টায়ার জেল এর সুবিধা ও অসুবিধা
মোটরসাইকেল চালকদের জন্য একটি আতংকের নাম টায়ার পাংকচার। চলতি পথে রাস্তার মধ্যে টায়ার পাংকচার হওয়া যে কত কষ্টের এবং যন্ত্রনার তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে। মোটরসাইকেল এর টায়ার মুলত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটা হল টিউব টায়ার এবং আরেকটি হল টিউবলেস টায়ার। এই দুই ধরনের টায়ারের মধ্যে টিউবলেস টায়ার টিউব টায়ারের থেকে ভাল কিছু সুবিধা দিয়ে থাকে যার ফলে টিউবলেস টায়ার দিন দিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। টিউবলেস টায়ারের অন্যতম প্রধান সুবিধা হল এটি খুব সহজে পাংচার হয় না এবং পাংচার হলেও এটি খুব তাড়াতাড়ি এবং সহজেই ঠিক করা যায়। টিউবলেস টায়ারকে আরো বেশি কার্যকর করার জন্য এবং দীর্ঘদিন পাংকচার প্রতিরোধক করতে এক ধরনের জেল(Sealant) ব্যবহার করা হয়।
টিউবলেস টায়ার এর সুবিধা হল এর টায়ার এর ভেতরের অংশে লিকুয়িড সিলেন্ট(জেল) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টিউবলেস টায়ারে যদি কোন ধারালো বস্তু দ্বারা আঘাত পায় এবং এর ফলে যদি টায়ার লিকেজ হয় সেক্ষেত্রে লিকুয়েড সিলেন্টটা খুব তাড়াতাড়ি করে সেই লিকেজ এর ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। এই সিলেন্ট ব্যবহারের ফলে লিকেজ প্রতিরোধ করা যায় এবং এটি ঠিক করার ক্ষেত্রে আমাদের মূল্যবান সময় বেঁচে যায়।
এই পণ্যটি প্রেসারাইজড ক্যান হতে এসেছে যেটা খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। এই প্রোডাক্টির যেমন অনেক ভাল দিক রয়েছে ঠিক তেমনিভাবে কিছু খারাপ দিক রয়েছে যা এই পণ্যটা সচেতনতার সাথে ব্যবহারে করতে হবে।আসুন আমরা এই লিকুয়েড সিলেন্ট এর কিছু ভাল মন্দ দিক জেনে নেই।
কিভাবে টায়ার সিলেন্ট(জেল) ব্যবহার করা যায়
জরুরী কিছু পরিস্থিতিতে রাইডারকে সাহায্য করা জন্য মূলত টায়ার সিলেন্ট তৈরি করা হয়েছে। টায়ার সিলেন্ট ব্যবহার করা পর পুনরায় রাইড করার ক্ষেত্রে টায়ারটিকে অবশ্যই প্রফেশনাল মেকার দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। টায়ার পাংচার সিলেন্ট সহজেই প্রয়োগ করা যায় এবং এটি হাইস্পিডেও ভাল কাজ করে। আপনাকে টায়ার ভালভ এর সাথে সিলেন্ট ক্যান এর নজেলটি ভালভাবে সংযুক্ত করতে হবে এবং চাপ প্রয়োগ করলে ভেতর থেকে জেল বের হয়ে আসবে। জেলটি ভালভাবে চাপ দিয়ে পাংচার হওয়া স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে এবং যথাযথভাবে এটি সিল করে দিতে হবে। এপ্লিকেটরটি টায়ার ভালভ এর সম্মুখে ব্যবহার করতে হবে এবং এটি যদি সুন্দর ভাবে স্থাপন করা যায় তবে সেখান থেকে কোন এয়ার লিকেজ হবে না। এটি যদিও পাংচার টায়ার পরিবর্তন করার থেকে সহজ কিন্তু সিলেণ্ট ব্যবহার করার সময় আপনাকে অবশ্যই নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।যদি এটি আপনি কোন রোডে করে থাকেন আপনাকে অবশ্যই দেখে নিতে হবে যে আপনি রাস্তা থেকে নিরাপদ দুরুত্বে আছেন কিনা এবং পাশ দিয়ে যানবাহন গেলে যেন কোন সমস্যায় না পড়তে হয়। যদি এটি ঠিক করতে কোন প্রকারের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে এটি রিপেয়ার করতে অনেক সময় লেগে যাবে। এর পাশাপাশি এটি অনেক সময়েই অগ্নিদাহ্য যার কারণে এটি রিপেয়ার করার সময় ধূমপান করা থেক বিরত থাকতে হবে।
টায়ার পাংচার সিলেন্ট এর কিছু সুবিধা
- মোটরসাইকেল টায়ার সিলেন্ট বা জেল অনেক সূলভমূল্যে দ্রুততম কার্যকরী ব্যবস্থা যা যে কোন পরিস্থিতিতে টায়ার পাংচার মেরামত করতে সক্ষম।
- সিলেণ্ট টায়ারের ভেতরে প্রবেশ করানো অল্প সময়ের মধ্যে কাজ করতে শুরু করে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে।
- টায়ার খোলার ঝামেলা ছাড়াই টায়ার সিলেন্ট বা জেল ব্যবহার করা সম্ভব। এবং সিলেন্ট ব্যবহারের কিছুক্ষনের মধ্যেই বেশ দূরের যাত্রা সম্পন্ন করতে পারা যায়।
- টায়ার সিলেন্ট টায়ারের অভ্যন্তরীণ তাপের ফলে ভেতরে বিস্তৃত হতে থাকে এবং এটি কাজ করা শুরু করে ।এর মানে হল আপনাকে আলাদাভাবে টায়ারের ভেতরে কোন লিকেজ খুজতে হবেনা, এটি নিজে থেকেই লিকেজ ব্লক করে দিবে।
- সিলেন্ট বা জেল ব্যবহারকারির জন্য আকর্ষণীয় একটি বিষয় হল, যারা পাংচারের ফলে টায়ারটি পরিবর্তন করতে চান না অথবা পর্যাপ্ত সময় নেই তাদের জন্য এটি অনেক কম খরচ এবং অনেক কম সময়ের একটি ব্যবস্থা ।
টায়ার পাংচার সিলেন্ট এর কিছু অসুবিধা
- টায়ার ঠিক করার ক্ষেত্রে সিলেন্ট বা জেল এর ব্যবহার স্থায়ী কোন সমাধান নয়, দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে চাইলে টায়ারে তালি লাগানো এবং রিপ্লেসমেন্ট করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
- টায়ার সিলেন্টে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ক্যেমিক্যাল থাকে যেটা টায়ার থেকে বের করতে অনেক সময় লেগে যায়।
- সঠিক ভাবে ব্যবহৃত না হলে এটি টায়ারের ক্ষতি করতে পারে।
- যদি সিলেন্ট টায়ারের মধ্যে ভালভাবে চলাচল করতে না পারে তাহলে সেগুলো টায়ারের নিচে জমা হবে। এর ফলে টায়ার টি ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং দুর্ঘটনা বা অন্য যে কোন সমস্যার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
- সিলেন্টের ব্যবহার টায়ারের আভ্যন্তরিন পরিবেশকে অনেক গরম করে দেয়। বেশির ভাগ টায়ায় সিলেণ্ট গুলো হাই পারফরমেন্স এর জন্য ডিজাইন করা হয় না এর ফলে টায়ার পাংচারে সিলেন্ট কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
শেষকথা
আপনার নিজের বাইকের জন্য উপযুক্ত এবং ভাল সিলেন্ট ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে টায়ারের প্রয়োজনীয় এয়ার প্রেসার যথাযথ ভাবে কাজ করছে কিনা।
টায়ার সিলেন্ট ব্যবহার করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর প্রেসার চেক করা এবং এটি সঠিক লেভেলে আছে কিনা এটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে এটি রিপেয়ার করার পর বেশী দিন টিকে না। আপনাকে আবশ্যই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টায়ারটি ঠিক করা এবং ভবিষ্যতে যেন কোন সমস্যা না হয় সেটি নিশ্চিত করা পাশাপাশি ভাল রাইডিং নিশ্চিত করে থাকে।