খারাপ আবহাওয়ায় মোটরসাইকেল চালানো
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয়টি ঋতু ছয়টি রংয়ে আবির্ভূত হয়। গ্রীষ্মে যেমন তাপের দাবদাহ, শীতে তেমন ঠান্ডার প্রকোপ, বর্ষায় বৃষ্টির প্রতাপ। কাজেই একেক ঋতুতে বাংলাদেশ থাকে একেক রকম। প্রতিটি ঋতুতেই কমবেশি কিছু সময় আবহাওয়া রুক্ষ হয়ে উঠে। আর বাইকারকে গরমে পুড়তে হয়, শীতে কাপতে হয় আর বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। এছাড়াও ঝড়, কুয়াশা বা বজ্রপাত ইত্যাদিতো রয়েছেই। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক খারাপ আবহাওয়াতে বাইকারদের বাইক নিয়ে বের হতে হয়। আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই অনেক সময়েই বিপদের মুখে পড়তে হয়। সামান্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই এসকল বিপদ থেকে বাচা যায়, নিদেনপক্ষে কম ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়।
বৃষ্টিতে বাইক চালানো
বাংলাদেশে যে সকল সময়ে বাইক চালানো বিপদজনক তার মধ্যে অন্যতম হলো বৃষ্টির মধ্যে বাইক চালানো।বর্ষাকালে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত-
- বর্ষাকালে বাইকে সব সময়ে রেইনকোট সাথে নিয়ে চলতে হবে। বৃষ্টি আসলে বা আসার সম্ভবনা দেখা দিলেই রেইনকোট পরে ফেলতে হবে।
- রেইনকোট এবং হেলমেট যেন উজ্জল রং এর হয়, অন্য চালক সহজেই যেন আপনাকে দেখতে পায়।
- মানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল ইত্যাদি রেইনকোটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিতে হবে।
- বাইক ধীরে চালাতে হবে এবং সামনের গাড়ী থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকতে হবে। ওভারটেকিং করা যাবে না।
- সামনে সমস্যা দেখলে সাবধানে ব্রেক চাপুন। কাদা, তৈলাক্ত, ঘাষযুক্তস্থানে ব্রেক করবেন না।
- বেশি বৃষ্টির কারনে অন্ধকার হয়ে গেলে লোবিম এ হেডলাইট জ্বালিয়ে বাইক চালাতে হবে।
- রাস্তায় পানি জমে গেলে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- শরীর ভিজে গেলে যত দ্রুত সম্ভব শরীর শুকানোর ব্যবস্থা করুন, নাহলে হাইপোথার্মিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলবে।
- বর্ষাকালে বজ্রপাত আরেকটি বড় সমস্যা। রাস্তার মধ্যে বজ্রফঅথ দেখলে বড় গাছের পাশে দাড়াবেন না বর্ং কোন পাকা বিল্ডিং এ আশ্রয় নিন। বৈদ্যুতিক তার/খুটি থেকে দূরে থাকুন।
শীতে বাইক চালানো
বাংলাদেশে শীতকাল খুবই অল্প সময়ের জন্য আসে। ১মাস থেকে দুইমাস এর মেয়াদ। শীতে ঘন কুয়াশা, বাতাস ইত্যাদি সমস্যার কারন হয়ে দাড়ায়। কাজেই সঠিক প্রস্তুতি না নিলে যেকোন বাইকারই বিপদে পড়তে পারে।
- শরীর গরম রাখতে হবে।এর জন্য যে ধরনের পোশাকে শরীর গরম থাকে তা পরতে হবে। হেলমেট, বুট, গ্লাভস তো অবশ্যই পরতে হবে। এছাড়াও গায়ে এবং পায়ে গরম কাপড় পরতে হবে।
- শীতকালে কখনও কখনও বাতাস প্রবাহিত হয়ে শীতের প্রকোপকে বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রয়োজনীয় অন্যান্য পোশাকের সাথে প্রয়োজনে উপরে উইন্ডব্রেকার পরতে হবে।
- শীতকালে আরেক যন্ত্রনার নাম হলো কুয়াশা। কুয়াশায় রাস্তা দিনের বেলাতেও অন্ধকার করে দেয়, রাতে আরো মারাত্বক আকার ধারন করে। বাংলাদেশে প্রতিবছর অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে কুয়াশার কারনে। তাই বাইকে ফগ লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে। সাদা আলোর হেডরাইটের পরিবর্তে সাধারন বা হলদে আলোর হেডলাইট ব্যবহার করা যেতে পারে।
- শীত কালে কুয়াশা পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকে। জোরে ব্রেক করলে পিছলে পড়ার সম্ভবনা থাকে। ভালো গ্রিপের টায়ার ব্যবহার করা, টায়ারে একটু কম পাম্প রাখা এবং ব্রেকিং এর সময় সতর্ক থাকলে বিপদ থেকে দূরে থাকা যাবে।
- বর্ষার মতো শীতকালেও কোয়াশার কারনে সামনে দেখতে সমস্যা হয়, তাই উজ্জল রং এর পোশাক পরতে হবে। রিফ্লেক্টরওয়ালা ভেস্ট বা ক্রসবেল্ট পরতে হবে।
গরমকালে বাইক চালানো
বাংলাদেশ মুলত গ্রীস্মপ্রধান দেশ, আর তাই গরমকালে বাইকারদের জন্য হরেক রকমের সমস্যা অপেক্ষা করে। ডিহাইড্রেশন হওয়া, সানবার্ন হওয়া, ঝড়ের কবলে পড়া ইত্যাদি। তাই গরমকালে বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় বাইকারদেরকে।
- গ্রীষ্মের প্রখর সুর্য্যরশ্মী থেকে বাচতে শরীরে সুতির কাপড় পরিধান করতে হবে, ঢোলাঢালা হতে হবে, সাদা রং হলে বেশি ভালো এবং কোনমতেই কালো রং এর পোশাক পরা যাবে না। বাতাস চলাচল করে এমন হেলমেট ব্যবহার করা যেতে পারে। সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা হেলমেটের রংগীন গ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে। সানবার্ন হতে রক্ষা পেতে ফুলহাতা জামা পরা যেতে পারে।
-গরমকালে ঘাম একটি বড় সমস্যা। বাইক রাইডে তেমন ঘাম বোঝা যায় না কিন্তু শরীর থেকে পানি বের হয়ে গিয়ে পানিশুন্যতা তৈরী করে। তাই গ্রীস্মকালে বাইক চালালে মাঝে মাঝে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
- গরমকালে আরেক সমস্যা হলো ঝড়। রাস্তায় ঝড়ের কবলে পড়লে কোন গাছের পাশে দাড়ানো যাবে না, প্রয়োজনে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। নিদেনপক্ষে বাইক না চালিয়ে রাস্তার একপাশে নিরাপদ জায়গায় গাড়ী পার্ক করে দাড়িয়ে যেতে হবে।
বিপদ যেমন বলে কয়ে আসে না, তেমনি বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখলে বিপদ থেকে সহজে পরিত্রান পাওয়া যায় আর পূর্ব সতর্কতা নিলে বিপদে পড়তে হয় না। তাই আবহাওয়া কেন্দ্রিক বিপদগুলো বাইকাররা সহজেই পার হতে পারেন যদি আগে থেকেই সামান্য সতর্ক থাকেন।