লকডাউনে বাইক রক্ষণাবেক্ষণের টিপস
বর্তমানে করোনার সমস্যায় জর্জরিত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার চায় এই করোনা মোকাবেলা করতে সেই জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা সহ বিভিন্ন নীতিমালা ও আদেশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করেছে। লকডাউন করোনা সংক্রমণ রোধের একটি হাতিয়ার। লকডাউন এর জন্য ঘর থেকে মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হতে পারে না। আমরা যারা বাইক ভালোবাসি তাদের জন্য এই লকডাউন একটু কষ্টকর হলেও আমাদের দেশের স্বার্থে পরিবারের স্বার্থে মেনে নিতেই হবে। এই লকডাউনে প্রিয় বাইকটি আগের মত রাইড করা হয় না বিধায় এর জন্য লকডাউন এর মধ্যে কিছু পরিচর্যা প্রয়োজন। লকডাউনে বাইকের কি কি পরিচর্যা করা প্রয়োজন সেগুলো নিয়েই আজকে আমরা টিম মোটরসাইকেল ভ্যালী আপনাদের সামনে কিছু পরামর্শ তুলে ধরবো।
নিরাপদ স্থানে পার্কিং করে রাখুন
সর্বোপরি যে বিষয়টি আসে সেটি হল একটি নিরাপদ স্থানে পার্কিং করা। আপনি যদি বড় কোন গ্যারেজে বাইক রাখেন সেক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাইক পার্কিং করে রাখার চেষ্টা যেখানে মানুষের আনাগোনা কম এবং আপনার বাইক কি নিরাপদ থাকে। নিরাপদে রাখার ফলে আপনার বাইক যেমন অন্যান্য মানুষ ছোঁবে না ঠিক তেমনি ভাবে আপনার বাইক চুরির হাত থেকেও রেহাই পাবে । তাই বাসায় আপনার গ্যারেজ যদি খুব বড় হয় তাহলে চেষ্টা করবেন আপনার বাইক নিরাপদ স্থানে পার্কিং করার।
যতটা সম্ভব ডাস্ট কভার দিয়ে ঢেকে রাখুন
বাইকের ধুলাবালি থেকে আমাদের অসুখ-বিসুখ হতে পারে কিংবা বাইরের কোন ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস আমাদের বাইকে যদি পড়ে সে ক্ষেত্রে আমাদের রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেজন্য যখন বাইক আমরা পার্কিং করে রাখবো চেষ্টা করব যে ডাস্ট কভার দিয়ে ঢেকে রাখা। এর ফলে বাইক টা যেমন ময়লা হওয়া থেকেও বাঁচানো যাবে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। তাই বাসায় বাইক রাখার সময় যতটা সম্ভব ডাস্ট কভার দিয়ে ঢেকে রাখুন।
বাইক পরিস্কার রাখুন
দুই থেকে তিন দিন যদি আপনি বাইকটি বাইরে বের না করেন সে ক্ষেত্রে একটু ময়লা আবরণ জমবে। এই ময়লা আবরণ দূর করার জন্য আপনি সামান্য একটু পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন অথবা ভালো জেট দিয়ে আপনার বাইকটি পরিষ্কার করতে পারেন। পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই নিজের সচেতনতা আগে লক্ষ্য রাখবেন। বাইক যদি সম্ভব হয় হালকা একটু ফোম দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার থাকলে সেটা নিঃশেষ হয়ে যাবে। বাইক পরিষ্কার করার সাথে সাথে আপনি আপনার হাত সাবান দিয়ে ভালো করে দিবেন এবং সবচেয়ে উত্তম হয় গোসল করে নিবেন।
ইঞ্জিন অয়েল এর লেভেল চেক করুন
বাইক অনেকদিন পরে থাকলে ইঞ্জিন অয়েল এর লেভেল একটু কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেজন্য ইঞ্জিন অয়েলের লেভেল চেক করা অতীব জরুরী। ইঞ্জিন অয়েল লেভেল চেক করে দেখতে পারেন যে আপনার ইঞ্জিন অয়েল কি পরিমাণে আছে এবং কতদিন সেটা স্থায়ী হবে। যদি সেটা কম স্থায়ী হয় তাহলে যেদিন আপনি বাইক বের করবে সেদিন ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে নিবেন অথবা যদি সম্ভব হয় আপনার বাসায় যদি ইঞ্জিন অয়েল পূর্বের থেকে থাকে তাহলে আপনি নিজে নিজে ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন দিয়ে দিতে পারেন কিন্তু এইসব করার আগে আপনি অবশ্যই ইঞ্জিন অয়েলের লেভেল চেক করে নিবেন।
একদিন পর পর মিনিমাম ১০ মিনিট আইডল আরপিএম এ স্টার্ট দিয়ে রাখুন
বর্তমানে অনেক বাইকের সেলফ স্টার্ট রয়েছে যার ফলে ব্যাটারীতে খুবই শক্তির প্রয়োজন হয় ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়ার জন্য। আমরা যদি লকডাউনে অনেকদিন বাইক ব্যাবহার না করি তাহলে দেখতে পাই যে সেল্ফ স্টার্ট এর মাধ্যমে প্রথম বারেই ইঞ্জিন স্টার্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য আমাদেরকে লকডাউন পরিস্থিতিতে একদিন পরপর সর্বনিম্ন ১০ মিনিট আইডিয়াল আরপিএম এ স্টার্ট দিয়ে রাখা জরুরি। এর ফলে ব্যাটারি চার্জ ভালো থাকবে পাশাপাশি ইঞ্জিনের ইঞ্জিন অয়েল সার্কুলেশন সহ অন্যান্য পার্টস ভালো থাকবে । তাই লকডাউন পরিস্থিতিতে আমাদের সকলের উচিত একদিন বা দুইদিন পর পর ১০ মিনিট বাইক স্টার্ট দিয়ে আইডিয়াল আরপিএম এ রাখা।
টায়ার প্রেশার সহ অন্যান্য বিষয় চেক করুন
বাইক বাসায় পড়ে থাকলে বা যেকোন স্থানে পড়ে থাকলে তার প্রেসার কমে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার । কারণ একটি চাকার টায়ার প্রেসার কখনো একরকম থাকে না এটা কমে কিংবা বেড়ে যায়। লকডাউনে বাইকের টায়ার প্রেসার চেক করা জরুরি। আপনি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাবেন কিন্তু আপনার প্রিয় বাহনটির চাকাতে যথেষ্ট টায়ার প্রেসার নেই যার ফলে আপনি বাইরে যেতে পারছেন না এমতাবস্থায় আপনি অনেকভাবে বিপদে পড়তে পারেন। তাই টায়ার প্রেসার চেক করে যদি মনে হয় যে আপনার টায়ার প্রেসার দেওয়া জরুরি সে ক্ষেত্রে যেদিন বাইক বের করবেন সেদিন টায়ার প্রেসার যতটা রিকমেন্ড করা হয়েছে ততটা দিবেন।
যে সমস্ত স্থানে মরিচা ধরেছে বা সম্ভাবনা আছে সেইখানে WD40 স্প্রে করুন
বাইক এর বিভিন্ন অংশ লোহা দ্বারা তৈরি যার ফলে এটা মরিচা ধরবে স্বাভাবিক। অনেকদিন বাইক অব্যবহৃত থাকলে এটা সচরাচর সব বাইকের ক্ষেত্রেই হতে পারে। তাই যে সমস্ত জায়গা গুলোতে মরিচা ধরার সম্ভাবনা আছে বা ইতিমধ্যেই সেখানে মরিচা ধরে গেছে সেসব স্থানে WD40 স্প্রে করুন। এক্ষেত্রে আপনি মরিচা ধরা থেকে অনেকটা রেহাই পাবেন পাশাপাশি আপনি আপনার বাইকের পার্টস এর আয়ুষ্কাল আরো বৃদ্ধি করতে পারবেন।
আশা করা যায় যে এই সকল বিষয় মেনে চললেই আমাদের প্রিয় বাইকগুলো লকডাউন পরিস্থিতিতে ভালো থাকবে।