মোটরসাইকেলে সীটের উচ্চতার গুরুত্ব
ছোটবেলার বড় সাইকেল চালানো শেখার কথা মনে আছে? সাইকেল ঠেলে গড়িয়ে দিয়ে প্যাডেলে পা দিয়ে সীটের উপরে বসে যাওয়া, কোনরকম প্যাডেল চেপে চেপে সামনে যাওয়া কিন্তু থামার দরকার হলেই আতংক লাগতো কারন প্যাডেল ঘোরানোর মতোই পা লম্বা নয়, মাটিতে পা ঠেকবে কিভাবে। বাইক চালানোতেও ঠিক এমনটাই অনুভুত হয় যখন সীটের উচ্চতা বেশি হয়। আপনার শরীরের তুলনাতে যদি মোটরসাইকেলের সীটের উচ্চতা বেশি হয় তাহলে প্রচন্ড ডিসকমফোর্ট নিয়ে বাইক চালাতে হয় বিশেষ করে ভীড়ের রাস্তায়, যখন যে কোন সময় ব্রেক করে থামার দরকার পড়ে। সে কারনেই বাইক চালানোর সময় বাইকের সীটের উচ্চতা খুবই গুরত্বপূর্ন বিষয়। আজকে আমরা আলোচনা করবো কোন বাইকের কি ধরনের উচ্চতার সীট হয়ে থাকে। আর কোন ধরনের সীট আপনি ব্যবহার করবেন।
একটা সময় আমাদের দেশে সরাসরি জাপান থেকে হোন্ডা, ইয়ামাহা বা সুজুকি বাইকগুলো আসতো। জাপানীদের উচ্চতা কম হবার কারনেই হোক বা যে কারনেই হোক সেসকল বাইকের সীটগুলো নীচু হতো। যে কোন ধরনের মানুষই খুব সহজে সীটে বসে পা মাটিতে রাখতে পারতো। বর্তমানে আমাদের উচ্চতার হারও বেড়েছে তেমনি অন্যান্য দেশ থেকে আনা বাইকগুলোতেও বিভিন্ন ধরনের সীটের উচ্চতা দেখা যায়। আবার সীটের উচ্চতার সাথে বাইকের ধরনও জড়িত। প্রথমেই জেনে নেই কোন ধরনের বাইকের কি ধরনের সীটের উচ্চতা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, সীটের উচ্চতা বলতে দুইচাকায় বাইক দাড় করিয়ে মাটি থেকে সীটের উপর পর্যন্ত উচ্চতাকেই বোঝায়। একে সাধারনতই মিলিমিটার এ পরিমাপ করা হয়।
স্পোর্টস বাইক
তরুনদের কাছে সবচেয়ে কাম্য বাইক। বাইকের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স একটু বেশি রাখার প্রয়োজন পড়ে বলে এই ধরনের বাইক গুলোর সীট হাইট একটু বেশিই হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এই ধরনের বাইকগুলোর সীট হাইট ৭৫০মিলিমিটার থেকে ৮০০মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ক্রুজার বাইক
সাধারনত ক্রুজার বাইকের সীট হাইট অন্য যে কোন বাইকের থেকে বেশ নীচু হয়। ক্রুজার বাইকগুলোতে ইনজিন সাইজ কিছুটা বড় হয়ে থাকে ফলে ইনজিনকে সামান্য সামনে রেখে সীট পেছনে নীচু করে করা হয়।বাইকে আরামের পরিমান বাড়ানোর জন্যও সীটকে নীচু করা হয়।
অফ রোড বাইক
অফরোড বাইকে সীট উচু করা হয় গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স বাড়ানোর জন্য। তাই এই ধরনের বাইকে তুলনামূলক কম উচ্চতার লোকের জন্য রাইড করা কিছুটা কষ্টকর বৈকি।
কমিউটার বাইক
এ ধরনের বাইক সাধারনত সকল লোকদের কথা বিবেচনা করেই বানানো হয়। বাংলাদেশে আমাদের গড় উচ্চতা ৫ফুট ৫ইঞ্চি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের বাইকগুলোর সীটহাইট সাধারনত ৭০০-৮০০মিলিমিটার হয়ে থাকে।
বাইকার এবং সীট হাইটের মধ্যে সম্পর্ক
বাইকারের উচ্চতা এবং বাইকের সীটের উচ্চতার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। লম্বা ব্যাক্তিদের নীচু সীটওয়ালা বাইক চালাতে কিছুটা কষ্ট হয়, হাটু বেশি পরিমানে বাকিয়ে রাখতে হয়, অনেক সময় পিঠ বাকা করে সামনে ঝুকে হাতল ধরতে হয়, সব মিলিয়ে রাইডিং আরাম দায়ক হয় না। আবার অল্প উচ্চতার চালকদের বেশি উচু সীট হলে বাইকে ব্যালেন্স পেতে সমস্যা হয়। সেকারনের যে বাইকই ব্যবহার করা হোক না কেনো, সীটে বসে আস্থার সাথে মাটিতে পা রাখতে পারলে তবেই কমফোর্ট এবং কন্ট্রোল বেশি পাওয়া যায়।
সীটের গঠন
সীটের গঠনও সীটের উচ্চতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। কিছু সীটের কুশন রয়েছে নরম, ফলে বাইকার সীটে বসার পরে সীটের গদি বা ফোম নীচের দিকে বসে সীট হাইট কমিয়ে ফেলে। আবার কিছু সীট রয়েছে পার্শ্বে চওড়া যার ফলে আপনার যে উচ্চতায় মাটিতে পা পাবার কথা, সীট চওড়া হবার কারনে সেটি সম্ভব হয় না। কাজেই বাইকের সীটের উচ্চতার পাশাপাশি সীটের গঠনও গুরুত্বপূর্ন।
কত উচ্চতার সীটযুক্ত বাইক কিনবেন?
বাইক স্ট্যান্ড থেকে নামিয়ে নিবেন। দুই চাকা সমান অবস্থায় মাটিতে থাকবে। আপনি বাইকে চেপে যদি দুই পায়ের পাতা মাটি বরাবর রাখতে পারেন তাহলে এই বাইকে আপনি চালিয়ে অনেক বেশি কনফিডেন্স পাবেন। সেই বিবেচনায় বাইকের স্টাইল বা মডেলের থেকে আপনি যদি আরাম এবং কন্ট্রোলের বিষয়টি বিবেচনা করেন তাহলে সীট হাইট নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে।
পরিশেষে
যে বাইক আপনি অল্প সময় চালাবেন যেমন স্পোর্টস বাইক বা অফরোড বাইক এই ধরনের বাইকে সীট হাইট নিয়ে খুব বেশি না ভাবলেও কমিউটার বা ক্রুজার বাইক গুলোতে সাধারনতই বেশি সময় বাইকের থাকার জন্যই নেয়া হয়। কিছু স্কুটার রয়েছে যেগুলোর সীট হাইক কম-বেশি করা যায়। যাইহোক বাইক কিনতে আপনি অবশ্যই সীট হাইট আপনার বডিহাইটের সাথে ম্যাচ করে নিবেন।