বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান সমূহ
১)বগালেক:
বাংলাদেশের পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে অন্যতম সুন্দর ও রহস্যময় জেলা হচ্ছে বান্দরবান। সেই বান্দরবান এর রহস্যময় ও আকর্ষনীয় পর্যটন স্থান হচ্ছে বগালেক। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রুমা উপজেলায় বগাকাইন হ্রদের অবস্থান। কেওক্রাডং পর্বতের গা ঘেষে উঠা এ হ্রদের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,২৪৬ ফুট বা ৩৮০ মিটার। বগা হ্রদের গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো। । এর গভীরতা প্রায় ৩৮ মিটার। হ্রদ যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগা ছড়া নামে পরিচিত।
সকাল, বিকেল, রাত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময় বগা লেকের দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন, তবে রাতের বগালেক এক অদ্ভুত সুন্দর আবহের সৃষ্টি করে। পূর্ণিমায় এর এক রূপ আর অমাবস্যায় দেখবেন আরেক রূপ। অমাবস্যায় হারিয়ে যেতে পারবেন তারার রাজ্যে।আকাশ ভরা তারার মেলার নিচে বসে বগালেকের অপূর্ব মনোরম সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করার অনুভুতি ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং আপনার ভাগ্য ভাল থাকে তাহলে মিল্কিওয়ের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন।
২)সাজেক ভ্যালি:
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থল। রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে রয়েছে মিজোরাম। এই সীমান্তের কাছেই সাজেক ভ্যালি অবস্থিত। সাজেক ইউনিয়নের আয়তন ৭০২ বর্গমাইল।এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এর উত্তরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটির লংগদু, পূর্বে রয়েছে ভারতের মিজোরাম ও পশ্চিমে রয়েছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতার এই ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক একটি ভূ-স্বর্গ। সকাল বিকাল এখানে প্রকৃতি তার রঙ বদলায়। চারপাশে রয়েছে সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, সাদা-নীল তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি।সাজেকের সর্বত্রই মেঘ, পাহাড় আর সবুজের ছড়াছড়ি। এখান থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটিই দেখা যায়। সাজেকের রুই-লুই পাড়া থেকে ট্রেকিং করতে হয় তারপর কংলাক পাহাড়-এ যাওয়া যায়। সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে কংলাক এ। কংলাকে যাওয়ার পথেই মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড় দেখা যায়। পাশাপাশি আদিবাসীদের জীবনযাপন, চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এখানে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন উপজাতিদের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তাদের সংস্কৃতির নানা জিনিস এখানে উপভোগ করা যায়।
৩)তিন্দু:
তিন্দুকে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ। এটি দেশের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় অবস্থিত। তিন্দুর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী। এখানে পাহাড়, মেঘ, নদী, ঝর্ণা, রহস্য ও রোমান্সের মিলন ঘটেছে। সবই একসাথে পাওয়া যায় বলে তিন্দু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষনের নাম।পাথরকে সারাক্ষণই বুকে নিয়ে বয়ে চলছে শঙ্খ নদীর স্বচ্ছ পানির ঢল। পাহাড়গলা পানিতে গা ডুবিয়ে মাছের সঙ্গে সারা দিন আড্ডা দিয়ে শহরের ক্লান্তি ভুলতে পারবেন। স্থানীয় আদিবাসী মানুষের সারল্য ও আতিথিয়তায় মুগ্ধ হতে হবে। সকাল বিকেল পাহাড় ঘিরে থাকে মেঘের কোনায় লুকিয়ে। মেঘমেলা দেখতে দেখতে কখন যে সময় চলে যাবে তা টের পাবেন না। তিন্দুর অসাধারণত্ব বলে শেষ করার মতো না।
৪) কাঞ্চনজঙ্ঘা:
ভারতের শৈল শহর দার্জিলিং বা কালিম্পংয়ের সবচেয়ে প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাঞ্চনজঙ্ঘা মাউন্ট এভারেস্টের পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।
ভারতে না গিয়েই আপনি বিষ্ময়কর কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন পাবেন বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকেই। হিমালয় পর্বতমালার কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে বেড়িয়ে পড়তে পারেন ঠাকুরগাঁও কিংবা পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে বেশ পরিষ্কারভাবে শুভ্র সাদা বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালাটি দেখা যাচ্ছে। এমনকি কোন কোন স্থান থেকে পর্বতমালার নীচের কয়েকটি শহরের ঘরবাড়ি, আলো, গাড়ি চলাচলও দেখা যাচ্ছে।
৫)থানচি:
আয়তনের দিক থেকে বান্দরবান জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা হচ্ছে থানচি। সাকা হাফং, নাফাখুম জলপ্রপাত, বড় পাথর বা রাজা পাথর, বাকলাই জলপ্রপাত, ছোট পাথর (তিন্দু) সহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই থানচি উপজেলায়।
৬)সাদা পাথর সিলেট:
পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন,দুইদিকে সাদা পাথর আর মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি এ যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যানভাস হচ্ছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। সিলেটে পাথরের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ‘সাদা পাথর’ নামক স্থানটি। এখানে বর্ষাকালে প্রকৃতি সেজে ওঠে সবুজের মোলায়েম আচ্ছাদনে। উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল থেকে নেমে আসে ঝর্ণার অশান্ত শীতল পানির বয়ে চলে স্বচ্ছ নীল জল আর পাহাড়ের সবুজ মিলেমিশে একাকার করেছে। নদীর বুকে মু্ক্তোর মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা নদীটির শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে । শহুরে জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেতে সারা দেশ থেকেই এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
৭)গদখালী ফুলের বাজার:
গদখালীকে বলা হয় বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী। যশোর জেলা শহর থেকে বেনাপোলের দিকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আছে গদখালী বাজার। গদখালীতে আসা ফুলগুলো যশোর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি দূরে ঝিকরগাছা ও শার্শা থানা থেকে আসে। ৯০ টি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমিতে ফুল চাষ করা হয়। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশের জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হতে হবে। এছাড়া ফুলের সুঘ্রাণ, মৌমাছির গুঞ্জন, আর প্রজাপতির ডানায় ভর করে আসে চিরন্তন সৌন্দর্যের বার্তা।এখানকার বাহারি ফুলের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের বিমোহিত করে রাখতে বাধ্য।