বাইক নিয়ে ঘুরে আসুন মিনি কক্সবাজার খ্যাত পাটুল, নাটোর
মনটাকে বড় করতে হলে প্রকৃতির কাছে যেতে হয়। মানুষ বিশালতা শিখে আকাশ আর সমুদ্রের কাছে থেকে। অসীম আকাশ আর বিশাল সমুদ্র মানুষকে বড় হতে শেখায়। আর তাই প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে সমুদ্র সব সময়েই পছন্দের একটি জায়গা। ঢেউ খেলানো সমুদ্রের জলরাশি কে না ভালোবাসে? নাটোর। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত জীবনান্দদাসের বনলতা সেন খ্যাত এক ঐতিহাসিক স্থান। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় বহুদূরে অবস্থিত। সাগর দেখতে হলে এ অঞ্চলের মানুষকে পাড়ি দিতে হয় বহুদূর পথ। কিন্তু প্রকৃতি বোধহয় এ এলাকার মানুষকে মনে হয় সমুদ্রের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে চায় নাই। আর তাই পুরো নাটোর জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের বড় বিল ঐতিহাসিক চলনবিল। নাটোর শহর থেকে মাত্র ১০কিমি উত্তরে রয়েছে হালতির বিল যা বর্ষাকালে পানিতে থৈথৈ করে। দুচোখ যতদূর যায় শুধু পানি আর পানি। উপরে নীল আকাশ আর নীচের ঢেউ খেলানো পানি এ এলাকার মানুষকে সমুদ্রের অভাব পূরন করে দিয়েছে। আর তাই অনেকেই আদর করে এ বিলকে বর্ষাকালে মিনি কক্সবাজার নামেই ডাকে।
পাটুল
নাটোর শহর থেকে মাত্র ১০কিমি উত্তরে অবস্থিত। পাটুল থেকে শুরু হয়েছে হালতি বিলের এক প্রান্ত। বিলের মধ্যে রয়েছে একাধিক গ্রাম। পাটুল থেকে একটি পাকা সড়ক বিলের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়ে অন্য গ্রামের সাথে যুক্ত হয়েছে। ৭কিমি লম্বা এই সড়কটি ২০০৪ সালে নির্মান করা হয়। সড়কটির বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষাকালে ডুবে যায়, চারিদিকে অথৈ পানিতে টলমল করে। সমুদ্রের মতো বিশাল জলরাশি দেখতে দুরদূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন। আশে পাশের জেলা রাজশাহী, নওগা, পাবনা, সিরাজন্জ থেকে অনেক বাইকার একা বা দলবেধে চলে আসেন বেড়াতে। নৌকায় করে বেড়ানোর মজা অন্য রকম। বর্ষাকাল থেকে শুরু করে শীতের শুরু পর্যন্ত রাস্তাটি পানির নীচে তলিয়ে থাকে।
শীতের শুরুতে পানি কমতে থাকে, ধীরে ধীরে ভেসে উঠতে থাকে ডুবো রাস্তাটি। যখন রাস্তার ২-৫ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত পানি থেকে তখন রাস্তার উপর দিয়ে হেটে বেড়ানো বা বাইক নিয়ে বেড়ানোর মজা অন্য রকম। দুর থেকে মনে হবে আপনি পানির উপর দিয়ে বাইক চালাচ্ছেন।
শীতের শেষ থেকে গরম পর্যন্ত চারিদিকে সবুজ ফসলের সমারোহ দেখে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় বিলের মাঝে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পাবেন স্বর্গীয় অনুভূতি।
যেভাবে যাবেন
নাটোর শহরের প্রান কেন্দ্র নীচাবাজার হয়ে উত্তর দিকে বাইক চালিয়ে গেলে ১৫-২০মিনিটের পথ। পুরোটাই পাকা রাস্তা। এছাড়াও নাটোর দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী(উত্তরা গনবভবন) পাশ দিয়েও একটি রাস্তা চলে গেছে যেটি দিয়ে পাটুলে পৌছা যায়। বাইক ছাড়াও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা এবং বিভিন্ন থ্রি হুইলার ভাড়া করে যেতে পারেন।
পাটুল বাজারটিতে প্রায় সব ধরনের সুবিধাই রয়েছে। খাবার, ঔষধ এবং বাইকের ছোট খাটো সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা আছে। থাকতে চাইলে নাটোর শহরে অবস্থিত আবাসিক হোটেলে থাকাই বেশি সুবিধাজনক। কম খরচে থাকা এবং খাওয়ার সুবিধা রয়েছে। নাটোর শহরে রয়েছে পৃথিবী খ্যাত নাটোরের কাচাগোল্লা।
সতর্কতা
সাতার জানা না থাকলে নৌকায় চড়া থেকে বিরত থাকুন। শীতের শুরুতে যখন ডুবো রাস্তাটি আস্তে আস্তে ভেসে উঠে তখন রাস্তার উপরে শেওলার স্তর জমে পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এইসময় এই রাস্তায় হাটা বা বাইক চালানো বিপদজনক।
পরিশেষে
বাইকে ভ্রমন নি:সন্দেহে আনন্দের। তবে সেটি হতে হবে নিরাপদ। নাটোরের পাটুল বা মিনি কক্সবাজারে আপনি নিরাপদে পাবেন নির্মল বিনোদন। বাইক নিয়ে একা কিংবা দলবেধে ভ্রমন করতে পারেন। বিশেষ করে নাটোরের পার্শ্ববর্তী জেলার বাইকারগন বাইক টুর দিতে পারেন, সকালে এসে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে যেতে পারেন।