মোটরসাইকেল চালকের পোশাক
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য মোটরসাইকেল একটি উত্তম বাহন। প্রায় প্রতিটি বয়সের মানুষই বাইক পছন্দ করেন। কিশোর বয়স পার হয়েছে অথচ মোটরসাইকেল চালানো জানেনা এমনটি কিছুটা অপমানজনকই বটে। আবার বর্তমান সময়ে তরুন সমাজের জন্য মোটরসাইকেল অনেকটা নেশার মতোই। এই মোটরসাইকেল রাইডিংই কখনও কখনও বিপদজনক হতমে পারে যদি সঠিক নিয়মকানুন অনুসরন করা না হয়। বাইক চালানোর জন্য যে সকল নিয়ম কানুন জানা এবং মানা জরুরী তাদের মধ্যে অন্যতম হলো পোশাক। এটি পোশাক বড় দূর্ঘটনার কারন হতে পারে, আবার পোশাকের কারনেই বড় দুর্ঘটনা থেকে বেচেও যেতে পারে। একজন বাইকারের কি ধরনের পোশাক পরিধান করে বাইক চালানো উচিত তার বর্ননা নীচে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
হেলমেট
হেলমেটকে বলা হয় বাইকারের মুকুট। মোটরসাইকেল চালালে হেলমেট পরতে হবে। শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা কোন সময়েই বাদ দেয়া যাবে না। হেলমেট চালককে রোদ-বৃষ্টি-ধুলা-বালি থেকে রক্ষা করে। রক্ষা করে মাথাকে বড় ধরনের আঘাত থেকে। আমাদের দেশে অনেকেই গরমের দিনে হেলমেট পরতে চান না গরমের অযুহাতে। কিন্তু কিছু হেলমেট রয়েছে যেগুলো ওজনে হালকা এবং হেলমেটের ভেতরে বাতাস ঢুকে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা আছে। মোটের উপর কথা হলো হেলমেট পরতে হবে বাইক চালাতে গেলেই।
গ্লাভস এবং জুতো
এই দুটি জিনিস যদিও শীতকালের জন্য খুবই আরামদায়ক। ঠান্ডা থেকে যেমন রক্ষা করে হাত-পা কে তেমনি দুর্ঘটনায় আঘাত থেকেও রক্ষা করে। জুতা পরা সব সময়ের জন্য কর্তব্য। গ্লাভস আপনাকে হাতল ধরে রাখতে ভালো গ্রিপ দেবে। জুতা গিয়ার শিফটিং এ এবং গাড়ী থামানোর সময় মাটিতে পা রেখে দাড়াতে সাহায্য করেব। চটি টাইপ স্যান্ডেল অনেক সময়েই পা পিছলে দেয়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
হেলমেট, জুতোর গ্লাভসের পাশাপাশি কনুই এবং হাটুর প্রটেকশনে সেফটি গিয়ার ব্যবহার করলে আরো ভালো।
গরমের পোশাক
আমাদের দেশ গ্রীষ্ম প্রধান। আর তাই বছরের বড় একটি সময় জুড়ে থাকে গরমকাল। গরমে সবাই একটু আরামদায়ক পোশাক পরতে চায়। সাদা বা এই ধরনের রং এর টিশার্ট, জামা সাথে জিনসের প্যান্ট আরামদায়ক হতে পারে। জিনসের প্যান্ট পোশাক হিসেবে নিরাপদ বিশেষকরে ছোটখাটো দুর্ঘটনায় কেটে-ছিড়ে যাওয়া থেকে পা কে রক্ষা করে। গরমের দিনে অবশ্যই কালো পোশাক পরিহার করতে হবে, কেননা কালো পোশাক রোদের তাপ শোষন করে শরীরকে আরো উত্তপ্ত করে।
বৃষ্টিতে পোশাক
বৃষ্টির দিনে বাইক চালানো নি:সন্দেহে আনন্দের। কিন্তু নিয়মিত বৃষ্টির মধে বাইক চালাতে হলে আনন্দ আতংকে রূপান্তরিত হয়। বৃষ্টির দিনে হরেক কিসিমের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাই সতর্ক থাকতেও হয় বেশি। বর্ষায় রেইনকোট ব্যবহার করতে হয়, শুকনা কাপড় পরিধান করতে হয়। কেননা একটানা বৃষ্টির পানি শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। আমাদের দেশে সাধারনত সকল রেইনকোট কালো রং এর হয়, এটির খারাপ দিক হলো অন্য চালকদের চোখে না পড়া, তাই রেইনকোট কেনার সময় কিছু কিছু অংশে আলো প্রতিফলিত হয় এমন কাপড় লাগানো রেইনকোট কেনাই উত্তম। হেলমেট কালো রং এর না ব্যবহার করে অন্য উজ্বল রং এর ব্যবহার করা উচিত।
শীতে পোশাক
শীতকালে বাইক চালানো বেশ কষ্টকর। শীতের বাতাস হাতের আংগুল গুলোকে প্রায় অবশ করে দেয় যা ব্রেকিং এবং ক্লাচ চাপতে সমস্যা করে। আরামদায়ক শীতের পোশাকের সাথে ফুলফেস হেলমেট, গ্লাভস, জুতো পরতে হবে। চাইলে লেদার জ্যাকেট-প্যান্ট পরতে পারেন। উইন্ডব্রেকার জ্যাকেট ব্যবহার করতে পারেন। মোটের উপর শরীর উষ্ঞ রাখার জন্য যা লাগে করবেন কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এতে বাইক রাইডিং এ কোনো ব্যাঘাত না ঘটায়। জ্যাকেটের ভেতরের পোশাক গুলি যতটা সম্ভব উলের হলে বেশি ভালো এবং আরামদায়ক হবে।
রাতের পোশাক
রাতে বাইক জার্নি অনেকের খুবই প্রিয়। রাস্তায় কম যানবাহন থাকে, ঠান্ডা মাথায় বাইক চালানো যায়। একই সাথে বিপদের সম্ভবনাও কম নয়। রাতে কখনই কালো বা গাঢ় রং এর পোশাক পরবেন না। কেননা এমন পোশাকে অন্য চালক আপনাকে ভালো ভাবে দেখতে নাও পেতে পারে। যতটা সম্ভব উজ্জল রং এর পোশাক ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে রিফ্লেক্টিং ভেস্ট বা ক্রসবেল্ট পরতে পারেন, যেটি অন্য গাড়ীর আলোতে উজ্জল হয়ে উঠে।
মহিলাদের পোশাক
আমাদের দেশে নারী চালকের সংখ্যা কম কিন্তু ইদানিং বাড়ছে। বেশি ব্যবহৃত পোশাক শাড়ী বাইকের জন্য একেবারেই অনূপযুক্ত এবং অনিরাপদ। সালোয়ার-কামিজ কিছুটা চলে। প্রয়োজনে ভেস্ট/জ্যাকেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাইক চালাতে পোশাকের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে পোশাক যেনো আদ্রতামুক্ত শুকনো পোশাক হয়। ভেজা পোশাকে বাইক চালালে হাইপোথার্মিয়া হবার সম্ভবনা রয়েছে। অতি রোদের সময় সানবার্ন হবার সম্ভবনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে পুরো শরীর ঢাকার উপযোগী সুতির পোশাক পরা যেতে পারে।