Yamaha Banner
Search

মোটরসাইকেল ব্রেকিং টিপস

2016-10-16

মোটরসাইকেল ব্রেকিং টিপস


Motorcycle Braking Tipsদুই চাকার একটি বাহন মোটরসাইকেল। যারা চালাতে জানেন তাদের কাছে কতোই না সহজ চালানো। আসলে যান্ত্রিক যেকোনো বাহনের তুলনায় বাইক চালানো সবচেয়ে কঠিন। আপনি এই বাহনটিকে কোন মতেই কোন সাপোর্ট ছাড়া সোজা রাখতে পারবেন না। বাইক চালানো অবস্থায় যখন সোজা থাকে মূলত এর গতি, ব্রেকিং সিস্টেম, সাস্পেন্সান ইত্যাদি বিষয়গুলির উপরে। গানিতিক ভাবে বাইক যখন চলতে থাকে তখন এর সেন্টার অফ মাস (Center of mass ) এর দুই চাকার উপরে বণ্টনের মাধ্যেমেই সোজা থাকে। আর এই চাকার গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্রেকিং সিস্টেম এবং এর সঠিক ব্যবহার জানা ভীষন জরুরী। পৃথিবীর অনেক দেশেই মোটরসাইকেল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে ব্রেকিং নিয়ে আলাদা পরীক্ষা দিতে হয়। অথচ বাইকের এই গুরুত্ত্বপুর্ণ বিষয়ে আমরা আলাদা করে তেমন কোন গুরুত্ত্বই দেই না। আগেই বলেছিলাম যতগুলি যান্ত্রিক বাহন আছে তার মধ্যে বাইক চালানো সবচেয়ে কঠিন, এর একটি অন্যতম কারণ হলো এর সামনে আর পেছনের চাকার ব্রেকিং এর জন্য আলাদা ব্রেকিং ডিভাইস আছে। আর এই দুই সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় না হলে অনেক সময়ই বিপদে পড়তে হয়। এমনকি আপনি যদি বাইক চেঞ্জ করেন আর তার ব্রেকিং সিস্টেম যদি আলাদা হয় তবে উচিৎ হবে তা ভালোভাবে প্র্যাকটিস করে নেয়া।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি এবং ভিন্ন ভিন্ন মোটরসাইকেলের ব্রেকিং এর সঠিক ব্যবহার।

ব্রেকিং এবং গ্রিপ
আমি আগেই বলেছি ব্রেকিং সিস্টেম। এই সিস্টেমে অনেকগুলি বিষয় জড়িত। এর মধ্যে একটি হলো গ্রিপ। ব্রেক করার জন্য গ্রিপ অপরিহার্য। আপনার ব্রেকিং যতই ভালো হোক গ্রিপ ভালো না হলে তা কোন কাজেই আসবে না। যেমন পিচ্ছিল রাস্তায় পৃথিবীর সর্বাধুনিক ব্রেকিং সিস্টেম নিয়েও আপনাকে অতি সাবধানে ব্রেক করতে হবে এই গ্রিপের কারণেই।

আসলে গ্রিপ হলো ফ্রিকশান। চাকা আর রাস্তার মধ্যে রেসিস্টেন্স বা বাধা। যদি রাস্তা আর বাতাসের বাধা না থাকতো তবে নিউটনের প্রথম সুত্র মতে বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে সরল পথে চলতে থাকে । অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট গতি তুলে নেবার পরে বাইকের আর জ্বালানীর প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য বাধায় ভরা জগতে বাস করি। আমাদের জ্বালানীর প্রয়োজন হয়। যাই হোক ব্রেকের মাধ্যমে চাকা রাস্তার বিপরিতে বল প্রয়োগ করে এবং বাইক একসময় থেমে যায়।

গ্রিপ এবং ওজন
টায়ারের গ্রিপের সাথে কিন্তু ওজনের একটা গভীর সম্পর্ক আছে। টায়ারে উপরে ওজন যত বেশী থাকবে গ্রিপ তত ভালো হবে। কারণ খুবই সহজ এর ফলে চাকা রাস্তার বিপরিতে অধিক বল প্রয়োগ করতে পারবে। উদাহরণ দেই আপনি একই সমান তুলার বস্তা যত সহজে সামনে ঠেলে নিয়ে যাতে পারবেন তত সহজে সম সাইজের লোহা পারবেন না। ফ্রিকশান বেশী অনুভুত হবে।


কাজেই বেশি ওজন মানেই বেশি ব্রেকিং?
সুতরাং অতি সহজেই আমরা ধারণা করতে পারি, বাইক যত ভারি হবে এর ব্রেকিং ডিস্টেন্স তত কম হবে। বা মনে হতে পারে মাল বোঝাই ট্রাকের ব্রেকিং ডিস্টেন্স খালি ট্রাকের থেকে কম হবে। কিন্তু বিষয়টি এমন না। একটু ব্যাখ্যা করি । আপনি যখন ব্রেক করবেন আপনার বাইকের ওজন ব্রেকিং সিস্টেমের উপরে দুইভাবে কাজ করে। একটি পক্ষে, অন্যটি বিপক্ষে। যেহেতু গতিশিল বস্তুর প্রবনতা থাকে চলতেই থাকা তাই আপনার বাইকের ওজন যত বেশী হবে এটি থামতে ততই আপত্তি জানাবে অন্যদিকে ওজন বেশী হবার কারণে রাস্তায় ফ্রিকশান পেতে আপনার সুবিধা হবে। তাই আপনার বাইকের ওজন যত বেশী হবে আপনার ব্রেকিং পাওয়ার তত বেশী লাগবে নিরাপদ ব্রেকিং এর জন্য।

ওজন এবং ব্রেকিং
আপনার বাইকের ওজন বেশী শুধু এই কারণে যদি মনে মনে খুশি হন যে ব্রেকিং এ বাড়তি সুবিধা পাবেন তবে আপনাকে নিরাশ করেই বলতে হচ্ছে সমপরিমাণ ভারি গতিশীল বস্তুকেও আপনাকে থামাতে হবে। তবে একবারে হতাশও হবেন না , কারণ আপনার বাইকের ওজন আপনি সহ ভাগ হয়ে যায় সামনে ও পেছনের চাকায়। কখনো সামনের চাকায় ওজন বেশী যায় আবার কখনো পেছনের চাকায়। এই কারণেই উভয় ব্রেক ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে যা আমরা আলোচনায় নিয়ে আসবো।

ওজন নেই তো গ্রিপ নেই
আচ্ছা দুই চাকার মধ্যে যদি কোন এক চাকায় কোন ওজনই যদি না চাপানো থাকে তবে কি ব্রকিং কাজ করবে ? উত্তর হবে না। তাই আবার হয় নাকি ! হ্যা, মনে করেন আপনি স্টান্ট করছেন । সামনের চাকা উঁচু করে তুলে পেছনের চাকার উপরে ব্যাল্যান্স করে বাইক চালিয়ে গেলেন। সামনের চাকার ব্রেকিং কি কোন কাজে লাগবে? সামনের চাকা মাটিতেই নাই তাই এই চাকার ব্রেক বাইক থামাতে কোন কাজেই লাগবে না । আসলে সামনের চাকায় কোন ওজন না থাকায় এই মুহুর্তে এই ব্রেক ব্যবহার অযোগ্য। সমস্ত ভার বহন করছে পেছনের চাকা ।

যদি কোন কারণে আপনার সামনের চাকা উপরে উঠে যায়, ইচ্ছা হোক বা অনিচ্ছায়, সাবধান কোন অবস্থাতেই সামনের চাকা মাটি না ছোঁয়া পর্যন্ত পেছনের ব্রেকে চাপ দিবেন না। এর ফলে বাইক হঠাত থেমে যাবে আর আপনি ছিটকে পড়ে যাবেন।


চাকা লক হয়ে যাওয়া
যদি আপনার বাইকের কোন চাকায় তুলনামূলক ভার অনেক কমে যায় তবে চাকা লক হয়ে যেতে পারে। চাকা লক! ঘাবড়াবেন না ব্যাখ্যা দিচ্ছি। ধরেন আপনি ঢালু কোন রাস্তা দিয়ে নীচে নামছেন । বাইক এবং আপনার উভয়ের ভার সামনের চাকায়। এই অবস্থায় আপনি যদি পেছনের চাকায় জোরে ব্রেক করেন তবে যেহেতু পেছনের চাকায় ওজন কম তাই টায়ার তেমন কোন গ্রিপই পাবে না, চাকা লক হয়ে যাবে এর ফলে সামনের চাকার উপরে অধিক চাপ পড়ার কারণে মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। ঢালু রাস্তা দিয়ে নীচে নামার সময় সব সময় সামনের ব্রেক ব্যবহার করবেন, তবে অবশ্যই বুঝে শুনে। একই ঘটনা ঘটবে পিচ্ছিল রাস্তায়। আপনি যদি শুধু পেছনের ব্রেক পিচ্ছিল রাস্তায় চেপে ধরেন তবে পেছনের চাকা কোন গ্রিপ না পাবার কারণে লক হয়ে যাবে। বাইক দুলতে থাকবে, কোন মতেই হ্যান্ডেল সোজা রাখতে পারবেন না। এই পরিস্থিকে Fish Tail বলে। এই বিষয়টি নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা কিছু পরেই করবো, সাথে থাকুন।


সাসপেনশন এবং গ্রিপ
আমরা উপরের আলোচনায় দেখলাম ব্রেক করার জন্য গ্রিপ দরকার । রাস্তার সাথে টায়ারের সংযোগ যত ভালো হবে গ্রিপ তত ভালো হবে। আর ভালো গ্রিপের জন্য প্রয়োজন ভালো মানের সাস্পেনশান। বিশেষ করে সামনের সাস্পেনশানের গুরুত্ত্ব অপরিসীম। ব্রেকিং এর সময় টায়ার আর রাস্তার সংযোগে সাস্পেন্সান গুরুত্ত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।

সাস্পেনশান এবং গ্রিপ অংশে আমরা বাইকের ড্রাইভ নিয়ে আলোচনা করেছি। সাবধান আপনার সামনের সাস্পেনশান যদি দুর্বল হয় তবে সামনের ব্রেক জোরে করার ক্ষেত্রে সতর্ক হবেন। আপনি যদি এমন জোরে সামনের ব্রেক চেপে ধরেন যে আপনার সামনের সাস্পেনশান তার পুর্ন ক্ষমতায় সংকুচিত হয়ে যায় তবে সামনের চাকা লক হয়ে যাবে এবং তা যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য হয় তবে আপনার বাইক স্লাইড করবে এবং আপনি পড়ে যাবেন।

আপনার বাইকের সামনের সাস্পেন্সান যদি তুলনা মুলক বেশী ট্রাভেল করে তবে সামনের চাকায় ঠিক মতো ওজন স্থান্তর হতে সময় বেশী নিবে এবং আপনাকেও কিছুটা সময় নিয়ে জোরে ব্রেক চাপতে হবে। অর্থাৎ জোরে ব্রেক করুন কিন্তু একবারে না কিছু সময় নিয়ে ।

একই বিষয় ক্রুজার মডেলের বাইকে বা যে বাইকে পেছনে বেশী ভার দেয়া থাকে প্রযোজ্য হবে।



সাসপেনশন ড্রাইভ
আপনি যখন ব্রেক করেন তখন সাস্পেনশান , বিশেষ করে সামনের সাস্পেনশান সংকুচিত হয়। একে সাস্পেনশান ট্রাভেল বলে। আসলে ঘটনা হোল আপনি যখন ব্রেক করেন তখন বাইকের ওজন তার সামনের চাকায় স্থানাতরিত হয়। কিন্তু কোন কারণে, হয়ত সামনের সাস্পেন্সান দুর্বল হয়ে গিয়েছে , বা ক্ষয়ে গিয়েছে ইত্যাদি কারণে যদি সামনের ব্রেক করলে সামনের সাস্পেনশান তার সর্বচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় তবে একে সাস্পেন্সান ড্রাইভ বলে। নিজের নিরাপত্তার খাতিরেই এমন সাস্পেন্সান নিয়ে কখনোই সামনের ব্রেক কষে চেপে ধরবেন না।

যখন আপনি চলন্ত বাইককে ব্রেক করার মাধ্যমে থামাতে চান তখন বাইক তার গতি শক্তি ধরে রাখতে চায় ভরবেগের কারণে। যেমনটি হয়, কারের সিটে বসে থাকা অবস্থায় ব্রেক করলে আপনার শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। বাইকের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো জটিল বাইক তার সামনের চাকার উপরে ঘুরে যেতে চায় ।

আপনারা বাইক স্টান্ট দেখেছেন। সামনের চাকার উপরে ভর দিয়ে পেছনের চাকা উপরে তুলে নেয়া। একে বলা হয় স্টপি । একজন স্টান্ট রাইডারকে এর জন্য অনেক সাধনা করতে হয়। আপনাকে এর জন্য সাধনা করতে হবে না। নিজের একটা দামী ইন্সুরেন্স করে নিবেন আর ক্ষয়ে যাওয়া দুর্বল সামনের সাস্পেসান আছে এমন একটা বাইকে চড়ে জোড়ে চালিয়ে জোরসে সামনের ব্রেক শুধু চাপবেন দেখবেন সুন্দর স্টপি করে ফেলেছেন। তবে সাবধান বাইকের নীচে চাপা পড়ার সম্ভাবনা থাকবে প্রায় ১০০ ভাগ।


দুর্বল ফ্রন্ট সাস্পেন্সান
যেহেতু দ্রুত চলা অবস্থায় ব্রেকিং এর সময় বাইক সামনের দিকে ড্রাইভ দেয় এবং এর পুরোটাই সহ্য করতে হয় সামনের সাস্পেনসানকে । তাই দুর্বল ফ্রন্ট সাস্পেন্সান থাকলে চলন অবস্থায় শক্ত ব্রেক করলে বাইকের নিয়ন্ত্রণ পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।

তাই আপনার বাইকের সামনের সাস্পেন্সান খারাপ থাকলে বা ক্ষয়ে গিয়ে থাকলে এটা যে শুধু কম্ফোর্টকেই ব্যহত করে তা নয় বরং শক্ত ব্রেক করার ক্ষেত্রে এটি বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।


সর্বোচ্চ ব্রেকিং
আচ্ছা অনেক তত্ত্ব কথা আলোচনা হলো । ওজন, গ্রিপ, সাস্পেনশান ইত্যাদি। এই বিষয়গুলিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে আপনি সফল ভাবে সম্ভাব্য স্বল্প দুরত্ত্বে নিরাপদে বাইক থামাবেন তা আলোচনা করবো। আপনার কাজ হবে আমাদের বিশেষজ্ঞদের বলা বিষয়গুলি ভালোভাবে প্যাক্টিস করে তা রপ্ত করা। মনে রাখবেন দ্রুততম সময়ে স্বল্প দুরত্ত্বে বাইক থামানার জন্য প্যাক্টিসের বিকল্প নাই । কারণ বাস্তবে পরিস্থিতি অনেক জটিল হতে পারে , পরিস্থিতি আপনাকে নার্ভাস করে দিতে পারে তাই বারবার প্যাক্টিস এর মাধ্যমে বিষয়টিকে সহজ করে নিতে হবে।

পেছনের ব্রেক দিয়ে শুরু
দ্রুততম সময়ে স্বল্প দুরত্ত্বে ব্রেক করার সময় মাথা ঠান্ডা রাখেন। তাড়াহুড়া করবেন না । প্রথমেই পেছনের ব্রেকে চাপ দিন। তবে সম্পুর্ন ব্রেক একবারে প্রয়োগ করার ভুল করবেন না । পেছনের ব্রেক আংশিক চাপুন, আসলে ভালো হয় আলতো করে পা ছোঁয়ালে। এতে করে আপনি ব্রেকিং প্রসেস শুরু করে দিলেন এর ফলে আপনার বাইকের পেছনের চাকার ওজন সামনের চাকায় কিছুটা স্থান্তরিত হবে। সাস্পেনশান চমৎকার ভাবে সংকুচিত হয়ে রাস্তার সাথে টায়ারের গ্রিপ যেমন বজায় থাকবে তেমনি হঠাত পেছনের চাকা থেকে সামনের চাকায় ওজন স্থানতরের কারণে পেছনের চাকাও উপরে উঠে যাবে না।

সামনের ব্রেক পরে
প্রথমেই পেছনের ব্রেকে চাপ দেয়ার ফলে সামনের চাকা ওজন বেশী বহন করবে এবং এই কারণে আপনি সামনের ব্রেক তুলনা মূলক জোরে চাপতে পারবেন। আমাদের দেশে অপেক্ষাকৃত ভারি বাইক গুলিতে পেছনের চাকায় ড্রাম এবং সামনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক থাকার কারণ সম্ভত আপনার বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনার বাইকের উভয় চাকাতেই ডিস্ক ব্রেক থাকে তবে আপনার বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম অনেক হেভিয়ার। আর এই হেভিয়ার ব্রেকিং সিস্টেম প্র্যাকটিস না করে তা চালানো মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এই বিষয়টি বাইক ম্যনুফ্যাকচারার জানেন। তাই তারা তাদের বেশীরভাগ লোয়ার সেগমেন্টের বেশিরভাগ বাইকেই পেছনের চাকায় ডিস্ক ব্রেক দেন না। এই আর্টিকেল পড়তে থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন পেছনের ব্রেকের অনিরাপদ ব্যবহার আপনাকে কতো বিপদের মুখে ফেলতে পারে।

আমি সামনের ব্রেক তুলনামূলক জোরে চাপতে বলেছি, আপনি যেনো সব শক্তি দিয়ে শুরুতেই চেপে ধরবেন না। ধীরে ধীরে সামনের ব্রেকে চাপ বাড়াবেন যাতে পেছনের চাকা থেকে সামনের চাকার ওজনের স্থানান্তর মসৃণ ভাবে হয়। কারণ সামনের চাকার গ্রিপ এই সময় তার সর্বচ্চ পর্যায়ে থাকে। বিষয়তা অনেকটা এমন লেবুর টুকরা থেকে রস চেপে বের করার সময় কিছুটা রস রেখেই চাপা বন্ধ করে দেয়ার মতো।

অনেক সময়ই আমরা আমাদের বাইকের ব্রেকের সর্বত্তম ব্যবহার করতে পারিনা। যখন মনে হবে পরিস্থিতি আপনার সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রণে তখনি কেবল সামনের ব্রেক পুরোটা ব্যবহার করবেন এবং এই সময় হ্যান্ডেলটাও শক্ত করে ধরে থাকবেন।

গতি
বাইকের গতি যদি বেশী থাকে তবে আপনাকে ব্রেক বেশ জোরে করতে হবে। কারণ আমরা জানি বস্তুর ভরবেগের হার যত বেশী হবে তা থামানোর জন্য প্রযুক্ত বলও বেশী প্রয়োজন হবে। দ্রুত চলার সময় ওজনের সাথে সাথে গতিও সামনের চাকায় বেশী প্রযুক্ত হবে। তাই এক্ষেত্রে পেছনের ব্রেক এবং সামনের ব্রেক প্রায় একই সময় আপনাকে চেপে ধরতে হবে। তবে আবারো বলি পেছনের ব্রেক কখনোই জোরে চাপবেন না আলতো করে ধীরে ধীরে চাপ বাড়ান। পেছনের চাকায় প্রযুক্ত ব্রেক বেশী হলে চাকা লক হয়ে যাবে যা কখনোই কাম্য না।

জোরে ব্রেক করার সময় চেষ্টা করবেন বাইকের উপরে সোজা হয়ে বসে থাকতে কারণ সোজা হয়ে বসে থাকলে বাতাসের প্রতিরোধের কারণে বাইক থামানের সময় বাড়তি রেজিসটেন্স পাবেন। এই রেজিস্টেন্সের কারণে পেছনের চাকা থেকে সামনের চাকায় ওজন স্থান্তরের হার কমে যাবে। আসলে ব্রেকিং বিষয়টি পুরটাই নির্ভর করে ব্যাল্যান্স আর প্রাকটিসের উপরে।


মোটরসাইকেলভেদে ব্রেকিং
প্রতিটি বাইকই আলাদা। ডিজাইন যেমন আলাদা তেমনি এর চেসিস, ইঞ্জিন, ওজন, ওজনের ভারসাম্য আলাদা। তাই আপনাকে সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না কতক্ষন বা ঠিক কতো জোরে আপনি পেছনের ব্রেক চেপে ধরবেন বা ঠিক কখন আপনি সামনের ব্রেক চেপে ধরবেন বা সামনের ব্রেককে তার সর্বচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। প্রতিটি বাইকেই এই বিষয়গুলি আলাদা হয়। এই কারণেই আমরা প্রাকটিসের উপরে জোর দিচ্ছি বার বার। বিশেষ করে নতুন বাইক হাতে পেলে অবশ্যই ব্রেকিং প্র্যাক্টিস করতে ভুলবেন না। তার পরেও আমরা চেষ্টা করবো ভিন্ন মডেলের বাইকের ব্রেকিং কৌশল নিয়ে কিছু আলোকপাত করার।

কখনও কখনও কোনোমতেই পেছনের ব্রেক নয়
স্পোর্টি বাইকের ক্ষেত্রে সাধারণত ডিজাইন এমন ভাবে করা হয় যাতে সামনের চাকা বেশী ভার বহন করে। সাধারণত পেছনের ব্রেক করার মাধ্যেমে আমরা পেছনের চাকার ওজন সামনের চাকায় স্থান্তরিত করি। কিন্তু যে বাইক ডাইমেনশান গত ভাবেই সামনের চাকায় বেশী ওজন চাপান থাকে তেমন বাইকে যদি আপনি পেছনের চাকায় হঠাত জোরে ব্রেক করেন তবে পেছনের চাকা উপরে উঠে উল্টে যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। খুব আলতো করে পেছনের ব্রেকে চাপ দিন অনেকটা বেলুন ধরার মতো সামনের ব্রেকের ব্যবহার বেশী করুন ।

এই ধরণের বাইকে চাকার হুইল বেস তুলনামূলক ছোট এবং সামনের চাকা হ্যান্ডেল বারের ঠিক নীচেই আড়াআড়ি থাকে। উদাহরণ স্পোর্টি বাইক।

কখনও সম্পূর্ন পেছনের ব্রেক
আমরা দেখলাম স্পোর্টস বাইকের ক্ষেত্রে সামনের ব্রেকের গুরুত্ত্ব কতবেশি। আবার যদি ক্রুজার বাইকের ডিজাইন এর দিকে লক্ষ করেন দেখবেন এর ফর্ক সাস্পেনশান সামনের দিকে ছড়ানো থাকে, চাকা বড় । কোন কোন ক্রুজার বাইকের সামনের চাকা পেছনের চাকা থেকে কিঞ্চিৎ বড় হয়। পরিচিত বাইকের উদাহরণ দেই, Bajaj V15 বা Bajaj Avenger এর সামনের চাকা পেছনের চাকার থেকে বড়। এই ডিজাইনের কারণেই বাইকের পেছনের অংশ বেশী ভার বহন করে।

এই ধরণের বাইকের ক্ষেত্রে ব্রেকিং এর পুরো সময় পেছনের ব্রেকের ব্যবহার অনেক বেশী হবে। স্পোর্টস বাইকের তুলনায় এই ডিজাইনের বাইকের ব্রেকিং ডিসটেন্স বেশী হয়।

সুতরাং সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি বাইকের ডিজাইন এবং ডাইমেনশান ভেদে হার্ড ব্রেকিং এর পদ্ধতিও বদলে যায়। স্পোর্টস বাইকের তুলনামূলক ছোট হুইল বেস খাড়া ডাইমেনশানের কারণে ক্রুজারেরে বা টুরার বাইকের তুলনায় সামনে বেশী ওজন চাপানো থাকে । আর সাধারণ রোড বাইক এই দুই ডিজাইনের মাঝামাঝি।

আপনি যখনই পেছনের চাকায় জোরে ব্রেক করবেন, পেছনের চাকার ওজন সামনের চাকায় চলে যাবে । ক্রুজার এবং সাধারণ রোড বাইকের ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী পদ্ধতি এটি।

স্পোর্টস বাইকের ক্ষেত্রে বা এই ধরেনের মডলে আলতো করে পেছনের ব্রেকে চাপ দিয়ে সামনের ব্রেকের উপরে অধিক জোর দেন । প্রয়োজনে শুধু সামনের ব্রেকই ব্যবহার করেন। তবে সাবধান যদি আপনি স্পোর্টস বাইকে পেছনে কাউকে নেন তবে এই নিয়ম চলবে না। তখন কিন্তু আপনাকে পেছনের ব্রেক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

মালপত্র
আপনার বাইকের পেছনের লাগেজ যদি ভারি হয় বা পেছনে কাউকে নেন তবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাইকের ওজন বেড়ে যাবে । আমরা আগেই জেনেছি ভর ও বেগ বেশী থাকলে থামানোর জন্য প্রযুক্ত বলও বেশি হবে। ভর বেশী হবার কারণে বাইকের পেছনের চাকা থেকে সামনের চাকায় ওজন স্থান্তরের হার কমে যাবে। তাই নির্দিষ্ট দুরত্ত্বে বাইক থামাতে চাইলে আপনাকে পেছনের ব্রেকে জোরে চাপ দিতে হবে।

পরিশেষে
মোটরসাইকেলের ব্রেকিং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে না। স্থান পাত্র কাল ভেদে এর কার্যক্রমও আলাদা। সাধারন রাস্তায় এক রকম তো ভেজা রাস্তায় এক রকম। একা চললে একরকম তো সহযাত্রী নিয়ে চললে আরেক রকম আবার বাইক ভেদেও ব্রেকিং এর পদ্ধতি ভিন্ন। ভিন্নতা যাই থাকুক, ভালো ব্রেকিং এর জন্য অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই। যত বেশি প্র্যাকটিস করবেন ততো বেশি দক্ষতা তেরী হবে। মাথায় রাখতে হবে স্পোর্টস বাইকের দক্ষতা ক্রুজার বাইকে প্রযোজ্য নয় এবং মোটা টায়ারের ব্রেকিং চিকন টায়ারে কাজে লাগবে না। প্রতিটির জন্যই আলাদাভাবে প্র্যাক্টিসের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
Rate This Tips

Is this tips helpful?

Rate count: 8
Ratings:
Rate 1
Rate 2
Rate 3
Rate 4
Rate 5

Bike Tips

শীতে বাইকারদের ভ্রুমনের জন্য কিছু সেরা জায়গা
2024-11-20

এই শীতে ভ্রমনের জন্য কিছু সেরা জায়গা যেখানে আপনি আপনার বাইক নিয়ে যেতে পারবেন। আমাদের দেশে ভ্রমনের ক্ষেত্রে শীতকাল আদর্শ হিসাবে ধরা হয়, কারন এই সময় ভ্রমন করে বেশি স্বস্তি পাওয়া যায় এবং গরমকালের চেয়ে এই সময় বেশি ভোগান্তি কম হয়ে থাকে, এই কারনে আমরা লক্ষ করলে দেখতে পাই যে বেশির ভাগ ভ্রমন পিপাসু শীতকালে ট্য...

Bangla English
বন্যা পরিস্থিতিতে বাইকের যত্ন নেয়ার কিছু টিপস
2024-08-27

বর্তমানে দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে, এবং দেশের বেশ কিছু অঞ্চল ডুবে গিয়েছে, পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক এলাকায় মানুষের বাড়িঘর থেকে সবকিছুই ডুবে গেছে, এই পরিস্থিতে আপনার বাইকের যত্ন নেয়া খুবই কষ্টসাধ্য একটি বিষয়, তবুও আমাদের পক্ষে সম্ভব হলে চেষ্টা করতে হবে বাইকের যথাসম্ভব যত্ন ...

Bangla English
মোটরসাইকেল দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে কি কি সমস্যা হতে পারে
2024-07-28

মোটরসাইকেল দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিস হয়ে থাকলেও বিভিন্ন কারনে অনেক সময় মোটরসাইকেল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয় না, যেমনটা আমরা লকডাউন এর সময়ে দেখেছি, এবং খুব সম্প্রতি দেশের যেই অবস্থায় তাতে অনেকেই বাইক বের করতে পারছে না। একটি বাইক অনেকদিন ব্যবহার না করলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। আজকে আমরা আলোচনা কর...

Bangla English
রাতের বেলা কেনো বাইক নিয়ে ট্যুর দেয়া উচিত না
2024-07-25

বাইকপ্রেমি বাইকারস যারা ট্যুর দিতে পছন্দ করে থাকেন, তারা অনেকেই রাতের বেলায় বাইক রাইড করে ট্যুর দিয়ে থাকেন, তবে হাইওয়েতে বেশিরভাগ রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো নেই, এছারা ও বিভিন্ন কারণে অনেকেই রাতে ট্যুর দিয়ে থাকেন, তবে বাংলাদেশের রাস্তা এবং সার্বিক সবকিছু বিবেচনা করে রাতে ট্যুর দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধা বিপত...

Bangla English
কিভাবে বাইকের অপ্রয়োজনীয় সাউন্ড কমাবেন
2024-07-15

স্বাভাবিক ভাবে একটি বাইক চলন্ত অবস্থায় তার ইঞ্জিনের সাউন্ড বাইকের সাইলেন্সর দিয়ে বের হয়, এবং সাইলেন্সর দিয়ে বাইকের সাউন্ড কমানো হয়ে থাকে এবং সাউন্ড শুনতে ভালো লাগে, তবে বাইকের অন্যান্য যন্ত্রাংশ দিয়েও বিভিন্ন সাউন্ড আসতে পারে, ঠিক মতো পরিচর্যা না করার ফলে বাইকের বিভিন্ন অংশ থেকে এমন সাউন্ড হয়ে থাকে, ...

Bangla English
Filter

Filter