কিওয়ে আরকেএস ১০০ ভি৩ নাকি আরকেএস ১২৫, কোনটা কিনবেন?
ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে মোটরবাইক ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সময়ের সাথে সাথে। আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হতে পারে বাইক শুধুমাত্র যুবক শ্রেনীর বাহন কিন্তু প্রকৃত সত্য হল এটি যেকোন বয়সের ব্যক্তির সাথে সমানভাবে মানানসই এবং বাস্তবতাও ঠিক তাই ই বলে। বর্তমান আধুনিক বাজারজাত করনের সময়ে কোম্পানি গুলো সদা সর্বদাই নিত্য নতুন বাইক বাআজারে নিয়ে আসছে গ্রাহকদের রুচি, ইচ্ছা ও পছন্দের পার্থক্যের কথা মাথায় রেখে। যদি আমরা পছিন্দের কথা বলি তবে দেশীয় এবং অন্যান্য ব্র্যান্ড গুলা বেশ ভাল সুনাম কুড়িয়েছে তাদের অত্যাধুনিক ফিচার এবং ব্যবহারকারীর সুবিধা অনুযায়ী দরে বাজারে বাইক নিয়ে আসার জন্যে। যেখানে বিশ্ববিখ্যাত ব্রান্ডগুলা অনেকাংশে তৃনমুল পর্যায়ে অপরিচিত কারণ উচ্চ ব্র্যান্ড ভ্যালু। সে সব জনপ্রিয় বাইকের তালিকায় কিওয়ে খুব দ্রুত স্থান করে নিয়েছে তাদের মান সম্পন্ন বাইক বাইকার কাছে অতি সুলভ মুল্যে তুলে দেওয়ার কারণে। বর্তমানে তাদের দুইটা বাইক বেশ জনপ্রিয় এবং অনেক সময় দেখা যায় বাইক ক্রেতা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন কোনটা তার জন্যে ভাল হবে। এর কারণ হল এই দুটি বাইকের লুক, ফিচার এবং পারফরমান্স। যদিও দুটি বাইক দেখতে প্রায় একই রকম কিন্তু তাদের ফিচার এবং পারফরমান্সে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আর এই কারণেই আমরা আজকে আপনাদের সামনে দুটি বাইকের তুলনামুলক একটা আলোচনা করতে যাচ্ছি যার দ্বারা আপনাদের সিদ্ধান্ত গ্রহন সহজ হবে বলে আমরা মনে করি। একই সাথে দুটি বাইকের মধ্যে পার্থক্যের ব্যাপারটাও আপনাদের সকলের কাছে অনেকাংশে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করি।
ডিজাইন
ডিজাইন নিয়ে কথা বলয়ে গেলে দুটি বাইক আমরা প্রায় একই রকম দেখতে পাবো কিন্তু সামান্য কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় এদের চেসিসের দিকে তাকালে। সিটিং পজিশন একই রকমের, একই ইঞ্জিন ট্যাংকার, হেডল্যাম্প প্রটেকটর, মিটার প্যানেল, পেছনের লাইট সবকিছু একে অন্যের কপি। একটা ছোট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় দুটা বাইকের ইঞ্জিনে, কিওয়ে আরকেএস ১০০ ভি৩ এর ইঞ্জিনে কোন ইঞ্জিন কিট নাই কিন্তু আরকেএস ১২৫ এর আছে। সবচেয়ে বড় পার্থক্য হল এদের চেসিসে যা একটা আরেকটার থেকে পুরোপুরি আলাদা।
বডি ডাইমেনশন
সামান্য কিছু পার্থক্য ছাড়া এই দুটা বাইকের বডি ডাইমেনশন প্রায় একই রকম। আরকেএস ১০০ ভি৩ এর বডির সাইজ হল ২০৪০এমএম আবার এই একই মাপ অন্যটারও। কিন্তু চওড়া এবং উচ্চতায় দুটার মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আরকে এস ভি৩ ৭৬০ এমএম চওড়া এবং ১০৫০ এমএম এর উচ্চতা অন্যদিকে আরকে এস ১২৫ দুই দিক দিয়েই পুর্বেরটা থেকে এগিয়ে। এটি ৭৮০ এমএম চওড়া এবং এর উচ্চতা হল ১০৭০ এমএম। এই বিষয়গুলাকে বাদ দিয়ে এই দুটা বাইকের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স, সীটের উচ্চতা, হুইলবেজ দুটা বাইকের একই রকম। যেহেতু চেসিসের সাইজে পার্থক্য রয়েছে তাই এদের ওজনেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় কিওয়ে আরকেএস ভি৩ এর ওজন হল ১২১ কেজি অন্যদিকে আরকেএস ১২৫ এর ওজন হল ১২৪ কেজি।
ইঞ্জিন
একটি বাইকের মূল পারফরমান্স লক্ষ্য করা হয় ইঞ্জিনের দ্বারা। যেহেতু এই দুটি বাইক দুটি ভিন্ন সেগমেন্টের তাই এদের ইঞ্জিনেও পার্থক্য স্পস্ট দেখা যায় আবার পারফরমেন্সেও ভিন্নতা লক্ষনীয়। কিওয়ে আরকেএস ১০০ ভি৩ তে আছে ৯৯.৭সিসি ইঞ্জিন যা ৭.৫ হর্সপাওয়ার সর্বোচ্চ শক্তি এবং ৭.৬ এনএম টর্ক। এই মাপের শক্তি এবং টর্ক নিয়ে এই ইঞ্জিন সর্বোচ্চ গতি দিতে পারে ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার। অন্যদিকে সম্ভাব্য মাইলেজ ৬৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার। অন্যদিকে কিওয়ে আরকেএস ১২৫ এ আছে ১২৪.৫সিসির ইঞ্জিন যার সর্বোচ্চ শক্তি ১১.২ kw এবং সর্বোচ্চ টর্ক ৯.২ এনএম। এই ধরনের ইঞ্জিন সাধারনত সর্বোচ গতি তুলতে পারে ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং সম্ভাব্য মাইলেজ ৫৫ কিলোমিটার প্রতি লিটার যা সিসি পার্থক্যের কারণে স্বাভাবিক। এখন এই পার্থক্যের ব্যাপারে জ্ঞাত হওয়ার পরে বলা যায় যে আপনি যদি ভাল মাইলেজ এবং ভাল লুকের গাড়ি পছন্দ করেন তবে আপনার উচিত হবে ভি৩ দিকে যাওয়া আবার যদি ভাল গতি এবং টেকসই গাড়ি খুজেন তবে আরকেএস ১২৫ আপনার জন্যে ভাল হবে।
টায়ার এবং ব্রেক
দুটা বাইকের টায়ারে কোন পার্থক্য নাই এমনকি সাইজ এবং পারফরমেন্সও প্রায় একই রকম আবার চাকার ডিজাইনও একই। অন্যদিকে ব্রেকিং সিস্টেমে সামান্য কিছু দৃষ্টিগত পার্থক্য ছাড়া পুরা সিস্টেমটা একই।
সাসপেনশন
এখানে ভি৩ আরকে এস ১২৫ এর থেকে কিছুটা এগিয়ে যদিও সামনে চাকার সাসপেনশন দুটারই একই কিন্তু পেছনে ভি৩ এর রয়েছে কয়েল স্প্রিং অয়েল ডাম্প সাসপেনশন অন্যদিকে আরকে এস ১২৫ এর রয়েছে টুইন শক গ্যাস ফিলড সাসপেনশন। সে ক্ষেত্রে আরামের দিক দিয়ে ভি৩ থেকে আরকেএস ১২৫ অবশ্যই এগিয়ে।
আমাদের মত
এই দুটা বাইকের মিটার প্যানেল, ইলেক্ট্রিকাল ফিচার এবং সমজাতীয় বিষয় গুলা প্রায় একই রকম আবার দুটোর ওভার অল গেট আপেও মিল আছে কিন্তু দুটার পারফরমান্সে বিস্তর একটা পার্থক্য আছে কারণ একটা বাইক হল ১০০সিসি সেগমেন্টে আর অন্যটি ১২৫ সিসির সেগমেন্টের কাজেই তাদের পারফরমান্সেও পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পার্থক্য থাকবে তাদের স্পীডে, মাইলেজে, আরামে ও অন্যান্য কিছু বিষয় যেমন কন্ট্রোল নিয়েও। একজন ক্রেতা হিসেবে আপনি শোরুমে গেলেই দেখতে পাবেন দুটার মধ্যে দামের পার্থক্যও রয়েছে যা চোখে পড়ার মত।
বলা বাহুল্য যে সব শেষে বাইক পছন্দ করে কেনা নির্ভর করে আপনার রুচি, প্রয়োজন এবং সক্ষমতার উপর আর সে ক্ষেত্রে এই তুলনামুলক রিভিউটা আপনাদের সকলের জন্যে যথেস্ট সহায়ক হবে বলে আমরা মনে করি। মূলত এখানে দুটা বাইকের সকল দিক বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে পাঠকদের পুর্ন তথ্য দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহনের সুবিধার জন্যে।