হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালানোর গুরুত্বপূর্ন টিপস
অনেকেই অনেক বছর ধরে বাইক চালায়।আমার বাইকিং জীবন মাত্র ১ বছর ২ মাস। তাই বুঝতেই পারছেন আমি শিশু বাইকার যার জন্ম ১ বছর ২ মাস। এই এক বছরে আমার প্রিয় বাইকটি নিয়ে আমি ১০৭০০ কি.মি পাড়ি দিয়েছি। এর মধ্যে আমি ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, কুমিল্লা গিয়েছি। সামনে সাজেক, কক্সবাজার যাওয়ার ইচ্ছা। প্রথম প্রথম আমার কাছে হাইওয়ে ছিল ভয়াবহতার আরেক নাম। কিন্তু এই ভয়টা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি প্রথম ময়মনসিংহ ট্যুর দেওয়ার পর। যা ছিল এফসিবির প্রথম ভয়েজ টু ময়মনসিংহ ট্যুর। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া হাইওয়ের ভয়টা এখন আর নাই। হ্যা তবে ভয় হয় নিজেকে নিয়ে নয় পরিবারকে নিয়ে। হাইওয়েতে করা একটি ভুল হতে পারে শেষ ভুল। হাইওয়ের প্রচলিত ভুলগুলো আমার প্রিয় সবুজ ভাই আমাদের সামনে সহজভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যাতে সেগুলো আমরা না করি। কথাগুলো মেনে চললে হাইওয়ে সেফলি রাইড করে আল্লাহর রহমতে বাসায় সহি সুস্থভাবে ফিরে আসা সম্ভব।আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু তথ্য যা হয়ত অনেকের উপকারে আসতে পারে।
অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা-
১. মানুষিকভাবে প্রস্তুতি- হাইওয়েতে বাইক চালানোর জন্য মানুষিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। সিটিতে ও হাইওয়েতে বাইক চালানো দুইটা ভিন্ন জিনিস।
২. মনযোগী হওয়া- হাইওয়েতে বাইক চালানোর প্রধান শর্ত মনযোগী হওয়া। ভুলেও অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না।এজন্য দরকার পরিপূর্ণ ঘুম। ঘুম ভালো হলে ফ্রেশ মাইন্ডে বাইক চালানো যাবে একটানা অনেকক্ষণ।
৩. লক্ষ্য রাখা- হাইওয়েতে চালানোর সময় আশে পাশের যানবাহনের দিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। রাস্তার দুপাশে খেয়াল রাখা লাগবে।হাইওয়েতে থ্রি হুইলার,সিনএনজি,ব্যাটারি চালিত রিকশা থেকে সাবধান। এরা রাস্তার দুপাশ থেকে জায়গা থাকলেই হঠাৎ করে রাস্তায় উঠে পড়ে। এছাড়া পথচারী এইদিক সেইদিক না তাকিয়ে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হয়।এসব থেকে সাবধান থাকতে হবে।
৪. বাইক চেকআপ-একটি ওয়েল টিউন্ড বাইক নিয়ে হাইওয়েতে উঠা উচিৎ। সম্ভব হলে বাইকটি নিজে নিজে চেক করে নিন। না পারলে একবার মেকার দিয়ে চেক করিয়ে নিন।
৫. সেফটি গিয়ারস- ফুল সেফটি গিয়ার নিয়ে রাইড করা উচিৎ। একটি ভালো মানের হেলমেট,বডি আরমর অথবা রাইডিং জ্যাকেট,হাত পায়ের গার্ড, রাইডিং বুট অথবা ভালো মানের জুতা,হ্যান্ড গ্লাভস আপনার কনফিডেন্স লেভেলকে অন্য পর্যায় নিয়ে যাবে।কনফিডেন্টলি রাইড করা খুবই জরুরী। দুর্ঘটনার শিকার হলে সিরিয়াস ইঞ্জুরি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।তাই সেফটির সাথে আপোষ নাই।
৬. ভিসিবল রাখা-নিজেকে ভিসিবল রাখা খুবই জরুরী। রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট অথবা লাইট কালারের টিশার্ট ব্যবহার করুন। বাস,ট্রাকের মাঝখানে ঢুকবেন না।কখনো দুই যানবাহনের মাঝখানে থাকবেন না।ভিসিবল থাকলে পরীরা না তাকালেও অন্যান্য যানবাহনের ড্রাইভাররা ঠিকই দেখবে।
৭. লুকিং গ্লাস- সর্বদা লুকিং গ্লাস ব্যবহার করুন।অনেকেই লুকিং গ্লাস ছাড়া বাইক চালান।যা কাম্য নয়।একজন সচেতন বাইকার হিসেবে লুকিং গ্লাস ব্যবহার করুন। এটিও ট্রাফিক আইনের আওতায় পড়ে।লুকিং গ্লাস ছাড়া বাইক চালানোর মাধ্যমে স্টাইলের কিছুই নাই।লুকিং গ্লাস দিয়ে পরী দেখায় ব্যস্ত থাইকেন না তাহলে আবার নিজেকে আবিষ্কার করবেন গাড়ী,বাস,ট্রাক নিচে।
৮. ইন্ডিকেটর- ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন। লেন পরিবর্তন করার সময় ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন।মোড় নেওয়ার সময় ইন্ডিকেটর দিয়ে মোড় নিন। এতে করে পিছনের যানবাহন আপনার গতিবিধি সম্পর্কে অবগত হবে।ইন্ডিকেটর না ব্যবহার করলে পিছনের যানবাহন আপনাকে আদর করে টোকা মেরে দিয়ে চলে যাবে।
৯. স্পিড আপ- হাইওয়ে স্পিডিং করার জায়গা নয়। রেসিং ট্র্যাকে স্পিড টেস্ট করুন।রেস করুন। হাইওয়ে রেস করা যাবে না। রাস্তার কন্ডিশন ও ডিমান্ড অনুযায়ী স্পিড আপ করতে হবে। এটি পারফেক্ট বাইকারের বৈশিষ্ট্য।হাইওয়েতে স্পিডে থাকলে টানেল ভিশন হয় যার ফলে ঝোপ থেকে নসিমন কিংবা করিমন বা মারসিডিজ এসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সোজা শর্টকাটে পরীদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারে।তাই স্পিডিং করলে অনেক কেয়ারফুলি স্পিড আপ করতে হবে।পরী দেখে কখনই স্পিডিং করা যাবে না।
১০. ব্রেক- স্পিড অনুযায়ী ব্রেক করুন। হুট করে ব্রেক করলে এক্সিডেন্ট হবে। সামনের ও পিছনের ব্রেক একসাথে সঠিক কম্বিনেশনে ধরুন। ইঞ্জিন ব্রেক ইউজ করে ব্রেক করাটা অনেক সেফ ক্লাচ ধরে ব্রেক করার থেকে। ইঞ্জিন ব্রেকে বাইক জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়।সুন্দরী দেখে যদি ডাইরেক্ট ব্রেক করেন তো আপনি ডারেক্ট ঝোপে গিয়ে নাহলে পুকুরে গিয়ে পড়বেন। ???? ???? ???? তাই সাবধানে স্পিড আপ করার সাথে সাথে সাবধানে ব্রেক করাও জানতে হবে।নাইলে ডাইরেক্ট উপরে।
১১. ওভারটেকিং-ওভারটেকিং এর সময় হর্ন ,পাস লাইট,ইন্ডিকেটর ব্যবহার করুন।যানবাহনের বাম সাইড দিয়ে,মাঝখান দিয়ে ওভারটেক করা যাবে না।তবে যারা হাইওয়েতে মটো জিপি রেসার তারা মাঝে মাঝে বাস,ট্রাকের নিচ দিয়ে ওভারটেক করে দ্রুত যাওয়ার জন্য।পরিণাম জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। ????
১২. টেইল ফলো- কোনো যানবাহনের পিছে পিছে বাইক চালানো যাবে না। যেকোনো এক সাইডে থেকে বাইক চালাবেন।গাড়ী,বাস,ট্রাকের মাঝখানে থেকে বাইক চালাবেন না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাইক চালান।
১৩. বাঁক নেওয়া- বাঁক নেওয়ার সময় স্পিড কমিয়ে ফেলুন। ব্লাইন্ড টারনিং এর সময় হর্ন,ইন্ডিকেটর,পাস লাইট ব্যবহার করুন।
১৪. হর্ন- লাউড ভালো ডেসিবলের হর্ন ব্যবহার করুন।যেমন-পি-৭০,ফেজারের ডাবল হর্ন, সকার,পপ পপ হর্ন ইত্যাদি।
১৫. হেডলাইট- একটি ভালো মানের হেডলাইট ব্যবহার করুন।যেমন-মটোলেড,সিওয়াইটি।হেডলাইট অন করে বাইক চালান। এতে করে সামনের বাইক আপনাকে ইজিলি ডিটেক্ট করতে পারবে। আবার ব্রেক করলে পিছের গাড়ী তা বুঝতে পারবে।এজন্যই অটো হেডলাইট অন সিস্টেমটি আনা হয়েছে।এটা সেফটি ইস্যু।
১৬.ব্যাক লাইট- ব্রেক করলে আপনার ব্যাক লাইট জ্বলে কি না তা দেখে নিন। অনেক সময় দেখা যায় অনেক বাইকের ব্রেক করলে লাইট জ্বলে না এবং সেদিকে বাইকারের খেয়ালও নাই।তাই এ বেপারে খেয়াল রাখতে হবে।ব্যাকলাইট না জ্বললে পিছের গাড়ী ছুয়ে দিবে আর আপনি আকাশে উড়বেন পাখিদের সাথে।
১৭. রিফ্রেশ হওয়া- একটানা না চালিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ব্রেক নেয়া উচিত।এতে মনযোগ বাড়ে।ক্লান্তি দূর হয়।আর পানি বেশি পান করলে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচবেন।বেচারা বাইকটাও একটু রেস্ট পাবে।কত অত্যাচারই না করি আমরা বাইকের উপরে।বেচারা কিছু বলতে পারে না। ????
সেফটির সাথে নো কম্প্রমাইজ তা আমি প্রিয় সবুজ ভাই,সাইফ ভাই,শাওন ভাইয়ের থেকে জানতে পারি।আসলে সেফটি নিয়ে আমাদের সবার গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমরা হাইওয়েতে যতগুলো এক্সিডেন্ট দেখি তার অধিকাংশই বাইকারের অদূরদর্শিতার অভাবে হয়ে থাকে। তাদের সেফটি গিয়ার দেখাই যায় না। সেফটি নিয়ে সচেতন না থাকার কারণেই।আমি কখনো শুনি নাই একজনও রিয়েল মটো ট্রাভেলার এক্সিডেন্ট করেছেন। কারণ তারা রিয়েল বাইকার।তারা আসলেই সচেতন সেফটি নিয়ে। শুনাও যাতে না লাগে। আল্লাহ তাদের হেফাজত করুক।সেফটি নিয়ে এফসিবির সংগ্রাম আমার ভালোই লাগে। তারা সেফটি ছাড়া ট্যুরে এলাউ করে না। ইটস রিয়েলি এপ্রিশিয়েটিভ।আমার মত যারা নিউ বাইকার ভাই আছেন তারা যদি সকলে বিষয়গুলো মেনে চলে হাইওয়েতে রাইড করি তাহলে অনেক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেতে পারি।
-অতিরিক্ত গতিতে বাইক রাইড করবেন না।
-ফুটপাত দিয়ে বাইক চালাবেন না।
-জেব্রা ক্রসিং এর উপর বাইক নিয়ে দাঁড়াবো না।
-ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।
কাজী সাহেদ আহমেদ।
ফুয়েল ইঞ্জেকশন ক্লাব বিডি - এফসিবি।
বাইকারস আর ব্রাদারস।