কোন ব্রান্ডের হেলমেট কিনবেন? হেলমেট ব্রান্ড পরিচিতি
যে কোন বাহনে দুর্ঘটনার বিষয়টি গুরুত্বের সাথেই বিবচেনা করা হয়। মোটরসাইকেল হলো সেই বাহন যেখানে ব্রেকিং ছাড়া দুর্ঘটনা ঠেকানোর আর কোন পথ নেই, বাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয় যদি মাথায় আঘাত পাওয়া হয়। আর তাই মাথাকে বাচাতে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হয়। আমাদের দেশে মোটরসাইকেল চালককে হেলমেট পরা বাধ্যতামুলক। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাইকারদের মধ্যে হেলমট পরিধানকে গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন অনুভব করে না। খুবই কড়াকড়ি নিয়ম না থাকলে অধিকাংশ বাইকারই হেলমেট পরতে চান না। যদিও এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। সতর্ক হচ্ছেন। আইনের ভয়ে নয় বরং হেলমেটের প্রয়োজনীয়তা বুঝেই অনেকে হেলমেট ব্যবহার করছেন।
বাংলাদেশে প্রচলিত হেলমেট গুলো কতটুকু মানসম্মত এবং দুর্ঘটনায় সুরক্ষা দিতে সক্ষম তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। বাইকারদের মধ্যে সাধারনভা্বেই ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে চাইনিজ ব্রান্ডের কিছু হেলমেট এর ব্যবহারের প্রবনতা দেখা যায়। এগুলো ওজনে ভারী, কম আরামদায়ক এবং সবচেয়ে বড় কথা সুরক্ষার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। কিছু আন্তর্জাতিক মান সম্মত হেলমেট বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো কিছুটা দামী আবার অনেক দামী ব্রান্ডের নকল হেলমেটও দেশে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে কিছুটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে হেলমেট নিয়ে।
পৃথিবীব্যাপী অনেক মানসম্মত হেলমেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মানের বিচারে হেলমেটটি DOT(U.S. DEPARTMENT OF TRANSPORTATION) সার্টিফায়েড কি না যাচাই করা যেতে পারে। এই মুহুর্তে আমদানীকৃত হেলমেটগুলো কতটুকু আসল এবং মানসম্মত এই সন্দেহ থেকে থাকলে দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসী আত্নীয়/বন্ধুর সাহায্য নিয়ে নির্ধারিত ব্রান্ডের হেলমেট দেশে আনাতে পারেন এছাড়াও BlackFriday তে বেশ ছাড় পাওয়া যায়। সে সময়েও কমদামে হেলমেট কিনে নিতে পারেন। হেলমেটগুলোর দাম ১০০ ডলার থেকে শুরু করে কয়েকশো ডলার হতে পারে। নির্ভর করছে আপনি কোন ব্রান্ডের কি ধরনের হেলমেট কিনছেন। কাজেই দামের বিষয়ে আলোচনায় গেলাম না। প্রয়োজনে www.amazon.com বা মোটরসাইকেল গিয়ার এর জন্য আরেকটি জনপ্রিয় সাইট www.revzilla.com তে দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও অনেক ওয়েবসাইট আছে যারা হেলমেট এবং অন্যান্য মোটরসাইকেল এক্সেসরিজ বিক্রি করে থাকে, সেখানেও দেখতে পারেন। দেশের বাইরে থেকে পন্য আনিয়ে নেবার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, প্রয়োজনে এমন প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারেন।
এবার আসুন পরিচিত হই কিছু জনপ্রিয় হেলমেট ব্রান্ডের সাথে। যারা মান ও সুরক্ষার জন্য পৃথিবীখ্যাত।
MT হেলমেটস
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৪টি মহাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। মহাদেশগুলো হলো ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। MT হেলমেট আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফায়েড যেমন DOT CERTIFIED (USA), ECE/ONU 22.05.P (EU), SNELL USA (USA )। এছাড়াও রয়েছে NTC 4533 (Colombia) এবং NBR7471 (Brazil) সার্টিফিকেট। এই সবগুলোই তাদের পন্যের মানের নিশ্চয়তা প্রদান করে। ফুলফেস, অফরোড বা বাচ্চাদের জন্যও তাদের হেলমেট রয়েছে। তাদের জনপ্রিয় সিরিজগুলোর মধ্যে Revenge, Blade, Thunder3 ইত্যাদি জনপ্রিয়।
BELL হেলমেট
১৯৫০ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠানটি সাইকেল, মোটরসাইকেল বা রেসিং কারের জন্য হেলমেট বানিয়ে থাকে। সাধারন হেলমেট, ডার্ট, স্নো হেলমেট সহ প্রায় সকল ধরনের হেলমেটই তারা তৈরী করে থাকে। হেলমেটের পাশাপাশি অন্যান্য এক্সেসরিজ যেমন জ্যাকেট, হেলমেট ব্যাগ, ভাইজর ইত্যাদির জন্যও তারা সুপরিচিত।
LS2 হেলমেট
মাত্র ৩৫০ ইউরো সম্বল হাতে নিয়ে Mr. Arthur Liao ১৯৯০ সালে তার উদ্যোক্তা জীবনের যাত্রা শুরু করেন।২ বছরের মাথায় ১৯৯২ সালে ৬০০স্কয়ারফিট থেকে বাড়িয়ে ৪০০০স্কয়ারফিট স্পেস নিয়ে কারখানা স্থাপন করেন।শুরুতে ২জনে থাকা প্রতিষ্ঠান ১০০জনের টীমে মেম্বরে পরিনত হয়।শিকাগোতে ৩০,০০০ স্কয়ারফিটের ওয়্যারহাউজ নিতে হয় আমেরিকা এবং কানাডার কাস্টোমারের কথা ভেবে, এখবরও অনেক পুরোনো, ২০১০ সালের কথা। কার্বন ফাইবার ওজনে কম কিন্তু খুবই মজবুতের জন্য ব্যবহার করা হয়। LS2 তাদের অনেক হেলমেটে কার্বন ফাইবার ব্যবহার করে যা Formual1 বা MotoGP রেস এর হেলমেট এ ব্যবহার করা হয়।তারা ECE, DOT ,BSI বা Snell সার্টিফায়েড। কাজেই কোয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। Race, Touring, Commuter বা Off-Road সহ ভিন্ন প্রয়োজন পূরনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হেলমেট রয়েছে।
HJC হেলমেট
১৯৭১ সাল থেকে প্রায় ৪৫ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা নিয়ে চলছে হেলমেট পন্যের অন্যতম পরিচিত ব্রান্ড HJC. ইউরোপ, আমেরিকা, কোরিয়া, চায়না, ভিয়েতনাম সহ বিভিন্ন জায়গাতেই তাদের কার্যক্রম রয়েছে। কোয়ালিটি পন্য উদ্ভাবন ও উৎপাদনের জন্য রয়েছে তাদের সুবৃহৎ রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। তাদের রয়েছে স্ট্রীট হেলমেট, স্নো হেলমেট, অফরোড হেলমেট, মডিউলার হেলমেট, ওপেনফেইস হেলমেট ইত্যাদি।
GMAX হেলমেট
অফরোড, স্নো বা স্ট্রীট। সব ধরনের হেলমেটের জন্য আস্থা রাখতে পারেন GMAX এর উপরে। বিগত ১৫বছরেরও অধিক সময়ে নিয়ে আস্থার জায়গাটি তারা অর্জন করে নিয়েছে। তাদের মুল কার্যক্রম আমেরিকা এবং কানাডাতে। তারা DOT Certified এবং ECE 22.05 Certified.
SHOEI হেলমেট
North America, Europe, Japan, South America, Asia এবং Middle East এর বিশাল এরিয়া জুড়ে হেলমেটের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। রয়েছে ৬০বছরের অধিককাল ধরে গুনগত মানসম্মত পন্য তৈরীর অভিজ্ঞতা। রোড, অফরোড বা রেসিং যেখানেই যাবেন, SHOEI হেলমেট আপনার মাথাকে সুরক্ষার জন্য আপনার পাশে আছে। বাহিরে শক্ত খোলস, ভেতরে সুরক্ষিত নরম এরিয়া সাথে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা SHOEI হেলমটে ব্যবহারকারীকে নিরাপত্তার সাথে আরামও নিশ্চিত করে। উইন্ড টানেল টেস্টিং এর মাধ্যমে হেলমেটগুলোর এরো-ডা্ইনামিক ডিজাইনের কার্যকারীতা পরিক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় এর সর্বোচ্চ কার্যকারীতা। ল্যাব টেস্ট বাদেও একাধিক ফিল্ড টেস্টের মাধ্যমে মান নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি হেলমেট তৈরী এবং পরীক্ষার জন্য অন্তত ৫০জন অভিজ্ঞ ব্যক্তির হাত ঘুরে আসতে হয়।
শেষকথা
Safety First. ছোট কথা কিন্তু গুরুত্ব অনেক। তাই কয়েক লক্ষ টাকার বাইক কেনার পরে যেনো হেলমেট কিনতে গিয়ে আমরা কার্পন্য না করি। আলোচনায় জনপ্রিয় অনেকগুলো ব্রান্ডের মধ্যে মাত্র কয়েকটিকে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমরা আশাবাদী খুব অল্প সময়ে মানসম্মত হেলমেট দেশে আসবে এবং সচেতন বাইকার হিসেবে আমরা হেলমেট ব্যবহার করবো।
সবার বাইকিং জীবন নিরাপদ হউক।