সহযাত্রী সহ বাইক রাইড
মোটরসাইকেলের মতো আনন্দদায়ক বাহন আর হতেই পারে না বিশেষকরে যারা গতি আর স্বাধিনতার কম্বিনেশন চান। একসময় দেশে বাইকের ব্যবহার ততো না থাকলে সময়ের প্রেক্ষিতে অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। স্বচ্ছল প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বলতে গেলে বাইক আছে। আর তরুনদের মধ্যে বাইকের জনপ্রিয়তা নতুন করে বলার কিছু নাই।
বাইকে করে যেমন একা ঘোরা হয় তেমনি শখে বা প্রয়োজনে সহযাত্রীও থাকে। কমিউটার বাইক অথবা ক্রুজার বাইকে সহযাত্রী আরামদায়কভাবেই বহন করা যায়। একা বাইক চালানো আর সহযাত্রী সহ বাইক চালানোর মধ্যে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছেই, আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে সহযাত্রীর ধরনও কয়েক প্রকার হযে থাকে বিধায় সেগুলোও বাইক চালানোর সময় খেয়াল রাখতে হয়। আসুন জেনে নেই সহযাত্রী সহ বাইক চালানোর কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়।
হেলমেটে ঠুকাঠুকি
রাইডার এবং সহযাত্রী উভয়েই হেলমেট পরবেন এটি নিয়ে নতুন কিছু বলার নাই। সমস্যা হলো দুজনে হেলমেট পরে বসলে প্রায়ই হেলমেটে ঠুকাঠুকি লেগে যায়। ঘটনাটি ঘটে গিয়ার পরিবর্তন অথবা ব্রেকিং এর সময়। সমস্যাটি বড় না হলেও বিরক্তিকর বটেই। গিয়ার শিফটিং এ স্মুথনেস এনে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ব্রেকিং
একা ব্রেক করা আর পিলিয়ন বা সহযাত্রী সহ ব্রেক করার মধ্যে একটু পার্থখ্য থাকেই। প্রথমতই সহযাত্রী সহ ব্রেক করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করতে হয় আবার জোরে ব্রেকিং এ সহযাত্রী এসে পিঠের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পারে। এতে ব্যালেন্স হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকে। সহযাত্রীরও উচিত বাইকের কোনকিছু শক্তভাবে আকড়ে ধরে থাকা।
একসংগে থাকুন
পেছনের সহযাত্রী যতটা সম্ভব রাইডারের কাছে থাকবেন একই সংগে বাইকের সংগেও লেগে থাকবেন এবং সর্বদা একদিকে হেলে না থাকে মাঝবরাবর থাকবেন এতে রাইডারের বাইকের উপরে নিয়ন্ত্রন থাকবে বেশি। বিশেষ করে কর্নারিং এর সময়ে সহযাত্রীকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে, কখনই রাইডারের বিপরিতে হেলে থাকা যাবে না। এতে দুর্ঘটনার সম্ভবনা বাড়বে।
দৃশ্যমান থাকুন
বাইক রাইডের সময় এমন পোশাক পরা উচিত যেনো অন্য চালকের চোখে সহজেই দেখা যায়। বিশেষকরে উজ্বল রং এর পোশাক। রাতের রাইডে কখনই কালো পোশাক পরা উচিত নয়, বরং যদি সম্ভব হয় রিফ্লেক্টরসহ ভেস্ট পরা উচিত।
উপরের বিষয়গুলো একেবারেই অপরিহার্য্য কিছু নিয়ম যেগুলো রাইডার এবং সহযাত্রীকে মেনে চলা উচিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সহযাত্রীর ধরনও কিছুটা বৈচিত্র আছে। আর তাই সহযাত্রী ধরনের সাথে কিছু সতর্কতাও ভিন্ন হতে পারে।
মহিলা সহযাত্রী
বাংলাদেশে মহিলা সহযাত্রীর প্রথম ভিন্নতা হলো একদিকে বসা। যা বাইকারের ব্যালেন্স সমস্যা তৈরী করে। শাড়ী/ওড়না পেচিয়ে এক্সিডেন্টের ঘটনা অহরহই শোনা যায়। দেশে মহিলা সহযাত্রীর আরো সমস্যা হলো হেলমেট ব্যবহারে অভ্যস্ত না হওয়া। মহিলা সহযাত্রী অবশ্যই তার শাড়ী/ওড়না গুছিয়ে বসবেন, হেলমেট পরবেন এবং যতটাসম্ভব নড়াচড়া কম করবেন। রাইডারেরও উচিত হবে তুলনামূলক ধীর গতিতে বাইক চালানো এবং ব্যালেন্স ঠিক রাখার ব্যপারে মনযোগ রাখা।
শিশু সহযাত্রী
শিশুকে তেলের ট্যাংকের উপরে বসিয়ে বাইক চালাচ্ছেন, শিশুর মাথায় হেলমেট দুরের কথা একটি চশমাও পরানো নেই যা তার চোখকে ধুলোবালি বা রাস্তার গুড়োপাথর থেকে রক্ষা করবে। সামনে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে এই অবস্থাতেও রাইডার বাইক চালাচ্ছেন এমন দৃশ্য দেখার দুভাগ্যও আমাদের হয়। শিশুকে হেলমেট পরাতে হবে, নিদেনপক্ষে সানগ্লাস। পেছনে কেউ থাকলে তাহলে দুজনের মাঝে শিশুকে বসাতে হবে।
বৃদ্ধ সহযাত্রী
পেছনে সহযাত্রী হিসেবে বয়স্ক কেউ থাকলে গতি, কর্নারিং এবং ব্রেকিঙ এর ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সহযাত্রী হিসেবে যে সতর্ক ভুমিকা থাকা দরকার একজন বয়স্ক ব্যাক্তির হয়তো তা সম্ভব হবে না, তাই বাইকারকেই এই ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
বন্ধু সহযাত্রী
সবেচেয়ে কাম্য এবং একই সংগে সবেচেয়ে বিপদজনক সহযাত্রী। পেছনে সহযাত্রী হিসেবে বন্ধু থাকলে গল্পে মেতে ওঠা, রাস্তায় মনযোগ হারানো, বেশি গতিতে বাইক চালানো হয়ে যায়। একাধিক বন্ধু পিছনে নিয়ে বাইক চালানো যেমন বেআইনি তেমনি আরো বেশি ঝুকিপূর্ন। বন্ধুর জায়গায় সে যদি বান্ধবী হয তাহলে বিষয়টি আরো ঝুকিপূর্ন তাই সে বিষয়ে না গিয়ে শুধু একটি কথাই বলা যেতে পারে যে অতি আনন্দে যেন বেশি অসতর্ক না হই। নাহলে ক্ষনিকের আনন্দ স্থায়ী দু:খের কারন হতে পারে।
বাইক রাইডিং এ রাইডার এবং পিলিয়ন বা সহযাত্রীর উপরের বিষয়গুলোতে সজাগ থাকলে রাইডারের জন্য যেমন বাইক চালানো সহজ হয়, তেমনি দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।