বাইকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেইন্টেনেন্স
একটি বাইক দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য মেইন্টেনেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, কারন বাইকের প্রয়োজনীয় যত্ন না নিলে বাইক থেকে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন না, এবং বাইকের প্রতিটি পার্টস এর নিয়মিত মেইন্টেনেন্স এবং Replacement প্রয়োজন, নির্দিষ্ট সময় পর পর তা পরিবর্তন করতে হয়, আপনার বাইক নিয়মিত মেইন্টেনেন্স করলে বাইক থেকে ভালো মাইলেজ এবং ভালো পারফর্মেন্স পাবেন, আজকে আপনাদের সাথে বেশ কিছু মেইন্টেনেন্স টিপস শেয়ার করবো।
ইঞ্জিন অয়েলঃ বাইকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মেইন্টেনেন্স এর মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল অন্যতম এবং বাইকের ভালো পারফর্মেন্স এবং ইঞ্জিন স্মুথনেস থেকে অন্যান্য বিষয়ের জন্য ইঞ্জিন অয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং ইঞ্জিন অয়েল ড্রেন এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম আছে, যেমনঃ নতুন বাইকে কেনার পরে শোরুম থেকে বলা হয়ে থাকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে তবে একটি বাইক দীর্ঘদিন এক জায়গায় পরে থাকলে এর ইঞ্জিন অয়েলে একপ্রকার লেয়ার বা গাদ পরে যায় তখন ইঞ্জিন অয়েলের কার্যক্ষমতা আগের তুলনায় কমে যায়।
এই জন্য আমরা পরামর্শ দিবো নতুন বাইকে ৩০০ কিলোমিটার পরেই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে ফেলুন, এর পরবর্তীতে প্রতিবার ৫০০ কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করবেন, এবং অবশই এই সময় ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড মেনে ভালো মানের/ ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন, এবং ব্রেক ইন পিরিয়ড এবং এর পরবর্তী সময়ে অবশ্যই মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করবেন।
আপনি চাইলে প্রথম ৫-৬ হাজার কিলোমিটার মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন, এরপরে ১০-১২ হাজার পর্যন্ত সেমি-সিন্থেটিক এবং তার পরে সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন, অথবা আপনি চাইলে সবসময় মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন অথবা আপনি চাইলে ব্রেক ইন পিরয়ড পরবর্তী সময়ে সেমি-সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
একটি মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল আপনি ৮০০-১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন, সেমি-সিন্থেটিক এর ক্ষেত্রে সেটি ১৫০০-১৮০০ কিলোমিটার, এবং সিন্থেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড ভেদে ২০০০-৩০০০+ কিলোমিটার ব্যবহার করতে পারবেন।
:টায়ারঃ বাইকে নিয়মিত রেকোমেন্ডেড টায়ার প্রেশার ব্যবহার করতে হবে, কারন প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের বাইকের জন্য বিভিন্ন গবেষণা করে নির্দিষ্ট একটি টায়ার প্রেশার নির্ধারণ করে থাকে, এই রেকোমেন্ডেড টায়ার প্রেশার ব্যবহার করে বাইক রাইড করলে আপনি বাইক থেকে ভালো গ্রিপ ও ব্রেকিং পাবেন, এছাড়া একটি টায়ারের নিদিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকে, এর বেশি ব্যবহার করলে সেই টায়ারের গ্রিপ কমে যাবে, তাই সময় অনুযায়ী বাইকের টায়ার পরিবর্তন করুন।
:চেইনঃ বাইকের চেইনের মাধ্যমে ইঞ্জিন হতে শক্তি চাকা পর্যন্ত পৌছায় তাই এর মেইন্টেনেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এর জন্য কিছু সময় পরপর বাইকের চেইনে লুব এবং গেয়ার অয়েল দিতে পারেন, এর ফলে বাইকের চেইন থেকে কোন অপ্রয়োজনীয় শব্দ হবে না, এছাড়া সময়মত চেইন লুজ হয়ে গেলে টাইট করে নেন, নির্দিষ্ট সময় পরে বাইকের চেইন থেকে সাউন্ড আসতে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে চেইন ফলস করে থাকে, এইজন্য সময়মত পরিবর্তন করুন সঠিক পারফর্মেন্স এর জন্য।
:বল রেসারঃ বাইকের হ্যান্ডেল এর মুভমেন্ট ঠিক রাখতে বল রেসার এর প্রয়োজন অপরিসীম, এটি সার্ভিসিং এর সময় এতে গ্রিজিং করে নিতে হয়, এর ফলে বাইকের হ্যান্ডেল স্মুথ থাকে এবং এর থেকে কোনোপ্রকার সাউন্ড আসে না, সাধারনত বাইক ভেদে ১০০০০-১৫০০০ কিলোমিটার পর পর এটি পরিবর্তন করতে হয়, ঠিক সময়ে পরিবর্তন না করা হলে হ্যান্ডেল এর মুভমেন্ট এ সমস্যার দেখা দেয়।
:এয়ার ফিল্টারঃ এয়ার ফিল্টার বাইকের ভিতরে থাকায় আমরা এটি দেখতে পাই না, এবং এর কারনেই অনেকের এর সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার এর মেইন্টেনেন্স সম্পর্কে জানে না, এর ফলে বাইকের এয়ার ফিল্টার ময়লা হয়ে এয়ার পাস ভালো মত হয়না, এবং বাইক থেকে সঠিক পারফর্মেন্স এবং মাইলেজ পাওয়া যায় না, বিভিন্ন বাইকের এয়ার ফিল্টারের ক্ষেত্রে মেইন্টেনেন্স আলাদা হয়ে থাকে, অনেক এয়ার ফিল্টার বাতাস দিয়ে পরিস্কার করা যায় না, সেটি সময় মত পরিবর্তন করতে হয়, এবং অনেক এয়ার ফিল্টার সার্ভিসিং এর সময়ে এয়ার প্রেশার দিয়ে ক্লিন করে দেয়া হয়, এতে করে ময়লা পরিস্কার হয়ে এর থেকে তুলনামূলক ভালো পারফর্মেন্স পাওয়া যায়, তবে অবশ্যই সময়মত পরিবর্তন করবেন।
:ব্রেকঃ সেইফটি এর ক্ষেত্রে ব্রেক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মেইন্টেনেন্স সঠিক ভাবে না করলে বাইক থেকে ভালো ব্রেকিং পাওয়া যাবে না, ব্রেক মেইন্টেনেন্স এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় আছে যেমনঃ ব্রেক অয়েল পরিবর্তন, ব্রেক প্যাড পরিবর্তন, ব্রেক বাকেট গ্রিজিং এবং ব্রেক ক্যালিপার এর মেইন্টেনেন্স, এই সবকিছু একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর করতে হয় এবং এর পাশাপাশি কিছু সময় পরে তা পরিবর্তন করতে হয়, তা নাহলে বাইক থেকে ভালো ব্রেকিং নাও পেতে পারেন।
:এছাড়া অন্যান্য পার্টসঃ বাইকের সকল নাট বোল্ট ঠিক মত টাইট আছে কি না তা নিয়মিত চেক করুন যেমনঃ ক্লাচ, পিক-আপ কেবল, এবং freeplay ঠিক রাখুন, অন্যান্য নাট যেমন, back chassis এবং চাকার নাট এসব কিছু সার্ভিসিং এর সময়ে চেক করে নিবেন এবং সময় মত নাট এবং বেয়ারিং পরিবর্তন করে নিবেন।
ক্লাচঃ বাইকের গিয়ার শিফটিং ও বাইক স্টার্ট করার জন্য ক্লাচ এর ব্যবহার করতে হয়, এছাড়া ও এর অন্যান্য কাজ আছে, এর মেইন্টেনেন্স হিসাবে এর freeplay ঠিক রাখা এবং ক্লাচ কেবল ওয়াশ এবং গ্রিজিং করা ইত্যাদি, এবং ক্লাচ প্লেট যদি নষ্ট হয় বা পুড়ে যায় সেই ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব তা পরিবর্তন করে নেয়া ভালো, কারন সঠিক সময়ে এটি পরিবর্তন না করা হলে বাইকের পারফর্মেন্স ভালো পাওয়া যাবে না, বাইক থেকে আশানুরূপ পারফর্মেন্স, মাইলেজ, স্পিড পাবেন না।
থ্রটাল বা পিক-আপঃ থ্রটাল বা পিক-আপ বা এক্সিলেরেটর ক্যাবল এর কাজ মূলত এক, কারন এর থেকে বাইকের এক্সিলেরাশন দেয়া হয় এবং স্পিড কম বেশি করা যায়, এর মেইন্টেনেন্স হিসাবে এর free play ঠিক রাখা এবং এক্সিলেরেটর ক্যাবল কেবল ওয়াশ এবং গ্রিজিং করা ইত্যাদি, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর এটি পরিবর্তন করা, না হলে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
বাইকের অভার অল লুক এবং ওয়াশঃ একটি বাইক যতই দামি বা কম দামি হক না কেনো, এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এর লুকস এবং এই লুকস দীর্ঘদিন ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন বাইক নিয়মিত ময়লা ও নোংরা হলে তা পরিস্কার করে নেয়া বা ওয়াশ করা এতে করে বাইকের লুকস ঠিক থাকে এবং বাইক দীর্ঘদিন ব্যবহারের উপযোগী থাকে, তবে এই সময় অতিরিক্ত প্রেশারে পানি দিবেন না এবং ওয়ারিং সাইডে বেশি পানি দিবেন না।
এই ছিলো বাইকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেইন্টেনেন্স টিপস, আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে, এধরণের আরও টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন, ধন্যবাদ।