মোটরসাইকেলের চেইন কিভাবে পরিস্কার করবেন?
মোটরসাইকেলে নিজে নিজে যত্ন নেবার যে যে অংশগুলো রয়েছে তার মধ্যে চেইন অন্যতম। এটি মোটরসাইকেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশও বটে। চেইনের নিয়মিত যত্ন ও পরীক্ষা না করলে চেইন ছিড়ে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বাইকের ও নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই চেইনের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। খুব সহজে নিজে নিজেই চেইন পরীস্কার করতে পারেন। আসুন জেনে নেই কিভাবে করবেন-
৫০সিসি থেকে ১২৫সিসি পর্যন্ত কমিউটার বা সাধারন ব্যবহারের বাইকগুলোতে সাধারনত চেইনে একটি চেইন কাভার থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশে রাস্তা-ঘাটে ধুলো-বালি-কাদা স্বাভাবিক জিনিস। তাই মোটরসাইকেলের চেইনকাভার এইসব ধুলোবালি-কাদা থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বর্তমানে অনেক বাইক বিশেষ করে স্পোর্টস ক্যাটেগরীর বাইকগুলোতে চেইন কাভার থাকে না। বা উপরের অংশে অল্প পরিমানে থাকে ফলে চেইনের লুব্রিকেন্ট/গ্রিজ ইত্যাদির সাথে রাস্তার ধুলো ময়লা জমে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চেইনে ময়লা জমে যায়। এতে বাইকের স্বাভাবিক গতি হ্রাস পায়, চেইন এবং স্প্রোকেটের আয়ু কমে যায়, চেইন দুর্বল হয়ে ছিড়ে যাবার সম্ভবনা তৈরী হয়। প্রয়োজন নিয়মিত চেইন পরিস্কার করা ও পরীক্ষা করা। পরীক্ষা করে দেখতে হবে চেইনটি ঢিলা হয়ে গেছে কিনা অথবা অতিব্যবহারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে কিনা। প্রয়োজনে চেইন বদলে ফেলতে হবে।
প্রতি ৫০০-১০০০কিমি বাইক রাইডের মধ্যেই একবার অন্তত চেইন পরিস্কার করা দরকার। বিশেষকরে যাদের চেইনকাভার নেই তাদের ৫০০কিমি অন্তর পরিস্কার করাই ভালো। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে নিয়মিত এই কাজটি করিয়ে নিতে পারেন। হাতে সময় থাকলে বা নিজের প্রয়োজনেও এই কাজটি নিজ হাতে করতে পারেন। প্রয়োজন সামান্য কিছু জিনিস যা বাসাতেই পাওয়া যাবে আর থাকতে হবে কাজের আগ্রহ।
প্রয়োজনীয় উপকরন:
০১. টুথব্রাশ
০২. কেরোসিন
০৩. নরম কাপড়
০৪. চেই্নঅয়েল অথবা গিয়ার অয়েল অথবা পাতলাইনজিনঅয়েল(মবিল)
০৫. মবিল(ল্যুব) গান অথবা সুই বিহীন সিরিন্জ
(বাজারে চেইন ওয়াশ করার জন্য ক্লিনার এবং পরে ব্যবহারের জন্য কৌটাজাত লুব্রিকেন্ট পাওয়া যায়, চাইলে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।)
একটি সমতল স্থানে মোটরসাইকেলকে ডাবল স্ট্যান্ড করান। চেইন কাভার থাকলে খুলে ফেলুন, অন্তত নীচের পার্টটি খুললেও চলবে। যাদের চেইন কাভার নেই তাদের এই কাজটি করতে হচ্ছে না। এবারে কেরোসিনে টুথব্রাশ ডুবিয়ে টুথব্রাশটি দিয়ে চেইনে কেরোসিন লাগাতে থাকুন। এক হাত দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে অন্য হাতে চেইনে কেরোসিন লাগান। এভাবে পুরো চেইনটি যেনো কেরোসিনে ভিজে যায়। এরপর মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। আশা করা যায় এই সময়ের মধ্যে চেইনে লেগে থাকা ময়লা কিছুটা হলেও নরম হবে। এবার টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে চেইন থেকে ময়লা পরিস্কার করতে থাকুন। (এক ধরনের চেইন ব্রাশ পাওয়া যায় যার ৩দিকে ব্রাশ লাগানো থাকে, যেটি দিয়ে খুব সহজেই চেইন পরিস্কার করা যায়, চাইলে সেটিও কিনে ব্যাবহার করতে পারেন।) পুরো চেইনটি ব্রাশ করা হয়ে গেলে আবার ব্রাশের সাহায্য পুরো চেইনে কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে দিন। ৫মিনিট অপেক্ষা করুন। আবার ঘষে ঘষে ব্রাশ করুন। যদি মনে হয় যে শক্ত হয়ে লেগে থাকা ময়লা উঠে গেছে সেক্ষেত্রে নরম কাপড় দিয়ে ঘষে ময়লা/কেরোসিন মুছে ফেলুন। পেছনের চাকা ঘুরিয়ে দেখে নিতে পারেন চেইনের কোথাও ময়লা লেগে আছে কি না। থাকলে ব্রাশে কেরোসিন ভিজিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন এবং কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। একই ভাবে পেছনের স্প্রোকেটও একই ভাবে পরিস্কার করতে হবে।
চেইনে গ্রীজ জাতীয় জিনিস ব্যবহারের নিষেধ করা হয় কয়েকটি কারনে।প্রথমত গ্রীজের ঘনত্ব বেশি বলে ময়লা আটকে আরো জটিলতা তৈরী করে। দ্বিতীয়ত শীতের দিনে গ্রীজ এবং ময়লা জমে শক্ত হয়ে গিয়ে চেইনকে স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে বাধা দেয়। তাই চেইনের জন্য ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট অথবা গিয়ার ওয়েল অথবা পাতলা ইনজিন ওয়েল(মবিল) ব্যবহার করতে পারেন। টুথব্রাশের মাধ্যমে লুব্রিকেন্ট চেইনে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে এদিক ওদিক কিছুটা ছিটাবে। চাইলে সুই বিহীন সিরিন্জ ব্যবহার করেও সুন্দর মতো চেইনে লুব্রিকেন্ট লাগাতে পারেন। পেছনের চাকা ঘুরিয়ে পুরো চেইনে লুব্রিকেন্ট লাগাতে হবে। হাত দিয়ে চাকাটি কয়েকবার ঘোরাতে হবে যেনো পুরো চেইনে ঠিক মতো ল্যুবটি লেগে যায়। কিছুক্খন অপেক্ষা করুন যেন অতিরিক্ত অয়েলটি ঝরে যায়। এরপরে বাইকের চেইন কাভার থাকলে সেটি লাগান।
আশা করা যায় আপনার বাইক রেডী রাইডের জন্য। চেইনের নীচে থেকে আংগুল দিয়ে উপরের দিকে চাপ দিয়ে দেখতে পারেন চেইন অতিরিক্ত ঢিলা মনে হচ্ছে কিনা, মনে হলে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন। বাহ্যিকভাবেও চেইনের অবস্থা সন্তোষজনক না হলে পাল্টে নিতে দেরী করবেন না। কেননা পুরোনো চেইন ছিড়ে মারাত্বক দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।
সতর্কতা:
০১. পুরো প্রক্রিয়াটি খুব সাবধানে করুন কোনো মতেই যেন চেইনে হাত আটকে না যায়।
০২. টায়ারে মবিল/কেরোসিন লেগে গেলে সেটি অবশ্যই পরিস্কার করে ফেলুন।
০৩. কিছু চেইন রয়েছে যেখানে প্রতিটি জয়েন্টে রাবারের গোলাকৃতি রিং(O Ring) ব্যবহার হয়েছে। এধরনের চেইনের জন্য নির্ধারিত ক্লীনার ব্যবহার করে চেইন পরিস্কার করাই ভালো।
পরিশেষে:
বাইক কোম্পানী কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চেইন পরিবর্তন করে নিবেন। আর যদি মনে হয় চেইনের ক্ষয় বেশি হয়েছে, সেক্ষেত্রে দেরী করা ঠিক হবে না। নিয়মিত চেইন পরিস্কারে বাইকের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি চেইনের দীর্ঘস্থায়ীত্বও বৃদ্ধি পায়।