মোটরসাইকেল কর্নারিং টেকনিক: এপেক্স
৫৬ হাজার বর্গ মাইল এর ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশে প্রায় ২০কোটি লোকের বাস। কৃষিজমি আর বসবাসের বাড়ীঘর করতে গিয়েই অধিকাংশ জমি শেষ। ফলে যানবাহনের তুলনাতে রাস্তার পরিমান বেশ কম। তাই রাস্তায় যেমন যানবাহনের ভীড় লেগেই থাকে তেমনি রাস্তা গুলোও একটানা সোজা না হয়ে আকা-বাকা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার নেহায়েত কম নয়। দুর্ঘটনাগুলোর বড় অংশই ঘটে রাস্তার বাঁকে। প্রয়োজনের তুলনাতে সরু রাস্তা এবং কড়া বাঁক থাকাতে মোটরসাইকেল রাইডারদের বাক গুলোতে বিপদে পড়তে হয়। বিশেষকরে হাইওয়েতে। আর তাই বাঁকগুলোতে সতর্ক থাকতে হয় অনেক বেশি। এছাড়াও যারা কিছুটা দ্রুত বাইক চালাতে পছন্দ করেন, কড়া বাঁক গুলো তাদের জন্য সমস্যার কারন। এই বাঁক পাড়ি দিতে রয়েছে একটি বিশেষ টেকনিক যাকে বলে এপেক্স। যদিও এই টেকনিকটি মুলত রেসিং ট্র্যাকে রাইডাররা ব্যবহার করে থাকেন, কিন্তু নিরাপদে কড়া বাঁক নিয়ে যেকোন বাইকারই এই টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন। তবে শুরুতেই মাথায় রাখুন এর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন, এবং প্র্যাকটিসের।
এপেক্স(Apex) হলো কোন বাঁকের ভেতরের অংশের সবচেয়ে কাছের অংশ। চিত্রে বিষয়টি ভালো বুঝতে পারবেন। এপেক্সকে ক্লিপিং পয়েন্টও (clipping point) বলা হয়। বাঁক নেবার সময় যখনই আপনি এপেক্সে পৌঁছে যাবেন আপনার স্টিয়ারিং লক কমে যাবে ফলে বাইকের গতি আরো বাড়াতে পারবেন। দ্রুত গতিতে বাঁক নেবার সময় এপেক্স এর গুরুত্ত্ব অপরিসীম এবং এজন্য আপনাকে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে। আপনি যখনই কোন বাঁক পার হতে যাবেন তখন প্রতিবারই আপনাকে বৃত্ত এর একটা অংশ পার হতে হয়। একটি বৃত্তকার পথে যখন আপনি তীব্র গতিতে ঘুরতে যাবেন তখন একই সাথে কেন্দ্রমুখি এবং কেন্দ্রবিমুখী উভয় প্রকার বলেরই আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে। দ্রুত বাঁক পার হতে চাইলে আপনাকে এপেক্সের মুখমুখি হতেই হবে আর এখানে আপনি কেন্দ্রমুখী বল বা কর্নারিং ফোর্সের কবলে পড়বেন। এই কেন্দ্রমুখী বল থেকে বের হয়ে আসার মূলত দুটি উপায় আছে । একটি Early Apex এবং আরেকটি Late Apex .
আমি এই আর্টিকেলে মূলত বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় Late apex নিয়েই আমার আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও বাস্তবতা হলো বাঁক নেয়ার সময় এপেক্সে কিছুটা দেরীতে পৌঁছালে আপনি তুলনামূলক দ্রুত গতিতে বাঁক পেরুতে পারবেন। রেসিং এর ক্ষেত্রে এটাই বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় পদ্ধতি । এই পদ্ধতিতে বাঁকে প্রবেশের সময় গতি কিছু কম থাকলেও বেরুনোর সময় সর্বোচ্চ গতিতে বের হয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে আর একটা সুবিধা পাবেন আর তা হলো বাঁকে প্রবেশ এবং বের হবার সময় এই দুই ক্ষেত্রেই আপনি নিজ লেনে থাকতে পারবেন। অর্থাৎ আমাদের ট্রাফিক আইন অনুযায়ী আপনি রাস্তার সঠিক দিকে থাকবেন। ফলে উল্টো দিক থেকে আশা দ্রুত গতির যানবাহনের মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে না।
অন্যদিকে আপনি যদি Early Apex পদ্ধতি বেছে নেন তবে বাঁকে প্রবেশ করবেন দ্রুত গতি নিয়ে কিন্তু বের হবার সময় গতি কমে যাবে, বৃত্তের কেন্দ্রমুখী বলের হাত থেকে সরাসরি কেন্দ্রবিমুখী বলের কবলে পড়বেন। আর এই কারণে আপনি গতি যদি না কমান তবে ছিটকে রাস্তা থেকে বের হয়ে যাবেন, বা আপনাকে অন্য লেনে ঢুকে পড়তে হবে।
Late Apex এর সুবিধাঃ
- আপনার বাইক যদি শক্তিশালী হয় তবে রেসিং এর সময় এগিয়ে থাকবেন
- যেহেতু আপনি পুর্ন গতিতে বাঁক সেরে বেরুতে পারবেন তাই বাইকের সমস্ত শক্তি পরে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
- বাঁক নেয়ার পরে রাস্তা যদি সোজা হয় তবে এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি
- বাঁকে প্রবেশ এবং বের হবার সময় আপনি প্রস্ততির জায়গা পাবেন
- বাঁক নেবার সময় যদি ওভারটেক করতে চান তবে এই পদ্ধতিই সর্বোত্তম
অসুবিধাঃ
- যদি আপনার বাইক কম শক্তিশালী হয় তবে এই পদ্ধতি তুলনামূলক কম কার্যিকরী হবে
- টায়ারের মান ভালো হতে হবে।
পরামর্শ থাকবে বাঁক নেবার সময় Late Apex পদ্ধতি ব্যবহার করতে। একদিকে যেমন নিরাপদ অন্যদিকে ফলাফলও ভালো পাবেন। পরিশেষে আবারও আগের কথা নতুন করে বলবো, এপেক্স পদ্ধতি ব্যবহার করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস। আচমকা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়বেন না। আমাদের মতো দেশের ব্যস্ত রাস্তাতে বিপরিত দিক থেকে আসা যানবাহনের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে এভাবে কর্নানিং করা থেকে বিরত থাকবেন।