মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পিছনে থাকা কিছু কারণসূমহ

আমরা আমাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিদিনই মোটরসাইকেল ব্যবহার করছি। মোটরসাইকেল আমাদের পথচলাকে করেছে স্বাধীন এবং স্বাছন্দ্যময়। আমাদের দেশের রাস্তাগুলোর প্রশস্ততা,নিয়ম কানুন ইত্যাদির সঠিক বাস্তবায়ন নেই যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। এই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান শিকার বাইকাররা। নিজের ভুল কিংবা অন্য যানাবাহনের ভুলে কারণে বাইকারদের মাশুল গুনতে হয় এবং মোটরসাইকেলের জন্য আমাদের রাস্তাগুলো এতটাই অনিরাপদ যে দুর্ঘটনা হলেই বাইকাররা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হন। রাইডারের যে সকল ভুলের জন্য বাইক এক্সিডেন্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা নিম্নে আলোকপাত করা হল।
ভাঙ্গা রাস্তায় বেখেয়াল ভাবে বাইক রাইড
আমাদের দেশের রাস্তার বেশীরভাগ অংশগুলো খানাখন্দে ভরপুর যার জন্য প্রতিটি যানবাহনকে অনেক নিরাপদে সে সকল রাস্তায় রাইড করতে হয়। দুই চাকার বাহনের জন্য ভাংগা রাস্তায় রাইড অনেক কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিও বটে। এসব রাস্তায় বেখেয়ালভাবে রাইড করলে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা তাই ভাংগা রাস্তায় বাইক রাইডের সময় সাবধানতা অবলম্বন করে রাইড করতে হবে।
কর্নারিং এর সময় কড়া ব্রেকিং করা
রাস্তায় চলতে গেলে এক প্রকার জীবন যুদ্ধ করে চলতে হয় কারণ নিজে সতর্ক হলেও অন্যের অসতর্কতা কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। অনেক রাইডার আছেন যারা কর্নারিং এর সঠিক ব্যবহার করতে জানেন না যার ফলে কর্নারিং এর সময় তারা ব্যালেন্স হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। কর্নারিং করার সময় কড়া ব্রেক করার ফলে চাকা স্কিড করে ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে পারেন এবং বিপরীত দিক থেকে আসা বাহনের সাথে ধাক্কা লেগে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা হতে পারে। কর্নারিং এর সময় চেষ্টা করবেন স্পীড কম রেখে ও বাইক নিয়ন্ত্রণে রেখে ইঞ্জিন ব্রেক করার এতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
কর্নারিং এর সময় অসতর্ক হওয়া
নিজের বা অন্যর অসতর্কতার জন্য প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। বাইক রাইডের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক কারণ রাস্তায় কে কোন দিক দিয়ে যানবাহন চালাচ্ছে , কে বেপরোয়া গতিতে রাইড করছে সেগুলো লক্ষ্য না রাখলতে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা । বিশেষ করে কর্নারিং করার সময় সতর্ক হতে হবে কারণ আপনি জানেন না বিপরীত দিক থেকে কোন বাহন আসছে এবং কেমন গতিতে আসছে তাই কর্নারিং এর সময় সতর্ক না হওয়া রাইডারের জন্য একটি বড় ভুল।
ম্যানহলের কভার কিংবা অপ্রত্যাশিত ভাংগা খেয়াল না করা
শহরের রাস্তায় ম্যানহলের ঢাকনা দুর্বল হয়ে থাকে কিংবা সেটা খুলে থাকে যেটা সব যানবাহনের জন্য ঝুঁকি। দুই চাকার বাইকের জন্য এটি আরও মারাত্মক ঝুঁকি। দুই চাকার উপর ভর করে চলতে হয় বিধায় এসব ভাংগা খেয়াল না করতে প্রাণঘাতীও হতে পারে। অন্যদিকে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় রাইডের সময় কোথায় কী পরিমানে ভাংগা আছে সেটা আমরা কেউ জানি না কারণ সেগুলো পানি দিয়ে পরিপুর্ন হয়ে থাকে। এসব খাদের মধ্যে বাইকের চাকা পরলে নির্ঘাত বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে । রাইডারের এসব ভুলের জন্য প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা।
অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে কোন ক্রসিং বা মোড় বেপরোয়া গতিতে পার হওয়া
অনেক সময় দেখা যায় যে ব্যস্ততার জন্য রাইডাররা বেপরোয়া গতিতে রাস্তায় রাইড করছে এসময় অনেকেই খেয়াল করেন না কে কোন দিক থেকে আসছে এবং বিপরীত দিক থেকে আসা বাহন আঁচ করতে পারেন না তার মতি গতি। এমতবস্তায় যদি বেপরোয়া গতিতে কোন বাইকার বাইক নিয়ে মোড় বা ক্রসিং পার হয়ে সেক্ষেত্রে অপরদিক থেকে কোন বাহনের সাথে তার দুর্ঘটনা অনায়াসেই ঘটে যেতে পারে। অনেক নেশাগ্রস্ত বাইকাররা এই কাজটি করে থাকেন এবং তারা জানেন না যে সামনে কী ঘটতে চলেছে।
রাইড করা অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা
রাইড করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা আইনের দৃষ্টিতে একটি অপরাধ। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাইড করলে মস্তিষ্ক সঠিক মনোযোগ দিতে পারে না যার ফলে রাস্তায় অন্যান্য বাহনের সাথে এক্সিডেন্ট হওয়ার প্রবনতা অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে পেছন দিক থেকে কোন বড় বাহন এসে স্বজোরে ধাক্কা দেবার প্রবনতাও বেশি থাকে। অনেক রাইডার রাইড করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
মোটরসাইকেল মেইন্টেনেন্স না করে ওভারস্পীডে বাইক চালানো
আপনার বাইক দীর্ঘদিন সার্ভিস না করলে কিংবা সময় মত পার্টস পরিবর্তন না করলে সেসব পার্টসের পারফরমেন্স এবং আয়ু কমে যেতে পারে । এরকম অবস্থায় কেউ যদি বাইক রাইড করে তাহলে দুর্ঘটনা হবার শঙ্কা অনেক বেশি। যেমন কেউ ওভার স্পীডে বাইকটি রাইড করলে ইঞ্জিন সীজ হয়ে যেতে পারে অথবা কড়া ব্রেকিং এর সময় তার ব্রেক শু ভেংগে দিয়ে চাকা স্কীড করতে পারে। মেইন্টেনেন্স না করলে এরকম আরও অনেক দুর্ঘটনা হবার শঙ্কা বেশি থাকে।
লুকিং গ্লাসের সঠিক ব্যবহার না জানা
লুকিং গ্লাস বাইকের সেফটি ফিচারস হিসেবে পরিগণিত। আমাদের দেশে বেশীরভাগ নতুন রাইডাররা লুকিং গ্লাসের সঠিক ব্যবহার জানে না যার ফলে তারা না বুঝেই বিভিন্ন মোড়ে না দেখে এদিক সেদিক চলে যায় এবং পেছনে থাকা বাহন তার গতিবিধি বুঝতে না পেরে আঘাত করে এতে করে মারাত্মক এক্সিডেন্ট হয়। অন্যদিকে সামনে থেকে কোন বাহন আসছে অথচ সেটাকে খেয়াল না করে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা বিরাট বোকামি। সামনের দিক থেকে কোন যানবাহন আসছে তার দুরুত্ব পরিমাপ করে লুকিং গ্লাসের দিকে তাকানো উচিত। আমাদের দেশের অনেক বাইকেই দেখা যায় স্টাইল করার জন্য লুকিং গ্লাস খুলে ফেলেছে যেটা মোটেও কাম্য নয়। ১ মিনিটে অন্তত ৫ বার লুকিং গ্লাসের দিকে খেয়াল করা উচিত।
অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে ওভারটেকিং করা
হাইওয়েতে কোন বড় যানাবাহন ওভারটেকিং করার সময় অনেকেই বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের সাথে নিজের ওভারটেকিং গতির সামঞ্জস্য খেয়াল করেন না যার ফলে বাইকার দ্বিধাহীন হয়ে পড়ে এবং এক্সিডেন্টের প্রবণতা বেড়ে যায়।বিশেষ করে রাতের রাইডের সময় গতির সাথে ওভার টেকিং এর সামঞ্জস্য থাকেনা ।যার ফলে রাতের ওভার টেকিং গুলো হয় অনেক বিপদজনক।আমাদের দেশের রাস্তায় বেশির ভাগ এক্সিডেন্ট হয় অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে রাতের বেলা ওভার টেকিং করা।বড় বড় যানবাহন গুলো রাতের বেলা বাইকের গতি বিধি লক্ষ্য করতে পারেন না কারণ রাতে ট্রাক,বাস সহ অন্যান্য বড় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়।এদিকে ভোরের দিকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় বাইক রাইডিং এর ক্ষেত্রে কারণ বড় বড় যানবাহন গুলো সারা রাত ড্রাইভ করে অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং তারা চেষ্টা করে দ্রুত গন্তব্য স্থলে পৌঁছানোর জন্য।সে জন্য তারা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে পড়ে এবং তারা রাস্তায় ছোট যানবাহন কে সাইড না দিয়ে গতি বেশি রাখার চেষ্টা করে।এ ক্ষেত্রে বাইকের জন্য হতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ।তাই বাইকারদের উচিত অতি আত্মবিশ্বাসের সাথে ওভারটেকিং না করাএবং রাতের বেলা সাবধানতা অবলম্বন করে রাইড করা।
কিছু কিছু ভুল কেড়ে নিতে পারে রাইডারের জীবন। তাই সবাই নিরাপদের সাথে, সচেতনতার সাথে রাইড করি তাহলেই আমরা রাস্তায় দুর্ঘটনা রোধ করতে পারবো।