মোটরসাইকেল কেনার পূর্বে কি কি বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন?
একটি মোটরসাইকেল কেনার পূর্বে আমাদের কমবেশি সবাইকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। যেমন কোন বাইকটি আমার জন্য ভালো হবে, কোনটি কিনলে আমি লাভবান হবো বা কি বাইক কিনলে আমার প্রয়োজন পূরন হবে, ইত্যাদি। একটি সঠিক বাইক কিনলে যেমন টাকার সঠিক প্রয়োগ হয়, তেমনি ব্যবহার করেও শান্তি পাওয়া যায়।
খুব বেশি নয়, অল্প কিছু বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখলেই একটি কার্যকরী এবং ব্যবহার উপযোগী বাইক কেনা সম্ভব। যেখানে অর্থের সাশ্রয় হবে, প্রয়োজন মিটবে এবং ব্যবহারে আরামদায়ক হবে।
আর্থিক সামর্থ্য
আয় বুঝে ব্যায় কর। বহুল প্রচলিত প্রবাদ। কমদামী জিনিসের বড় সুবিধা হলো দাম কম, বাকী সব অসুবিধা। আর দামী জিনিসের একটিই সমস্যা, দাম বেশি বাকি সব সুবিধা। কম দামে কখনই মান সম্মত জিনিস পাওয়া যায় না। তবে এটিও মাথায় রাখতে হবে কত দামী জিনিস কিনবেন? কত ভালো কিনবেন? যত খরচ করবেন ততোই ভালো জিনিস পাবেন। তাই আপনার সামর্থের সর্বোচ্চটুকুই বাজেট রাখুন, এতেই চলবে। বাইক কিনতে আপনার বাজেটের মধ্যের বাইক গুলো খুজে বের করুন। চয়েস করতে সুবিধা হবে।
প্রয়োজন
একটি বাইক কেনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় যে বাইকটি আপনি কি কাজে ব্যবহার করবেন? বাইকের সাথে প্রয়োজনের সমন্বয় না থাকলে অবশ্যই আপনি ভূল বাইক কিনে ফেলবেন। যেমন আপনার প্রয়োজন শহরে চলাচল ঘোরাফেরার জন্য, তাহলে ১০০-১২৫ সিসির কমিউটার বাইকই যথেষ্ট, স্কুটারের কথাও ভাবতে পারেন। আপনার প্রয়োজন যদি হয় প্রতিদিন ৫০-১০০কিমি চলা, তাহলে একটি শক্তিশালী বাইকের পাশাপাশি জ্বালানি খরচের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আপনি যদি স্পোর্ট বাইক পছন্দ করে থাকেন তাহলে ম্যাক্সিমাম বাজেট প্রয়োজন হবে। কাজেই আপনার বাজেটের মধ্যে আপনার কোন বাইক প্রয়োজন সেটি নির্ধারন করুন।
সঠিক ধরনের বাইক
স্পোর্টস লুকের কমিউটারকে বাইককে স্পোর্টস এর জন্য ব্যবহারের টার্গেট করবেন না। বাইক নষ্ট হবে, বাইকও আপনার চাহিদা পূরন করতে পারবে না। স্পোর্টসের জন্য সঠিক মানের ক্ষমতাসম্পন্ন স্পোর্টস বাইক পছন্দ করতে পারেন। আবার শহরে চলাচলের জন্য স্পোর্টস বাইক আরামদায়ক নয়, বরং ব্যয়বহুলও বটে। দূরের রাস্তার জন্য ক্রুজার ভালো কিন্তু কোনমতেই শহরে ভীড়ের মধ্যে আরামদায়ক নয়।কিশোর বয়সে যেমন ক্রুজার বাইক মানায় না, তেমনি বৃদ্ধ বয়সে স্পোর্টস বাইক ঠিক যায় না। আপনার বয়স ও শারীরিক গঠনের সাথে মানানসই বাইক পছন্দ করবেন। সঠিক বাইক কিনলে অর্থের সঠিক ব্যবহার হবে, চালিয়ে যেমন আরাম হবে তেমনি বাইকটিও টেকসই হবে।
আরাম
বাইক কেনার সময় অবশ্যই আরামের কথা মাথায় রাখতে হবে। বিশেষকরে আপনি যদি প্রতিদিন ৫০-১০০কিমি রাইডের প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে বাইকে আরামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন। কেননা প্রতিদিন এই পরিমান বাইকে বসে থাকতে হলে বাইক আরামদায়ক না হলে সম্ভব হবে না। যেমন স্পোর্টস বাইক দীর্ঘ সময় ব্যবহারের জন্য আরামদায়ক নয়, আবার ক্রুজার বাইক আরামদায়ক হলেও তেল খরচ বেশি এবং শহরের ভীড়ে চলার উপযোগী নয়। সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনের মেটাবে এবং আরামদায়ক বাইক চয়েস করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আপনার নির্ধারিত বাইকগুলোর মধ্যে যে আপনাকে বেশি আরাম দিবে তাকে পছন্দ করুন।
জ্বালানি খরচ
একটি বাইক কিনতে হলে অবশ্যই জ্বালানী খরচের কথা বিবেচনায় নিতে হবে বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের লোকদের জন্য যেখানে জ্বালানি তেল অনেক উচ্চ মুল্যে কিনতে হয়। স্পোর্টস, ক্রুজার এবং চাইনিজ বাইকগুলো তুলনামুলক বেশি জ্বালানি খরচ করে। ইনডিয়ান বাইকের জ্বালানি খরচ কম। কমিউটার বাইকে জ্বালানি খরচ কম হয়ে থাকে। যে বাইকটি আপনার পছন্দের মাইলেজ দিবে তাকে পছন্দ করুন।
কতদিন ব্যবহার করবেন?
বাইক কেনার আগে ভাবুন আপনি কতদিন ব্যবহার করবেন? সেই বিবেচনায় বাইক কিনবেন। জাপানিজ ব্রান্ডের বাইকগুলোর দীর্ঘস্থায়ীত্ব সবচেয়ে বেশি, দামও বেশি। কাজেই আপনার বাজেটের এবং পছন্দের মধ্যে যে বাইক বেশি টিকবে সেটি আপনি পছন্দ করবেন।
ব্যবহারকারীর মতামত জেনে নিবেন
যে বাইকগুলো আপনার পছন্দ হয় সেই বাইকের ব্যবহারকারীর মতামত জেনে নিবেন তার বাইকটি ব্যবহার করে কেমন লাগছে, বাইকটির পারফরমেনস কেমন ইত্যাদি। তাহলে আপনার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
বিভিন্ন বাইক ব্যবহারকারীর মতামত
শারীরিক সক্ষমতা
আপনার উচ্চতা বেশি আর আপনি কিনলেন নীচু সীটের বাইক, পিঠে ব্যাথা লাগবে। আপনার হাইট কম, উচু বাইক কিনলেন, চালিয়ে শান্তি পাবেন না। কাজেই আপনার শরীরের গঠন অনুযায়ী আপনার উপযোগী বাইক কিনুন, বন্ধু কিনেছে বলে আপনাকেও একই বাইক কিনতে হবে এমন নয়। বন্ধুর ওজন ১০০কেজি তাকে যে বাইক মানাবে, ৫৫কেজি ওজন নিয়ে আপনাকে সে বাইক মানানোর কথা নয়। বাইক কেনার আগে তাই বাইকের সীট হাইট ও ওজন জেনে নিবেন। ঝামেলাবিহীন রাইডের জন্য স্কুটার একটি ভালো চয়েস।
মোটরসাইকেলে সীটের উচ্চতার গুরুত্ব
পার্টসের সহজলভ্যতা
বাইক ব্যাপক সুন্দর, চালিয়ে গেলে রাস্তার সব মেয়েরা তাকাবে। সে না হয় হলো কিন্তু পার্টস পাওয়া যায় না। এমন বাইক থেকে শতহাত দূরে থাকুন। জীবন তেজপাতা বানিয়ে দিবে। যন্ত্রের জিনিস ন্ষ্ট হবেই। মেরামতের সময় পার্টস পাওয়া না গেলে আপনার লক্ষ টাকার বাইক মূল্যহীন হয়ে যাবে। পার্টসের জন্য যদি অনেক দৌড়াদৌড়ি করতে হয় তাহলে সে বাইক থেকে দূরে থাকুন।
টেস্ট ড্রাইভ
উপরের বিষয়গুলো থেকে যে বাইক বা বাইক গুলো আপনি পছন্দ করেছেন তা সম্ভব হলে টেস্ট ড্রাইভ দিয়ে দেখুন ফাইনালি আপনার জন্য কতটুকু পারফেক্ট হচ্ছে। চালিয়ে আরাম হচ্ছে, ব্যক্তিত্বের সাথে মানাচ্ছে, সব মিলিয়ে একটি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিন।
শেষ কথা
একটি বা্ইকে সকল সুবিধা দেয়া সম্ভব নয়।যে বাইকে গতি বেশি সে বাইকের তেল খরচও বেশি। যে বাইক টেকসই হবে তার দামও বেশি হবে। কাজেই সকল সুবিধা এক বাইকে না খুজে সর্বোচ্চ যতটুকু পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখে বাইক কিনলে আশা করা যায় আপনার সাধ্যের মধ্যে সেরা বাইকটিই হবে যেটি আপনার সকল চাহিদা পূরন করতে পারবে।