মোটরসাইকেল হেলমেট কিভাবে পরিস্কার করবেন?
বাংগালী দাত থাকতে দাতের মর্যাদা দেয় না। এটি প্রচলিত কথা। অর্থাৎ যথাসময়ে যে কাজ করা দরকার সেটি করে না, পরে সমস্যা হলে তখন আফসোস করে। প্রতিটি মানুষের কিছু ব্যক্তিগত ব্যবহার্য্য জিনিস রয়েছে যেটি অন্যে ব্যবহার করেনা বা করাও উচিত নয় যেমন নিজের পোশাক বিশেষ করে আন্ডার গার্মেন্টস, রুমাল, তোয়ালে ইত্যাদি। তেমনি প্রতিটি বাইকারের জন্য হেলমেট হলো একান্তই তার নিজের ব্যবহারের জন্য। আর এ কারনেই হেলমেটের যত্ন নেয়াও উচিত সেভাবেই। অথচ আমরা হেলমেট কেনার পর থেকে নষ্ট হওয়া বা হারিয়ে যাবার পূর্ব পর্যন্ত একইভাবে ব্যবহার করে যাই। যা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়। একই সাথে নিয়মিত হেলমেটের যত্নে হেলমেটের ভাইজরে(সামনের স্বচ্ছ প্লাস্টিক) দাগ পড়া বা ঘষা লাগা থেকে রক্ষা করে। ছোট ছোট কিছু নিয়ম মেনে চললেই হেলমেটের যত্ন নেয়া হয়। আসুন জেনে নিই কিভাবে হেলমেটের যত্ন নিবো, পরিস্কার রাখবো।
ভাইজরের যত্ন
ভাইজর(Visor)বা সামনের স্বচ্ছ প্লাস্টিক হেলমেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশ। অতি ব্যবহারে বা ভুলভাবে পরিস্কার করার কারনে এবং বিভিন্ন কারনে ঘষা লেগে এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঘষা লাগা ভাইজর দিয়ে দেখতে যেমন কষ্ট হয় তেমনি রাতে বাইক চালাতে কষ্ট হয় বিশেষকরে সামনে থেকে আসা গাড়ীর আলো ভাইজরের ঘষা জায়গাগুলোতে এমনভাবে ছড়িয়ে যায় যে সামনে কিছু দেখাই যায় না। যা মারত্বক দুর্ঘটনার দিকে আপনাকে ঠেলে দিতে পারে। নিয়মতি ভাইজর পরিস্কার করে এর স্থায়ীত্ব বাড়াতে পারেন। সুতি বা আরো রুক্ষ কাপড় এবং ময়লা কাপড় ব্যবহার করে ভাইজর মুছবেন না বা পরিস্কার করবেন না। অনেক ভাইজর দুপাশে স্ক্রু দিয়ে লাগানো থাকে। চাইলে সেটি খুলে নিয়ে পরিস্কার পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে নরম টিস্যু দিয়ে আলতো ভাবে মুছে ফেলতে পারেন। কোন ময়লাই ঘষে তুলতে যাবেন না। দাগ পড়ে যাবে। তেল জাতীয় জিনিস বা ময়লার পরিমান বেশি মনে হলে কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু যেমন বাচ্চাদের ব্যবহৃত শ্যাম্পু দিয়ে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে নরম টিস্যু দিয়ে আলতো ভাবে মুছে ফেলতে পারেন। যে সকল জটিল জায়গাতে টিস্যু দিয়ে মোছা সম্ভব হয় না সেখানে নরম কটন বাড ব্যবহার করতে পারেন। হেলমেটের ভাইজর মোছার জন্য সীটের নীচে বা টুলব্রক্সে প্যাকেটে করে কিছু নরম টিস্যু রেখে দিতে পারেন। লুকিং গ্লাসে হেলমেট রাখবেন না, পড়ে গিয়ে সাধারনত রং নষ্ট করে আর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ভাইজরের।পেট্রোলিয়াম জাতীয় জিনিস যেমন পেট্রোল, কেরোসিন, মবিল ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না, ফার্নিচার/গ্লাস ক্লিনার যেমন মি: ব্রাশো জাতীয় ক্লিনার ব্যবহার করবেন না। ভাইজরে বেশি দাগ পড়ে গেলে বদলে নেয়াই নিরাপদ।
বাইরের অংশ
বাইরের খোলস(Shell) পরিস্কারের জন্য দুটি জিনিস খেয়াল রাখা দরকার। রং যেনো নষ্ট না হয় এবং হেলমেটের গ্রাফিক্স নষ্ট না হয়। বাইরের অংশটি পরিস্কার পানি দিয়ে ভিজিয়ে বা প্রয়োজনে বাচ্চাদের শ্যাম্পু দিয়ে ভিজিয়ে নরম কাপড় বা টিস্যু দিয়ে পরিস্কার করবেন। ঘষাঘষি করবেন না। বাইরের রং বা গ্রাফিক্স নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেরোসিন, পেট্রোল বা ফার্নিচার ক্লিনার ইত্যাদি দিয়ে মুছবেন না।
ভেতরের অংশ
হেলমেটের বাইরের শক্ত খোলসের ভেতরে মাথাকে সুরক্ষা ও আরামের জন্য নরম ফোম ও কাপড়ের তৈরী অংশ থাকে। কিছু হেলমেটের এই অংশগুলে খুলে ফেলা যায় আবার অনেক গুলো খোলা যায় না। খুলে ফেলা অংশ শ্যাম্পু বা হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিস্কার করে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে পারেন। আর যে সকল হেলমেটে ভেতরের অংশ খোলা যায় না সেক্ষেত্রে পরিস্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে চিপে শুধু ভেজা কাপড় দিয়ে ভেতরটা কয়েকবার মুছে ফেলতে হবে। এরপর রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
পরিশেষে
হেলমেটকে যেহেতু বাইকারের মুকুট বা তাজ বলা হয়, কাজেই রাজার মুকুট চকচকে উজ্বল হওয়াই উচিত। একটি হেলমেট একজন বাইকারের রুচির পরিচয় বহন করে। হেলমেটকে নিয়ম মেনে নিয়মিত পরিস্কার করলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় আরামের সাথে, কার্যকরীভাবে।