কাউন্টার স্টিয়ারিং
দ্রুত গতিতে বাঁক নেবার একটা চমৎকার কৌশল হলো কাউন্টার স্টিয়ারিং । যেদিকে ঘুরবেন তার বিপরীতে হ্যান্ডেল বারে পুশ করতে হয় বলে একে কাউন্টার স্টিয়ারিং বলে । এটা শুনতে অযৌক্তিক, কিন্তু অনেকেই এটি নিজের অজান্তেই হয়তো করে থাকেন। কাউন্টার স্টিয়ারিং মানে বাইকের হ্যান্ডেল বার বাঁকের বিপরিতে ঘুরানো না বরং হ্যান্ডেল বার পুশ করার মাধ্যমে বাইক কাত (Lean) হবার প্রক্রিয়া আপনি শুরু করলেন। এই পুশ করার মাধ্যমে স্বল্প সময়ের জন্য আপনার বাইক চাকা ভুল দিকে যাবার প্রবণতা তৈরি করবে এর ফলে বাইকের চাকা হালকা কাত হবে এবং এই চাকার কাত হওয়াকে আপনার বাইক তৎক্ষণাৎ কাজে লাগিয়ে বাইক কাত হয়ে যাবে এবং আপনি যেদিকে যেতে চান সেদিকে চলতে থাকবে। মোট কথা আপনি দ্রুত গতিতে তীক্ষ্ণ বাঁক নেবার সময় বাইকের যে কাত হবার প্রয়োজন কাউন্টার স্টিয়ারিং এর মাধ্যমে আপনি সে বিষয়টিকেই আরো সহজ করে তুললেন । ডানে যেতে চাইলে ডান হাত সামান্য সামনে ঠেলতে হবে। বাম হাত সামান্য টানতে হবে। অনুরুপভাবে বামে যেতে চাইলে বামহাতে হ্যান্ডেল সামান্য সামনে ঠেলতে হবে এবং ডানহাতে সামান্য নিজের দিকে টানতে হবে। তবে যেহেতু বিষয়টি বহু প্র্যাকটিসের প্রয়োজন সেহেতু আপনি যেদিকে যেতে চান সেদিকেই হ্যান্ডেল বার ঘোরান। যখন খুব ভাল চালাতে শিখবেন তখন এটা প্র্যাকটিস করুন। খুব স্পিডে ঘুরতে চাইলে কাউন্টার স্টিয়ারিং জানা অবশ্যই প্রয়োজন। আপনি যদি বুঝতে পারেন কাউন্টার স্টিয়ারিং কি এবং কিভাবে কাজ করে দ্রুত গতিতে বাঁক নেয়া আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে ।
আসলে কাউন্টার স্টিয়ারিং করা হয় বাইককে সফল ভাবে কাত করে নেয়ার জন্য। আর বাইক কাত না করতে পারলে আপনি হাই স্পীডে বাঁক নিতে পারবেন না। কাউন্টার স্টিয়ারিং এর কয়েকটি নিয়ম খুব সংক্ষেপে আলোচনা করে নেই যাতে পরবর্তিতে কোন একদিন এই বিষয়ে যখন বিস্তারিত লিখবো আপনারা যেনো আগেই প্যাক্টিস করে নিতে পারেন।
প্রথম নিয়ম: নিজেকে রিলাক্স করে নিন এবং হ্যান্ডেল বার খুব রিলাক্স ভাবেই ধরে থাকুন । আপনার হাত যেনো এই সময় রাস্তার সমান্তরালে থাকে। কোন ভাবেই হ্যান্ডেল বার শক্ত করে ধরে নীচের দিকে চেপে ধরবেন না। যদি ধরেন তবে তা হবে বাইকের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সামিল।
দ্বিতীয় নিয়ম: যেহেতু আপনি হ্যান্ডেল বার শক্ত করে চেপে ধরতে পারবেন না তাই নিজের হাঁটু দিয়ে ফুয়েল ট্যাংক চেপে ধরুন। মরন চাপ দিবেন না, এমন ভাবে চেপে ধরুন যাতে বাইকে স্থির থাকতে পারেন । প্রয়োজনে পায়ের পাতা দিয়ে ফুটরেস্ট চেপে ধরতে পারেন।
তৃতীয় নিয়ম: যা কিছু চিন্তা আগেই করে নেন। কারণ কাউন্টার স্টিয়ারিং প্রসেস শুরু করে দিলে চিন্তার অবকাশ থাকবে না। কাউন্টার স্টিয়ারিং এর সময় ব্রেক বিপদ ডেকে আনবে। এক্ষেত্রে আপনি delayed apex strategy প্রয়োগ করুন। প্রতিটি বাকেই একটা এপেক্স(Apex) বা চুড়া থাকে এবং এই চুড়া কিভাবে মোকাবেলা করবেন তা আগেই ঠিক করে নিতে হয়।
দ্রুত বাক নিতে চাইলে আপনার বাইক কাত হবেই যাকে লিন(Lean) বলা হয় । খেয়াল করবেন বাঁক কিন্তু একটা বৃত্তের অংশ। যখনি আপনি উচ্চ গতি নিয়ে এই বৃত্তের চাপের মধ্যে ঢুকে গেলেন বাইকের জ্যামিতিক চ্যাসিস , গোলাকার চাকা নিয়ে সাথে আপনার আর বাইকের প্রায় দুই আড়াইশো কেজি ওজন নিয়ে । শুধু কি তাই? আপনাকে মোকাবেলা করতে হয় সেট্রিফিউগাল আর সেন্ট্রিপিড সহ আর ভুমুখি ফোর্সের মধ্যে। এই সমস্ত কারনেই আপনার বাইক কাত হবে। আর আপনাকে এই কাত করতে হবে সঠিক ভাবে দক্ষতার সাথে। চার চাকার যানও কিন্তু কাত হয়, তাদের কাত হবার জন্য বাঁকের অংশটুকু ঢালু করে বানানো হয়। যাতে করে এম্নিতেই যানটি কাত হতে পারে।
আপনি যদি বলেন দূর আমি কাউন্টার স্টিয়ারিং ফিয়ারিং করবো না, সামনে তাকাবো শরীর বাকাবো বাইক বাঁকবে আমিও বাঁক ঘুরবো। সোজা কথা, এতো প্যাঁচ শেখার দরকার আছে? দরকার আছে, আপনি যদি অল্প গতি নিয়ে বাইক চালান তবে এগুলি আপনার কাছে বাড়তি মনে হবে কিন্তু যদি জোরে চালান? এক্ষেত্রে সামনে তাকানো শরীর বাঁকানো আপনাকে সাহায্য করবে কিন্তু গতি বেশি থাকলে প্রায় ২৫০ কেজি ওজন নিয়ে বাইকের গতিপথ বদলানো এত সহজ হবে না। এবং একারনেই কাউন্টার স্টিয়ারিং দরকার। আপনি মনের অজান্তেই কিন্তু এই কাজ করেন। এর পরে যখনি আপনি কোন বাক দ্রুত পার হতে চাইবেন খেয়াল করে দেখবেন সুক্ষভাবে ভেতরের হ্যান্ডেলকে ঠেলা দিয়ে বিপরিত দিকে সরিয়ে দিয়ে হালকা কাত হয়ে আপনি বাঁক নিচ্ছেন।