কারণ আমাদের দেহের মধ্যে সবচেয়ে লাজুক স্থান হল আমাদের মাথা যেটা হেলমেড দ্বারা রক্ষা করা যায়।তাই রাইড করার সময় অভ্যাস করুণ ভালো মানের সেফটি গিয়ারস পরিধান করতে।
ভেজা রাস্তায় সতর্কতার সাথে রাইড করা
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্ষা কালে বাইক রাইড করা অনেক ঝুকি পুর্ন হয়ে থাকে কারণ বর্ষা কালে রাস্তা ঘাট ভিজে থাকে এমন কি কোন কোন স্থানে পানি জমা থেকে শ্যাওলার সৃষ্টি হয় যা মারাত্মক ঝুকিপুর্ন।অন্য দিকে ভাঙ্গা রাস্তায় লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে কোন স্থানে কী পরিমানে ভাঙ্গা আছে সেটা আঁচ করা অনেক মুশকিল তাই রাইডার কে সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।স্মুথ রাস্তার ক্ষেত্রে স্পীড কম রেখে ইঞ্জিন ব্রেক এর সাহায্য বাইকের স্পীড কমানোর অভ্যাস করতে হবে এবং কোন ভাবেই কড়া ব্রেক করা যাবেনা ভেজা রাস্তার ক্ষেত্রে।এদিকে ভাঙ্গা বাকা দাগ যুক্ত রাস্তায় গিয়ার একদম অল্প রেখে সামনের দিকে খেয়াল করে বাইক রাইড করতে হবে এবং সর্বদা ইঞ্জিন ব্রেক ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।
আপনি কোথায় যাবেন সেটা নির্ধারন করুণ
রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে আপনি কোন দিকে যাবেন বা আপনি আপনার বাইকের পজিশন কোন দিকে নিতে চান সেটা অবশ্যই আগে থেকে ইন্ডিকেট করে রাখবেন।যেমন ধরুন আপনি হাইওয়েতে রাইড করছেন এবং আপনাকে কোন কারণ বশত রাস্তার লেন পরিবর্তন করা দরকার তখন অবশ্যই বাইকের ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে আপনি রাস্তার লেন পরিবর্তন করবেন।এ দিকে হাইওয়েতে সর্বদা ইন্ডিকেটর ব্যবহার করবেন।আপনার সামনে থেকে কোন বড় বাহন আসলে তাকে দেখে সে যেদিক থেকে আসছে সেদিকের ইন্ডিকেটর দিয়ে দিন এবং বুঝান যে আপনার ওসাইড দরকার এবং লক্ষ্য করে দেখবেন যে আপনার ইন্ডিকেটর পেয়ে সে আপনার যাওয়ার মত রাস্তা করে দিয়েছে।
পরিশেষে
চর্চা মানুষকে দক্ষ করে।আপনি যত চর্চা করবেন তত দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেবন।একটি বাইক রাইড করতে করতে তার প্রতি অভিজ্ঞতা হলে এমনিতেই আপনি যে কোন বাইক রাইড করতে পারবেন তবে হ্যা আমরা উপরেও উল্লেখ করেছি যে সেটা আপনার আয়ত্তে রেখে রাইড করবেন।কোন মতেই নতুন বাইকের ওভার স্পীড বা বেপরোয়া রাইড করতে যাবেন না।আপনাদের রাইড আরও সুন্দর হোক এই কামনা রইলো টিম মোটরসাইকেল ভ্যালীর পক্ষ থেকে।