বৃষ্টির দিনে বাইক চালাতে সতর্কতা
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বছরের যে কোন সময়ের চাইতে বর্ষাকালে মোটরসাইকেল চালাতে কিছু বাড়তি সাবধানতা যেমন নিতে হয় তেমনি আপনার বাইকটিকেও বর্ষার উপযোগী করে নিতে হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এ জন্য ব্যস্ত জীবনের দৈনন্দিন কাজ তো আর থেমে থাকবে না। বাড়তি কিছু সতর্কতা আর গুটিকয়েক বাড়তি জিনিষ সাথে নিলেই উপভোগ না করলেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হবেন না। চলুন কি কি বাড়তি সতর্কতা এবং বাড়তি জিনিষপত্র সাথে নিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করি।
মোটরসাইকেল চালাতে হেলমেটঃ
যেকোনো দুর্ঘটনা থেকে মাথাকে সুরক্ষা দিতে হেলমেট খুবই জরুরি। মোটর সাইকেল চালানোর সময় চালক ও আরোহী উভয়ের মাথায় হেলমেট থাকা আইনত বাধ্যতামূলক। বর্ষাকালে হেলমেট আপনাকে বাড়তি একটা সুরক্ষা দিবে আর তা হোল আপনার চোখের সুরক্ষা। বৃষ্টির সময় চোখে পানির ঝাঁপটা লাগার কারণে চোখ খুলে রাখাই দায় হয়ে পড়ে। কারণ আপনি যে গতিতেই চলেন না কেনো বৃষ্টির পানি চোখে সুচের মতো বিঁধে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হেলমেটের গ্লাস চমৎকার বর্ম হিসাবে কাজ করে। তবে খেয়াল রাখবেন হেলমেটের গ্লাস বর্ষাকালে যেনো কালো না হয় , বর্ষাকালে অনেক সময়ই মেঘের কারণে দিনের বেলাতেই আলোর ঘার্তি দেখা দিতে পারে। । সাদা বা হ্লুদ বা কমলা রঙের গ্লাস এক্ষেত্রে চমৎকার কাজে দেয়।
মোটরসাইকেলের টায়ার প্রেসার কিছু কমিয়ে নিনঃ
আপনি যদি টায়ারের প্রেসার কিছু কমিয়ে নেন, এই ধরেন স্বাভাবিকের তুলনাত ৫ - ১০ পি এস আই তবে ভেজা রাস্তায় আপনি অনেক বেশী টায়ার গ্রিপ পাবেন। যদিও এর ফলে আপনার গতি কিছু কমে যাবে কিন্তু এইটুকু কম্প্রমাইজ আপনার নিরাপত্তার জন্য স্বীকার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করি।
ব্রেক করার সময় বাড়তি সাবধানতাঃ
অন্য সময়ের তুলনায় বর্ষাকালে ব্রেক করার ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করুন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুন সময় নিয়ে বাইক থামান বা স্লো করুন। দ্রুত ব্রেক করার ফলে ভিজা রাস্তায় ফ্রিকশান কমের কারণে পেছনের চাকা হড়কে যেতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাবার সম্বাবনা প্রবল। একে বলা হয় ফিস টেল। মাছের লেজের মতো পেছনের চাকা দুলতে থাকবে এর ফলে হ্যান্ডেল সোজা রাখা কঠিন হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে আপনি পড়ে যাবেন। ফিস টেলের হাত থেকে রক্ষার জন্য তাই সময় নিয়ে ব্রেক করুন। আর যদি ফিস টেলের কবলে পড়েই যান তবে সিটে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে সেন্টার অব গ্যাভিটির পরিবর্তন করে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবেন। চেষ্টা করবেন পেছনের ব্রেকের ব্যবহার তুলনামূলক বেশী করতে।
সামনের গাড়ি থেকে দুরত্ত বজায় রাখুনঃ
যেহেতু বর্ষাকালে ব্রেকিং ডিস্টেন্স অনেক বেশী থাকে তাই সামনের গাড়ী থেকে আপনার দূরত্ব যে মতে বজায় রাখুন। রাস্তার পেইন্ট করা অংশ হতে সাব্ধানঃ হাইওয়েতে দেখবেন নানা নির্দেশামূলক রেখা টানা থাকে সাদা বা হলুদ রঙের। এই সমস্ত মোটা রেখা থেকে বর্ষাকালে সতর্ক থাকুন। কারণ বৃষ্টির পানিতে এই সমস্ত নির্দেশামূলক রেখাগুলি অত্যান্ত পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি রেললাইন ক্রস করার সময় যত সম্ভব আড়াআড়ি ভাবে ক্রস করুন এতে পিছলে যাবার সম্ভাবনা কম থাকবে। অনেক সময় ব্রিজের উপরে লোহার পাত দেয়া থাকে বাইক পিছলানোর জন্য আদর্শ বস্তু এই লোহার পাত।
মাঝ বরাবর সাদা দাগ এড়িয়ে চলুন
রাস্তার মাঝ বরাবার সাদা দাগ দেয়া থাকে রাস্তার বিভাজনের জন্য। বৃষ্টির মধ্যে এই দাগের উপরে বাইক চালানো এবং এর উপরে ব্রেক করা থেকে বিরত থাকুন। এটি সাধারন রাস্তা থেকে অনেক সময়েই বেশি পিচ্ছিল থাকে।
রাস্তায় পড়ে থাকা তেল হতে সাবধান
যদি রাস্তার উপরে অনেকখানি জায়গা জুড়ে রংধনুর মতো কিছু দেখতে পান , সাবধান হোন, তেল হবার সম্ভাবনা সমূহ । ভেজা রাস্তায় তেল বরফের মতো পিচ্ছিল হয় । বর্ষার প্রথম বৃষ্টির ক্ষেত্রে ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে বের হন, কারণ অনেক দিনের জমে থাকা তেল ও অন্যান্য ময়লা রাস্তাকে পিচ্ছিল করে তুলে যা ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ধুয়ে যায়।
রাতের বেলায় দ্বিগুন সতর্ক থাকুন
বৃষ্টির মধ্যে এমনিতেই বিপদের সম্ভবনা বেড়ে যায়, আর তা যদি হয় রাতে, তাহলে বিপদ আরো বেশি। তাই বৃষ্টির মধ্যে রাতে রাইডের ক্ষেত্রে দ্বিগুন সতর্ক থাকুন। বৃষ্টির পানির হেলমেটের গ্লাসে পড়ে আপনার দৃস্টিকে বাধাগ্রস্থ করবে। বিপরিত দিক থেকে আসা গাড়ীর আলো আপনাকে খুবই বিপদে ফেলে দিবে। অন্য গাড়ীকে সতর্ক করার জন্য প্রয়োজনে বাইকের ইনডিকেটর লাইট ব্যবহার করুন। লো বিম এ হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে বাইক চালানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
পরিচিত রাস্তা ব্যবহার করুনঃ
কথায় আছে সুপথ দূর ভালো আর বর্ষাকালে সুপথের গুরুত্ত ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। আপনি আপনার পরিচিত রাস্তা ব্যবহার করুন। অপরিচিত রাস্তায় স্পিডব্রেকার বা খানাখন্দ আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।
সাথে রেইন কোট নিতে ভুলবেন নাঃ
বর্ষায় মটোরসাইকেল নিয়ে বের হবার সময় সাথে রেনইনকোট নিতে ভুলবেন না । কোটটি যাতে এমন হয় অর্থাৎ এমন রঙরে হয় যা খুব সহজেই দেখা যায়। বৃষ্টির সময় অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি সীমা কমে যায় তাই এমন রঙের পোশাক পড়া উচিৎ যাতে সহজেই আপনি সবার দৃষ্টি গোচর হন।
হাতে সময় নিয়ে বের হোনঃ
বর্ষাকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হবার সময় হাতে সময় নিয়ে বের হন। স্বাভাবিক যে গতিতে আপনি গাড়ী চালান তার থেকে ১০ থেকে ২০% কম গতিতে গাড়ি চালানো উচিৎ। যদি দৃষ্টিসীমা কমে যায় বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকে বাইক চালানো বন্দ করে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন তবে অবশ্যই গাছের নীচে না। পরিশেষে বলা যায় জীবন জীবিকার প্রয়োজনেই আমাদের অনেককে বৃষ্টির মধ্যে মোটরসাইকেল রাস্তায় বের করতে হয়। আমরা চাইলেই বলতে পারিনা আজ বৃষ্টি হচ্ছে তাই মোটরসাইকেল বের করবোনা। কোন ব্যাপার না উপরের উপদেশগুলি মাথায় রেখে রিলাক্স মুডে বাইকিং উপভোগ করুন । আর যাই হোক আপনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এবং এটি সব সময়ই রোমাঞ্চকর।