মোটরসাইকেল রেজিট্রেশন করবেন কিভাবে?
বর্তমান সময়ে আমাদের সকলেরই প্রয়োজন একটি ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে করে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন ব্যবহার করে থাকি যার ফলে আমরা আমাদের মূল্যবান সময় আমরা বাঁচাতে পারি। বিভিন্ন যানবাহন এর থেকে আমরা মোটরসাইকেল কেই বেছে নিয়েছি। কারণ মোটরসাইকেল নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আমরা অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারি এবং এটি আমাদের সকলের কাছেই একটি সহজলভ্য মাধ্যম। বিভিন্ন কারণে মোটরসাইকেল গ্রামে এবং শহরে বেশ জনপ্রিয় একটি বাহন। কিন্তু আমরা জানি যে মোটরসাইকেল ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এটা আইনগত হতে হবে। আইনগত বা যে কোন সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল সহ যে কোন যানবাহনকে (বি আর টি এ ) এর নির্ধারিত পদ্ধতি আনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আসুন জেনে নেই কিভাবে আমরা আমাদের মোটরসাইকেল রেজিসট্রেশন সম্পন্ন করব।
রেজিস্ট্রেশন ক্যাটাগরি
বাংলাদেশে মোটসাইকেল রেজিস্টেশন ঝামেলাপূর্ণ এবং কষ্টসাধ্য একটি কাজ। এই পদ্ধতিতে দিনের পর দিন সময় লেগে যায় এবং কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য (বি আর টি এ) এর বিভিন্ন মহলে অনেক বেগ পেতে হয় ।বাংলাদেশের সড়কে ৫০ সিসি থেকে ১৫০ সিসি‘র মোটর সাইকেল চলাচলের অনুমতি আছে।মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন দুই ধরণের হয়ে থাকে।
১।১০ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে বিআরটিএর তথ্য মতে ৫০ এবং ৮০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ১৩ হাজার ৯১৩ টাকা। ১০০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ১৯ হাজার ৬৬৩ টাকা। এবং ১৫০ সিসির মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ২১ হাজার ২৭৩ টাকা।
২। ২ বছর মেয়াদি রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৮০ সিসি মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফি ৯ হাজার ৩১৩ টাকা । ১০০ সিসি মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে ১০ হাজার ৪৬৩ টাকা এবং ১০১ সিসি থেকে ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে ১২ হাজার ০৭৩ টাকা।
রেজিস্ট্রেশন করণ প্রক্রিয়া
রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে প্রথমে (বি আর টি এর ) এর নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পূরন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযোজন করতে হবে। তারপর (বি আর টি এ) কতৃপক্ষ সেই আবেদন পত্র গুলো যাচাই বাছাই করে সঠিকতা ও সত্যতা যাচাই করবে। যাচাই বাছাই এর পর আবেদন পত্র গৃহীত হলে তারা রেজিট্রেশন এর জন্য প্রয়োজনীয় ফি জমাদান করতে হবে এবং একটি এ্যাসেসমেন্ট স্লিপ প্রদান করা হবে। ফি জমা প্রদানের পর গাড়িটি পরিদর্শনেরর জন্য বিআরটিএ অফিসে হাজির করতে হবে। গাড়িটি হাজির করার পর বিআরটিএ ইনফরমেশন সিস্টেমে এন্টি করার পর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) কর্তৃক রেজিস্টেশনের অনুমোদন প্রদান করা হবে এবং রেজিস্টেশন নম্বর উল্লেখপূর্বক প্রাপ্তিস্বীকার পত্র, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ট্যাক্স টোকেন প্রিন্ট করে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর সহ গ্রাহককে প্রদান করা হবে। রেজিস্ট্রেশন তৈরী হওয়ার ৭ থেকে ১৫ দেনের মধ্যে ডিজিটাল রেজিস্ট্রশন সার্টিফিকেট (ডি আর সি) তৈরি করার জন্য গ্রাহককে বায়োমেট্রিক্স ( ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) প্রদানের জন্য গ্রাহক কে ( বি আর টি এ ) এর অফিসে উপস্থিত হতে হবে। ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ও বায়োমেট্রিক্স নেওয়ার পর গ্রাহককে তার মোবাইল ফোনে এস এম এস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় ।
রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
১।। মালিক ও আমদানিকারক/ডিলার কর্তৃক যথাযথভাবে পূরণ ও স্বাক্ষর করা নির্ধারিত আবেদনপত্র
২।সদ্য তোলা দুই কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি।
৩।এন্ট্রি বিল, ইনভয়েস বিল,এল সি এ কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
৪।আমদানিকারক/বিক্রেতা প্রদত্ত সেল সার্টিফিকেট /সেল ইন্টিমেশন/বিক্রয় প্রমাণপত্র
৫। প্যাকিং লিস্ট, ডেলিভারী চালান, এবং গেইট পাস।
৬। ভ্যাট প্রদানের রসিদ ও বডি ভ্যাট চালান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।
৭। রেজিস্ট্রেশন ফি জমাদানের প্রযোজ্য রসিদ
৮। বিদেশি নাগরিকের নামে রেজিস্ট্রেশন/মালিকানা বদলি হলে বাংলাদেশের ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসার মেয়াদের কপি।
৯। কাস্টমস অফিস দ্বারা সত্যায়িত প্রয়োজনীয় ভ্যাট প্রদানের রসিদ।
১০। প্রস্তুতকারক অথবা (বি আর টি এ)কর্তৃক অনুমোদিত বডি নকশা এবং সিট ধারণ ক্ষমতার একটি সম্বলিত একটি ড্রইং। ( সকল যানবাহনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য)
১১। নিজ বাক্তিমালিকানাধীন এর ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র/পাসপোর্ট / ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদির যে কোন ক্ষেত্রে সত্যায়িত করা ফটোকপি। যদি মালিক প্রতিষ্ঠান হয় সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি চিঠি।
১২।নিলামে ক্রয়কৃত সরকারি/আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির ক্ষেত্রে নিলাম সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং মেরামতের বিস্তারিত বিবরণ।
১৩। যে কোম্পানি থেকে মটর সাইকেল টি ক্রয় করেছেন সেই কোম্পানি থেকে সংগৃহীত কাগজ পত্র এবং সে সকল কাগজ সমূহ (বি আর টি এ) এর পরিদর্শক দ্বারা পরিদর্শন প্রতিবেদন।
১৪। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর ছাড়পত্র ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
১৫। ১২৫ থেকে ১৫৫ সিসি মোটরসাইকেল এর ক্ষেত্রে ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা ((অঙ্গীকারনামার নমুনা ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে)
মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রশন এর ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত বিষয় সমূহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন আপনার মোটরসাইকল কে সুরক্ষা করবে এবং আপনি আইনের শর্ত লঙ্ঘন না করেই অনায়াসে মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন।