মোটরসাইকেল ব্রেকিং প্র্যাকটিস
আপনি যখনই নতুন বাইক হাতে পাবেন এর ব্রেকিং সিস্টেম অবশ্যই প্রাকটিস করে নিবেন। বাইকটি হোক ব্র্যান্ড নিউ বা সেকেন্ড হ্যান্ড। হতে পারে আপনি ২০ বছরের অধিক সময় বাইক চালাচ্ছেন তাও এই প্র্যাক্টিসের গুরুত্ত্ব অপরিসীম। পুরা ব্রেকিং সিস্টেম যদি আপনার আগে থেকেই জানা থাকা তবে আপনি বাড়তি সুবিধা পাবেন।
বাইকের ওজনের ভারসাম্য কেমন, ব্রেকিং এর সময় ওজনের স্থানান্তর কেমন হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রতিটি বাইকেই আলাদা হয়। এবং এই ভিন্নতা সম্পর্কে আপনার পুর্ব ধারণা না থাকলে বিপদে পড়তে পারেন।
মোটরসাইকেলে ব্রেকিং সংক্রান্ত যে ঝামেলাগুলো হয় তার মধ্যে ব্রেকিং দূরত্ব সম্পর্কে ধারনা না থাকায় দুর্ঘনা সংঘটিত হয়, পেছনের চাকায় হুইল লক হয়ে চাকা পিছলে যেতে পারে, সামনের চাকায় হুইল লক হয়ে চাকা পিছলে যেতে পারে অথবা পেছনের চাকা উপরে উঠে গিয়ে আপনি সামনে পড়ে যেতে পারেন।
ব্রেকিং প্র্যাকটিসের জন্য প্রধান দুটি দিক হলো হুইল লক হওয়া থেকে বিরত রাখা, অথবা চাকা পিছলানোর হাত থেকে বাইককে রক্ষার জন্য প্রয়োজন কিছু কার্যকরী প্র্যাকটিস।
পেছনের ব্রেক
আমরা ইমার্জেন্সি মুহুর্তে আপনাকে পেছনের ব্রেক ব্যবহার করতে মানা করেছি, শুধুমাত্র আপনার নার্ভ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে। আপনি যদি শক্ত নার্ভের মানুষ হন, বিপদের সময় যদি ঘাবড়ে না গিয়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন তবে ইমার্জেন্সির সময় পেছনের পেছনের ব্রেকের ব্যবহার চমৎকার ফল দিবে যা আমরা এই প্র্যাকটিস সেশনে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্।
আপনি আপনার বাইকের ব্রেকিং সিস্টেমের সর্বোচ্চ টুকু নিংড়ে নিতে পারবেন যদি পেছন আর সামনের ব্রেকের সঠিক সিনক্রোনাইজেশন করতে পারেন। তাই যখন প্র্যাকটিস করবেন তখন পেছনের ব্রেকের ব্যবহার আপনাকে করতেই হবে যাতে করে এটি আপনার অটোমেটিক একশানে বাংলায় যাকে বলে সহজাত প্রবৃত্তি হয়ে যায়।
ক্লাচে চাপ দিয়ে ইঞ্জিন নিউট্রাল করে নিন। পেছনের ব্রেকে হালকা চাপ দিন । এই হালকা চাপের মাধ্যমে বাইকের পেছনের ওজন সামনে শিফট হবে একই সাথে সামনের ব্রেকে চাপ দিয়ে এই ওজন শিফটের সময় ব্যাল্যান্স বজায় রাখুন। কোন মতেই সামনের ব্রেক একবারে পুরোটাই প্রয়োগ করবেন না। আসতে আসতে চাপ বাড়ান, আশা করা যায় বাইক নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
হুইল লক
গতিশীল অবস্থায় আপনার বাইকের চাকা রাস্তাতে দুইভাবেই থাকতে পারে। ঘুরন্ত অবস্থায় বা স্লাইডিং অবস্থায়। স্লাইড অবস্থায় সোজা বাংলায় যাকে আমরা ছেঁচড়ানো বলি এই অবস্থায় বস্তুর উপরে কাইনেটিক ফ্রিকশান কাজ করে আর আর চাকা যখন ঘুরতে থাকে তখন রোলিং বা ডাইনামিক ফ্রিকশান কাজ করে। কাইনেটিক ফ্রিকশান এর একটা উদাহরণ দেই আপনি যখন একটা বস্তুকে ঠেলবেন তখন এর উপরে প্রযুক্ত বল তিন দিকে ভাগ হয়ে যায়। আপনি যে দিকে ঠেকছেন তার বিপরিতে, সামনের দিকে এবং নীচের দিকে। চিত্রে দেখুন। তাই গতিশীল কোন বস্তুর উপরে কাইনেটিক ফ্রিকশান কাজ করলে এর গতিপথের কোন স্ট্যাবেলিটি থাকে না। এটি খুব সহজেই দিক পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। অন্যদিকে ঘুরন্ত চাকা রোলিং বা ডাইনামিক ফ্রিকশান এর কারণে একটি নির্দিষ্ট দিক বজায় রাখতে পারে।
আপনার পেছনের চাকা যদি লক হয়ে যায় তবে বাইকের চাকা ডাইনামিক ফ্রিকশান থেকে কাইনেটিক ফ্রিকশান এ রুপান্তরিত হবে । দিক ঠিক রাখতে পারবেন না এবং আপনি পড়ে যাবেন।
পেছনের হুইল লক
আসুন নিরাপদে বিষয়টি একবার প্যাক্টিস করে দেখে নেই। আমরা প্রথমে দেখবো পেছনের চাকা লক করে। তবে কোন মতেই পাকা রাস্তায় এই প্যাক্টিস করতে যাবেন না। একটা ফাঁকা ফুটবল মাঠে চলে যান, হালকা শিশির পড়ে থাকলে অল্প গতিতেই কাজ হবে। চলন্ত অবস্থায় জোরে পেছনের ব্রেক চেপে ধরুন এই সময় সামনের ব্রেক ধরবেন না । ব্যাস কাজ হয়ে গিয়েছে “মাছের লেজের” "fishtail" কবলে পড়ে গিয়েছেন। এখন যদি বুদ্ধি করে নিজের Center of gravity চেঞ্জ করতে না পারেন তাহলে সোজা চিৎপাত মাটিতে। কি পরিচিত মনে হচ্ছে ? কোন শিশির ভেজা সকালে ঘাসের উপরে আচানক ব্রেক করে এমন চিৎপাত হবার অভিজ্ঞতা নিশ্চয় আপনার আছে।
সামনের হুইল লক
সামনের চাকা লক করা খুবই সোজা। তেমন কোন গতিই লাগবে না। বাইকে স্টার্ট দিন। সামনের ব্রেক সম্পুর্ন চেপে রেখে থ্রোটল বাড়ান আস্তে আস্তে। এই অবস্থায় আপনি সামনের চাকা লক অবস্থায় আছেন।
বাঁকে ব্রেকিং
বাক নেয়ার সময় ব্রেকিং একটা গুরুত্ত্বপুর্ন ইস্যু হয়ে ওঠে অনেক সময়ই। রাস্তার বাঁককে কোন মতেই ছোট করে দেখবেন না । প্রথমেই আপনার বাইকের গতি কমিয়ে নিন। খুব আলতো করে পেছনের ব্রেকে চাপ দিন । এই সময় আপনার বাইক কিন্তু ৯০ ডিগ্রি কোন সোজা থাকবে না। Centripetal force কারণে আপনি বাইক সহ বাঁকের কেন্দ্রে দিকে ঝুকে যাবেন। এটাই স্বাভাবিক। বাঁক নেবার সময় বাইকে সাহায্য করার জন্য সেদিকে কাত হয়ে আসেন সেদিকে হাঁটু প্রসারিত করে দিতে পারেন।
এটাতো গেলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি । কিন্তু মনে করুন বাঁক নেবার মাঝামাঝি পর্যায়ে কোন বাধার সম্মুখীন হলেন যেমন ধরুন একটা ছাগল বা কুকুর। কি করবেন তখন?
ব্যবহার করুন সামনের ব্রেক
ভয় পাবেন না । যেহেতু আপনি রেসিং করছেন না তাই আপনার বাইকের গতি বাঁক নেয়ার সময় কম থাকবে। এই অবস্থায় হার্ড ব্রেক করা সম্ভব। মনে আছে আমরা প্র্যাকটিস সেশানে সামনের আর পেছনের ব্রেকের সিনক্রেনাইজ ব্যবহার শিখেছিলাম । তা এইবার প্রয়োগ করুন। দেখবেন চমৎকারভাবে বাইক থেমে গিয়েছে তাও নিরাপদে। তবে বেশি গতিতে ব্রেক করতে যাবেন না, দুর্ঘটনা ঘটবে সুনিশ্চিত।
আবহাওয়া ভেদে ব্রেকিং এর ভিন্নতা
আপনি যদি ব্রেকিং এর এই প্র্যাকটিসগুলো নিয়মিত করতে পারেন, তাহলে আশা করা যায় সঠিক ব্রেকিং এর মাধ্যমে আপনি বাইককে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। আবহাওয়া ভেদেও যেহেতু ব্রেকিং এর ভিন্নতা আসতে পারে যেমন বর্ষার ব্রেকিং আর গ্রীস্মকালের ব্রেকিং এক হবে না রাস্তার অবস্থানের পরিবর্তনের কারনে। শীতকালের কুয়াশাভেজা পাকা রাস্তা আর গ্রামের মাটির কাদা রাস্তার ব্রেকিং ও কখনও এক হবে না। প্রয়োজন ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভাবে প্র্যাকটিস।
পরিশেষে
পরিশেষে বলবো নিরাপদ এবং কার্যকরী ব্রেকিং এর জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই বটে তবে ব্রেকিং সিস্টেম এবং তার কার্যপ্রনালী সম্পর্কে ধারনা থাকলে এবং অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান আপনাকে সব সময়েই সাহায্য করবে এটি সুনিশ্চিত।
মোটরসাইকেল ব্রেকিং টিপস
মোটরসাইকেলে জরুরী ব্রেকিং