মোটরসাইকেলে জরুরী ব্রেকিং
জরুরী ব্রেকিং এর প্রয়োজন হয়েছে কি কখনো আপনার? যদি নিয়মিত বাইক চালান উত্তর অবশ্যই হ্যা হবে। জরুরী ব্রেকিং হলো স্বল্প সময়ে স্বল্প দূরত্বে বাইক থামানো। কখনও কখনও জীবন মৃত্যুর সীমারেখা হয়ে যায় ইমারজেন্সি মুহুর্তে সঠিক ব্রেকিং। সঠিক ব্রেকিং এ আপনি বেঁচে যেতে পারেন, সামান্য ভুলে অবসান হতে পারে আপনার জীবন। চলুন জেনে নেই জরুরী বা ইমারজেন্সী ব্রেকিং কিভাবে করবেন।
জরুরী ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে বাইকাররা যেক্ষেত্রে নার্ভাস হয়-
- কত জোরে ব্রেক করবো?
- সামনের চাকা লক হয়ে যাবে?
- হ্যান্ডেলবারের উপরদিয়ে উড়ে গিয়ে সামনে পড়ে যাবো নাতো?
- চাকা পিছলে পড়ে যাবো নাতো?
সবার জন্য একই বাইক পৃথিবীতে নাই
পৃথিবীতে সকল ব্যক্তি একই রকম নয়, তেমনি সকল বাইকও একই রকম নয়। কোন বাইকের স্পীড বেশি, কারো ওজন বেশি, কেউ লম্বা বেশি, কেউ সামনে ভারী, কেউ পেছনে ভারী এরকম হরেক পার্থক্য রয়েছে। আর এই পার্থক্যের কারনে ব্রেকিং পদ্ধতিও হয় আলাদা আলাদা। ব্রেকিং সিস্টেমেও রয়েছে পার্থক্য, ড্রাম ব্রেক, ডিস্ক ব্রেক আবার কখও ABSযুক্ত ব্রেক। আর এমন পার্থক্যের কারনেই ব্রেকিং এর সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই যে, এভাবে ব্রেক করলে অতদূরে গিয়ে বাইকটি থামবে। বাইক থামার তারতম্য ঘটতে পারে রাস্তার অবস্থার কারনে, ব্রেকিং এর সিস্টেমের কারনে, টায়ারের কারনে, রাইডারের কারনে, বাইকের ওজনের কারনে। এমন অনেক কারন রয়েছে যার কারনে একই বাইকে ব্রেকিং এর ফলাফল ভিন্ন হতে পারে। তাই নিজ বাইকের সাথে বন্ডিং বা আত্নার যোগাযোগ তৈরী করুন। বাইক যেনো আপনাকে বোঝে, তেমনি আপনিও যেনো বাইককে বুঝেন।
নার্ভাস হবেন না
আপনি যতই প্রাকটিস করেন ইমারজেন্সি মুহুর্তে নার্ভ একটা গুরুত্ত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে। ইমারজেন্সি ব্রেকিং এর ক্ষেত্রে নার্ভ ঠিক রেখে সম্ভাব্য স্বল্প দুরত্ত্বে বাইক নিরাপদে থামানোই প্রধান কাজ। নার্ভ ঠিক রাখুন ভয় পাবেন না। যদি নার্ভ ঠিক রাখতে না পারেন তবে সহজাত প্রবণতাতেই পেছনের ব্রেকে সর্ব শক্তি দিয়ে চাপ দিবেন শুধু চাপই দিবেন না শক্ত করে ধরে রাখবেন বা তাড়াহুড়ায় সামনের ব্রেক প্রয়োজনের তুলনায় বেশী জোরে চেপে ধরবেন যার কোনটাই আপনার জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
সহজাত অভ্যাস তৈরী করুন
জরুরী ব্রেকিং এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর প্র্যাকটিস। প্র্যাকটিসের ফলেই আপনি ব্রেকিং এর সময় অভ্যাসবশত প্রয়োজনীয় কাজগুলি নির্ভূলভাবে করবেন, এরজন্য আলাদাভাবে ব্রেকিং এর মুহুর্তে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে না। পূর্বের প্র্যাকটিস থাকলে শরীরের অটো রিফ্লেক্সেই আপনি ব্রেকিং করতে পারবেন।
ক্লাচ টেনে ধরুন এবং সামনের ব্রেক করুন
যা করবেন তা হলো এক্সালেরাশান ছেড়ে দিন, ক্লাচ ধরুন, পেছনের ব্রেক না ব্যবহার করে শুধু সামনের ব্রেক প্রয়োগ করুন। সামনের ব্রেক প্রয়োগের সময় মনে রাখবেন কখনোই একবারে না। এক টুকরা লেবু থেকে রস যেমন আমরা একবারে বের করি না তেমনি ধীরে ধীরে প্রয়োগ করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান।
কেন পেছনের ব্রেক নয়?
আপনার মনে হতে পারে, পেছনের ব্রেক ব্যবহার করবোই না শুধুই সামনের ব্রেক! হ্যা আমরা রেকমেন্ড করবো ইমারজেন্সি মুহুর্তে শুধু সামনের ব্রেকে মনোযোগ দিতে। কারণ উত্তেজনা মুহুর্তে আপনার সহজাত প্রবণতা আপনাকে পেছনের ব্রেকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরার জন্য প্ররোচিত করবে। এর ফলে পেছনের চাকা লক হয়ে যাবে আপনার ভাগ্য ভালো থাকলে বাইক টলমল করে আবার সোজা হয়ে যাবে আর ভাগ্য ভালো না থাকলে সোজা হতে আর পারবেন না। একে টেকনিক্যাল পরিভাষায় “ ফিস টেইল” বলা হয়। বাইকের পেছনের অংশ মাছের লেজের মতো দুলতে থাকবে। পিচ্ছিল রাস্তায় পেছনের ব্রেকে চাপ দিলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। একটা টিপস দেই, যদি দুর্ভাগ্য বশত এমন পরিস্থিতিতে পড়েই যান তবে সিটে নিজের বসার অবস্থান পরিবর্তন করে নিন। এতে বাইকের সেন্টার অফ গ্রাভিটির পরিবর্তন হবে এবং পরিস্থিতি আপনার নিয়ন্ত্রণে আসবে। যাই হোক আপনি ইমার্জেন্সি মুহুর্তে ফিস টেলের কবলে নিশ্চয় পড়তে চাইবেন না। এই কারণেই আমরা আপনাকে ইমার্জেন্সি মুহুর্তে পেছনের ব্রেক ব্যবহার না করার পরামর্শ দিচ্ছি। শুধু সামনের ব্রেক ব্যবহার করলে অন্তত আপনার বাইক সোজা থাকবে এবং পেছনের চাকা ঘুরতে থাকবে যা আপনাকে সাইড ওয়ে স্কিড করার হাত থেকে বাঁচাবে।
সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে একদিকে যান:
এমন পরিস্থিতিতে আপনি পড়লেন যখন কড়া ব্রেক করেও সংঘর্ষ এড়াবার পথ নাই অর্থাৎ সামনের বস্তু বা যানবাহনের সাথে আপনার ব্রেকিং ডিসটেন্স নাই তখন একমাত্র উপায় হলো চট করে বাঁক নিয়ে সংঘর্ষ এড়ানো। একেই সয়ার্ভ(swerve) বলে। বিষোয়টি অনেকটা কাউন্টার স্টিয়ারিং এর মতই, তবে পার্থক্য হলো কাউন্টার স্টিয়ারিং এ আপনি প্রস্তুত হবার পর্যাপ্ত সময় পাবেন কিন্তু সয়ার্ভ করার সময় তাৎক্ষণিক করতে হবে। মনে করেন আপনি মোটামুটি গতি নিয়ে যাচ্ছেন, হঠাত পার্শ্ববর্তি রাস্তা থেকে একটা সাইকেল এসে পড়লো, এতোটাই কাছে ব্রেক করে কাজ হবে না । এই অবস্থায় সয়ার্ভ প্রয়োজন। যেদিক দিয়ে আপনি বেরিয়ে যেতে চান সেদিকে সামান্য হ্যান্ডেল ঘোরান। এতে মোটরসাইকেল চট করে কাত হয়ে যাবে। যত বেশি তীক্ষ্ণ বাঁক নিবেন, ততো কাত হতে হবে। আপনার শরীর থাকবে সোজা, হাঁটু লেগে থাকবে তেলের ট্যাংকের সাথে, পায়ের পাতা শক্ত ভাবে থাকবে ফুট রেস্টে। আপনি যেদিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চান-আপনার দৃষ্টি থাকবে সেদিকে। এখানেও কাউন্টার স্টিয়ারিং করবেন যাতে প্রয়োজনীয় কাত হতে পারেন-এরপর আবার অন্য হাত ব্যালান্স ঠিক করবেন। তবে রাস্তার ইন্টারসেকশান বা ব্যস্ত রাস্তায় সয়ার্ভ হবে আপনার শেষ চেষ্টা।কখনই সয়ার্ভিং অবস্থায় ব্রেক করবেননা। ব্রেক করতে চাইলে সয়ার্ভিং এর আগে বা পরে করুন। নইলে আছাড় খাবেন।
পরিশেষে
আবারও একই কথা, প্র্যাকটিস। পর্যাপ্ত প্র্যাকটিস আপনাকে নিরাপদ ব্রেকিং এর নিশ্চয়তা দিতে পারে।
নিরাপদে থাকুন, ভালো থাকুন।